নতুন প্রযুক্তি : কুইক কম্পোস্ট

অগ্নিভ হালদার ##

মাটির প্রাণ হলো জৈবপদার্থ এবং এই জৈবপদার্থ থাকলেই মাটিতে অণুজীবের মাত্রা ঠিক থাকে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে দিন দিন মাটিতে জৈবপদার্থের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ফলে মাটির উর্বরতা আর আগের মতো থাকছে না। এর কারন হল মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার। তা ছাড়া নিবিড় ফসল চাষ ও বেশি বেশি খাদ্যবিলাসী ফসলের জাত প্রবর্তিত হওয়ার ফলে একই জমি থেকে ভালো ফলন নিশ্চিত করতে এখন মাটির উর্বরতা তথা স্বাস্থ্য ধরে রাখার দিকে নজর দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

উপাদান

কুইক কম্পোস্ট তৈরি করতে লাগে খৈল, কাঠের গুঁড়া বা চালের কুঁড়া ও অর্ধপচা (ডিকম্পোজড) গোবর বা হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা। এসব উপাদানের মিশ্রণ অনুপাত হবে ১:২:৪।

তৈরির পদ্ধতি

খৈল ভালোভাবে গুঁড়া করে চালের কুঁড়া বা কাঠের গুঁড়া ও আধাপচা মুরগির বিষ্ঠা বা গোবরের সাথে উত্তমভাবে মেশাতে হবে। মিশ্রণে পরিমাণমতো জল যোগ করে কাই বানাতে হবে, যাতে ওই মিশ্রণ দিয়ে কম্পোস্ট বল তৈরি করলে ভেঙে যাবে না; কিন্তু ১ মিটার ওপর থেকে ছেড়ে দিলে ভেঙে যাবে। মিশ্রিত পদার্থগুলো গাদা করে এমনভাবে রেখে দিতে হবে যাতে ভেতরে জলীয় বাষ্প আটকে পচনক্রিয়া সহজ হয়। গাদার পরিমাণ ৩০০-৪০০ কেজির মধ্যে হওয়া ভালো। গাদার সব উপাদান একবারে না মিশিয়ে তিন-চারবারে মেশালে ভালো হয়।

শীতকালে গাদার ওপরে ও চার দিকে চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। আর বর্ষাকালে বৃষ্টির জন্য পলিথিন ব্যবহার করতে হবে এবং বৃষ্টি থেমে গেলে পলিথিন সরিয়ে ফেলতে হবে। গাদা তৈরির ২৪ ঘন্টা পর থেকে গাদার তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং ৪৮-৭২ ঘন্টার মধ্যে ৬০-৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পৌঁছায়। অর্থাৎ গাদায় তখন আঙুল ঢুকালে অসহনীয় তাপমাত্রা অনুভূত হবে (৬০-৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। এর ফলে সৃষ্ট তাপে মিশ্রিত পদার্থ পরে নষ্ট হতে পারে। তাই গাদা ভেঙে ওলটপালট করে ১ ঘন্টা সময়ের জন্য মিশ্রণকে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে এবং পুনরায় আগের মতো গাদা করে রাখতে হবে।

এভাবে ৪৮-৭২ ঘন্টা পরপর গাদা ভেঙে ওলটপালট করতে থাকলে ১৫ দিনের মধ্যে ওই দ্রুত মিশ্র জৈবসার জমিতে প্রয়োগের উপযোগী হবে। সার তৈরি হলে তা ঝুরঝুরে শুকনো এবং কালো বাদামি রঙ হবে।

প্রয়োগ মাত্রা

জমির উর্বরতা ও ফসলভেদে প্রতি শতাংশে প্রায় ৬-১০ কেজি কুইক কম্পোস্ট সার ব্যবহার করতে হয়। ফসলের জমি তৈরির সময় প্রতি শতাংশে ৬ কেজি এবং পরবর্তি পর্যায়ে সেচের আগে ২ কেজি করে উপরি প্রয়োগ করা যেতে পারে।

সবজি ফসলের ক্ষেত্রে জমি তৈরির সময় প্রতি শতাংশে ৬ কেজি এবং ৪ কেজি সার রিং বা নালা করে সবজি বেডে প্রয়োগ করতে হয়। সার প্রয়োগের পর সেচ দিতে হয়।

পুষ্টিমান

কুইক কম্পোস্ট সারে নাইট্রোজেন ২.৫৬ শতাংশ, ফসফরাস ০.৯৮ শতাংশ ও পটাশিয়াম ০.৭৫ শতাংশ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও কিছু গৌণ খাদ্য উপাদান থাকে।

ব্যবহারের উপকারিতা

কুইক কম্পোস্ট সার ব্যবহারের ফলে মাটিতে বাতাস চলাচল বৃদ্ধি পায়, অণুজীবের ক্রিয়া বাড়তে থাকে, ফসলের প্রয়োজনীয় সব খাদ্যোপাদান সহজলভ্য হয়। ফলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় এবং গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন সম্ভব হয়।

লেখকঃ কৃষিগবেষক

পল্লী শিক্ষা ভবন, বিশ্বভারতী, শ্রীনিকেতন

ফোন– ৮৭৬৮৩৬৯৮৩৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × three =