পীড়িত পুরুষের পাশে প্রমীলা পল্টন

খবরের কাগজ খুললে বা টিভির পর্দায় চোখ রাখলেই মহিলা নির্যাতনের খবর আকছার নজরে পড়ে আমাদের। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবেই মহিলা নির্যাতনের নানা ছবি ভাবায় এবং কাঁদায় আমাদের সকলকে। কিন্তু আমাদের সমাজে বহুভাবে বহু ক্ষেত্রে নির্যাতিত হন পুরুষেরাও। আজ্ঞে হ্যা ঠিকই পড়েছেন, পুরুষেরাও। মহিলাদের হাতে নানা ভাবে লাঞ্ছিত হতে হয় পুরুষদেরও। তার খবর কিন্তু রয়ে যায় লোকচক্ষুর আড়ালে। আমাদের একটা ধারণাই তৈরি হয়ে গিয়েছে একমাত্র মহিলারাই নির্যাতিত বা লাঞ্ছিত হন, কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে পুরুষদের লাঞ্ছনাও কিছু কম নয়। সেই সব নিপীড়িত পুরুষের পাশে দাঁড়াতে এবার জোট বাঁধলেন মহিলারা।  খুব স্বাভাবিক ভাবেই পুরুষদের পক্ষে নানা পদক্ষেপে তারা পাশে পেয়েছেন পুরষদেরও। তাদের এই ‘অভিযান’ ইতিমধ্যেই দাগ কেটেছে অনেকের মনে।

কাজটা খুব সহজ নয়। নারী হয়ে পুরুষদের সপক্ষে কথা বলতে দেখে অনেকেই নারীবিরোধী কাজ বলে কটাক্ষ করেন। কিন্তু তাতে হার মানতে নারাজ ওরা। ওদের মতে “আমরা নারী, কিন্তু তাই বলে আমার স্বামী, বাবা, ভাইদের কথা ভাববো না? আজ তারা এই সমাজে নারী কর্তৃক আদৌ সুরক্ষিত তো! সেটা খুব ভাবায়। সেখান থেকেই পুরুষ অধিকার আন্দোলনে নিজেদেরকে যুক্ত করি আমরা।“ তৈরি হয় রাজ্যের সর্ববৃহৎ পুরুষ অধিকার আন্দোলন সংস্থা “অভিযান ওয়েলফেয়ার এন্ড চ্যারিটবেল ট্রাস্ট”। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনের মূল দফতর উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরে। ইতিমধ্যে বারাসাত এর মনুয়া হত্যাকাণ্ড, নিউটাউনের আইনজীবী রজত হত্যা কাণ্ড, সল্ট লেক-এ স্বামী নিগ্রহ থেকে শুরু করে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত বা নিপীড়িত পুরুষের পাশে দাঁড়িয়েছে এই সংগঠন।

কথা হচ্ছিল স্মিতা দাসের সঙ্গে। স্মিতা অভিযানের সম্পাদিকা। পুরুষরাই তো সর্বদা নারীদের দমিয়ে এসেছে, অপমান, নির্যাতন করেছে, সেই পুরুষের পক্ষ নিয়ে আন্দোলন করেন কেন? প্রশ্ন শুনেই স্মিতার সাফ জবাব – “আসলে যারা এই কথাটা বলেন তারা নিজেদের এখনো নারী পুরুষে বেঁধে রেখেছেন। এখনো মানুষ হতে পারেন নি তারা। মানুষ হতে পারেন নি বলেই দেশে যখন অর্ধেকের বেশী সংখ্যক ধর্ষণ মামলা মিথ্যা যেটা মহিলা কমিশন রিপোর্ট থেকে আমরা জানতে পারি সেটা নিয়ে তারা চিন্তা করেন না। এই দেশে ৯০ শতাংশ বধূ নির্যাতন মামলা মিথ্যা এবং সুপ্রিম কোর্ট এই আইনকে “লিগ্যাল টেরোরিজম” বলেছেন সেই নিয়ে তারা কেউ চিন্তা করেন না। প্রতি ৯ মিনিট-এ একজন বিবাহিত পুরুষ আত্মহত্যা করছেন কিন্তু সেটা নিয়ে কাউকে চিন্তা করতে দেখি না। কাউকে বলতে দেখি না পুরুষ আত্মহত্যার সংখ্যা কেন মহিলাদের থেকে ৩ গুন বেশি?” 

সংগঠনের আরও দুই কর্ত্রী রিনা দাস এবং দীপা বড়ালের কথায় উঠে এল সমাজের অন্য একটা দিক –  “এই সমাজ শুধু ভেবে এসেছে নারী স্বাধীনতার কথা। কিন্তু রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর কী এই নারী স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন যেখানে আজ সংবাদ মাধ্যমে প্রতিদিন মিথ্যা ধর্ষণ মামলার খবর শুনতে হয়? প্রতিদিন শুনতে হয়, কোন এক মা তার সন্তানকে খুন করেছে কারন সে তার প্রেমিকের সাথে তাকে পরকীয়া করতে দেখে নিয়েছে? এখন পরকীয়ার বাধা হওয়ায় স্বামী হত্যা প্রতিদিন সারা দেশ জুড়ে ঘটে চলেছে। এসব নিয়ে কেউ ভাবে না কারন সেখানে লাইক কমেন্ট কম হবে। প্রতিবাদীরা শুধুমাত্র নারী নির্যাতনের ঘটনা শুনে জেগে ওঠেন তবে তাও ক্ষেত্র বিশেষে। মানে ধরুন কোনো শাশুড়ি তার বৌমা কর্তৃক নির্যাতিতা সেখানে কোনো প্রতিবাদ দেখবেন না। তারা শুধুমাত্র সেই স্থানে প্রতিবাদ করবেন যেখানে পুরুষ থাকবে কাঠগড়ায়।“

এই “অভিযান”দেশে লিঙ্গ নিরপেক্ষ আইনের দাবি রাখে। দেশে পুরুষ কমিশনের দাবি রেখে আমাদের এই সংগঠনের সদস্যরা রাজ্যের জেলায় জেলায় আন্দোলন সংগঠিত করে চলেছে। আগামী ১৯ সে নভেম্বর আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস উপলক্ষে সারা রাজ্য জুড়ে পালিত হবে পুরুষ দিবস। এছাড়া সংগঠনের মুখপত্র  “পুরুষ কথা” পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে কলকাতা থেকে।

4 thoughts on “পীড়িত পুরুষের পাশে প্রমীলা পল্টন

  • August 2, 2020 at 9:53 am
    Permalink

    Pase achi…. 👍

    Reply
  • August 2, 2020 at 5:54 pm
    Permalink

    We are all with this organisation and I am happy to be a parson in this organisation.

    Reply
  • September 8, 2020 at 12:26 am
    Permalink

    Valo laglo khub valo laglo erokom akta prochesta dekhe … sotyyi Nari rai pare maa hoye tader sokol sontan ke agle rakte….

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen + one =