কারণে-অকারণে


বিশ্বদীপ মুখোপাধ্যায়, নবদ্বীপ, নদীয়া ##

শহরের নাম বাঞ্ছনীয় নয়। সেই শহর দীর্ঘ দিন আমায় দিয়েছে আশ্রয়, সাথে দিয়েছে দু’বেলা অন্ন। তাই শহরের নাম এখানে লিখে সেটার অপমান করতে চাই না। প্রশ্ন হল, অপমান কিসের? যা কিছু আমি দেখলাম, অভিজ্ঞতা লাভ করলাম সেটা কি সত্যি এমন, যেটা পরবর্তী কালে জন সমূহের সামনে হাস্যকর অথবা নিন্দনীয় বিষয় হয়ে দাঁড়াবে?  নচেৎ, তাহলে দোষারোপ আমার ওপরেও হওয়া উচিত। কেন কি সেই পরিস্থিতির কিছুটা অংশীদার আমিও ছিলাম। 
দেবাদা বলতো – ‘ ঠিক-ভুল প্রত্যেকের নজরে ভিন্ন। আমার মন যেটা করতে সায় দেয়, সেটাকেই আমি ঠিক বলে মনে করি।’ 
এহেন দার্শনিকতার প্রতিবাদ যে আমাদের মিত্র মন্ডলীতে হত, সেটা বলাই বাহুল্য। কিন্তু যতক্ষন না নেশা নামতো, দেবাদার বক্তব্য এদিক থেকে ওদিক হত না। ‘নেশা’, হ্যাঁ, প্রায় প্রত্যেক সন্ধ্যায় আড্ডার অছিলায় “পান” শব্দের গুরুত্বকে আমরা বাড়িয়ে তুলতাম। সেটা ধূমপান হোক অথবা সুরাপান। আমি ছিলাম প্রবাসী। চাকরির সূত্রে সেই শহরে যাওয়া। যে পাড়ায় ভাড়া বাড়িতে থাকতাম, সেখানকার প্রতিবেশীদের সাথে ভাল আলাপ-পরিচয় হয়ে গিয়েছিল আমার। দেবানন্দ ভট্টাচার্যর মুদির দোকানের শাটার বন্ধ হলে, আড়ালে বসতো আমাদের আড্ডার আসর। দেবানন্দ ভট্টাচার্যকে আমরা দেবাদা বলে ডাকতাম। বয়সে আমার থেকে প্রায় দশ বছরের বড়। শুধু দেবাদা-ই নয়, মলয় দা, প্রতাপদা প্রত্যেকেই আমার থেকে বয়সে বড়। শুধু নব, মানে নব কুমার হাজরা ছিল আমার বয়সী। 
বয়সে বড় মিত্র মন্ডলীর সাথে মেলামেশা করতে আমার অসুবিধে হয়নি। তাদের ব্যবহারে এতোটাই আপনত্ব যে, মুগ্ধ হতেই হয়। এই আপনত্বই তো ছোটো শহরের আত্মা।

সে দিন কাজ থেকে আমি যথা সময় ফিরেছিলাম। চাবি দিয়ে দরজার তালা খুলতে যাব, পেছন থেকে মলয়দা-র গলার আওয়াজ পেলাম। 
‘একটা খবর পেয়েছো, দীপ? ‘ 
ঘাড় ঘুড়িয়ে মলয়দা-র দিকে তাকালাম। জিজ্ঞাষু নেত্রে চেয়ে রইলাম। 
‘নবর মায়ের শরীর খুব খারাপ। কোলকাতা নিয়ে গেছে।’ মলয়দা বলল।
‘কী হয়েছে তার মায়ের? ‘ বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলাম। 
‘সেরিব্রেল অট্যাক। এখানে ফেলে রেখে লাভ নেই, তাই কোলকাতা নিয়ে গেল। প্রতাপের কোন এক ভাই নাকি কোলকাতার এক সরকারী হাসপাতালের ডক্টর। প্রতাপ গেছে সঙ্গে।’ 
আমি ঘরের দরজা খুলতে ভুলে গেলাম। খুবই খারাপ খবর। আমাদের মধ্যে নব এক মাত্র যার আর্থিক অবস্থা ভাল না। এক তেল মিলে কাজ করে। কতই বা রোজগার হয় সেখান থেকে। অল্প বয়সে নিজের বাবাকে হারিয়েছে নব। মা ছাড়া এই বৃহৎ সংসারে আপন বলতে তার কেউ নেই। বিয়ে করেনি। পাছে যদি বৌ ভাল না হয়। পাড়ার লোকেরা তার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু নবর জেদের আগে তাদের হার মানতেই হল। 
আমি লঘু কদমে এগিয়ে গেলাম মলয় দা-র কাছে। নিজের সিগারেটের ডিবে থেকে দু’টো সিগারেট বার করে একটা আমায় দিলো, একটা নিজে ধারালো মলয়দা। 
‘কখন ঘটল এ সব? আমায় খবর তো দিতে পারতে।’ সিগারেটে একটা টান দিয়ে অভিমানের স্বরে আমি বললাম। 
সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে মলয়দা বলল – ‘ ঘটনা ঘটেছে প্রায় বেলা এগারোটায়। তোমায় খবর দিয়ে লাভ কী হতো, দীপ?  কাজের ক্ষতি হত বরং। আমার কাছেও সময় ছিল না। না তো আমি সাথে যেতাম। কিন্তু ভাই, একটা কথা বলি, শোনো। নিয়ে যে গেল, তাতে টাকার শ্রাদ্ধ ছাড়া কিছু হবে না। দেখে তো অবস্থা খুব খারাপ মনে হল। বাঁচিয়ে নিয়ে ফেরার সম্ভাবনা কম। দেবাও তাই বলছিল।’ 
আমার ঠিকানা থেকে দেবাদা-র দোকান খুব কাছে। কথা বলতে-বলতে আমরা দোকানের সামনে উপস্থিত হলাম। গ্রাহক ছিল না। দেবাদা কী একটা হিসেব মেলাতে ব্যস্ত। আমাদের এক নজর দেখে পুনরায় হিসেবে মনোনিবেশ করল। আমরা দু’জনে সামনের রকে বসলাম। 
মলয়দা বলতে লাগলো – ‘দেখো দীপ, তফাৎ কী হত?  এখানে থাকলে দু’দিন বাঁচতো, সেখানে না হয় আরো দু’দিন বাঁচবে।’ 
দেবাদা আমাদের দিকে ভাল করে তাকালো এবার। 
‘এই অবস্থায় বেঁচে থাকা মানেই কষ্ট। একটা রুগী যে কষ্ট ভোগ করে, তার অংশীদার কি আমরা হতে পারি?’ দেবাদা বলল। 
এহেন কথা শুনে আমার অবাক লাগছিল। বললাম – ‘তা বলে কি মানুষে চেষ্টা করা ছেড়ে দেবে?  জন্ম-মৃত্যু তো আমাদের হাতে নেই, আমরা শুধু চেষ্টাই করতে পারি। ‘ 
‘ হ্যাঁ, তা ঠিক বলেছ। দেখা যাক নিয়তির লেখন কী?  ‘কথা শেষ করে দেবাদা পুনরায় নিজের হিসেবের খাতার দিকে ঘাড় হেঁট করল। 
আমার সিগারেট শেষ হয়ে গিয়েছিল। রক থেকে উঠে ঘরের দিকে এগোবার জন্য পা বাড়ালাম। মলয়দা সঙ্গ নিল। 
‘তোমার কথাটা ঠিক। মানুষ শুধু চেষ্টাই করতে পারে। কিন্তু মানুষকে নিজের পকেটের দিকেও তাকানো উচিত। কোলকাতা নিয়ে যেতে, নিয়ে আসতে পাঁচ হাজারের ওপর খরচ। তারপর, সরকারী হাসপাতাল হলেও, কিছু খরচ তো আছেই। যদি নবর মা সুস্থ হয় ফেরেন, সেটাও কত দিনে তার কোনো ঠিক নেই। তুমি তো জানো দীপ, এসব বড় লোকেদের রোগ। দীর্ঘ দিন চিকিৎসা চলে।’ 
আমি দরজা খুলে ঘরের ভেতর ঢুকলাম। লাইট জালিয়ে একটা চেয়ার এগিয়ে দিলাম মলয়দা-র দিকে। মলয়দা উপবেশন করল। আমি হাত-মুখ ধুয়ে এসে মলয়দাকে বললাম – ‘ টাকার মূল্য অনেক, সেটা মানি। কিন্তু মলয়দা, মানুষের জীবনের মূল্য কি টাকার থেকে কম?  নব তো একলা নয়, আমরা তো আছি তার সাথে। টাকার প্রয়োজন হলে কিছু-কিছু টাকা দিয়ে আমরা সাহায্য করতেই পারি তাকে। আর চিকিৎসার কথা বলছ?  হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিলে বাড়িতেই চিকিৎসা হয় এই রোগের। হ্যাঁ, প্রাথমিক দিকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া দরকার। হাসপাতালে কত দিন থাকতে হয় সেটাই দেখার।’ 
আমার শেষ বাক্যের জের টেনে মলয়দা বলল – ‘সেটা তো আমারও কথা, দীপ। কত দিন থাকতে হবে সেখানে তার ঠিক নেই। তার ওপর লোকবলের অভাব। আয়া ঠিক করতে হবে। দিন হিসেবে টাকা নেবে তারা। প্রায় তিন’শত টাকা প্রতিদিন। খরচের অংকটা এক বার হিসেব করে দেখে নাও।’

রাত্রে ফোন করলাম নবকে। শুনতে পেলাম তার অশ্রু ভেজা কন্ঠস্বর। জানতে পারলাম, তার মায়ের শরীর ক্রমাগত অবনতির দিকে এগোচ্ছে। আমি বললাম – ‘টাকার চিন্তা করিস না, নব। আমরা আছি। শুধু টাকাই নয়, যে কোনো প্রয়োজনে খবর দিবি।’

মলয় দা-র বলা “টাকার শ্রাদ্ধ” কথাটা আমায় চঞ্চল করে তুলেছিল। সত্যি কি আজকের দিনে মনুষ্যের জীবন থেকে টাকার মূল্য বেড়ে গেছে?  নবর মা যদি জীবিত অবস্থায় ফিরে না আসেন, তাহলে কি সত্যি এটা টাকার শ্রাদ্ধ হবে?  ফোনে নব আমায় বলেছিল – ‘বাবা মারা যাওয়ার সময় আমি এতোই ছোট ছিলাম যে, কিছুই করতে পারিনি। আফসোস রয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার আর সেই আফসোস থাকবে না। আমি চেষ্টা তো করলাম।’ 
মানুষের মনের স্বান্তনা, মনের তৃপ্তি থেকে টাকার মূল্য অনেক বেশি। সেটা তো মানতেই হবে।

খবরটা পর দিন সকালে পেলাম। নবই ফোন করে খবরটা দিল – ‘মা আর নেই।’ দেবাদা-র দোকানের সামনে আমরা একত্রিত হলাম। প্রশ্ন উঠল মৃতদেহ নিয়ে আসা নিয়ে। 
‘কোলকাতা থেকে যদি শব বাহন গাড়ি করে নিয়ে আসা হয়, তাহলে চার হাজার টাকার মত লাগবে।’ মলয়দা বলল। 
‘দরকার নেই। আমার এক পরিচিতি পৌরসভায় গাড়ি চালায়। আমি তাকে ফোন করছি।’ দেবাদা প্রস্তাব রাখল। 
দিনটা ছিল রবিবার। ছুটির দিন। তাই আমি বললাম – ‘এখান থেকে যদি গাড়ি যায়, তাহলে আমি যেতে পারি। প্রতাপদা-র পক্ষে নবকে একলা সামলানো কি সম্ভব হবে? ‘

সত্যি, নবকে সামলানো প্রতাপ দা-র পক্ষে একলা সম্ভব ছিল না। হাসপাতালের সেই করুণ দৃশ্যের বর্ণনা করতে চাই না। যার যায়, সেই বোঝে। আমরা মন শান্ত করার দু’চারটে কথা বলতে পারি মাত্র। কারুর দুঃখে নিজে অংশগ্রণ করা সম্ভব নয়। কোলকাতা যাওয়ার পথেই দেখেছিলাম আকাশের অবস্থা ভাল নয়। ঘন কালো মেঘ জোমেছিল আকাশে। যে কোনো সময়ে বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা। নবর এই চরম বিপত্তির সময় আকাশও যেন নিজের প্রত্যেক অশ্রু বিন্দুকে বর্ষার জলে রূপান্তরিত করে পৃথিবী ভাঁসিয়ে দেওয়ার উপক্রম করছে। ফেরার পথে মাঝ রাস্তায় বৃস্টি আরম্ভ হল, যেটা গন্তব্য স্থলে পৌঁছবার পূর্বেই নিজের নিষ্ঠুর রূপ ধারণ করল। মৃতদেহ নিয়ে যখন আমরা পৌঁছলাম, তখন বিকেল পাঁচটা। নবর বাড়ির সামনে ছাতা মাথায় দেওয়া প্রতিবেশীদের ভীড়। একে-একে প্রত্যেকে কাঁচের দেয়ালে বন্দী মৃতদেহের দর্শন করলেন। 
আমরা শ্মশান পৌঁছলাম সন্ধ্যা ছ’টার পর। বৃষ্টি অনেকটাই কমেছিল। মৃতদেহকে ঘি মাখানো, গঙ্গা স্নান করানো প্রভিত্তি কাজ শুরু হল। ঠিক সেই সময় যা দেখলাম, সেটা ছিল আমার প্রথম অভিজ্ঞতা। এর আগেও আমি বেশ কিছু বার কারুর না কারুর শ্মশান যাত্রী হয়েছি। কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা কোনো দিন লাভ করিনি। দেখলাম, মলয়দা প্রতাপদা-র হাতে কিছু টাকা দিলো। টাকা গুনে প্রতাপদা সেটা নিজের প্যান্টের পকেটে রাখল। কিছু বার্তা বিনিময় হল তাদের মধ্যে। আমি এক কোণায় দাঁড়িয়ে কৌতূহলী তাদের দিকে চেয়ে ছিলাম। প্রতাপদা আমার দিকেই এগিয়ে এলো। কাছে এসে বলল – ‘যাবে আমার সাথে? ‘ 
‘কোথায়? ‘ কৌতূহলী জিজ্ঞেস করলাম। 
প্রতাপদা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। 
‘ কেন?  জান না নাকি? ‘ 
সত্যি আমি জানতাম না। মাথা নাড়লাম। মুচকি হাঁসলো প্রতাপদা। 
‘এসো আমার সাথে। জানতে পারবে।’ 
মলয় দা-র বাইকে আমরা বসলাম। প্রতাপদা যে পথ বেয়ে আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল, সেটা চিনতে পারলাম। যত এগোই, বিস্ময়ে চেয়ে থাকি চারিদিকে। এ পথে, এ পাড়ায় আমরা তো প্রায় রোজ আসি। কিন্তু আজ কেন?  সেই চেনা দোকানের সামনে প্রতাপদা বাইক দাঁড় করাল। আমি হতবুদ্ধির মত তাকিয়ে রইলাম সেই দোকানের দিকে। চেনা দোকান পলকে অচেনা মনে হল আমার। পা উঠছিল না। প্রতাপদা দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। নিজের পাশে আমাকে না দেখতে পেয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালো পেছন দিকে। আমি মূর্তির মত বাইকের কাছে দাঁড়িয়েছিলাম। 
‘কী হল?  এসো, দাঁড়িয়ে রইলে যে।’ 
প্রতাপদা- র কথায় সম্বিৎ ফিরে পেলাম। 
ইচ্ছে হল জিজ্ঞেস করি – ‘এখানে কেন?  আজ এখানে কিসের কাজ? ‘ 
কিন্তু জিজ্ঞেস করতে পারলাম না। বিস্ময়ে কন্ঠরোধ হয় গিয়েছিল আমার। প্রতাপদা-র ডাকে যন্ত্রের মত এগিয়ে গেলাম। বিলেতি মদের একটা বড় বোতল নিয়ে, প্যান্টের পকেট থেকে এক থলি বার করে তাতে বোতলটা ঢোকালো প্রতাপ দা। থলিটা আমার হাতে দিয়ে বলল – ‘এটাকে নিজের কাছে রাখো। সামলে রাখবে। ‘ দোকানিকে বোতলের মূল্য চুকিয়ে আমার পুনরায় ফিরে এলাম বাইকের কাছে। এই পরিস্থিতিতে এমন জায়গায় নিজেকে বেমানান লাগছিল। অপরাধী মনে হচ্ছিল নিজেকে। আশেপাশের লোকেদের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারছিলাম না। শুধু ভাবছিলাম – ‘ কতক্ষনে এ স্থান পরিত্যাগ করবো।’ 
শ্মশান ফেরার পথে প্রতাপদা কত কিছু অনর্গল বকে গেল। একটা কথাও আমার কর্ণ স্পর্শ করল না। মাথায় কেবল মাত্র একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল – ‘আজকের দিনে এর প্রয়োজন কী? ‘

চারিদিক প্রায় অন্ধকার। মাঝে-মাঝে বিদ্যুতের আলো ক্যামেরার ফ্ল্যাশ লাইটের ন্যায় জ্বলে উঠছিল। নবর মায়ের নিস্প্রাণ দেহ চুল্লিতে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক অন্ধকার প্রায় কোণাতে প্রত্যেক শ্মশান যাত্রীরা একত্রিত। নবকে চা পান করিয়ে তার এবার নিজেদের ‘পানের’ দিকে ধ্যানমগ্ন। একে-একে প্রত্যেকে লাল জল গলাধকরণ করতে শুরু করল। মদ্যপানের তিন কারণের বিষয় আমার জানা ছিল। প্রথম – অত্যন্ত খুশিতে মদ্যপান, দ্বিতীয় – দুঃখের সাগরে ডুবে গেলে মদ্যপান, এবং তৃতীয় – অকারণ মদ্যপান। এহেন পরিস্থিতিতে মদ্যপানের হেতু কী, সেটা জানার প্রবল ইচ্ছে হল। 
কারণ জানবার জন্য আমাকেও সেই পথে এগোতে হল। যতক্ষন না নিজে দু’ঘুঁট গলাধকরণ করি, ততক্ষন হেতু জানা সম্ভব নয়। আমি চিন্তা-ভাবনার ঘোরে ছিলাম, হঠাৎ দেখলাম দেবাদা গেলাস আমার দিকে এগিয়ে দিলো। 
‘ কি হে! তুমিও নাও। চুপ-চাপ দাঁড়িয়ে আছো কেন? ‘ 
আমি এক নিমেষে সেই গেলাসটা রিক্ত করে ফেরত দিলাম দেবাদাকে। না, এই গভীর বিষয়ে চিন্তা- ভাবনা করার জন্য এক পেগ যথেস্ট নয়। দু’তিন পেগ গলার নীচে নামিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে পুনরায় চিন্তা মগ্ন হলাম। দু’টো কারণ আমার চোখের সামনে জ্বল-জ্বল করে উঠল। শ্মশান যাত্রীদের মদ্যপানের দু’টো কারণ হতে পারে। যার হারিয়েছে তার দুঃখে দুঃখিত হয়ে মদ্যপান করা, অথবা যে ইহলোকের সব মোহ মায়া পরিত্যাগ করে চিরকালের মত মুক্তি পেয়েছে তাঁর আনন্দে আনন্দিত হয়ে মদ্যপান করা। এখানে আমরা নবর দুঃখে দুঃখিত, নাকি তার মায়ের মুক্তির আনন্দে আনন্দিত?  প্রচুর মাথা ঘামিয়েও সেই প্রশ্নের উত্তর পেলাম না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × two =