জানা গুগলের অজানা কথা

“গুগল” এর শুরুটা হয়েছিল একটি গ্যারেজে। সময়টা ছিল ১৯৯৬ সাল। সে সময় ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নরত ছিলেন ল্যারি পেইজ ও সের্গেই ব্রিন। তারা দুজন মিলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, তারা এমন একটি সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করবেন যেটি ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যেকার পারস্পরিক সম্পর্ক থেকে ফলাফল বের করে আনবে। আগেই বলেছি গুগলের শুরুটা হয়েছিল একটি গ্যারেজে। এটি ছিলো সান্তা মার্গারিটা এভিনিউ- মেনলো পার্ক ক্যালিফর্নিয়ার সুসান ওজচিক্কির গ্যারেজ। সুসান এখন গুগলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট।

প্রাথমিকভাবে ল্যারি পেইজ ও সের্গেই ব্রিন তাদের কোম্পানির নাম রাখেন ‘ব্যাকরাব’। পরবর্তীতে এই নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় গুগল। তবে আজ আমরা যেই গুগলকে চিনি ও জানি যদি ভুল না হতো তাহলে সেটি আজ আমাদের কাছে “GOOGOL” নামেই পরিচিতি পেত। পরিকল্পনা গ্রহণের ঠিক পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৭ সালের ১৫ ই সেপ্টেম্বর ল্যারি পেইজ ও সের্গেই ব্রিন গুগল ডট কম নামে একটি ডোমেইন নিবন্ধন করেন। কিন্তু তারা যে ডোমেইনটি নিবন্ধন করতে চেয়েছিলেন সেটি না হয়ে ভুলবশত নিবন্ধিত হয় “Google” নামে। এ নিয়ে অবশ্য সে সময় তারা খুব মনোকষ্টে ভুগেন। Google শব্দের মানে যেটা দাঁড়ায় সেটা হলো এমন একটা অঙ্ক যেটা ১০ এর উপর একশ পাওয়ার! 10^100 = 10,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000, 000,000,000, 000,000,000, 000,000, 000,000,000,000,000,000,000,000,000,000,000, 000,000.

দেখতে দেখতে গুগল ২০১৩ সালে তাদের ১৫ তম জন্মদিন পালন করলো। কিন্তু ল্যারি পেইজ ও সের্গেই বিন গুগল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছিলেন ১৯৯৬ সালে এবং ডোমেইন নিবন্ধন করেছিলেন ১৯৯৭ সালে। সে হিসেবে তাদের ১৬ কিংবা ১৭ তম জন্মদিন পালন করার কথা। কিন্তু ল্যারি পেইজ ও সের্গেই বিন গুগলকে প্রাইভেট কোম্পানী হিসেবে গুগল প্রকল্প প্রথম ইনকর্পোরেট করেন ১৯৯৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ায়। সে হিসেবেই গুগলের জন্মদিন হিসাব করা হয়। এসময় গুগল কোম্পানীর নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টও খোলা হয়। জনপ্রিয় হতে গুগলকে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয় নি। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে ‘পিসি ম্যাগাজিন’ এ প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী ইনকর্পোরেট হওয়ার মাত্র চার মাসের মধ্যেই জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে গুগল পরিচিতি পায়। ভাবা যায় মাত্র চার মাসের মাথায় সফলতা!!!

ক্যালিফোর্নিয়ায় গুগলের অফিসকে বলা হয় “গুগলপ্লেক্স” (Googleplex)। এটি হলো গুগল ইনকর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয়। গুগলের সব কাজ এখান থেকেই পরিচালিত হয়। এটি মোট ৪৭,০৩৮ স্কোয়ার মিটার (৫০৬,৩১০ স্কোয়ার ফুট) জায়গা নিয়ে অবস্থিত। ২৬ একর জমির উপর অবস্থিত এর প্রধান অংশ ও ক্যাম্পাস। এর আশেপাশে বেশ জায়গা রয়েছে যেখানে অনেক গাছ-পালা রয়েছে।তাছাড়া ২ টি সুইমিং পুল ১টি বাস্কেটবল খেলার জন্য কোর্ট ও রয়েছে। মুলত গুগলের এই দফতরটি সাজানো হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রকৃতির সমন্বয়ে।এখানকার অফিস বা লবির মধ্যে গেলে আপনি দেখতে পাবেন অসংখ্য গাছ-পালা লতা পাতায় ছাওয়া।

অফিসের ভেতরের নোটিশ বোর্ডে থাকে নানা কর্মকাণ্ডের লিফলেট সাঁটানো। ফ্রি চায়নিজ ভাষা শিখতে চান, মার্শাল আর্ট বা কুকুর পালনপদ্ধতি? নাকি জানতে চান কবে গুগলপ্লেক্সের কোথায় কোন সিনেমা দেখানো হবে। সব তথ্য পাওয়া যাবে এখানে।অফিস আঙিনায় অর্গানিক বেগুন-কাঁচা মরিচের বাগান, ডাইনোসর স্ট্যান, সারি সারি রঙিন চেয়ার বসানো বিশাল হলরুম, যেখানে গুগল-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এর প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি ও ব্রিন। প্রতি বৃহস্পতিবার বসে প্রশ্নোত্তরের আসর।
ভিজিটরস বিল্ডিংয়ে আগে মজিলা ফায়ারফক্সের অফিস ছিল। তারা ছেড়ে দেওয়ার পর গুগলের দোতলায় তাদের সব পণ্যের একটা করে প্রোটোটাইপ বসিয়েছে, ঘুরতে আসা দর্শকদের জন্য। ঢুকতেই পেল্লায় একটা মনিটর। সেখানে দেখাচ্ছে, এখন এই মুহূর্তে পৃথিবীর কোন জায়গা থেকে কী পরিমাণ লোক কোন ভাষায় তথ্য খুঁজছে গুগলে। সারি সারিভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে গুগল নেক্সাস, ক্রোম আর অ্যান্ড্রয়েডের বিবর্তন। দর্শকদের জন্য রয়েছে ম্যাসাজ চেয়ার, বিশাল বল আকৃতির আরামদায়ক বসার জায়গা। একটা ডিসপ্লে বোর্ডে ভেসে উঠছে পৃথিবী বিখ্যাত ব্যক্তি, যাঁরা গুগল অফিস পরিদর্শন করেছেন, তাঁদের ছবি। বিশাল বিশাল মনিটর দিয়ে বসানো হয়েছে গুগলের আর্থ, মার্স ও মুন প্রকল্প।

প্রত্যেকের নিজের নিজের কাজের জায়গাগুলো সাজানো থাকে অতুলনীয় ভাবে। হয়তো আপনি ভিতরে গেলে বুঝতেই পারবেন না কোথায় কে কাজ করছে, এমন ও দেখা যায় যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও অনেকে সারছেন খোলা জায়গায় কোন গাছের নিচে।লাইটিং এর কারুকাজ দেখলে মনে হয় যেন এ এক অন্য জগৎ। মোট কথা হলো গুগল তাদের অফিসকে যতদূর সম্ভব প্রাকৃতিক করার চেষ্টা করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × five =