গোঁফেশ্বর দারোগার গৃহদাহ         

প্রণব কুমার চক্রবর্তী, বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা  

 

ক্যাঁ ক্যাঁ করে কলিং বেলটা বেজে উঠলো।

বাড়িতে বসে মন দিয়ে খবরের কাগজটা পড়ছিলেন গোঁফেশ্বর দারোগা। এই সময়টাই সে একান্তে খবরের কাগজটা পড়ে সারা বিশ্বটাকে জেনে নেন। থানা এলাকার সব্বাইকে – এমন কী বাড়ির বউকেও বলে রেখেছেন কোনরকম ডিসটার্ব না করতে। কারণ একটাই – পেপারে বহু ধরনের সংবাদ বের হয়। সরকার বাহাদুর এবং বড়-সাহেবের নির্দেশ কোনও  ধরনের ক্রাইমের খবর যেন থানাদারের নজর এড়িয়ে না যায়। তাহলেই বিপদ! ইদানিং টিভি আর খবরের কাগজওয়ালারা যা শুরু করেছে! ছোট্ট ব্যাপারকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে পুলিশের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বাহবা নেয়া শুরু করবে। সরকারকে বিব্রত করা শুরু করবে। ওপরওয়ালাদের কানে ওই ধরনের কোনোও  খবর গেলেই হলো, ঘন ঘন ফোন করা শুরু করে দেবে। না বলতে পারলে, কিংবা এ্যাকশন নেয়া না হলেই  গালিয়ে বাপন্তো তো করবেই, বদলি করেও  ছাড়বে। সেই  কারনেই গোঁফেশ্বর দারোগাকে সদাসতর্ক থাকতে হচ্ছে। বহু কষ্টে নেতাদের ধরে, মন্ত্রীকে ম্যানেজ করে এই পোস্টিংটা পেয়েছে, এখনো দেয়া টাকার চার আনাও  ওঠেনি! সেটা হাতছাড়া হলে ওটা তো যাবেই, দামিনী আর মেয়ে  কিঙ্কিণীও ছেড়ে কথা বলবে না। দু চার ঘা তো বসাবেই, আবার ওর শখের গোঁফটার উপরে একটা  এ্যাটেমেপ্ট নেবে!

কলিং বেলের বিকট চিৎকারটা শুনে ভদ্রলোক আর কাগজের উপরে মন নিবেশ করতে পারলেন না। সাধারনত এই সময় তার বাড়ির দরজা খোলা নিষেধ। তাই , দামিনী  কিংবা কাজের মহিলাটি এসে দরজা খোলার চেষ্টাচেষ্টাও করেনি। তাই  খানিকটা বিরক্ত হয়েই সে নিজে উঠে গিয়ে দরজাটা খুলেই দ্যাখে ছোটবাবু পুন্ডরিকাক্ষ পূর্ণপাত্র দাঁড়িয়ে।

– কী ব্যাপার? হঠাৎ এই অসময়ে? জানেন না এইসময় আমি মাথার ভেতরে সারা দেশের নিউজ কালেকশন করতে এবং গোঁফ সেবায়  ব্যাস্ত থাকি। নান ইজ এ্যালাউড টু সি এ্যন্ড টক

উইথ মি! হোয়াই আপনি?  গোঁফেশ্বর দারোগা এক নি:শ্বাসে কথাগুলো বলে একটা অদ্ভুত মুখভঙ্গি করে ছোটবাবুর দিকে তাকালেন।

ছোটবাবু বলির পাঁঠার মতো ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে বলে উঠলেন – স্যার? বাধ্য হয়েই  এয়েছি। যা তাগাদা দেয়া শুরু করেছে ….

– কে তাগাদা দিচ্ছে? বড়সাহেব?

– না। সে হলেও তো ভালো ছিলো। কিন্তু …

– কিন্তু কে সেই মাতব্বর? গোঁফেশ্বর দারোগা রীতিমতো ক্রুদ্ধ হয়ে ছোটবাবুর কাছে জানতে চাইলেন –  যে বলা মাত্রই আপনি লেজ তুলে দৌড়ে চলে এলেন?

– স্যার,সে তো এলাকার নেতা পঞ্চানন মিত্তির!

কী নাকি এ্যাকাউন্টে সব ভূতুরে টাকা ঢুকছে!

– রাখেন তো পঞ্চানন মিত্তির ফিত্তির। সে কী এমন হরিদাস যে, আমাকে অর্ডার করে? বলেই নিজেই নিজের জিবটা বের করে বলে ওঠেন  – ডোন্ট মাইন্ড পুন্ডরিকাক্ষবাবু। আপনি আবার ব্যাপারটা পঞ্চানন মিত্তিরকে বলতে যাবে না। লোকটা যা বদমেজাজী! পরে এসে আমাকে গালাগালি করেই ক্ষান্ত হবেনা,  রাগের প্রতিশোধ হিসেবে বদলি করিয়েই ছাড়বে! আমাদের চাকরিটা যেন ওদের বাপ-ঠাকুরদার জমিদারির চাকরি হয়ে দাঁড়িয়েছে!

– ঠিক কোয়েছেন স্যার। ছোটবাবুর তার পান খাওয়া ফোকলা দাঁতে হাসি তুলে বলেন – ইয়ের জন্যই তো আমি ব্যাপারটা আপনাকে বলবার লগে এইসময় এয়েছি।

– ঠিক আছে। গোঁফেশ্বর দারোগা নিজের গোঁফের উপরে দক্ষিন হস্তের বৃদ্ধা এবং তর্জনীটা বুলাতে বুলাতে জানতে চান – বলুন। কী বলতে এসেছিলেন?

– সে স্যার সাংঘাতিক ব্যাপার! ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট থেকে এবারে টাকা লুট হবার বদলে হু হু করে এ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকছে!

– এটা কী বলছেন? ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট থেকে টাকা আউট না হয়ে ইন হচ্ছে! তার মানে – ঝাড়খন্ডি গ্যাঙ ইজ  টোটালি অফ। হোয়াট এ্যা গুড নিউজ! বুঝলেন ছোটবাবু, এসব হলো গিয়ে আমার স্টারের এফেক্ট। এতদিন ধরে এলাকায় যারা – মানে চোর, ডাকাত এবং ছিনতাইবাজরা যাদের কাছ থেকে যত চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, রাহাজানি করেছে, সবাই  আমার এখানে জয়েন করার পরে ধরা পরার ভয়ে মনে হচ্ছে তারা নিজেদের বাঁচাতে সোজা ব্যাংকে গিয়ে গোপনে সেইসব বাদিদের এ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে দিচ্ছে । আমি ভাবছি, এবারে ওইসব চোর-ডাকাতদের একটা লিস্টি বানিয়ে ওদের একটা নবাব সিরাজী আমলের মতো পার্মানেন্ট সেটেলমেন্টের ব্যবস্থা করাবো।

বড়সাহেব আর লোকাল নেতাকে বলে ওদের এলাকায় সিভিক ভলেন্টিয়ারের চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

– কিন্তু স্যার? পূর্ণপাত্র বাবু তার চোখ দুটো বড় বড় করে বলে ওঠেন – টাকা যাদের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে জমা পড়ছে তাদের বাড়িতে কদাচ কস্মিনকালেও চুরি, ডাকাতি কিংবা রাহাজানি হয়নি। যাদের এ্যাকাউন্টে ওই ধরনের টাকা জমা পড়েছে, তারা সব্বাই নাকি চোর, ডাকাত কিংবা ছিনতাইবাজের গোত্রের লোক!

– সে কী ই ই ই! তাহলে এতো …..

গোঁফেশ্বর দারোগা রীতিমতো আঁতকে উঠে বলে ওঠেন – এ তো সাংঘাতিক ব্যাপার !

– স্যার? সে আর বলতে! ছোটবাবু কাঁপা কাঁপা সুরে বলেন – পূর্ণপাত্র স্যার আমকে ডেকে রীতিমতো ধমকে বলেছেন এই টাকা জমা পড়াটার একটা চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্র ! মনে হয় স্যার …….

– কী মনে হয়?

– এই টাকাগুলো কোনও হুন্ডির টাকা! বেনামে কেউ অন্যের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে এনে জমা করাচ্ছে!

– রাইট! গোঁফেশ্বর দারোগা নিজের মাথায় বার কয়েক আঙুলের টোকা মের বলে উঠলেন – পুন্ডরিকাক্ষবাবু, কে বলে আপনার মাথায় বুদ্ধি নেই ? একশ পার্সেন্টের থেকেও বেশি আছে। টু হান্ড্রেড পার্সেন্ট! বুঝলেন …..

– তাহলে স্যার, ছোটবাবু পান খাওয়া ফোকলা দাঁতের ফাঁকে এক ঝলক হাসি তুলে গোঁফেশ্বর দারোগার কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে উঠলেন – আমি এইসময় আপনাকে এই গুরুত্বপূর্ণ খবরটা দেবার জন্য এসে কোনোও ভুল বা অন্যায় করিনি?

– মোটেই না। তবে হ্যাঁ, আপনার সাথে যখন ওর কথা হচ্ছিলো, তখন সামনে বা আশেপাশে কী কেউ  – আই মিন আমাদের থানার কোনোও  অফিসার বসে ছিলো? মেজবাবুটা তো ডাইরেক্ট দারোগা। ভীষন সাহসী এবং বুদ্ধি  ধরে। ওর যদি ব্যাপারটা কানে গিয়ে থাকে, তাহলে তো এতক্ষনে গিয়ে রেইড করা শুরু করে দিয়েছে! গোটা ব্যাপারটার ফয়দাটা নিজেই লুটে ….

– স্যার? পুন্ডরিকাক্ষবাবু নিজের হাত দুটো কচলাতে কচলাতে বলতে লাগলেন – আমি একটু তালে খাটো বটে, কিন্তু মোটেই মাথায় নয়। জানি খবরটা আপনাকে আগে দিতে পারলেই, আমার কাজটা খানিকটা এগোবেই।

– মানে?

– মানে খুব সোজা স্যার। আপনি এই খবরটা শুনলে নিজেই রেইড করতে যাবেন। এ্যন্ড মাই কেল্লা ঊইল ফতেহ্।

– ব্যাপারটা বুঝলাম না। ঝেরে কাসুন তো মশাই? গোঁফেশ্বর দারোগা রীতিমতো ধমক দিয়ে বলে ওঠেন – এদিকে যত ডিলে করবেন, ততই আপনার আশায় বাজ পড়বে! এই ফাঁকে

ডাকু মেজবাবুটা তো বেরিয়ে যাবে? আপনি গিয়ে নিজে এবং ফোর্সদের রেডি করুন, আমি একটু বাদেই রেডি হয়ে থানায় যাচ্ছি।

 

পুন্ডরিকাক্ষবাবু  ফিরে যেতেই গোঁফেশ্বর দারোগা নিজের মাথার উপরে হাত দুটো তুলে গৌড় -নিতাই মার্কা নাচ বার কয়েক করেই থেমে টেবিলের উপরে থাকা সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা বের করে ঠোঁটে ধরে খস করে ধরিয়ে একটা লম্বা টান মেরে ধোঁওয়া ছাড়তে ছাড়তে বললেন – দামিনী? দ্যাখো আজ সকালেই আমার সামনে মা লক্ষ্মীদেবী স্বয়ং নিজেই অর্থের ঝাঁপি হাতে করে নিয়ে এসে হাজির হয়েছেন। ইশারায় বলছেন ওঁর সাথে এক্ষুনি যেতে।

– এক্ষুনি  যেতে? দামিনী ছুটে এসে গোঁফেশ্বর দারোগাকে জড়িয়ে ধরে জানতে চাইলেন  – কত টাকা দেবেন উনি? মানে মা লক্ষ্মীদেবী! লাখ চারেক?

গোঁফেশ্বর দারোগার লাখ চারেখ টাকার কথা শুনে ভিমরি লাগার উপক্রম। সিগারেটের ধোঁওয়া গলার কন্ঠনালিতে আটকে এমন কাশি শুরু হলো যে, আর দাঁড়িয়েই থাকতেই পারলেন না। মাথা ঘুরে অঞ্জান হয়ে মাটিতেই  পড়ে গেলেন।

দামিনীর সেসবে ভ্রুক্ষেপ নেই । গোঁফেশ্বর দারোগার মুখের দু পাশে বার কয়েক আলতো টোকা মেরে বলতে লাগলেন – আরেহ্! রায় চোখ বুঁজে আছো কেন? অত ভয় পাবার কিছু নেই । লেডি ফ্রাঙ্কলিন বলছিলেন লাখ ছয়েক টাকার কথা। তবে মনে হয় চার লাখে উনি রাজি হয়ে যাবেন। তুমি আবার মাটিতে এভাবে শুয়ে পড়লে কেন? প্লীজ, ওঠো। তাড়াতাড়ি যাও । মা লক্ষ্মীদেবী স্বয়ং আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবেন? গেট আপ।

গোঁফেশ্বর দারোগা নিরুত্তর।

দামিনী রেগে কাঁই! আমাদের সামনে এখন সুযোগ এসেছে! এইভাবে চোখ বুঁজে পড়ে থাকলে, চলবে? ওঠো। নাহলে, দামিনী রীতিমতো ক্রুদ্ধ হয়ে বলে – অন্য কেউ গিয়ে দাঁওটা মেরে বসবে! তোমাকে কথা দিচ্ছি এর পরে তোমাকে আর কোনদিন টাকার জন্য প্রেসার দেবো না। বিশ্বাস করো, এচার লাখ টাকা দিয়ে একবার সিরিয়ালে ঢুকতে পারলেই কেল্লা ফতে! তখন আমার পয়সাইকে খাবে? ফিল্মের ডাঁইরেকটাররা এসে আমার দরজায় হুমড়ি খেয়ে পড়বে! তোমাকে তখন আর নেতা এবং সাহেবদের চোখ রাঙানি সহ্যওকরতে হবে না। দেখতেও হবে না। চাকরি ছেড়ে মার পিএগিরি করবে। কী মজা! শুধু কড়কড়ে নোট গুনবে আর আমার বডি-গার্ড হয়ে ঘুরে বেড়াবে!

গোঁফেশ্বর দারোগা প্রথমে পড়ে হিসেব করছিলেন, ছোটবাবু যে টাকা ঢোকার খবরটা দিলো – সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে ডেফিনিটলী সেসব হয় ব্ল্যাকমানি! নাহয় দু নম্বরী হুন্ডি কিংবা হাওলার টাকা! গিয়ে রেইড করতে পারলেই  মোটা অংকের দান মারা যাবে! আর ভবিষ্যতের চিন্তা করার প্রয়োজন হবে না। দু চার লাখ তো ব্যাপারই নয়। কায়দা-কৌশল করলে কোটিপতি হওয়াও হয়ে যেতে পারে!

চোখ বুঁজে চিন্তা করছিলেন আর ছক কষছিলেন, কাদের সঙ্গে নিয়ে কিভাবে রেইডটা করবেন? পাকরাও করে কোথায় প্রথমে নিয়ে গিয়ে তুলবেন? টাকাগুলো  নগদে নিয়ে কার এ্যাকাউন্টে জমা রাখবেন? ইত্যাদি ইত্যাদি। ঠিক এমন সময়েই দামিনী আর মেয়ে কিঙ্কিণী ছুটে এসে  টাকার জন্য প্যান-প্যানানি শুরু করে দিয়েছে! দামিনী আর কিঙ্কিণীর যা চেহারা! নাচ, গান, থিয়েটারের জন্য অভিনয় – সব শেখা হয়েছে, এখন বাকি আছে ফিল্মে অভিনয় করা! কে যে সেই  ডাইরেকটার যে ওদের – বিশেষ করে দামিনীর মতো অমন হোঁৎকা চার ফুটিয়াকে টাকার বদলে ফিল্মে চান্স দেবে! ওর তো টাকাটাও হজম হবে না।

গোঁফেশ্বর দারোগা  চোখ বোঁজা অবস্থাতেই নিজের মনে বলে চলেন – ভাগ্যিস পুলিশের দারোগার বউ  আর মেয়ে হয়েছে,তাইএত ঢং আর ভরং! দেমাকে মাটিতে যেন পা পড়ে না! এই হচ্ছে লোভের নীট ফল! নিজেকেই  দোষারোপ করে বলেন – শালা মিথ্যে ট্র্যাপে পড়েছিলো। বাপের এক মেয়ে। দশ বিঘা ধানি জমি, দোতলা বসত বাড়ি আর গোটা চারেক মাছের ভেরি। সবটাই  বাপের অবর্তমানে ওর প্রাপ্য। এখন দেখছে লবডঙ্কা ! শ্বশুরের একটা তো আইনতঃ স্বীকৃত বউয়ের বাইরে আরো তিন-চারটে বেনামী মেয়েছেলে ছিলো। তাদেরও  সন্তান আছে। তাই  প্রাপ্তি ভাগ্য এখন একদম জিরো! উল্টো সব চাপ বর্তমানে ওর ঘাড়েই  চেপে বসেছে!

– কী সাংঘাতিক ব্যাপার! গোঁফেশ্বর দারোগা চোখ বুঁজে নিজের মনে বলে চলেন – সিনেমায় নামবে! নিজে একার হচ্ছে না, কিঙ্কিণীকে দোসর বানিয়েছে! জামাই আর নাতিটার যে কী দশা হবে ভবে ভদ্রলোকের চোখ ঠেলে কান্না বেরিয়ে আসতে চাইছে। তাও  ঘাপটি মেরে পড়ে আছেন।

-কী হলো? কানে কথা যাচ্ছে না? দামিনী রীতিমতো ক্রুদ্ধ হয়ে মেয়ে কিঙ্কিণীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে – যা তো রান্নাঘর থেকে সবজি কাটার চাকুটা নিয়ে আয়। তোর বাবা যদি চট করে না উঠ যেখানে যেতে বলছি সেখানে না যায়, তাহলে আজ এই বুড়ো ভামটার গোঁফটাকেই কেটে উড়িয়ে দেবো। যে পুলিশ টাকার কালেকশনের উপযুক্ত খবর পেয়েও রেইড করতে যেতে ভয় পায়, অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে,তার অন্তত আর গোঁফওয়ালা দারোগা থাকা উচিৎ নয়। চল, ওটাকে ঘ্যাচাং ফু করি বলে মা আর মেয়ে দারোগাবাবুর গোঁফের দিকে চাকু হাতে এগোতেই, ভদ্রলোক তড়াং করে স্প্রিংয়ের মতো লফিয়ে উঠে ঘর থেক বেরিয়ে লুঙ্গি পরা অবস্থায় থানার দিকে ঊর্ধশ্বাসে দৌড় লাগালেন

পুন্ডরিকাক্ষ পূর্ণপাত্র বড়বাবুর ওইভাবে লুঙ্গি পরে থানাক ছুটে আসা দেখে রীতিমতো অবাক হয়ে নিজের মনেই বলে উঠলেন  – ব্যাংক এ্যাকাউন্টে বেআইনী টাকা জমা পড়ার সংবাদটা পেয়েই স্যারের যেন মাথাটা খারাপ হয়ে পড়েছে! রেইডে নিজেই যাবেন বলেছেন বটে, কিন্তু পোশাকটা ওপরে বেরিয়ে আসার কথা মনে নেই । কিন্তু  …., স্যারকে এখন কিভাবে জানাবো যে, সংবাদটাতে একটু ভুল থেকে গেছে। ব্যাংকের এ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়া এখনো শুরু হয়নি। পড়া শুরু হবে বলে সব্বাই গিয়ে ব্যাংক আর পোস্ট-অফিসে গিয়ে ভীড় জমিয়েছে। বড়-সাহেব ব্যাপারটা জেনে পুলিশ পোস্টিং করতে বলেছেন।

– কিন্তু, কী দেখছে সে!

পুন্ডরিকাক্ষ পূর্ণপাত্র দাঁড়িয়ে দেখলেন বড়বাবু থানার দিকে ছুটে আসছেন আর কাঁদো স্বরে বলে চলেছেন – মেজবাবু? আমায় এই জহ্লাদদের হাত থেকে বাঁচান। আমার সব শখ আহ্লাদ আর ইচ্ছের তেশ মারা গেছে। প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম মেজবাবু? তখন এই দামিনী কী ভদ্র এবং নরম স্বভাবের ছিলো। সাত চড়ে রা কাটতো না। ওই মেয়েটা বড় হতেই দামিনী খোলস পাল্টে নিয়ে এই সর্বগ্রাসী রূপ ধারন করেছে। কথায় কথায় টাকা দেওয়ার জন্য এরা মানে ওই মা এবং মেয়ে আমার উপরে চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। না দেবার কথা বললেই আমার এইশখের গোঁফটার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ছে – ওটাকে মার্ডার করবে বলে! জানেন, এটা ওদের থার্ড এ্যাটেমেপ্ট ! আমি আর ….

গোঁফেশ্বর দারোগা তার কথা শেষ করতে পারেননি, দামিনী আর মেয়ে কিঙ্কিণীও এসে হাজির। কিছু বলতে যাবার আগেই ছোটবাবু এগিয়ে এসে নিজের হাত দুটো কচলাতে কচলাতে বলতে লাগলেন – স্যার? মাপ চাইছি। বাসায় যে খবরটা দিতে গিয়েছিলাম সেটার একটু ভুল ছিলো। ব্যাংকের এ্যাকাউন্টে স্যার বেআইনী টাকা এখনো জমা পড়েনি। তবে, খুব তাড়াতাড়িই জমা পড়বে। খবর চাউর হয়েছে মাস খানেকের মধ্যেই  প্রত্যেকের এ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকবে। তাই লোকজন সব ব্যাংক এবং পোস্ট-অফিসে ভীড় জমিয়েছে জিরো ব্যালেন্স এ্যাকাউন্ট খুলবে বলে। গোটা এলাকা যেন ভেঙে পড়েছে। বড়সাহেব পুলিশ ফোরস ডিটেইল করতে ….

গোঁফেশ্বর দারোগা  পুন্ডরিকাক্ষ পূর্ণপাত্রের দিকে তাকিয়ে রীতিমতো খেঁকিয়ে বলে উঠলেন – স্যাআআআর একটু ভুল হয়ে গেছে। শুড্বাডা বুড়ো, বাড়িতে ব্যাংক এ্যাকাউন্টে বেআইনী টাকা জমা পড়ার সংবাদটা ফিসফিস করে বলে এসে আমার সংসারে আগুন লাগিয়ে বসেছেন।

যান মশাই, দেখুন কিভাবে আগুনটা নেভাতে পারেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − two =