প্রেমিকের নাম শিলং

 বন্দনা বিশ্বাস, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা ##   

           সে ২০১৯ সালের কথা। ২১ শে জুন বি.এড এর পরীক্ষা শেষ। কলেজ থেকে এগারো জনের একটি ট্রুপ তৈরি করা গেল। ২২ জুন হাওড়া স্টেশন থেকে কু ঝিক ঝিক অসম হয়ে মেঘের দেশ মেঘালয়। মেঘের দেশে রেলপথ নেই। অগত্যা শ্রীযুক্ত বোলেরোর স্মরণ নিতে হলো। বোলেরোর মালিক দীপকদাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম। দাদারা যেমন হয় দীপকদা ঠিক তেমনই। অসম হয়ে যখন মেঘালয়ে যাচ্ছিলাম, মনেই হচ্ছিল না সড়কপথে যাচ্ছি, মোমের মতো রাস্তা বেয়ে আমরা যেন মেঘের দেশের রাজধানী শিলংয়ে ভেসে ভেসেই পৌঁছে গেলাম। দীপকদা অবশ্য বলছিলেন স্টিয়ারিংয়ের ওপর যথেষ্ট কন্ট্রোল না থাকলে মোম-রাস্তায় টার্ন নেওয়ার সময় যে গাড়িগুলো ব্যারিকেড ভেঙে বড়সড় বিপদের হাত থেকে বেঁচে খানিক রেস্ট নিচ্ছিল,তাদের মতো দশা আমাদেরও হতে পারে।

             ২৭ তারিখ আবার অসমের মুখোমুখি হবো। এখন আমরা শিলংয়ের পুলিশ বাজারে আমাদের হোটেলের রুমে বিশ্রাম নিচ্ছি। স্নান-খাওয়া সেরে সন্ধ্যেবেলা আমরা নানা বয়সের ছয় কন্যে পুলিশ বাজারে মার্কেটিংয়ে বেরোলাম। সকলেই কমবেশি কিনেছি। শীতের পোশাকই বেশি। একটু অভিনব।

                পিতৃতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বড়ো হয়ে ওঠা আমার ক্ষোভ ছিল এই সিস্টেমের প্রতি। ভাবলাম মাতৃতান্ত্রিক মেঘালয়ে এসে প্রাণ জুড়োব। হল না।

          দীপকদা শিলং আসার দিনই বলছিলেন রাস্তায় কোনও যুবক-মধ্যবয়স্ক পুরুষ মানুষের দেখা পাবে না। অধিকাংশই নেশায় চুর হয়ে থাকে। ঘরেই থাকে। কাজকর্ম বিশেষ করে না। সংসারের কোনও দায়দায়িত্ব পালন করে না। পরিবারের প্রতি দায়িত্ব বলতে সন্তান উৎপাদনে সহায়তা করা।

           দীপকদার কথা শুনে আমি আমার মতো করে একটি কনক্লুশানে এলাম ছড়ি ঘোরানো ছাড়া আর কোনও কাজ আছে কিনা ঠিক করতে না পেরে ভোলেবাবার বংশধরেরা মাতৃতান্ত্রিক মেঘালয়ে টিকে আছেন বলা যায়। না নিজের বিকাশসাধন করছেন না কাউকে বিকশিত হতে সহায়তা করছেন। মাতৃতান্ত্রিক মেঘালয়ের মায়েদের ঘাড়ে সংসারের জোয়াল তুলে দিয়ে শিব ঠাকুর আচ্ছন্ন এবং চুর হয়ে আছেন। চুপচাপ। ঝামেলার ভেতর যেতে  চাইছেন না।         

             আহা! মৌসিনরাম থেকে ফিরে আসার দিনের কথা কিছুতেই ভুলতে পারি না। অপূর্ব সুন্দর সেই রমনী পাহাড়ের ঢিবি থেকে ছোট ছোট পাথর কেটে ঝুড়ি ভর্তি করছেন। দুপুরের খাঁ খাঁ রোদে মুখ তার লাল হয়ে উঠেছে। নিখুঁত সুন্দর সেই গোলাকার মুখে কমনীয়তার লেশমাত্র ছিল না। ছিল দুমুঠো খাবার জোগাড়ের দুরূহ লড়াই। মৌসিনরামের পথেঘাটে-যত্রতত্র-বাড়িতে নাশপাতি গাছ   হামেশাই দেখা যায়। আমাদের যেমন বাড়িতে-রাস্তার আশেপাশে আমগাছ দেখা যায়, তেমন। আমার বান্ধবী অন্তরার মা অর্থাৎ আমার কাকিমার সাধ হলো রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে  নাশপাতি গাছের ফল-পাতা-গাছটিকে অন্তরঙ্গ করে একটি ছবি তুলবেন, দাঁড়ালেনও, সেই চাঁদমুখ রমনী রে রে করে প্রতিবেশীদের অচেনা ভাষায় কি একটা যেন বললেন, আমরাও আমাদের ভাষায় বললাম ছবি তুলছি মাত্র, কোনও ফল-পাতা ছিঁড়ব না। বোঝাতে পারলাম মনে হলো না। আরও দু-একটি  করে মানুষ আমাদের গাড়ির দিকে এগিয়ে এসে কী যেন বলতে লাগলেন কোনও কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে চম্পটং……..

              আমি নিজেকে বোঝালাম পেটের জ্বালা কি, বোঝ তো নি, তাই কারোও মুখ দেখলেই তোমার চাঁদের কথা মনে পড়ে, আর সেই চাঁদমুখওয়ালি রোটি-কাপড়া-মকানের জন্য  লড়াই করে চলেন।

                   চেরাপুঞ্জির(ডাকনাম “সোহরা”) অভিজ্ঞতা বলতে বৃষ্টি আর বৃষ্টি অফুরান আর অক্লান্ত তিনি বিশ্রাম নেবেন না। সেভেন সিস্টার্স ফলস্ বৃষ্টির চোটে প্রথমবার তো দেখতেই পারলাম না। দীপকদা নেহাত ভালো মানুষ, তাই হতাশ হয়ে দুই কিলোমিটার বাড়ির পথে পাড়ি দিয়েও যখন দেখলেন বৃষ্টি একটু রেস্ট নিচ্ছে, কি ঝিরিঝিরি টাইপের হচ্ছে, ফের দু কিলোমিটার উজিয়ে নিয়ে গেলেন দ্বিতীয়বার অনেক স্পষ্টভাবে সেভেন সিস্টার্স দেখলাম সেভেন সিস্টার্স জলপ্রপাত অর্থাৎ পরপর সাতটি জলপ্রপাত। ছবি তুললাম। খেদ মিটল।                

                 চেরাপুঞ্জির রামকৃষ্ণ মিশন আমার মনে বিশেষ করে রেখাপাত করেছে। মিশনে ঢোকার আগে ফোনের সুইচ অফ্ করতে হলো। শান্ত পরিবেশে শুধু মিশন পরিচালিত লাগোয়া স্কুলের বাচ্চাদের টিফিন-টাইমের হৈ-হুল্লোড় কলরব শোনা যাচ্ছিল। অবশ্য মিশনের শান্ত পরিবেশটি আমার কাছে ছন্দহীন লাগছিল। স্টাফদের হাসিখুশি মুখই আমি দেখতে চাইছিলাম। মেঘালয়ে ঘুরতে গিয়ে একটি জিনিস আমার বিশেষ করে নজরে এসেছে তা হলো এখানকার লোক, মহিলারা বিশেষত, পারতপক্ষে হাসে না, এবং হাসেই না। যদিও মহিলারা টকটকে  লাল-খয়েরি লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙান আটপৌরে সাজেও।

                চেরাপুঞ্জি-মৌসিনরাম ঘুরে তৃতীয়দিন গেলাম Dawki, ডউকি হলো মেঘালয়-বাংলাদেশ সীমান্ত। ভারতীয় তেরঙা পতাকা আর ভারতীয় জওয়ানদের সঙ্গে ছবি তুললাম। মনে হলো ওরাও খুশি হলো। আর টের পাচ্ছিলাম ঐ স্বল্পসময়েই পরিবার-পরিজন ছেড়ে দীর্ঘদিন নিঃসঙ্গ থাকার ফলে ওদের বুকে ভালোবাসা পাওয়ার জন্য হাহাকার। আত্মীয়স্বজনের স্নেহ-প্রেম-ভালোবাসা বঞ্চিত ওরা। অন্তত প্রত্যক্ষভাবে তো পায় না। ডউকি সীমান্তে বাংলাদেশের একটি পরিবারকে চেকপোস্টে যথাযথ কাগজপত্র জমা দিয়ে ভারতে ঢুকতে দেখলাম। ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক যেহেতু যথেষ্ট ভালো, তাই দুদেশের স্টাফরা দেখলাম নির্দ্বিধায় একে অপরের সীমানায় চলে যাচ্ছেন। আমি আর বান্ধবী টুম্পাও বাংলাদেশে ঘুরে এলাম। একটু ভয় ভয় করছিল, তাও ঠিক করলাম, কোনও B.S.F.বকাঝকা বা মেজাজ দেখালে না-শোনার ভান করে ‘সিলেট’লেখা অফিসটা  ঘুরে আসবই। ভয় অমূলক ছিল। কেউ কিছু বললেন না। দুইদেশের মধ্যে বেশ একটা হাসিখুশি ভাব। ভালো লাগলো। ডউওকির আরও একটা ব্যাপার না বললেই নয় সেটা হল উমনট বা উংনট নদীর কথা। গোটা নদীর জল এতটাই স্বচ্ছ যে প্রায় পাঁচ ছয় ফুট নিচের পাথরের টুকরোগুলিও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। স্ফটিক স্বচ্ছ জলের কথা শুনেছিলাম, কিন্তু সেটা বাস্তবে দেখলাম ডউকিতে এসেই। নৌবিহারও করা যায় এই নদীর বুকে।

         Dawki ঘুরে ঐ দিনই গেলাম এশিয়ার পরিচ্ছন্নতম গ্রাম ( Mawlinong)মওলিনংয়ে। গ্রামটা বড্ড বেশি পরিপাটি। প্রাণ আর স্বতঃস্ফূর্ততার অভাব যেন। শুধু ব্যতিক্রম কলসপত্রী গাছটি  আর স্কুলছুটি হওয়া  শিশুগুলি। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে তারা আসছিল। জামা-কাপড়-ব্যাগ ভিজে  যাচ্ছে লক্ষ্য নেই যেন। ঐ পতঙ্গভুক কলসপত্রী গাছটিকে অচেনা জায়গায় এতো ভালো লেগেছিল কেন তার ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। তবে কলসপত্রী আর শিশুগুলিই আমার চোখে ভাসে, এশিয়ার পরিচ্ছন্নতম গ্রাম বলতে আমি এই দুটো প্রাণবন্ত সত্তাকেই মনে রেখেছি বাকিরা যেন পরিচ্ছন্নতম গ্রামের তকমা বজায় রাখার জন্য স্বতঃস্ফূর্ততা হারাচ্ছেন, তবে হ্যাঁ ঐ গ্রামের মানুষদের চাহিদা কম, আমাদের তুলনায় অনেক নিয়ন্ত্রিত মনে হয়েছে।

            রুটব্রিজের কথা না বললেই নয়। গাছের শেকড় দিয়ে তৈরি ব্রিজ। তবে সেই শেকড়ের ওপর দু-একটি সুপুরি গাছের কান্ড টাইপের কিছু একটা ফেলে দিয়েছেন। তলায় তুরন্ত স্রোত। তাই ঝুঁকি নিতে চাননি কতৃপক্ষ। সাঁকো পার হলাম। তলায় মারণ জলস্রোত ছিটকে ছিটকে গায়ে লাগছে। আহা! অসাধারণ সেই অনুভূতি। ব্রিজ ঘুরে বাড়ি ফেরার পথের দুধারে দেখলাম আনারস পিস পিস করে কেটে প্যাকেটবন্দী, বিক্রির আশায়, ডিমসিদ্ধ, কলা ইত্যাদি। পরিমানে খুবই কম যদিও। দোকানীদের মুখে হাসি নেই। আমার মনে হয়েছে ২৪×৭ বৃষ্টি হয়েই চলেছে আর প্রায় সর্বক্ষনের মেঘলা আকাশ মন ভালো হতে দেয় না মেঘের দেশের বাসিন্দাদের।

               হয়তো মেঘলা আকাশ মনকেও মেঘলা করে দেয়। নইলে মৌসিনরাম-চেরাপুঞ্জি-ডউকি  যাবার পথে দেখেছি পাহাড়ি ঢিবি, ঝোপঝাড়ের ভেতর আনারস, কাঠাল ফলে রয়েছে যত্রতত্র। উদ্যোগী মানুষ হলে সেগুলো বিক্রি করে স্বনির্ভর হতেই পারেন। তবে পাহাড়ের পিক বা লিলিপুটের মতো দেখতে লাগা উচ্চতায়ও চাষ করছেন পাহাড়ি মানুষগুলো যেতে যেতে দেখেছি। হয়তো পরিশ্রমের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব আর অজ্ঞতার  প্রভাবই এর জন্য দায়ী।

            ডউকি, রুটব্রিজ, মওলিনং একদিনে তিনটে জায়গা কভার করে শিলংয়ের পুলিশ বাজারে ফিরছি আমরা রাস্তায় বড় বড় পশমওয়ালা কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে দেখলাম। সুন্দর, কানগুলো বড় বড়,পশমেরই মতো, আদর করতে ইচ্ছে হলো, কিন্তু সুযোগ নেই আবার সুযোগ থাকলেও কামড় খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ইতিমধ্যে তিনবার কামড় খেয়েছি।     

             আর ভালো লেগেছে রাস্তার দু-পাশের  অস্বচ্ছল পরিবারগুলির জোড়াতাপ্পি মারা ছাদেও টবভর্তি ফুলের গাছ, টোপরের মতো কঞ্চি দিয়ে হাতে বোনা ডাস্টবিন রাস্তার কিছুটা অন্তর অন্তর রাখা আছে আর আছে অগুন্তি সার দিয়ে চলা গাড়ি,কিন্তু হর্নের শব্দ নেই।কাউকে টপকে যাবার তাড়া নেই। মোমের মতো মিহি রাস্তাঘাট। আর রাস্তার দুপাশের সবুজ আর সবুজ, পাহাড়, কুয়াশার মতো সাদা মেঘ নাকে-মুখে-সারা গায়ে চুম্বন করে চলে গেল যেন।

             ২৭শে জুন, মেঘের দেশের রাজধানী শিলং থেকে অসমের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। শিলং আমার পুরোপুরি ভালো লাগেনি-পুরোপুরি খারাপ লাগেনি। তবু আমাকে পুনরায় শিলং যেতে বললে, আমি একপায়ে রাজি। কেন এমন অনুভূতি, তা আমারও অবোধ্য।

6 thoughts on “প্রেমিকের নাম শিলং

  • August 1, 2020 at 5:41 am
    Permalink

    ভালো লাগল, ছবি গুলো ভীষণ সুন্দর।

    Reply
      • September 12, 2020 at 3:44 pm
        Permalink

        পড়লাম l মন দিয়ে পড়লাম ভ্রমণ কাহিনী l বন্দনা বিশ্বাসের “প্রেমিকের নাম শিলং “l আমিও আমার কলেজের 105 জন ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে শিলং গিয়ে ছিলাম l তাই খুব খুঁটিয়ে পড়েছি l আমরা বই পড়ে জেনেছিলাম, সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় চেরাপুঞ্জিতে l তথ্যটা অতীতে নির্ভুল হলেও, বর্তমানে ভুল l এখন বেশি বৃষ্টি হয় মৌসিনরামে l তাই চেরাপুঞ্জিতে গিয়ে মেঘ বৃষ্টি না দেখেই ফিরতে হয়েছিল l অবশ্য মৌসিনরাম সব ভরিয়ে দিয়ে আমাদের সবার প্রাণ মন সহজেই জয় করে নিয়েছিল l তাই আজও যেন মৌসিনরাম হাতছানি দিয়ে ডাকে আমাকে l
        তাই বন্দনা বিশ্বাসের লেখায় আমি যেন সেই মেঘের দেশে হারিয়ে গিয়েছিলাম l লেখিকার বর্ণনা সুন্দর l ভালো লেখার জন্য বন্দনাকে অভিনন্দন জানাই l
        ড. সেকেন্দার আলি সেখ
        প্রিন্সিপাল: সুন্দরবন বি এড কলেজ l

        Reply
        • October 3, 2020 at 10:39 am
          Permalink

          অধ্যক্ষমশাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ, “প্রেমিকের নাম শিলং “লেখাটি খুঁটিয়ে পড়ার জন্য।ভরা বর্ষার সিজনে(২২-২৮জুন)গেছি বলে আমরা চেরাপুঞ্জির অকৃপণ,ছোটোবেলার পাঠ্যবইতে পড়া রূপের সঙ্গে বাস্তবের অভিজ্ঞতার হেরফের পাইনি।সে এক অবর্ননীয় অনুভূতি,এক অন্তর্লীন ভালো লাগা।একথাও ঠিক,মৌসিনরামে সৌন্দর্যের বৈচিত্র্য বেশি।।
          লেখাটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে জেনে,আমার ভালো লাগার পরিমান আরও বাড়ল।ভালো থাকবেন,স্যার🙏।।

          Reply
      • October 3, 2020 at 4:52 am
        Permalink

        ধন্যবাদ,স্যার🙏।ভালো থাকবেন, ভালো রাখবেন🙏🙏।আপনার “সুখের চাবি” বইটা আমি যতবার পড়ি,ততবারই নতুন মনে হয়।।শিলংয়ের বর্ণনা ভালো লাগার জন্য, ধন্যবাদ স্যার🙏🙏🙏🙏।।

        Reply
    • October 3, 2020 at 4:45 am
      Permalink

      ধন্যবাদ,ছবিগুলো ভালো লাগার জন্য 🙏

      Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 1 =