বাংলায় প্রথম স্বামী বিবেকানন্দ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (SVIFF) ২০২৫ সফলভাবে সমাপ্ত

প্রথমবারের মতো বাংলার মাটিতে অনুষ্ঠিত হলো স্বামী বিবেকানন্দ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (SVIFF) ২০২৫। কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গত ১১ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়, যা রাজ্যের সাংস্কৃতিক পরিসরে এক ঐতিহাসিক সূচনা হিসেবে চিহ্নিত হলো।

মোট ৮টি ভেন্যুতে প্রি-ফেস্টিভ্যাল ও মূল উৎসবের আয়োজন সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঠাকুরপুকুরের বিবেকানন্দ কলেজ, যেখানে টানা তিনদিন দেশ-বিদেশের অসংখ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। এছাড়া ভাঙর মহাবিদ্যালয়, আনন্দমোহন কলেজ, নিবেদিতা শিশু একাডেমি, শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ অমৃত মহাবিদ্যালয়, গণিপুর শীতলা হাই স্কুল এবং রামকৃষ্ণ সোসাইটি অনাথ ভান্ডারে একদিন করে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী আয়োজন হয় ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর কলকাতার iLEAD অডিটোরিয়ামে।

উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ। উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত তথ্যচিত্র নির্মাতা শীলা দত্ত, পরিচালক অনুপকুমার রায়চৌধুরী এবং প্রফেসর নবকিশোর চন্দ, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, বিবেকানন্দ কলেজ।

সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক এবং অররা ফিল্মস-এর কর্ণধার অঞ্জন বসু। আলোচনায় অংশ নেন মুম্বাই থেকে আগত চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিচালক রাজ ভট্টাচার্য্য এবং পরিচালক মানস বসু। জুরি মণ্ডলীতে ছিলেন মানস বসু, অধ্যাপক সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ মজুমদার এবং চিত্তরঞ্জন বিসওয়ালা।

এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা, বিজ্ঞানী ও লেখক ড. নূরান নবী এবং তাঁর সহধর্মিণী ড. জিনাত নবী। বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন কানাডার বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক নাদিম ইকবাল, যিনি এই উৎসবে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার অর্জন করেন—
🏆 সেরা ফিচার ডকুমেন্টারি: “ড. নূরান নবী, ফ্রিডম ফাইটার ফরএভার”
🏆 সেরা পরিচালনা: “মাদার টাং”

উৎসবে মোট ৫০টিরও বেশি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়, যার মধ্যে ১০টি ছিল আন্তর্জাতিক ছবি। প্রতিটি চলচ্চিত্রই দর্শকদের গভীরভাবে নাড়া দেয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রামাণ্যচিত্র “ড. নূরান নবী, ফ্রিডম ফাইটার ফরএভার” দর্শকদের অন্তরে বিশেষ সাড়া জাগায়।

এই বছর মোট ৩৮টি পুরস্কার প্রদান করা হয়—ফিচার ফিল্ম, তথ্যচিত্র, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং মিউজিক ভিডিও ক্যাটাগরিতে।

ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর পল্লব রায় বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু শহরকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন নয়; স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মানবিক মূল্যবোধ, ভ্রাতৃত্ববোধ ও চিন্তাশক্তিকে জাগ্রত করা। আজকের প্রজন্ম মোবাইল ও ইন্টারনেটে অসংখ্য কনটেন্ট দেখে, কিন্তু ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা অনেক সময় থাকে না। এই উৎসব তাঁদের জন্য এক নতুন আলো হয়ে উঠবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − four =