প্রেরণা যোগায় পুরস্কার

কলকাতা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে একটি মফঃস্বল শহর গোবরডাঙ্গা। সেখানকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন পবিত্র কুমার মুখোপাধ্যায়। ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান বা সমাজধর্মী নানা ধরণের কাজ নিয়ে থাকতেন তিনি। যৌবনে কয়েকজন বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে গড়েন ভগিনী নিবেদিতা শিশু শিক্ষা নিকেতন। লক্ষ্য ছিল স্থানীয় দরিদ্র্য ছেলেমেয়েগুলিকে যতটা সম্ভব শিক্ষার আলোয় নিয়ে আসা। পরে সেই বিদ্যালয় সরকারী অনুদান প্রাপ্ত হয়। শিক্ষক হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। শিক্ষকতার পাশাপাশি সাংবাদিকতা এবং  সাহিত্য চর্চা চালিয়ে গিয়েছেন সমানতালে। স্থানীয় এবং কলকাতার বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হত নিয়মিত। কলকাতায় গিয়ে থাকার পরামর্শও দিয়েছিলেন শুভানুধ্যায়ীরা। কিন্তু গোবরডাঙ্গাকে ছেড়ে যেতে রাজি হননি পবিত্রবাবু।

স্ত্রী ছিলেন দূরারোগ্য থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। সেই কারনে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন রক্তের সঙ্কট এবং প্রয়োজনীয়তা। বিভিন্ন ব্লাডব্যাঙ্ক এবং হাসপাতালে রক্তের জন্য হাহাকার। কিন্তু রক্ত তো মিলবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই। তাই রক্তদান, চক্ষুদান, মরনোত্তর দেহদান সহ নানা বিজ্ঞানধর্মী সমাজসচেতনতা মূলক প্রচার শুরু করলেন তিনি। গোবরডাঙ্গা তো বটেই তার চৌহদ্দি ছাড়িয়ে দূরদূরান্তে নানা গ্রামে গিয়ে সেখানকার মানুষদের বোঝাতেন রক্তদানের বা দেহদানের গুরুত্ব। আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগে কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। দিনের পর দিন নানা গ্রামে গিয়ে সেখানকার মানুষদের বোঝাতেন রক্তদান বা দেহদানের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা। তারপর তাদের সঙ্গে নিয়ে আয়োজন করতেন রক্তদান শিবিরের। মানুষ যাতে রক্তদানে আগ্রহী হয় তাই রক্তদানের পর দেয় শংসাপত্রে বিখ্যাত ব্যক্তিদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতেন কলকাতায় গিয়ে। দেহদানের বিষয়টা ছিল আরও কঠিন, মৃত্যুর পর সেই দেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাজে ব্যবহার করবার জন্য দিয়ে দিতে বলায় অনেকেই তাকে বিধর্মী বলে কটাক্ষ করেছেন, তাতে অবশ্য লক্ষ্যচ্যুত করা যায়নি পবিত্র বাবুকে। তাঁর জেদের কাছে বা ভালবাসার কাছে হার মেনে অনেকেই দেহদানের অঙ্গীকার পত্রে স্বাক্ষর করেছেন। ইতিমধ্যে কয়েকজনের মৃত্যুর পর তাদের দেহ দানও করা হয়েছে।

গোবরডাঙ্গা শহরে কেন বইমেলা হবে না এই নিয়ে তাঁর আক্ষেপ ছিল দীর্ঘ দিনের। মূলত তাঁর উদ্যোগে এবং আরও কয়েকজনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পরে শুরু হয়েছিল গোবরডাঙ্গা বইমেলা। হাসপাতাল, থানা, লোকাল ট্রেন বাড়ানো, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে  গোবরডাঙ্গার নানা উন্নয়নের জন্য পৌর উন্নয়ন পরিষদের ছায়ায় থেকে নানা আন্দোলন করে আসছেন তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে। এখনও অক্লান্ত পরিশ্রম করেন, কলমও চলে সমান বেগে, প্রকাশ করেন গোবরডাঙ্গা বার্তাও।

সম্প্রতি সায়েন্স এসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল পবিত্র কুমার মুখোপাধ্যায়কে পুরস্কৃত করল জীবনভর তাঁর এই সমাজ সচেতন মূলক কাজের জন্য। ২৭/০২/১৮ তারিখে জাতীয় বিজ্ঞান দিবসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় এই সম্মান। না, পুরস্কারের আশায় তিনি একাজ করেছেন বলে মনে হয়নি কোনও দিন। তবুও এমন স্বীকৃতি উৎসাহ যোগায় বৈকি। যিনি করেছেন তাকেও প্রেরণা যোগায়, যারা তাঁকে দেখে এমন কাজে এগিয়ে আসবেন তাদেরও উৎসাহ যোগায়। যদিও পবিত্র কুমার মুখোপাধ্যায় তাঁর এই পুরস্কারের কথা কাউকেই বলেননি, তবুও নানা সূত্র থেকে জেনে গোবরডাঙ্গার মানুষজনও তাঁর এই পুরস্কার প্রাপ্তিকে সানন্দে স্বাগত জানিয়েছেন। আগামীতে আরও এমন কাজের জন্য পবিত্রবাবুর প্রতি আমাদের তরফ থেকেও রইল শুভেচ্ছা।

One thought on “প্রেরণা যোগায় পুরস্কার

  • July 16, 2020 at 5:28 pm
    Permalink

    I need to to thank you for this excellent read!!
    I absolutely loved every bit of it. I have you book-marked to look at new stuff you post…

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − six =