ড্রাগন ফল

মহবুব আলম

ফলের নাম ড্রাগন ফল। এটি একটি অধিরোহী গুল্মজাতীয় ক্যাকটাস। পৃথিবীর বুকে প্রথম পরিচয় শোভা বর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসাবে, পরবর্তীকালে অন্যতম সুস্বাদু এবং অভিনব ফল হিসাবে খ্যাতিলাভ করে। মূলতঃ অস্ট্রেলিয়া, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশে ড্রাগন ফলের চাষ হয়। এই গাছের ফুল এতই সুন্দর যে ফুলটিকে “কুইন অফ দ্য নাইট” আখ্যা দেওয়া হয়েছে। নাইট্রোজেনের চাহিদা। অন্যান্য ফলের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এটি জৈব সার এবং কম্পোস্ট সহযোগে চাষ করা সম্ভব।

হাইলসেরেয়াস মহাজাতিভুক্ত ড্রাগন ফলের ১৮ রকমের গ্রীষ্মপ্রধান আমেরিকান প্রজাতি বর্তমান। খাদ্যতালিকাভুক্ত অধিরহী ক্যাকটাস প্রজাতি দুটি আলাদা মহাজাতির অন্তর্গত যথা হাইলসেরেয়াস এবং সেলেনিসেরেয়াস।

কয়েকটি প্রজাতির তালিকা :

১.প্রজাতি                 ২.ফলের খোসার রং         ৩.শাসের রং

হাইলসেরেয়াস আন্দাতাস              লাল                 লাল

হাইলসেরেয়াস আন্দাতাস             লাল                সাদা

হাইলসেরেয়াস ট্রাইঅ্যাঙ্গুলারিস         হলুদ                  সাদা

হাইলসেরেয়াস কোস্টারিসেন্সিস         লাল                লাল   

হাইলসেরেয়াস পলিরিজাস            লাল                 লাল  

হাইলসেরেয়াস ওকাম্পনিস              হলুদ                 লাল

সেলেনিসিরিয়াস মেগাল্যান্থাস            হলুদ                সাদা

এই ফল বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন চীনে যুনলংগুও, কলম্বিয়ায় পিটাহায়া, ফ্রান্সে পিটায়া, হাওয়াইতে পাপ্লি পুয়া, ভেনেজুয়েলাতে পিটাজায়া, স্পেনে চাকা ইত্যাদি। এই গাছের ফুল উভয়লিঙ্গ আকারে বড় এবং রাত্রিবেলায় ফোটে। রাতের বেলায় পরাগযোগ না হলে ফুলটি পরের দিন সকাল পর্যন্ত খোলা থাকে। ফুল ফোটা দিনের দৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করে। স্বাভাবিক ভাবে বাদুড় এবং হক মথ পরাগযোগে সহায়তা করে। এছাড়াও ভোরবেলায় মৌমাছি সক্রিয়ভাবে পরাগায়ণ করে।

ড্রাগন ফল একটি নন্ ক্লাইমেট্রিক ফল (গাছ থেকে পাড়ার পরে পাকে না)। ফল ধারন করার ২৮-৩০ দিনের মধ্যে ফল পেকে যায়।।

এটি অত্যন্ত গুনমাণ সম্পন্ন একটি ফল। একটি পরিপূর্ণ ফলে (হাইলসেরেয়াস আন্দাতাস) প্রোটিন, ফ্যাট, ফাইবার, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন এবং ভিটামিন ইত্যাদি থাকে। কোলন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস নিরাময়ে, কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে এই ফল। রক্তে উচ্চমাত্রায় সুগার এবং রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রনেও এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এছাড়াও দাঁত ও হাড়ের গঠন মজবুত করে।

গাছের পরিচর্যাগত খরচ এবং পরিশ্রম তুলনামূলকভাবে কম হওয়ার কারনে কৃষকদের মাঝে এটি সাড়া ফেলে দিয়েছে। রোগ পোকার আক্রমণও নূন্যতম অথবা নেই বলতে গেলেই চলে। তবে সবচেয়ে বড় সুবিধা হল একবার লাগানোর পর প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত ফল ধারণ করতে সক্ষম এই ক্যাক্টাস জাতীয় গাছ। দ্বিতীয় বছর থেকেই ফলন পেতে পারবেন কৃষকরা এবং তৃতীয় বছর থেকে পূর্ণরূপে ফলন দিতে শুরু করবে। বর্তমানে দুই প্রজাতির ড্রাগন ফল ব্যবসায়ী ভিত্তিতে চাষ হচ্ছে। একটি প্রজাতির শাঁস হল সাদা (হাইলসেরেয়াস আন্দাতাস) এবং অন্য প্রজাতির শাঁস হল লাল রঙের (হাইলসেরেয়াস আন্দাতাস)। দুটি ফলেরই পাকা অবস্থায় খোসার বাইরের রং গোলাপী লাল।

বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ড্রাগন ফলের পরীক্ষামূলক চাষ সাফল্য পেয়েছে এবং ফলস্বরূপ ইহার গুণমান বৃদ্ধির স্বার্থে গবেষণার কাজও শুরু হয়ে গেছে। ড্রাগন ফলের চারা তৈরী করাও খুবই সহজ। ডাল (শাখা) কেটে প্যাকেটে অথবা মাটিতে লাগিয়ে দিলে ৭-৮ সপ্তাহে চারা তৈরী হয়ে যাবে। গত কয়েক বছর ধরে। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রাগন ফলের পরীক্ষামূলক গবেষণার কাজ শুরু হয়েছে। দেখা গেছে যে বীজ থেকে ও জায়মান (শাখা থেকে) উভয় পদ্ধতিতে প্রজনন সম্ভব কিন্তু জায়মান পদ্ধতি অপেক্ষাকৃত সহজ এবং সুলভ। পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা থাকলে সারা বছর ধরেই চারা তৈরির অনূকুল পরিবেশ পাওয়া যায়। তবে শীতকালে গাছ সুপ্তাবস্থায় চলে যায় বলে এই সময় ফল উৎপাদন এবং চারা তৈরির কাজ বন্ধ থাকে। সাধারণত ২৫-৩০ সেমি দীর্ঘ শাখাংশ চারা তৈরীর কাজে ব্যবহার করে খুব শীঘ্ৰ কলম পাওয়া যায় (লাগানোর ১৪ মাসের মধ্যে)।

ড্রাগন ফলের চাষের জন্য খোলামেলা এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোকের প্রয়োজন। ছায়াযুক্ত জায়গা চাষের জন্য প্রতিকূল। ড্রাগন ফল অধিরোহী ক্যাকটাস হওয়ায় এর শাখা প্রশাখার অবলম্বন হিসাবে কংক্রিট পোল অথবা কাঠের পোল দরকার। এটি দীর্ঘমেয়াদী গাছ, তাই কংক্রিট পোল দীর্ঘস্থায়ী অবলম্বন হিসাবে উপযুক্ত। একটি ৩-৪ বছরের গাছের ওজন প্রায় ১০০ কেজি পর্যন্ত হয়। পোলটি ২মি উচ্চতাসম্পন্ন এবং ৬০সেমি মাটির নীচে থাকা আবশ্যিক। এক একটি পোলের নীচে সাধারণত ৪টি চারা লাগানো হয়।

এক একটি পরিপূর্ণ ফলের ওজন প্রায় ৩৫০ গ্রাম করে হয়। সঠিক পরিচর্যা পেলে তৃতীয় বছরে বিঘা প্রতি এর ফলন হয় প্রায় ৪০০০-৫০০০ কেজি। ড্রাগন ফল পাওয়া যাবে জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। বর্তমানে এই ফলের পাইকারি বাজারদর ২৫০ টাকা। কেজি। খুবই অর্থকরী এই ফলের চাহিদা বাজারে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ড্রাগন ফলের ব্যাপারে কৃষকেরা আরও বিস্তারিত জানতে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল ও বাগিচা পরিচর্যা বিভাগে যোগাযোগ করতে পারেন।

লেখক বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের  ফল বিজ্ঞান বিভাগ, উদ্যানবিদ্যা অনুষদের কৃষি গবেষক

2 thoughts on “ড্রাগন ফল

  • August 30, 2019 at 3:13 am
    Permalink

    আমি মুর্শিদাবাদ এর রঘুনাথগঞ্জ এ থাকি।কেমন করে এর চারা পেতে পারি জানালে খুশি হবো ।

    Reply
    • September 1, 2019 at 10:25 am
      Permalink

      Prof. Md Abu Hasan
      Department of Fruit Science, B C K V
      Mob. 09433387586

      Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − seven =