ড: খালকোর চেম্বার

বটু কৃষ্ণ হালদার ##

রাত প্রায় একটা নীলাচল এক্সপ্রেস এসে দাঁড়াল আদ্রা স্টেশনে, বড়বাবু নেমে পড়ে, স্টেশন পুরো ফাঁকা, বৃষ্টি তখনও টুপ টুপ ঝরে চলেছে, কয়েকজন আর পি এফ পুলিশ এসে জিজ্ঞেস করে-

আপনি কোথায় যাবেন?

বড় বাবু উত্তর দেয়, আমি চাণ্ডিল পি ওয়ে অফিস এর বাবু, যাবো পুরুলিয়াতে কিন্তু এত রাতে তো কোনো গাড়ি নেই কি যে করি

এক জন পুলিশ জবাব দেয় স্টেশন চত্বর বাজারের মাস্তান রঘু খুন হয়েছে সন্ধ্যায় তাই সব জায়গায় পাহারা চলেছে, আপনার তো এখানে থাকা হবে না বড় বাবু,

ঠিক আছে আমি তাহলে রেল হাসপাতালে একটু যোগাযোগ করি, চলি, নমস্কার জানিয়ে বড়ো বাবু রওনা দেয় হাসপাতালে 

ইমারজেনসি ওয়ার্ড এর নার্স টা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে, বড় বাবু টেবিলে টোকা দিতে ধড়  ফড় করে জেগে উঠে, কে?  কে? বলে চিৎকার করে ওঠে

তার পর বলে কাকে চাই?

ওরে বাবা পেটে যন্ত্রণা হচ্ছে খুব, আর সহ্য হচ্ছে না ম্যাডাম পেটে হাত বোলাতে থাকে বড় বাবু 

নার্সটি চশমা টা নামিয়ে তার দিকে কট কট করে তাকিয়ে কি যেনো দেখতে থাকে

বড় বাবু একটু ভয় পেয়ে যায়

নার্সটি দৌড়ে ভিতরে চলে যায়, মিনিট দুই তিন পর ফিরে আসেন, একা নন সদলবলে, প্রায় চার জন.

গেলেন একা এলেন চার জনকে সঙ্গে নিয়ে, তিন জন মহিলা, এক জন পুরুষ 

বড়ো বাবু এবার সত্যই ভয় পেয়ে গেলেন. ব্যপারটা তার বোধগম্য হচ্ছে না কোনো মতে, তার উপর হাসপাতাল একেবারে ফাঁকা, দুই একটা জীর্ণ রোগী ভর্তি কেবল মাত্র যে কোনও মুহূর্তে হয় তো টেসে যাবে, মনে মনে ভাবতে লাগল, তবে কি রেল কর্মীদের কোনো অসুখ করছে না.

হঠাৎ লোকটি বড় বাবুর দিকে এগিয়ে এলেন, জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে আপনার?

ডাক্তার বাবু আমার তল পেটে খুব ব্যথা. 

ডাক্তার হাত দিয়ে সেই জায়গায় টিপতে থাকে,

বড় বাবু উফ বলে আওয়াজ করে. 

কেশ তো সিরিয়াস মনে হচ্ছে, আপনি ভর্তি হয়ে যান, কয়েকটা ওষুধ দিচ্ছি খাবার খেয়ে, খেয়ে নেবেন, তার পর কাল সকালে যা করার করব.

একটা নার্স তাকে নিয়ে গিয়ে বেড দেখিয়ে বলে, আপনি এখানে জামা কাপড় ছেড়ে রেস্ট নিন, একটু পরে আপনার খাবার ও ওষুধ  দিয়ে যাবে, 

বড় বাবু অগত্যা জামা কাপড় ছেড়ে বেডে, ফ্রেশ হয়ে শুতে যাবে, এমনে সময়ে  দুরের বেড দিয়ে একটা হাসির আওয়াজ শুনে চমকে ওঠে, 

এত রাতে এ কার হাসি, ভূতের নয় তো, হাসপাতাল গুলো তে তো আবার এমন অপঘlতি আত্মার কথা অকছার মিথ্যা নয়, পিছন ফিরে তাকাতে আঁতকে ওঠে বড়ো বাবু, 

একটা বুড়ো, দাঁত নেই, টাক মাথা, কালো কুচকুচে, পাঁজরের হাড় বেরিয়ে আসতে চাইছে, বুক থেকে,

এখানে কি মনে করে এসেছেন বাবু, আমি তো মরা রুগ্ন মানুষ বটে, পালিয়ে যান, পালিয়ে যান, এ ডাক্তার নয় বাবু, কসাই বটে, পালিয়ে যান, হে হে, হে, হাসতে হাসতে গিয়ে নিজের বেড এ শুয়ে পড়েন,

একটা নার্স এসে খাবার টেবিল এ খাবারটা রাখে, উঠে পড়ুন খেয়ে নিন, ওষুধ টা একটু পরে দিয়ে যাচ্ছি,

এমনিতেই এই সব কান্ড দেখে বাবুর খিদে গেছে ঘুছে, শুধু ভাবছে, একটু রাত কাটানোর মিথ্যা অজুহাতে, সত্যই প্রাণটা যাবার জোগাড়, উপায় নেই দেখে খাবারটা খেতে থাকে,

মনে মনে বলে আগে তো খাবার টা একটু খেয়ে নিন, তার পর ভাবl যাবে, কোনো মতে ইচ্ছার বিরুদ্ধে খেতে থাকে,

পিছন থেকে কে যেনো বলে খেয়ে নেন বাবু, ভালো করে খেয়ে নেন, হে হে হে…. 

এমনে সময় একজন লোক কে তার কাছে আসতে দেখে বাবু র একটু সাহস হয়, তার হাতে গোটা কয়েক ওষুধ এর প্যাকেট, ভাবে যেই আসুক না কেন এর রহস্য আমি উন্মোচন করবোই.

লোকটি কাছে আসতেই জিজ্ঞেস করে আরে বাবু আপনি এ অসময়ে এখানে?

কে বটে রে, নন্দী নাকি?

চিনতে পারলেন তাহলে, আমি সেই অধম বাবু,

তা আপনি কেনো এখানে মরতে এলেন?

সব ঘটনা খুলে বললেন, কিন্তু হাসপাতালের এই অবস্থা কেনো রে?

দাঁড়ান বাবু,, নন্দী এদিক ওদিক তাকিয়ে মেন দরজা টা আস্তে করে বন্ধ করে দেয়, তার পর একটা ব্যাগ থেকে বোতল বার করে, কি যেনো ঢাললো, কাঁচের গ্লাসটাতে , নিন বড় বাবু

এসব জোগাড় ও তোর কাছে আছে তাহলে. 

কি যে বলেন বাবু, আমি তো আপনার শিষ্য বটে, নিন,  তার পর দেখে

বড়ো বাবু এক নিশ্বাসে সে টুকু শেষ করে, আরো একটু ঢেলে দেয় গ্লাস এ 

বছর দুই আগে এসেছিলাম এখানে, আমাদের অফিসের রবি ও ভর্তি ছিল পা ভেঙে, জানিস আমি তো ডাবের মধ্যে মদ ভরে এনেছিলাম রবির জন্যে, মনে আছে তোর 

সে কথা বলতে, কিন্তু এখন খুব খারাপ অবস্থা হাসপাতালের, শুনেছি ডাক্তার নাকি ভগবান, আর এত কসাই বাবু, রোগী ভর্তি হলে, আগে অপারেশন করার জন্যে ছটফট করতে থাকে, কি রোগ হয়েছে জানার দরকার নেই, এখন দেখ বেন  চলুন, যন্ত্রপাতিগুলো পূজা করছে, আপনাকে অপারেশন করবে বলে

কি বলিস রে, আমাকে বাঁচা রে নন্দী, 

বাবু ওই পিছনের দিকে একটা ভাঙা দরজা আছে, আমি খিল টা খুলে দিচ্ছি, ওখান দিয়ে বেরিয়ে পাঁচিল টপকে সোজা দক্ষিণ দিকে দৌড়াতে থাকবেন, ওই ভাবে  অনেকেই বাঁচিয়ে ছি, কিন্তু সাবধানে লাফ দেবেন কিন্তু, নিন প্যান্ট জামা পরে নিন

বড়ো বাবু সুযোগ বুঝে সব গুছিয়ে নেয়, নন্দী দরজা টা খুলে দেয়,

বাবু বেরিয়ে গিয়ে সোজা লাফ দিয়ে দৌড়াতে থাকে প্রাণ পনে

কয়েকটি কুকুর ঘেউ ঘেউ করতে করতে বাবুর পিছনে পিছনে ধাওয়া করে, অবশেষে স্টেশনে পৌঁছায়, সেখানে হাপাতে হাপাতে একটা চেয়ারে গিয়ে বসে, তখন সময় প্রায় সাড়ে পাঁচটা, হাওড়া চক্রধর পুর প্যাসেঞ্জার গাড়ির আসার সময় হয়েছে, গ্রীন সিগন্যাল টা জ্বলজ্বল করছে, গাড়ি প্লাটফর্ম এ আসে, বাবু সোজা গাড়ি তে উঠে গিয়ে, একটা সিট এ শুয়ে পড়ে.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − 6 =

preload imagepreload image