ইউরেকা

 সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা ##

নদীর বাঁকে এসে চার জোড়া হাত কোদাল হয়ে  গেল। কাদা বালি মেশানো মাটি খুঁড়ে কি যেন বার করে আনতে চাইছে। গাঢ় কালো অন্ধকারকে তুড়িমেরে উড়িয়ে দিয়ে কয়েকটা জোনাকি রবাহুতের মতো ম্যাজিক লন্ঠন নিয়ে হাজির। আর ঠিক সেই সময়ে টকটকে লাল সিঁদুর টিপ কপালে, সুঠাম অঙ্গ সৌষ্ঠব নিয়ে এক যুবতী,হাওয়ার নীরবতায় এসে দাঁড়ায়।দেখা যায় না।কিচ্ছুটি না। অনুভবের আয়নায় তার প্রতিবিম্ব পড়ে থাকে। শিথিল বসনা। উদ্ভ্রান্ত স্তন যুগল।মজা নদীর মতো কটিদেশ। ছোট টিলার মতো গুরুভার নিতম্ব।দেবীর তৃতীয় নয়নের মতো ঢলঢলে যোনি,লতা গুল্ম ঢাকা উরুসন্ধিতে মৃদু দীপ্যমান। চার জোড়া হাত থামল। বুক ভরে শ্বাস টেনে নিল।কপালের ঘাম মুছল। তারপর ধরাধরি করে লাশটা মাটি খুঁড়ে তুলে এনে শুয়ে দিল চড়ায়।

একজোড়া ঠোঁট বলল ফিসফিস করে, পকেটটা ভালো করে দ্যাখ। মনে হয় মোবাইলটা পকেটেইআছে। আর এক জোড়া ঠোঁট কাঁপা,ঈষৎ ফাঁক হল, ধ্যুর গাণ্ডু।ওকে কি এতই ক্যালানে ভেবেছিস!

আর একটা মুখ ইশারায় শেষ কথায় সম্মতি জানিয়ে ঘাড় কাত করল। পকেট হাতড়াতে হাতড়াতে শেষ ঠোঁট জোড়া চিৎকার করে উঠল– ইউরেকা বলে।

প্রতিধ্বনিটা প্রহরের মাকুর ভিতর দিয়ে বয়ে যেতে যেতে একটা কাপড়, লজ্জানিবারণী বস্ত্র হয়ে ঢেকে দিল নগ্নিকাকে।

চারটে ছায়া তৃপ্তির বিড়িতে টান দিয়ে বলল-সব কল লিস্ট উধাও করে দিলাম। সন্দেহের খোঁচা আমাদের একগাছা লোমও স্পর্শ করতে পারবে না। এবারে সব গায়েব।

ঠিক সেই সময়ে হাওয়ার পর্দা সরিয়ে ভদ্রমহিলা দৃশ্যমান হয়ে বলে–এ তো আমার সন্তানের লাশ! আমাকে দে।

চারজন হত্যাকারী এতক্ষণের শ্রমে ক্লান্ত শরীর নাড়াতে গিয়ে বুঝতে পারে তাদেরও সমস্ত শরীর অসাড় হয়ে গেছে। যেন তারাও আজ লাশ!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 − 2 =