‘হাসিমুখের’ মন্ত্রে


সুমেধা চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা ##

ইউনিভার্সাল স্মাইল (এ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট) এর সহায়তায় ও “স্বপ্নের সাথী” র উদ্যোগে এক অভিনব স্বাধীনতা দিবস ও রাখী বন্ধন উৎসব উদযাপনের সাক্ষ্মী রইলাম আমরা। ‘স্বপ্নের সাথী’র ক্ষেত্রে এই দিনটি শুরু হয় রবীন্দ্র সরোবর সংলগ্ন অঞ্চলে পথযাত্রীদের রাখী পরানোর মাধ্যমে। সত্যিই অভিনব প্রয়াস।

এরপর দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এক বিরল দিনযাপন। ইউনিভার্সাল স্মাইল এক মুক্তমনা ও সুচিন্তক দম্পতি অংকিতা রায়চৌধুরী ও মৃণ্ময় রায়চৌধুরীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টার ফসল। মাত্র ছ’টি বাচ্চা, যাদের পারিবারিক সচ্ছলতা নেই বা তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন তাদের নিয়ে যাত্রা শুরু করেন রায়চৌধুরী দম্পতি। এক একজনের ইতিহাস এক এক রকম, বেশিরভাগই অবশ্য সুখস্মৃতি নয়। তাও অংকিতা মনে করেন গরীব হলেও তাদের স্বপ্ন দেখার সমানাধিকার আছে। এই কারণেই ইউনিভার্সাল স্মাইলের ট্যাগলাইন হল ‘ Children should always smile’। সেই ছয় থেকে বাড়তে বাড়তে এখন এখানকার আবাসিক সংখ্যা ৩৯। আছে মন্টেসরিতে পড়া শিশু আবার সদ্য মহাবিদ্যালয় প্রাপ্ত তরুণও। স্কুলছাত্র-ছাত্রীরা সকলেই পড়ে পিকনিক গার্ডেন এর S D Academy তে। আর কলেজ পড়ুয়া হেরম্বচন্দ্র মহাবিদ্যালয় এর ছাত্র। শিশু- কিশোরদের আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলেও যেন তাদের স্বপ্ন দেখা কোনভাবে আঘাতপ্রাপ্ত না হয় এটাই মূল লক্ষ্য রায় চৌধুরী দম্পতির।

এবার আসি অনুষ্ঠানের কথায়। অনুষ্ঠান শুরু হল কিছু দেশাত্মবোধক গানের মধ্যে দিয়ে। আবাসিকরাই গাইল, যন্ত্রানুসঙ্গেও তারাই। সত্যিই কি অপরিসীম ধৈর্য ও অধ্যবসায় এর মাধ্যমে এদের তৈরী করেছেন এদের সকলের প্রিয় ‘অংকিতা ম্যাডাম’।

মধ্যাহ্নভোজনের দায়িত্বে ছিলেন “স্বপ্নের সাথী”র কর্মকর্তারা। পেটপুরে সকলকে খাওয়ানো হল ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেন ও চাটনি।  উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত IPS অফিসার শ্রী সন্ধি মুখোপাধ্যায়। এক ফাঁকে ‘স্বপ্নের সাথী’ র সঙ্গে এই আবাসিকদের সায়েন্স সিটি ভ্রমণের একটি অনবদ্য ভিডিও দেখানো হল। দুপুরের খাওয়ার পর তাদের “স্বাধীনতা” থিমের গানগুলির সাথে নাচ মনে দাগ কাটল সবার। অত্যন্ত সাবলীল ও মনকাড়া। ছোট থেকে বড় সকলের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মত।

 “স্বপ্নের সাথী” র পক্ষ থেকে হোমের জন্য দেওয়া হল একটি সাদা লেখার বোর্ড, স্ট্যান্ডসহ। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, ভ্রামণিক ও লেখক শ্রী পলাশ মুখোপাধ্যায়। তিনি ও তাঁর পরিবার সকল আবাসিককে দিলেন একটি করে স্কুলব্যাগ, তাদের বয়সের সাথে সামঞ্জস্য রেখে।

 এরপর শুরু হল রাখীবন্ধন উৎসব। শুধু ভাই বোনের রাখী পরানো নয়, কবিগুরুর চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকলেই সকলকে সৌহার্দ্যের বন্ধনে আবদ্ধ করলেন। সকল হই হুল্লোড়ের মধ্যেও নজরে পড়ল আবাসিকদের শৃঙখলাবোধ, নিয়মানুবর্তিতা ও আন্তরিকতা।

 পড়াশুনোর পাশাপাশি এদের আকাঁ, গান, নাচ, লেখালিখি ও খেলাধুলো সবকিছুই শেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাখীবন্ধন ও অঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণের শেষে প্রীতি, সর্বজিৎ-রা কানে কানে এসে যখন বলল “আবার কিন্তু আসতে হবে, ম্যাডাম”, বিকেলের অস্তরাগে তখন লাল পশ্চিমাকাশ। আর কিছুক্ষণ পরেই উঠবে বহুতল “Urbana” র ঠিক মাথায় পূর্ণিমার চাঁদ, আর অতন্দ্র প্রহরায় থাকবে পাদপ্রদীপের নীচে থাকা “Universal Smile” সদাহাসিমুখে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 20 =