নতুন বিপদ ওমিক্রন

ধীরে ধীরে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ করোনার টিকা পাচ্ছিলেন, দুই বছরে করোনা মহামারীর দু’টি ঢেউয়ের পর সংক্রমণের হার কমে আসছিল। আবারও প্রতিটি ক্ষেত্র মানুষের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছিল, অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বিশ্ববাসী যখন অন্ধকারময় দিন কাটিয়ে আবার কোভিড-১৯-পূর্ব পৃথিবীতে (New Normal) ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, সেই সময় বিশ্বজুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন।

ওমিক্রন নামের নতুন এই ধরন এখন পর্যন্ত ২৩টি দেশে ছড়িয়েছে। সর্বশেষ সৌদি আরবেও শনাক্ত হয়েছে। ওমিক্রন প্রথম শনাক্ত হয় আফ্রিকার দেশ বোতসোয়ানায়। এরপর আফ্রিকার আরও কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, চেকপ্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, হংকং, ইসরায়েল, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, স্পেন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও নাইজেরিয়া। ভারতেও শনাক্ত হয়েছে এ ধরন।

এ নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। নতুন ধরনটি কতটুকু শক্তিশালী, মানবদেহে কতটুকু ক্ষতি করে, উৎপাদিত করোনার টিকা এ ধরনের বিপক্ষে কার্যকরী বা নিরাপদ কিনা- এসব নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা, গবেষকরা নেমে পড়েছেন তথ্য অনুসন্ধানে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ বিষয়টি খুব গুরুত্বসহকারে নিচ্ছে। ডব্লিউএইচও প্রধানটেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েস সব দেশকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে বলেছেন। এ ধরনের পুরোপুরি চিত্র ও তথ্য পেতে দুই সপ্তাহের মতো সময় প্রয়োজন। তারপরই ওমিক্রন মোকাবিলার প্রস্তুতির বিভিন্ন ধাপ বা রণকৌশল ঠিক করা হবে।

এ ধরন প্রসঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার টুলি ও টি আলজেরিয়া বলেন, অস্বাভাবিকভাবে এটি রূপান্তরিত হয়েছে এবং অন্য যে কোনো ধরন থেকে এটি আলাদা। সব মিলিয়ে ৫০ বারের মতো জিনবিন্যাস পরিবর্তিত হয়ে নতুন ওমিক্রন ধরন রূপ পেয়েছে, আর স্পাইক প্রোটিনের বৈশিষ্ট্য বদলেছে তিশবারেরও বেশি। সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে কমপক্ষে ৭০টি দেশ ও অঞ্চল আফ্রিকার বেশকটি দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনার এ নতুন ধরনকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছে। 

উপসর্গসমূহ :
দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসক ড. অ্যাঞ্জেলিক কোয়েটজি বলেন, ওমিক্রনের উপসর্গ খুব মৃদু। চিকিৎসকদের মতে, ওমিক্রনের কিছু লক্ষণ রয়েছে যা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ ধরনে আক্রান্ত রোগীদের দেহে খুবই হালকা উপসর্গ থাকে এবং বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করা সম্ভব। উপসর্গসমূহ নিম্নরূপ : 

১। ক্লান্তিবোধ করা
২। গায়ে ব্যথা
৩। মাথা যন্ত্রণা 
৪। ভাইরাল ফিবারের মতো লক্ষণ
৫। বেশিরভাগ রোগীর বয়স ৪০ বা এর কাছাকাছি
৬। অক্সিজনের মাত্রা কমে না 
৭। স্বাদ-গন্ধ যায় না 

করোনার টিকা কী কাজ করবে :
১। মার্কিন সংস্থা ফাইজার এবং তাদের জার্মান পার্টনার বায়োএনটেক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে- তাদের বর্তমান টিকা করোনার নতুন রূপের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই, তবে মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে ওমিক্রন ধরনের বিরুদ্ধে একটি নতুন টিকা তৈরি করতে পারবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 
২। মডার্না এরই মধ্যে নতুন ধরনের বিরুদ্ধে কার্যকর বুস্টার ডোজ বানানোর কাজ শুরু করেছে। 
৩। জনসন অ্যান্ড জনসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে নতুন টিকা উদ্ভাবনের ঘোষণা দিয়েছে। 

আমাদের করণীয় :
এ সময় আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সচেতন হতে হবে আর নিম্নলিখিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে :
১। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া বন্ধ করতে হবে।
২। সঠিক নিয়মে নাক, মুখ ঢেকে মাস্ক পরিধান করতে হবে।
৩। সাবান জল/ হ্যান্ড র‍্যাব দিয়ে হাত ধুতে হবে।
৪। সামাজিক/ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
৫। যারা এখনো করোনার টিকা গ্রহণ করেননি তারা রেজিস্ট্রেশন করে টিকা গ্রহণ করবেন।

তবে এখনই অযথা আতঙ্ক করবার কারন নেই বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। সতর্ক থাকা দরকার, কিন্তু আতঙ্কিত হয়ে অন্যকে প্রভাবিত না করাই ভাল। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four − 1 =