সহজ চাষ যোগ্য বিষ্ময়কর এবং বিষহীন মিষ্টতার উৎস স্টেভিয়া

অগ্নিভ হালদার, বিশ্বভারতী, শ্রীনিকেতন ##

মিষ্টি আমাদের অনেকেরই প্রিয় খাদ্য এবং মিষ্টির এই মিষ্টতার বহুল প্রচলিত উৎস হলো চিনি । কিন্তু এই চিনি ডায়াবেটিস সহ বহুবিধ মারণব্যাধির অন্যতম কারণ । এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে এমন একটি উদ্ভিদ হল স্টেভিয়া ।এই স্টেভিয়া পৃথিবীর এক অত্যাশ্চর্য মিষ্টি গুল্ম জাতীয় ভেষজ গাছ। এ গাছ শত শত বছর ধরে প্যারাগুয়ের পাহাড়ি অঞ্চল রিওমন্ডে এলাকায় ব্যবহৃত হতো। প্যারাগুয়ের গুরানী ইন্ডিয়ান নামক উপজাতীয়রা একে বলে কা-হি-হি অর্থাৎ মধু গাছ। আফ্রিকাতে এটি মধু পাতা বা চিনি পাতা নামে পরিচিত। এছাড়াও থাইল্যান্ডে মিষ্টি ঘাস ও জাপানে আমাহা সুটেবিয়া বলে অবিহিত করা হয় ।

স্টেভিয়ার পরিচিতিঃ

অস্বাভাবিক মিষ্টি এবং ভেষজগুণ সম্পন্ন এই স্টেভিয়া গাছটির উদ্ভিদতাত্ত্বিক সংক্ষিপ্ত পরিচিতি হলো-এটি একটি বহু বর্ষজীবী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। ইহা কম্পোজিট ফ্যামিলির অন্তর্ভুক্ত এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Stevia rebaudiana । স্টেভিয়া সর্বোচ্চ ৬০-৭০ সেন্টিমিটার উচ্চতা বিশিষ্ট হয়। সবুজ রঙের পাতাগুলো কান্ডের সাথে বিপরীতমুখী বিন্যাসে থাকে এবং পাতার কিনারা খাঁজ কাটা ও বর্শাকৃতির। উদ্ভিদটি অনেকটাই এ্যাস্টার ফুল গাছের মতো। এর ফুল ছোট ও সাদা রঙের এবং কীটপতঙ্গ দ্বারা পরাগায়িত হয় । এর বীজ এন্ডোস্পারম যুক্ত ক্ষুদ্রাকৃতির ।

স্টেভিয়া চাষের ইতিহাস এবং বর্তমান পরিস্থিতিঃ

স্টেভিয়ার আদি নিবাস প্যারাগুয়ে । ১৮৮৭ সালে সুইজারল্যান্ডের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ড. এম.এস বার্টনি স্টেভিয়াকে প্রথম বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেন।  । ১৯৬৪ সালে প্যারাগুয়েতেই প্রথম স্টেভিয়ার বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু হয়। এরপর বিভিন্ন দেশে বিশেষত ব্রাজিল, কলম্বিয়া, পেরু, চীন, কোরিয়া, আমেরিকা, কানাডা, ইসরাইল, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড, মালেশিয়াসহ প্রভৃতি দেশে এটি ফসল হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়। এশিয়াতে ৭০-এর দশকের প্রথম দিকে এই উদ্ভিদ পরিচিতি লাভ করে এবং তখন থেকে বাণিজ্যিক ভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে এটিকে৷ জাপানে চাষাবাদ শুরু হয় ১৯৬৮ সালে। ভারতের রাজস্থান,মহারাষ্ট্র, কেরল এবং উড়িষ্যা রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রতিক কালে স্টেভিয়া সাফল্যের সাথে চাষ হচ্ছে । ২০১১ সালে ইউরোপিয় ইউনিয়ন (ইইউ) স্টেভিয়া ব্যবহারের ছাড়পত্র দিয়েছে। এখন চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্টেভিয়া উত্পাদনকারী দেশ৷ বিশ্বের ১০ শতাংশ স্টেভিয়া উত্পাদন করে দেশটি৷

স্টেভিয়ার গুণাগুণঃ 

স্টেভিয়া গাছটির সবুজ পাতাই মূলত কার্যকরী মিষ্টি উপাদানের প্রধান উৎস । স্টেভিয়ার পাতা চিনি অপেক্ষা ৩০-৪০ গুন বেশি মিষ্টি । স্টেভিয়ার পাতায় ০.৩ % ডালকোসাইড, ০.৬ % রেবাওডিওসাইড সি, ৩.৮ % রেবাওডিওসাইড এ এবং ৯.১ % স্টেভিয়াসাইড থাকে । এই স্টেভিয়াসাইড নামক পদার্থটিই চিনি অপেক্ষা ৩০০ গুন বেশি মিষ্টি।

স্টেভিয়ার উপকারী দিকঃ

ব্রাজিলের অধ্যাপক সিলভিয়ো ক্লাউডিও দা কস্তা মনে করেন, স্টেভিয়া ভোজ্যপণ্যের বাজারে এক বিপ্লব আনতে পারে৷ তিনি বলেন, “আমি গ্লাইকোসাইড, বিশেষ করে রেবাউডিয়োসাইড এর বিস্ময়কর গুণাগুণের কথা জানি৷ ২৫ বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছি আমি৷ এটি একটি প্রাকৃতিক পদার্থ, যাতে ক্যালরি নেই, দন্তরোগের ঝুঁকিও কম৷”

Ø ক্যালরিমুক্ত এই মিষ্টি, ডায়াবেটিক রোগী সেবন করলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ পরিবর্তন হয় না, তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিনির সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক বিকল্প।

Ø এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করে, যকৃত, অগ্ন্যাশয় ও প্লীহায় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে।

Ø স্টেভিওসাইড অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণে সহায়তা করে, ত্বকের ক্ষত নিরাময় ও দাঁতের ক্ষয় রোধ করে, খাদ্য হজমে সহায়তা করে, শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে, শরীরের সুস্থতা ও সতেজতাবোধ সৃষ্টি করে।

Ø এটি ব্যাকটেরিয়া সাইডাল এজেন্ট হিসাবে কাজ করে, স্কিন কেয়ার হিসাবে কাজ করে বিধায় ত্বকের কোমলতা এবং লাবণ্য বৃদ্ধি করে, স্বাদ বৃদ্ধিকারক হিসাবে কাজ করে।

স্টেভিয়ার ব্যবহার এবং বিতর্কঃ

বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৫ কোটি মানুষ স্টেভিয়া ও এর নির্যাস কাজে লাগায়, মিষ্টি জাতীয় খাবারে চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়,

বিভিন্ন সময় চিনি রফতানিকারক দেশসমূহ ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো স্টেভিয়াতে বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে বলে প্রচারণা করলেও সাম্প্রতিক সময়ে USFDA (United State Food and Drug Administration) এর গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে এর মধ্যে কোনো বিষাক্ত পদার্থ নেই।

স্টেভিয়া ব্যবহার করে নানা রকম খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে এখন পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে । দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত এ ঔষধি গাছের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।

স্টেভিয়ার সবুজ ও শুকনো পাতা সরাসরি চিবিয়ে কিংবা জলে ফুটিয়ে খাওয়া যায়।

চা ও কফিতে স্টেভিয়ার ব্যবহার বিশ্বব্যাপী।

এছাড়া মিষ্টি, দই, বেকড ফুড, আইসক্রিম, কোমল পানীয় ইত্যাদি তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।

ইহা খাবারের গুণাগুণ বৃদ্ধি করে ও সুগন্ধ আনয়ন করে।

পানীয় প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলিও এগিয়ে এসেছে৷ সেই ২০০৭ সালে কোকাকোলা সুইটনার্স-এর বিকল্প হিসাবে স্টেভিয়া ব্যবহার করেছে৷ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও অ্যামেরিকায় স্টেভিয়া মিশ্রিত লেমোনেড পাওয়া যায়৷ প্রতিদ্বন্দ্বী পেপসিও এব্যাপারে পিছিয়ে থাকেনি৷ তার পানীয়তে মেশাচ্ছে এই উদ্ভিদের নির্যাস৷ কিন্তু সনাতন চিনির স্থান দখল করতে পারেনি এই উদ্ভিদটি এখনও৷ এই উদ্ভিদটির পক্ষে ও বিপক্ষে চলছে তর্ক ও বিতর্ক৷

চীনে ব্যাপকভাবে স্টিভিয়ার চাষ হয়ে থাকলেও বাণিজ্যিক ব্যবহারের দিক দিয়ে জাপান অনেক অগ্রসর। জাপানে প্রায় ৪০% মিষ্টির চাহিদা মেটানো হয়ে থাকে স্টিভিয়া দিয়ে। অতি আনন্দের বিষয় স্টিভিয়া পার্শ্ববর্তী দেশসহ বর্তমানে আমাদের দেশেও দিন দিন ব্যাপক পরিচিতি লাভ করছে। জাপানে হালকা পানীয় কোকাকোলাতে স্টেভিয়া ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও কনফেকশনারি, ক্যান্ডিসহ বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্যে চিনির বিকল্প হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়।

স্টেভিয়া চাষের পদ্ধতি উপযুক্ত পরিবেশঃ

স্টেভিয়া উদ্ভিদটির সাধারণত রৌদ্র পছন্দের এবং এটি ছোট দিনের উদ্ভিদ।

পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া ও জলবায়ু স্টেভিয়া চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এখানে সারা বছরই স্টেভিয়া চাষ করা সম্ভব। সুনিষ্কাশিত ও জৈব পদার্থযুক্ত উচু বেলে দো-আঁশ মাটি স্টেভিয়া চাষের জন্য ভালো। মাটির পিএইচ (অম্ল ও ক্ষার নির্দেশক) ৬.৫ থেকে ৭.৫ থাকা ভালো। লবণাক্ত মাটিতে এই গাছের চাষ না করাই উচিত । অতিরিক্ত জল নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকা দারকার ।

স্টেভিয়া চাষের পদ্ধতিঃ

স্টেভিয়াকে টিস্যু কালচার পদ্ধতি, স্টেম কাটিং এবং বীজের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করা যায়। তবে টিস্যু কালচার সবচেয়ে ভালো ও লাভজনক পদ্ধতি। কারণ স্টেম কাটিং এ সফলতার হার খুবই কম এবং কাটিং এ শিকড় গজাতে অনেক বেশি সময় লাগে। বীজ থেকে চারা গজালেও অঙ্কুরোদগমনের হার থাকে খুবই কম। এর বাজার সৃষ্টি না হওয়ায় আমাদের দেশে তথা রাজ্যে এটি এখনো জনপ্রিয় হয়ে উঠে নি তাই কেউ স্টেভিয়া চারা ক্রয় করতে চাইলে বিভিন্ন বেসরকারি নার্সারি থেকে এর চারা সংগ্রহ করতে পারবেন ।

জমিতে গাছের সংখ্যানির্ভর করে মাটি ও আবহাওয়ার ওপর। তবে লাভজনকভাবে চাষের জন্য বিঘা প্রতি ৫ হাজার গাছ লাগানো উত্তম।

বছরের যে কোনো সময় চাষ করা যায়। তবে জানুয়ারী থেকে মার্চ (মধ্য পৌষ থেকে মধ্য চৈত্র) মাসে চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে চাষ করলে ফলন বেশি হয়।

স্টেভিয়া বাণিজ্যিকভাবে সাধারণত বেডে চাষ করতে হয়। বেডের উচ্চতা হতে হবে কমপক্ষে ৬ ইঞ্চি। বেডে সারি থেকে সারি দূরত্ব হবে ১ ফুট এবং সারিতে গাছ হতে গাছের দূরত্ব হবে ৬ ইঞ্চি। জমির অবস্থা ও মাটির প্রকারভেদে ৪-৬ টি চাষ এবং মই দিয়ে মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে চাষ করতে হয়। স্টেভিয়ার সফলতা নির্ভর করে জমিতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানের ওপর। স্টেভিয়া যেহেতু ঔষধি গুন সম্পন্ন উদ্ভিদ তাই এর চাষে অজৈব সার প্রয়োগ এর ফলে গুনাগুন হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে স্টেভিয়া গাছে খুব কম পরিমাণ সার প্রয়োজন হয়। তাই জমি তৈরির সময় বিঘা প্রতি ২.৬ টন হারে গোবর সার ভালো করে মাটির সঙ্গে মেশানো হয়। এরপর প্রতি মাসে একবার সরিষা খোল পাচানো জল বিঘা প্রতি ৫ লিটার হারে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

স্টেভিয়া চাষের জন্য মাটিতে সারাবছরই পরিমিত আর্দ্রতা থাকতে হবে। তবে গাছ অতিরিক্ত আর্দ্রতা সহ্য করতে পারে না। সাধারণত শীতকালে একবার এবং গ্রীষ্মকালে ২ থেকে ৩ বার ঝাঁঝরির সাহায্যে হালকা সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। মাসে একবার বেডের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। তবে মালচিং (গাছের গোড়া আচ্ছাদিত) করলে একই সঙ্গে আগাছা দমন হয় আবার আর্দ্রতাও সংরক্ষণ হয়। খড়-কুটো, কচুরিপানা বা কম্পোস্ট দিয়ে মালচিং করা যায় যা গাছের শিকড়কে মাটির সঙ্গে সুসংহত করে।

স্টেভিয়ায় পোকামাকড়ের আক্রমণ ও রোগকম হয়ে থাকে। কখনও কখন সেপটোরিয়া ও স্কেলেরোটিনিয়াজনিত গোড়া পঁচা রোগ দেখা যায়। চারা অবস্থায় অনেক সময় গাছের গোড়া কেটে দেয়। এছাড়া অনেক সময় এফিড ও সাদামাছির আক্রমণও লক্ষ্য করা যায়। নিম ওয়েল ৩০ মিলি/লিটার জল- এ হারে স্প্রে করে অর্গানিক উপায়ে একই সঙ্গে পোকামাকড় ও রোগ-জীবাণু দমন করা যায়।

টবে চাষঃ  

বাসাবাড়িতে টবে বা পটে সহজেই স্টেভিয়া চাষ করা যায়। তবে গাছের টব রোদযুক্ত বারান্দায় বা ছাদে রাখতে হবে। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত স্টেভিয়ার ছোট চারা নিষ্কাশনযুক্ত দো-আঁশ মাটিতে অথবা দো-আঁশ ও জৈব সার মিশ্রিত ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি মাটির টবে সারাবছর রোপণ করা যায়। এ গাছের চারা রোপণের ২৫ থেকে ৩০ দিন পর পাতা সংগ্রহ করা যায়। গাছে ফুল আসার ২৫ থেকে ৩০ দিন পর থেকে ওপরের অংশ ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। পরে গাছের গোড়া থেকে একসঙ্গে অনেক চারা বের হতে থাকে এবং ২০ থেকে ২৫ দিন পর পুনরায় পাতা সংগ্রহ করা যায়।

ফলনঃ 

মাঠে চাষ করলে আষাঢ়-শ্রাবণ মাস হতে শুরু করে ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত স্টেভিয়া গাছ হতে পাতা সংগ্রহ করা যায়। মাটির টবে লাগানো গাছ বড় হওয়ার পর সারা বছরই পাতা সংগ্রহ করা যায়। একটি মাটির টবে লাগানো গাছ হতে ৩০-৪০ গ্রাম সবুজ পাতা সংগ্রহ করা হয় যা হতে ৭-১০ গ্রাম শুকনো পাতার গুড়ো পাওয়া যায়। মাঠে চাষ করলে গাছে ফুলের কুঁড়ি আসার পূর্বে এবং ফুলের কুঁড়ি দেখা দেওয়ার সাথে সাথে পাতা সংগ্রহ শুরু করতে হয়। সাধারণত চারা লাগানোর ১-২ মাস পর থেকে প্রতি ৪৫ দিন অন্তর মাটি থেকে ১০ থেকে ১৫ সেমি. উপরে পিঞ্চিং (গাছের অতিরিক্ত ডাল-পালা ছাটাই করা) করে ডালসহ পাতা সংগ্রহ করা হয়। সকাল বেলা পাতা সংগ্রহ করলে মিষ্টতা বেশি পাওয়া যায়। গাছের সমস্ত পাতা দুই– তিন বারে সংগ্রহ করা হয়। বিঘা প্রতি ৪৫০-৫৫০ কেজি সবুজ পাতা পাওয়া যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আবহাওয়াতে জন্মানো স্টেভিয়া পাতায় ১৫ থেকে ২০ ভাগ স্টেভিওসাইড থাকে যা বিশ্বের অন্যত্র জন্মানো গাছের থেকে ১.৫ থেকে ২.০ গুণ বেশি। এই জন্য এগুলোর বাজারমূল্য বেশি পাওয়া যায়।

পাতা শুকানোঃ 

স্টেভিয়া পাতা সংগ্রহের পর সূর্যালোকে বা ড্রায়ারের মাধ্যমে পাতা শুকাতে হবে। পাতা শুকানোর জন্য কমপক্ষে ১২ ঘণ্টার সূর্যালোক প্রয়োজন হয়। পাতা শুকানোর পর ক্রাশ করে পাউডারে পরিণত করা হয়। গরম জলে এক চতুর্থাংশ পাউডার মিশিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে স্টেভিয়া সিরাপ তৈরি করা যায়। এ সিরাপ রেফ্রিজারেটর এ সংরক্ষণ করতে হয়।

সম্ভাবনাঃ

স্টেভিয়ার প্রতিটি গাছের চারা ২৫-৬০টাকায় বিক্রি হয়। স্টিভিয়ার পাতা গুঁড়ো করে পাউডার, ট্যাবলেট কিংবা তরল প্যাকেজে বাজারজাত করা যেতে পারে। এর পাউডার প্রায় ৪০০০ টাকা কেজি। স্টেভিয়া চাষ করে হেক্টরপ্রতি বছরে ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে বিভিন্ন কোম্পানি চুক্তিভিত্তিক চাষিদের চারা সরবরাহ করে থাকে এবং তাদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে স্টেভিয়া পাতা কিনে নেয়। বিশ্বব্যাপী ব্যাপক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে স্টেভিয়া চাষ করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। 

কৃষি বিজ্ঞানীগণ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং চাষিরা ব্যাপক হারে স্টেভিয়া চাষের ব্যাপারে উদ্যোগী হলে এ উদ্ভিদটি এ দেশের কৃষি সেক্টরে তো বটেই জাতীয় রাজস্ব খাতেও ব্যাপক সাড়া জাগাতে পারে। এ ছাড়াও হোমিও, আয়ুর্বেদিক এবং কবিরাজিসহ ভেষজ গাছ-গাছড়া নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারাও স্টেভিয়া থেকে ব্যাপকভাবে লাভবান হতে পারেন। স্টেভিয়ার ব্যাপক চাষ, গবেষণা ও সংশ্লিষ্ট শিল্প কারখানা চালু করতে পারলে এ দেশের আর্থ-সামাজিকসহ জাতীয় উন্নয়ন খাতে কাঙ্ক্ষিত বৃদ্ধি অতি সম্ভাবনাময়।

তথ্যসুত্রঃ

Goyal, S. K., Samsher, G. R., & Goyal, R. K. (2010). Stevia (Stevia rebaudiana) a bio-sweetener: a review. Int J Food Sci Nutr61(1), 1-10.

কৃষি বাতায়ন, স্টেভিয়া চাষ কৌশল , কৃষিবিদ মিঠু চন্দ্র অধিকারী, উপজেলা কৃষি আধিকারিক, আদমদিঘি, বগুড়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − two =