ঘোরা রোগ


বিদিশা বসু, বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা ##

এ এক বিষম রোগ… ঘরেতে মন টেকে না। কিছুদিন পর পরই কেমন দমবন্ধ পরিস্হিতি তৈরি হয়,মন চায় খোলা হাওয়ায় শ্বাস নিতে। বেঁচে থাকার অক্সিজেন পাহাড়ে-বনে-জঙ্গলে- নদী- সমুদ্রে, এই ইটকাঠ পাথরের সমাজে সেই শান্তির খোঁজ পাই না যে। 
এ আমার নিজের কথা, কোনো ভ্রমণকাহিনী নয় কিন্তু। এই ইংরেজি বছরের প্রথম তিনটি মাস দেখতে দেখতে কেটে গেল। প্রতিমাসে একটা কোথাও যাওয়ার নেশায় পড়ে ৩টে ছোট্ট ছোট্ট জায়গা ঘুরে এলাম। পর পর ২ দিন ছুটি বা মাঝে ২ টো দিন ছুটি নিয়ে, ঘুরে আসার সুযোগ হাতছাড়া করি না জীবনে।


জানুয়ারী,২০১৯— পাঁচ বছরের মেয়ে বেশ কিছুদিন ধরে বরফের দেশ দেখার বায়না করছিল। সেই কথা মাথায় রেখে তার বাবাকে দিয়ে একটা njp এর টিকিট কেটে রেখেছিলাম ২২ শে জানুয়ারীর রাতের পদাতিক এক্সপ্রেসে। বরফের দেশ দেখানোর সামর্থ নেই হয়ত, কিন্তু কোনও বরফে মোড়া পাহাড় তো দেখাতে পারি মেয়েকে। তাই গ্যাংটকে পৌঁছে গেলাম ২৩ তারিখ সকালে। দুপুরে হোটেলে যেই পা রাখলাম, বুঝলাম কি ভীষণ হাড় কাঁপানো ঠান্ডা আর সঙ্গে পাহাড়ি হালকা বৃষ্টি। হোটেলের ঘরে গিয়ে স্নান খাওয়া ভুলে কম্বলে নিজেদের বন্দী করলাম। মনে হচ্ছিলো, কি কুক্ষণে যে এমন সিদ্ধান্ত নিলাম,বাড়ি গেলে বাঁচি। কিন্তু বিকেলের দিকে বৃষ্টি থামলে আর স্হানীয় পরিবেশে নিজেদের সহনশীল করে বেরিয়ে পড়লাম ভারী শীত পোষাকে মুড়ে M.G মার্গে। সন্ধ্যায় মনোরম পরিবেশ,আমাদের মত প্রচুর পাগল ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির দল,হাক্কা চাউমিন,গরম গরম মোমো সহযোগে বেশ কাটলো সন্ধ্যাটা। কিন্তু এর মাঝে মন খারাপ করা খবরটা পেলাম যে পাহাড়ের উপর প্রচন্ড বরফপাত হচ্ছে,তাই বাবা মন্দির তো দুরস্ত ছাঙ্গু লেক যাওয়ারও অনুমতি মিলছে না। এই বরফপাতের ফলস্বরূপ গ্যাংটকে মেঘলা আবহাওয়া আর বৃষ্টিপাত।


অগত্যা পরের দিন ২৪ শে জানুয়ারী অন্যপথ ধরলাম। প্রথমেই সকাল ৯ টায় বেরিয়ে টানা ৩ ঘন্টা পাথুরে খারাপ রাস্তা ধরে পৌঁছালাম রাবাংলা। অসাধারণ বুদ্ধমূর্তিকে মাথার উপরে রেখে সাজানো গোছানো বুদ্ধপার্ক। খুব ছোট্ট শহর সিকিমের এটি,কিন্তু আবহাওয়া ভালো থাকলে বরফে মোড়া পর্বত চোখে পড়বে রাবাংলার যে কোনো জায়গা থেকে। তারপর বেরিয়ে পড়লাম নামচির উদ্দেশ্যে। রাস্তা বড় করার কাজ চলছে,তাই জায়গায় জায়গায় আটকে গেছি, সময় অনেক লেগে গেল সামদ্রুপসে দেখতে। রাস্তার দুপাশ জুড়ে রঙ বেরঙের পতাকা ঘেরা মনোরম রাস্তা পেড়িয়ে দেখা মিললো গুরু পদ্মসম্ভবমের বিশাল ধ্যানস্হ মূর্তি সহ মনেস্ট্রি। কিছু সময় কাটিয়ে নামচির চারধাম দেখতে চললাম। পথে স্হানীয় একটি দোকানে ঘরোয়া গরম ভাত ডাল ডিমের ওমলেট খিদের পেটে হাপুসহুপুস করে খেয়ে নিলাম। বিকেল নাগাদ পৌঁছালাম চারধাম,টিকিট কেটে ভিতরে দেখা মিললো নানা রাজ্যের প্রতীকি নানা মন্দিরের ছোটো সংস্করণ। সন্ধ্যা নামলে ক্লান্ত শরীরে,কিন্তু মনে বেশ খুশির রেশ নিয়ে হোটেলে ফিরলাম। রাতে খবর পেলাম যে আবহাওয়া ভালো থাকায় পরের দিন বরফ দেখার সুযোগ মিলবে। তবে ছাঙ্গু লেক পর্যন্তও যাওয়ার অনুমতি দেয়নি সেনাবাহিনী, ১৫ মাইল পর্যন্ত যাওয়া যাবে। যতটুকু হোক, তাতেই মনে শান্তি নিয়ে পরের দিনের অপেক্ষায় ঘুম দিলাম।


২৫ তারিখ সকালে বেরিয়ে পড়লাম, শীতপোষাকের মোড়কে নিজেদের মুড়ে। রাস্তায় চেকিং পোস্টে সবার পরিচয়পত্রসহ ছবি জমা দিয়ে পাহাড়ের শীতলতায় ডুবতে থাকলাম। যত উপরে উঠছি মেঘলা আকাশ সঙ্গে হালকা হালকা বরফপাত। নামলাম যখন তখন চারধারে বরফ, আর মাথার উপর সাদা সাদা বরফকুচি পড়ছে। ছোট্ট মেয়েটা ঠান্ডা ভুলে বরফ নিয়ে খেলায় মত্ত হলো, কখনও বরফ বল ছুড়ছে,কখনও snowman তৈরীর বায়না। সব দেখে মন প্রশান্তিতে ভরে গেল, মেয়েকে তো দেখাতে পারলাম যে প্রকৃতিগত বরফ কি, ওর কাছে তো বরফ বলতে ফ্রিজের আইসকিউব না হলে আইসক্রিম। দুপুরের মধ্যে ফিরে এলাম, কারণ আবহাওয়া ধীরে ধীরে আবার খারাপ হতে শুরু করেছে, ড্রাইভাররা সব নিষেধ করলেন বেশি সময় থাকতে। সন্ধ্যায় M.G মার্গের কাছে লাল মার্গে বেশ কিছু কেনাকাটা করা হল। বাঙালি যেখানেই যাক, ঐ কাজটা ছাড়া তো ভ্রমণ অসমাপ্ত।


২৬ তারিখ, শনিবার সকাল ১০টায় সব লাগেজ গুছিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম, রুমটেক মনেস্ট্রি দেখে ফিরলাম। পাহাড়ের খাঁজে ঘেরা সুন্দর বড় মনেস্ট্রি। ঝকঝকে আবহাওয়ায় মনখুশি করে রাত আটটার দার্জিলিং মেল ধরলাম।
চারদিনের ছোট্ট শীতকালীন শীতের জায়গার ভ্রমণ মনটাকে ফুরফুরে করে দিল। তবে এসব জায়গায় স্হানীয় আবহাওয়ার হাল হকিকত বুঝে যাওয়া উচিত, এবারের বাস্তব পরিস্হিতি থেকে এটা উপলব্ধি করেছি।

ফেব্রুয়ারী,২০১৯–অষ্টম বিবাহবার্ষিকী ছিল ২৪ তারিখ। পুরোনো বৌয়ের ঘুরতে যাওয়ার আবদারকে বাস্তব করতে বর ইটাচুনা রাজবাড়িতে ২৩ তারিখে online এ booking করে রেখেছিল। বারাসাত থেকে ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে হুগলীর খন্নান এর কাছাকাছি ইটাচুনা রাজবাড়ির ফটকে পৌঁছে গেলাম। লাল রঙা বাড়িটা কেমন মায়াবি, দারোয়ান মশাই আগে থেকেই জানেন যে আজকের অতিথি তালিকা, তাই আমাদের নাম শুনতেই আন্তরিক অভ্যর্থনা। ম্যানেজার মশাই প্রাথমিক সব সইসাবুদ সেরে আমাদের বাড়ির অন্দরমহলে নিয়ে যেতে যেতে বলতে লাগলেন কোনটি কোন ঘর। খাবার ঘরের বাইরে একটু বসতে বললেন, তারপর এক ভদ্রমহিলা সুন্দর মাটির গ্লাসে গন্ধরাজ লেবুর জল দিলেন। আহা, মনে হল যেন অতি পরিচিত কারোর বাড়িতে এসেছি। তারপর আমাদের নির্দিষ্ট ঘরে নিয়ে গেলেন… পরপর ছোটপিসি, বড়পিসির ঘর পেরিয়ে আমাদের ঠাকুমার ঘর। ঘরের বাইরে জুতোজোড়া খুলে প্রবেশ করা এখানে রীতি… এখানেই তফাতটা স্পষ্ট হলো হোটেল আর বাড়ির মধ্যে। 


এবার যাই ঘরের কথায়… এমন সুন্দর সাজানো বিছানা, আয়নার সামনের ফুলদানিতে সদ্যফোটা ফুলের থোকা, বাথরুমের মধ্যের গাছের টব, আমার ছোট্ট মেয়ের জন্য রাখা বালিশ-স্নানের তোয়ালে… সব মিলিয়ে ঐ ঘরটি মন্ত্রমুগ্ধের মত আটকে রাখলো। স্নান সেরে খাওয়ার ঘরে সেদিনের সব অতিথিরা একজায়গায় মধ্যান্নভোজন। কাঁসার গ্লাসে ঠান্ডাজল আগে থেকেই রাখা, যেন এসেই গলা জুড়িয়ে যায়। ছোট্ট ছোট্ট রেকাব দিয়ে গ্লাসগুলো ঢাকা দেওয়া। তারপর মহাভোজ এলো কাঁসার থালা বাটিতে। এত সুন্দর ঘরোয়া রান্না মনে হলো না যে বাড়ির বাইরে আছি। আর পরিবেশক প্রতিজনই মহিলা… তাঁরা ঘুরে ফিরে এসে খোঁজ নিচ্ছেন যে আর কি লাগবে- রান্না কেমন হয়েছে… এ সবকিছু। খাবার শেষে বাইরের উঠোনে টেবিল টেনিস, ক্যারাম খেলার বন্দোবস্ত আছে। কেউ খেলায় মত্ত হলেন, কেউ বা বাড়ি ঘুরে দেখতে, কেউ ছবি তুলতে। 


ঠিক বিকেল ৪.৩০ -এ বাড়ির আরেক ম্যানেজার সবাইকে নিয়ে পুরো রাজবাড়ি ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলেন। ইতিহাসের সাথে সাথে বাড়ির পুরোনো জিনিস নেড়েচেড়ে দেখার সুযোগ হল। পিছনের দিকের পুকুরপাড়, ধানের গোলা, ঢেকি, সঙ্গীতের সরঞ্জাম, রাজহাঁসের ঘোরাফেরা, চা ঘরের বড় দাবা, পুরোনো বিশালাকার বাসনপত্র, পুকুরের অন্য পাশের মাটির ঘরগুলো-তাদের নাম, নানা রকম ফুল ফলের গাছ, তার সাথে সাথে বাড়ির উপর নীচের সব ঘরগুলো ( কাকাবাবু, জ্যাঠামশাই, গিন্নিমা, ঠাকুমা, বড়পিসি, ছোটপিসি.. এমন অনেকসব নাম) ঘুরে ফিরে দেখতে দেখতে সন্ধ্যা নামলো। সে সময়ে বড় সুন্দর বিচিত্র ছাদে যাওয়ার সুযোগ মিললো। নামটিও অতি মায়াময়… ছাত-স্বপ্নের সিঁড়ি। রাজবাড়ির ছাদ জুড়ে বোগেনভেলিয়া ফুল তার রূপ ছড়িয়েছে। ঘুরতে ঘুরতে বাড়ির অব্যবহৃত অংশটির ভগ্নদশাটাও নজরে আসে, ওখানে ‘লুটেরা’ সিনেমার কিছুটা হয়েছে। 
সন্ধ্যা নামতেই সবাই ঠাকুরদালানে এসে সন্ধ্যারতির সঙ্গে সঙ্গে কখন যেন ধূপধুনোর ধোঁয়ায় মিলেমিশে একাকার হলাম। শেষে প্রসাদ নিয়ে দালানের পিছনের চাঘরে গেলাম। অপরূপ বাঁশীর আওয়াজের সাথে চায়ের স্বাদ স্বপ্নের ঘোরে রাখল বেশ কিছুসময়। ঘরে এসে বিশ্রাম নিতে নিতে গরম গরম পেঁয়াজী এলো, পরিবেশনের ধরণটা সাধারণ খাবারকেও অসাধারণ করে দেয়। দিনের শেষে রাত ৯ টায় আবার সবাই রাতের খাবার টেবিলে, একইরকম আতিথ্যেয়তা। ১০.৩০ টার মধ্যে সবরকম দরজা বন্ধ হওয়ায় আমরাও আমাদের ঘরের পাশের খোলা টেরেসে নকল ঘাসের গালিচায় কিছুসময় গল্প করে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম।


সকালবেলায় ৭ টার সময়ে চা এসে উপস্হিত। ঘুমচোখে চা খেতে খেতে আবার সেই সুরেলা বাঁশিওয়ালা সকালটা মাতিয়ে দিলেন। প্রতিটি তলায় ঘুরে ঘুরে উনি বাঁশি শোনালেন। আমাদেরও এবার ফেরার পালা। তাড়াতাড়ি স্নান সেরে রেডি হয়ে প্রাতরাশ খেতে গেলাম। ফুলকো লুচি,আলুরদম,মিষ্টি,ফল…মায়ের হাতের রান্না মনে করিয়ে দিলো। 
ঠিক ১০ টায় ঘর ছেড়ে দিলাম,বিদায় জানাতে গিয়ে ওনারা এত সুন্দরভাবে বিদায় জানালেন যেন কোনো আত্মীয়বাড়ি থেকে ফিরছি।
অসাধারণ একটি দিন ঘরোয়া অভ্যর্থনায় রাজকীয়তার মিশেলে কাটলো। ফেরার পথে ব্যান্ডেলচার্চ আর ইমামবাড়া দেখে বাড়ি ফিরলাম ফুরফুরে মন নিয়ে। প্রতিটা বিবাহবার্ষিকীতে এমনই উপহার কামনা করি।।
একবেলার জন্য রাজকীয়ভাবে ইটাচুনা রাজবাড়িতে সময়টা স্বপ্নের মত কাটলো।

মার্চ, ২০১৯— দোলের পর পর কয়দিন ছুটি, বাচ্চার পরীক্ষা শেষ, social media তে বন্ধুদের ঘুরতে যাওয়ার ছবি.. এ সব দেখে মন কি আর ঘরে থাকতে চায়। একদিন অন্তত কোথাও তো যাওয়া যায়, তাই মার্চের শেষে শনিবার সকালে বেরিয়ে পড়লাম দীঘার রাস্তার দিকে। দীঘার আগেই বাঁদিকে তাজপুরের রাস্তা ধরে পৌঁছে গেলাম আমাদের আগাম বুক করা রিসর্টে।

পৌঁছেই দুপুর ১২.৩০ নাগাদ সমুদ্রপাড়ে দৌড় দিলাম প্রায়। দিগন্তবিস্তৃত লাল কাঁকড়ায় মোড়া ফাঁকা সমুদ্রতট। গুটিকতক ভ্রমণপ্রিয় মানুষ, কিন্তু সমুদ্রে চোরা বালি থাকায় নোনা জলে পা ডোবানো ছাড়া বেশিদূর যাওয়ার সাহস হল না। সমুদ্রের পাড়ে ডাব খেয়ে কিছুসময় সমুদ্রস্নান সেরে হোটেলে ফিরলাম। স্নান খাওয়া শেষ করে একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেলের সূর্যাস্ত দেখতে যাওয়ার পালা। গোধূলির কনে দেখা আলোতে সমুদ্রতট মায়াবি বড়। তারপর গেলাম দীঘার উদ্দেশ্যে। কোলাহল ঘেরা দীঘার আমেজই আলাদা। নতুনভাবে সাজানো দীঘাতে সমুদ্রের পারে বসে বসে, রঙবেরঙের জিনিস দেখে, রকমারি ছোট ছোট মুখরোচক খেয়ে দিব্বি ১-১.৫ ঘন্টা কাটিয়ে আবার রাতে তাজপুরে ফিরলাম।


পরের দিন সকাল সকাল লাল কাঁকড়ার রাজ্যকে দুচোখ ভরে দেখলাম। নিঃশব্দে সমুদ্রপারের দোকানে বসে তাদের চলাচল, ঝাউবনের মাতাল হাওয়া, সাগরের উন্মত্ত ঢেউ দেখে আবার বাড়ি ফেরার পথে পা বাড়ালাম।
এমন করেই কেটে যায় আমাদের প্রতিমাস, বেঁচে থাকার রসদ জোগায় এমন ছোট্ট ছোট্ট ঘুরতে যাওয়া। কোনো কোনো মাসে পকেটে টানও ধরে, টাকা পয়সা তো জমছেই না, উল্টে আরো ক্ষিদে বেড়ে যাচ্ছে এই নেশার। তবু বলবো, মনের প্রসার উদারতা হয়ত বাড়ে একমাত্র প্রকৃতির কোলে গেলে। আবারও সামনের মাসগুলো কোথাও না কোথাও যাবো, সে গল্প করা যাবে পরে… যদি আমার এসব সাধারণ গল্পগাঁথা বন্ধুদের ভালো লাগে তবেই। সুস্হ জীবনের সন্ধান একমাত্র ভ্রমণের মধ্যেই মনে হয় লুকিয়ে থাকে।

One thought on “ঘোরা রোগ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − 5 =