বজ্রপাত প্রতিরোধে তাল গাছ

অগ্নিভ হালদার, বিশ্বভারতী, শ্রীনিকেতন ##

অতি প্রাচীনকাল থেকেই নানান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাবে মানব সভ্যতা তথা জীবজগৎ বিপন্ন হয়ে উঠেছে বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, শৈত্য এবং তাপপ্রবাহ এসবের  পাশাপাশি  অন্যতম প্রাকৃতিক বিপর্যয় হল বজ্রপাত যাহা ক্ষণস্থায়ী কিন্তু অপূরণীয় ক্ষতি করে দিতে সক্ষম আমাদের  দেশের গাঙ্গেয় সমভূমির তথা বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি  এবং  জীবনহানির কারণ হলো এই বজ্রপাত । বিভিন্ন পরিবেশগত কারণে এর পরিমাণ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে । চলতি বছরে বজ্রপাতের ফলে ভারতবর্ষের ১০০ জনের  মৃত্যু ঘটেছে তার মধ্যে  ৮৩ জন বিহারের গাঙ্গেয় সমভূমির বাসিন্দা এবং বাংলাদেশের মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২৫ জনের এরা বেশিরভাগই হলেন কৃষিজীবি মানুষ এবং কৃষিজমিতে কর্মরত অবস্থায় বজ্রপাতের ফলে  এই দুর্ঘটনা ঘটে ।

প্রচলিত আছে- বজ্রপাত হলে তা তালগাছ বা অন্য কোনো বড় গাছের ওপর পড়ে আর বজ্রপাতের বিদ্যুৎরশ্মি গাছ হয়ে তা মাটিতে চলে যায়। এতে জনমানুষের তেমন ক্ষতি হয় না।

থাইল্যান্ডে তালগাছ লাগিয়ে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে আমাদের প্রতিবেশী দেশ, বাংলাদেশেও এখন প্রচুর তাল গাছ লাগিয়ে,  একই ভাবে প্রাকৃতিক বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা  গড়ে  তোলার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য নানা প্রকল্প হাতে দিয়েছে সে দেশের সরকার। আর এ কারণেই গুরুত্বহীন তালগাছের গুরুত্বও বেড়ে গেছে। কারণ তালগাছ বজ্র নিরোধক  হিসেবে কাজ করে।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, গ্রামে-গঞ্জে প্রচুর পরিমাণে তালগাছ ও নারিকেল গাছ থাকলে বজ্রপাতে মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। শক্ত-মজবুত গভীরমূলী বৃক্ষ বলে ঝড়-তুফানের বাতাস প্রতিরোধ  এবং  মাটি ক্ষয় রোধে তালগাছের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

 প্রায় সব ধরনের মাটিতে তালগাছ জন্মায় এবং রোপণ করাও খুবই সহজ। একটু মাটি খুঁড়ে আঁটি/বীজ পুঁতে রাখলেই গাছ জন্ম নেয়। তালগাছ কষ্টসহিষ্ণু হওয়ার ফলে নুন্যতম পরিচর্যারও দরকার হয় না । দীর্ঘকায় ও ডালপালা না থাকায় ফসলের বা চলাচলের পথে বাধা হয় না। সড়ক, মহাসড়ক, বাঁধ, ভেড়িবাঁধ, রেললাইন, পুকুর পাড়, খালের পাড়, নদীর পাড়,  জমির আল,  পতিত জমি এমনকি বাড়ির আশপাশের সীমানা তালগাছ রোপণের উপযোগী স্থান। একটি তালগাছ উচ্চতায় ২০ থেকে ২৫ মিটার হয়ে থাকে এবং ১৪০ থেকে ১৫০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। তালগাছের মঞ্জুরির রঙ হলুদ, লম্বা আকৃতির। বসন্তে গাছে ফুল ধরে।

 শুধু সৌন্দর্যে এবং প্রাকৃতিক দূষণ রোধেই নয়, তালগাছ আমাদের অনেক উপকারে আসে। তাল শাঁস গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।

পশ্চিমবঙ্গের  সব স্থানে কম-বেশি  তালগাছ  চোখে পড়লেও রাঁঢ় অঞ্চল এবং উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে (বীরভূম, বাঁকুড়া, দুই বর্ধমান, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম , দুই মেদিনীপুর এবং দঃ ২৪ পরগনা ) তুলনামুলক ভাবে প্রচুর তাল গাছ দেখা যায় ।

তালগাছ থেকে যেসব উপকরণ তৈরি হয়- হাতপাখা, মাদুর, টুপি, ঘরের ছাউনি, চাটাই, ছাতা, ঝুড়ি, ব্রাশ, পাপোশ, ছোট বাস্কেট, মাছ ধরার চাঁই, লাকড়ি প্রভৃতি। পুরুষ গাছের ফুল বা  জটা হতে রস সংগ্রহ করে তা দিয়ে গুড়, পাটালি, পিঠা, পায়েস ইত্যাদি তৈরি করা হয়। কাঁচা তালের রস শরীরের জন্য বেশ উপকারী । এছাড়া তালের রস দিয়ে তৈরি হয় তালমিছরি।  

পাকা ও কাঁচা দুই ভাবেই তাল খাওয়া যায়। কচি তালের নরম শাঁস মুখরোচক পুষ্টিকর, শরীরের জলশূন্যতা ও ক্লান্তিহীনতা দূর করে, খাবারে রুচি বাড়ায়, লিভার সমস্যা, রক্তশূন্যতা, প্রভৃতি রোগেও তালের ভূমিকা অসামান্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five + 10 =