“ইতিহাস বেঁচে থাকে মানুষের মনে”- আনন্দ মহলের নবনাট্য “না-মানুষ”


বিদেশী উপন্যাস বা গল্পের অনুবাদে নাট্য নির্মাণ সহজ কাজ নয়। সেই সহজ কাজটাকেই প্রাঞ্জল ভাবে মঞ্চে উপস্থাপন করেছেন আনন্দ মহলের কলাকুশলীরা। মঞ্চসজ্জা, আবহ বা আলোক নির্মাণ সব কিছুতেই রয়েছে মুন্সিয়ানার ছোঁয়া। আজকের সময় দাঁড়িয়ে এক কঠিন বাস্তবের কথা বলে গেল এই নাটক। শাষকের নখ-দাঁত বের করা বীভৎস চেহারা কিভাবে ধীরে ধীরে আমাদেরকে গ্রাস করে নিচ্ছে সে কথা বার বার এই নাটকের সংলাপে ফুটে উঠল। অনুবাদ গল্পের সম্পূর্ণটাকে মঞ্চে তুলে আনার কঠিন কাজটাকে সহজেই রপ্ত করেছেন দলের পরিচালক সৌরভ মুখোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে সংলাপের বাঁধন বেশ সুন্দর। বেশ কিছু বাস্তবধর্মী সংলাপ সকলকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

 এই নাটকের মূল বক্তব্য “ইতিহাসকে মুছে ফেলা যায় না”। এই কথাটাই অসাধারণ ভাবে বলে গেলেন অভিনেতারা। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় যারা মঞ্চে ছিলেন তাদের প্রায় সকলরেই বয়স ২০ থেকে ২৫-এর মধ্যে। কিন্তু এই বয়সেই সুন্দর অভিনয় শৈলী, সংলাপের সঠিক প্রয়োগ এবং শারীরিক সক্ষমতার পরিচয় রেখেছেন সকলে। মূল নাটকটি ৩ জন অভিনেতা-অভিনেত্রীর উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাদের সঙ্গে জুড়ে রয়েছেন আরও চারজন যারা এই নাটকের সুরটাকে বেঁধে রেখেছেন। মূল চরিত্রে সায়ন্তন, জয়শ্রী এবং ইন্দ্রাণীর অভিনয় অনবদ্য। তবে রিজওয়ানুর এবং বহ্নির কেমিস্ট্রি আরও স্বাভাবিক হলে ভাল লাগত। বহ্নির চরিত্রে জয়শ্রী কয়াল সাবলীল অভিনয় করেছেন। ইন্দ্রাণীর ক্রূর কণ্ঠস্বর দর্শকদের মাঝে মধ্যেই নাড়িয়ে দিয়েছেন। সঙ্গত কারনেই এই নাটকে কিছু কোরাস অভিনেতার সাহায্য নেওয়া হয়েছে এবং তা যথাযথ। নাট্য নির্মাণে বিদেশী নাটকের ছোঁয়া পাওয়া যায়।

 আধুনিক সময় দাঁড়িয়ে একটি সাহসী প্রযোজনা তা বলাই যায়। যদিও আজকের সময় থেকে অনেকটা পিছিয়ে গিয়ে একটা সময়ের কথা বলে এই নাটক। যা চিরন্তন সত্য। মানুষকে “না-মানুষে” রুপান্তরিত করার এই খেলা চিরকালীন। এই খেলা থামবার নয়। শোষক ও শোষিতের মধ্যে লড়াই হয়। জিতে যায় ক্ষমতা। কিন্তু হেরে যাওয়া মানুষ গুলো এক দিন ঘুরে দাঁড়াবেই। আর সেই ঘুরে দাঁড়ানোর হাতিয়ার আনন্দ মহলের নাটক “না-মানুষ”। স্বপ্ন দেখা এবং দেখানোর নাটক “না-মানুষ”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × three =