ব্যথা

মালবিকা বাসুলী ভক্তা, নন্দকুমার, পূর্ব মেদিনীপুর ##

    মাস তিনেক আগে, গোলাপটা খোঁপায় গুঁজতে গিয়ে, সন্তুর হাতেই ঘাড়ে কাঁটা ফুটেছিল। ক্ষতটা বাইরে নেই, ভেতরে আজও আছে।

মঞ্জুশ্রীর মনটা মোচড় দিয়ে উঠলো।

   অঙ্কুশ আর মঞ্জুশ্রীর বিয়েটা প্রেমজ নয়। মঞ্জুর তখন সেকেন্ড ইয়ার, সিনিয়র ক্লাসের সন্তু তার নবযৌবনা হৃদয় নদীতে তোলে ভালো লাগার ঢেউ। কালের স্রোতে দুই হৃদয়নদীর একই স্রোতে বয়ে চলা। এদিকে মঞ্জুর বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ক্যান্সারটা অনেকদিন আগেই শরীরের মধ্যে বাসা বেঁধেছিল কিন্তু জানতে দেইনি কাউকেই। বাবার শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে হৃদয়ের ঘরে তালা দিয়ে এক অচেনা সম্পর্কে বাঁধা পড়ে মঞ্জু।কিন্তু হৃদয়মাঝে প্রথম প্রেমের ফল্গুধারা বইতে থাকে নীরবে। অঙ্কুশের প্রতি কর্তব্যের অবহেলা সে করেনি কোনোদিন, সে শিক্ষা সে পায়নি কিন্তু অঙ্কুশের সঙ্গে কোনোদিনও আত্মার বন্ধন সে অনুভব করে নি, হয়তো জৈবিক কারণে শরীর মিশেছে শরীরে। নিজের কেরিয়ার গোছানোর উচ্চাকাঙ্ক্ষা কোনোদিনই ছিল না মঞ্জুর, তাই যখন অমু তার কোলে এলো তাকে নিয়েই ভরিয়ে তোলে জীবনের শূন্যতা। কিন্তু মেয়েও যে দেখতে দেখতে অনেকটা বড়ো হলো, বাইরে পড়তে গেছে। অঙ্কুশও অফিসের কাজে প্রায়ই বাইরে থাকে। মঞ্জুর সময় যেন আর কাটে না। মেয়েই জোর করে সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে একাউন্ট খুলে দিয়েছিল। সেদিন এমনই ফোন ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে নজরে আসে অনেক ফ্রেণ্ড রিকোয়েস্টের মধ্যে একটা সন্তোষ সেনগুপ্ত। প্রোফাইল চেক করে দেখে সেই চেনা চোখ, স্ট্যাটাস সিঙ্গল। অজান্তেই একসেপ্ট করে রিকোয়েস্ট, আর কয়েক মুহূর্ত পরেই মেসেজ…. “কেমন আছো?”

বুকের মধ্যে তোলপাড় করে ওঠে, তারপর নীরবতা ভেঙে দুজনের কথা এগোয়। সন্তু দেখা করার প্রস্তাব দিলে না করতে পারেনি মঞ্জু। তিনমাস আগে একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করে দুজন, আর কোনোদিন দেখা না করার অঙ্গীকারবদ্ধ হয় দুজন। ফেলে আসা ভালোবাসার অধিকারে শেষবারের মতোই মঞ্জুর চুলে একটা গোলাপ আটকাতে গিয়ে অসাবধানে ঘাড়ে ফোটে। গোলাপটা সঞ্চয়িতার পাতায় লুকিয়ে রাখে।সেই ভালোবাসার ছোঁয়ার যন্ত্রণা চিরটা কাল বুকের মধ্যে নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে তাকে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − four =