ডায়াবেটিসেও খাওয়া যায় কলা

জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য ফলগুলোর মধ্যে কলা অন্যতম। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, ম্যাগনেশিয়াম, কপার ও প্রোটিন প্রভৃতি রয়েছে। এই উপাদানগুলো শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডায়াবেটিস রোগীরা কি কলা খেতে পারবেন? এই প্রশ্ন সকলেরই।

অনেকেই মনে করেন, কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ এই ফলটি মধুমেহ রোগীদের কাছে বিষ খাওয়ার সমান। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে অন্য কথা। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, কলাতে কার্বোহাইট্রেট আছে ঠিকই। কিন্তু তার সঙ্গে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ এবং পটাশিয়াম। এই উপাদানগুলো শরীরের গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা নিশ্চিন্তে এই ফলটি খেতে পারেন।

গবেষণা অনুসারে, নিয়মিত কলা খেলে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের কলা খাওয়ার ক্ষেত্রে কতগুলো বিষয় খেয়াল রাখা একান্ত প্রয়োজন। যেমন- ডায়াবেটিস রোগীরা ভুলেও কলা দিয়ে বানানো কোন ডেজার্ট খাবেন না, বেশি মাত্রায় পেকে গেছে এমন কলাও না খাওয়াই ভাল এবং যতই ক্ষিদে পাক না কেন প্রচুর পরিমাণে কলা খাওয়া কোনও মতেই চলবে না।

ডায়াবেটিস রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি শরীরের গঠনে এবং একাধিক রোগকে দূরে রাখতে আরও নানাভাবে সাহায্য করে কলা।

হজম ক্ষমতা বাড়ায়

গ্যাসের সমস্যা থাকলে প্রতিদিন ২-৩ করে কলা খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন, দারুণ উপকার মিলবে। কারণ এই ফলটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা পাচক রসের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে বদ-হজমের আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।

হার্ট ভাল রাখে

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে ফাইবার বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই এই ফলটি প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করলে হার্টকে নিয়ে আর কোনো চিন্তা থাকবে না। প্রসঙ্গত, করোনারি হার্ট ডিজিজকে দূরে রাখতে এই ফলটির কোন বিকল্প হয় না বললেই চলে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে

পরিবারে কি ব্লাড প্রেসারের ইতিহাস রয়েছে? তাহলে আজ থেকেই সকাল বিকেল কলা খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন, জীবনে কোনদিনও রক্তচাপ ১৪০-এর উপরে উঠবে না। আসলে এই ফলটিতে মজুত থাকা পটাশিয়াম দেহের ভেতরে সোডিয়াম বা নুনের মাত্রায় ভারসাম্য নিয়ে আসে। সেইসঙ্গে ধমনির দেওয়ালের উপরে পড়া রক্তের চাপ কমাতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্লাড প্রেসার কমতে শুরু করে।

রক্তাল্পতা দূর করে

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মহিলাদের শরীরেই রক্তের অভাব দেখা দেয় বলে একাধিক রিপোর্টে বলা হয়। এমন পরিস্থিতিতে কলা খাওয়ার প্রয়োজন যে আরও বাড়ছে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। আসলে এই ফলটিতে উপস্থিত আয়রন শরীরে প্রবেশ করার পর এত মাত্রায় লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন শুরু করে দেয় যে অ্যানিমিয়ার মতো রোগ দূরে পালাতে সময় লাগে না।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

কলায় থাকা ফাইবার অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষিদের জ্বালা মেটাতে বার বার খাবার খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আর খাবার কম খেলে ওজন বাড়ার আশঙ্কাও কমে যায়।

পুষ্টি যোগায়

শরীরকে সচল রাখতে প্রয়েজনীয় উপাদানগুলোর বেশির ভাগই কলাতে রয়েছে। যেমন- প্রতি ১০০ গ্রাম কলায় কম বেশি ০.৩ গ্রাম ফ্যাট, ১ এমজি নুন, ৩৬০ এম জি পটাশিয়াম, ২.৬ গ্রাম ডায়াটারি ফাইবার, ১২ গ্রাম চিনি এবং ১.১ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে। সেইসঙ্গে প্রচুর মাত্রায় ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফলেট, রাইবোফ্লবিন এবং ভিটামিন বি৬ রয়েছে, যা পুষ্টির ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রাখে।

পটাশিয়ামের ঘাটতি দূর করে

হার্টবিটকে স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ব্রেনের কর্মক্ষমতা বাড়াতে কলা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায়, তা শরীরের দৈনিক চাহিদা মেটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

দেখাই যাচ্ছে কলা কিন্তু শরীর, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, ভাল লাগা সব কিছুতেই ষোলকলা পূর্ণ করে।

One thought on “ডায়াবেটিসেও খাওয়া যায় কলা

  • January 9, 2021 at 4:48 am
    Permalink

    প্রয়োজনিয় তথ্য বহুল লেখাটি ভালোলাগলো ।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − 9 =