বিবাহ বিভ্রাট – দেশে দেশে

ইন্দ্রদীপ দত্ত গুপ্ত 

বিবাহ বা বিয়ে; ব্যুৎপত্তিগত অর্থ যাই হোক না কেন বাঙালি বিয়ে নিয়ে আলোচনা উঠলেই হিন্দিভাষার শরণ নেয় – ‘ দিল্লী কা লাড্ডু, যো খায়েগা…………’ ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ ঝোঁকটা থাকে বিয়ে করার দিকেই, যেন পস্তাতে হলে খেয়ে পস্তানোই ভালো। আর অবিবাহিত থাকলে হাজারো মুস্কিল। আপনি নতুন জায়গায় বাড়ি ভাড়া পাবেন না, বিবাহিত লোকদের আড্ডায় আপনি ঠাঁই পাবেন না। অ্যাডাল্ট জোকস বলে তারা আপনার দিকে করুণার দৃষ্টি দেবে। ভাবটা এমন যে, এ বেচারা আর এ সবের কি বোঝে! কিংবা ধরুন আপনার প্রাণের বন্ধু যে আপনার সঙ্গে রাতের পর রাত রাজা-উজির মেরেছে – বিয়ে করার পরদিনই – আড্ডা শুরু হওয়ার মিনিট পনেরো পর থেকেই উশখুশ – না রে, একটা জরুরী কাজ আছে। আজ উঠি। অতএব, মশাই, এইসব ঝামেলা সহ্য করার চেয়ে বিয়ে করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

কিন্তু বিয়ে করব বললেই তো আর বিয়ে করা হয়ে ওঠে না। প্রশ্ন উঠবে কাকে বিয়ে করাটা ঠিক হবে। আজকের যুগে তেমন মেয়ে কই, যে কিনা আদর্শ পত্নী হয়ে উঠবে দময়ন্তী কিংবা আলকেস্টিস এর মতো? মধ্যযৌবনা, দুই সন্তানের জননী দময়ন্তীর প্রেমের তীব্রতা এমনই ছিল যে ‘নল’ বাবাজীবনকে সুড় সুড় করে সব ফেলে ছুটে আসতে হয়েছিল। অথবা ধরুন, গ্রিক উপকথায় অ্যাডমিটস এর মৃত্যু নির্ধারিত হতে পারত কেবলমাত্র তার পরিবর্তে কেউ মৃত্যুবরণ করলে। কোনও আত্মীয়ই রাজি হয় না, হল কে? না তাঁর সদ্যপরিণীতা স্ত্রী আলকেস্টিস। তবে এখন আবার একথাও শোনা যায় যে, কোনও কোনও স্বামী স্ত্রীর চেয়ে নিজের মৃত্যুবরণকেও শ্রেয় মনে করেন। দাঁড়ান দাঁড়ান। তাতেও নিস্তার নেই। জায়গাটা যদি ফ্রান্স হয় – তাহলে মহিলারা কোনো মৃত ব্যাক্তিকেও বিয়ে করতে পারবেন।

পরের পর্যায়ে আসা যাক। যাকে আপনি বিয়ে করতে যাচ্ছেন সে আপনার পক্ষে শুভ না অশুভ – জানবেন কী করে? মিশরীয় প্রবাদ বলছে – বিয়ের আগের রাতে যদি বিড়ালের হাঁচি শোনা যায় তবে কনে অবশ্যই সৌভাগ্য বয়ে আনছে। ইংল্যান্ডের সাহেবরাও কম যান না। তাদের কুসংস্কার – বিয়ের দিন যদি রামধনু দেখতে পাওয়া যায় – তবে সৌভাগ্য এক্কেবারে যাকে বলে টইটম্বুর। হিন্দুরাও বিয়ের রাতে বৃষ্টি হওয়াকে শুভ মনে করেন। এতদুর পড়ে কি মনে হচ্ছে? বিয়েটা বর্ষাকালে করাই ভালো। তাই না?

আরো আছে। কনের বাঁ হাতের অনামিকাতেই আংটি পড়াতে হয়। প্রায় সব দেশেই এক নিয়ম। শুরুটা সেই প্রাচীন মিশরে। আবার রোমানরাও বিশ্বাস করত বাঁ হাতের অনামিকা থেকে একটা শিরা সোজা হৃদয়ে প্রবেশ করেছে। নাম তাঁর vena amoris অর্থাৎ vein of love. অতএব অনামিকা ছাড়া অন্য আঙ্গুল নৈব নৈব চ।

এত কিছুর মধ্যে একটা জম্পেশ খবর পাওয়া গেল। ব্যাবিলনে, প্রায় ৩০০০ বছর আগে, প্রথা অনুযায়ী মেয়ের বাবা বিয়ের পর একমাস ধরে জামাইকে পর্যাপ্ত পরিমাণে Honey Beer পাঠাতো। চান্দ্রমাস মেনে চলা ব্যাবিলনবাসী সেই মাসের নাম দিয়েছিল Honey month. পরবর্তীকালে Honeymoon নামের বিশেষ প্রথায় তা রূপান্তরিত হয়।

এত কাঠখড় পুড়িয়ে জগতজোড়া বিবাহিত পুরুষদের অবস্থা কেমন হয়? শিবরাম চক্রবর্তী অনেকদিন আগেই শেষ কথাটা বলে গেছেন –

‘জগতে দুরকমের পুরুষ আছে- জীবিত আর বিবাহিত।’ রসিকজনের জন্য ঈশারাই যথেষ্ট। অলমিতি বিস্তারেন…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 − 4 =