মনে পড়ে…
পরিতোষ দাস, কীর্ণাহার, বীরভূম ##
সংবাদ-মাধ্যমে কাজ করার সুবাদে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছাকাছি যাওয়ার, তাকে ঘিরে নানান খবর করবার সুযোগ হয়েছিল বহুবার। আমি কীর্ণাহারের ছেলে। বলা যায় ২০০০ সালের পর থেকে যতবার মিরিটী ও কীর্ণাহারের বাড়িতে প্রণববাবু এসেছেন ততবারই ছুটে গেছি সংবাদ সংগ্রহের জন্য। বীরভূমে লাভপুরের মিরিটী গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে কুয়ে নদী। প্রতি বছরই নদীর বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হত গ্রাম, গ্রামের সঙ্গে ডুবে যেত প্রণববাবুর পৈতৃক ভিটে মুখার্জী ভবনও। ছুটে যেতাম খবর সংগ্রহের জন্য। সে সময় বেশি সংবাদ চ্যানেল না থাকায় আমি যে বাংলার সংবাদ চ্যানেলে কাজ করতাম তা মানুষের কাছে ছিল খুবই গ্রহণ যোগ্য। দিল্লিতে বসেই প্রণব বাবু দেখতেন বন্যা কবলিত তার এলাকার খবর। তখনই প্রিয়জনদের কাছ থেকে খোঁজ খবর করে জানতে পারেন এলাকাতেই রয়েছে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি তাই লাভপুর এলাকার খবর পৌঁছে যেত টিভির খবরে। প্রথম দিকে একবার আমি যখন খবর সংগ্রহ করতে যাই তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আমার বাড়ি কোথায় আমি কোথায় থাকি ইত্যাদি। আমি এই এলাকার ছেলে জেনে তিনি খুশি হয়েছিলেন। আমাকে বললেন “তাই জন্য আমি এই এলাকার খবর সব দিল্লীতে বসে দেখতে পাই তাড়াতাড়ি”। কখনও তিনি বিদেশমন্ত্রী কখনো অর্থমন্ত্রী কখনও বা বাণিজ্যমন্ত্রী, আবার কখনও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে এসেছেন গ্রামের বাড়িতে, আর তখনই ছুটে গেছি সংবাদ সংগ্রহের জন্য ওনার কাছে। বিশেষ প্রশ্ন করার সাহস ছিল না আমার ওনাকে, তবুও তিনি বলতেন বল কি জানতে চাইছো, সহজ ও সরল ভাবেই উত্তর দিতেন। পরবর্তী কালে যখন একাধিক সংবাদ মাধ্যম উপস্থিত হত, তখন প্রনব বাবুর কাছে বার্তা যেত ওনার প্রতিনিধির মাধ্যমে, সেই ভিড়ের মধ্যে থেকেও তখনই তিনি ডেকে নিতেন আমাদের। কখনও মিরিটীর বাড়িতে, কখনও ওনার প্রতিষ্ঠিত ক্লাব কিশোর সমিতির ঘরে, আবার কখনো কীর্ণাহারের বাড়িতে।
![](https://www.abekshan.com/wp-content/uploads/2020/09/WhatsApp-Image-2020-09-02-at-8.15.09-PM-1024x566.jpeg)
![](https://www.abekshan.com/wp-content/uploads/2020/09/WhatsApp-Image-2020-09-02-at-6.49.53-PM-1024x682.jpeg)
মনে পড়ছে একটা দৃশ্যের কথা। একবার তিনি গ্রামের বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে গ্রামের কিছু দূরে সমবায় সমিতিতে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন, আর সঙ্গে থাকা মানুষজনকে, তার ছোটবেলার স্মৃতি বিজড়িত জায়গাগুলোকে দেখিয়ে বলছেন, এখানে ঔই জায়গায় উনি খেলা করতেন, এই জায়গায় পুকুরে ছিপ দিয়ে মাছ ধরতেন, কোন গাছের ডালে চেপে খেলা করতেন সেগুলো দেখাচ্ছেন, সঙ্গে থেকে আমার মনে হচ্ছিল তিনি যেন কিছু সময়ের জন্য তার বাল্যকালের ফিরে গেছেন সেই গ্রামের মাটিতে। আবার কখনও মিরিটী থেকে পায়ে হেঁটে কীর্নাহার প্রায় ৫কিমি পথ ইস্কুলে আসার পুরানো কথা বলতেন।
![](https://www.abekshan.com/wp-content/uploads/2020/09/WhatsApp-Image-2020-09-02-at-6.49.54-PM.jpeg)
![](https://www.abekshan.com/wp-content/uploads/2020/09/WhatsApp-Image-2020-09-02-at-6.49.43-PM-1024x768.jpeg)
দেশের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালনের পর দেশের সর্বোচ্চ আসন রাষ্ট্রপতি পদে তিনি আসীন হন। যতই উনি ব্যস্ত থাকুন না কেন গ্রামের বাড়িতে দুর্গাপূজা কয়েকদিন তিনি কাটাতেন পরিবারের লোকজনের সঙ্গেই। তাই আমারও সেই পুজোর বেশিভাগ সময়টুকুই কাটতো মিরিটীর দুর্গাপুজো মন্ডপে। আর দুর্গাপূজাতে বাড়ি এলেই তিনি দিদির হাতের রান্না করা খাবার খেতে ভালো বাসতেন। সাধারণ খাবারের সঙ্গে পোস্তর বড়া খেতে খুব ভালবাসতেন, তাই দিদি অন্নপূর্ণা ব্যানার্জী ছোট ভাই পল্টুর জন্য পোস্ত বড়া অবশ্যই বানাতেন। এক কথায় তিনি ছিলেন ভোজন রসিক। পুজোর কয়েকদিন বাড়িতে তার প্রিয়জনদের সাথে কাটতো হই হট্টগোল এর মধ্যে দিয়েই। পুজোর সময় মহালয়ার ১৫ দিন আগে থেকে তিনি খেতেন নিরামিষ, তারপর নবমীর রাত্রিতে দাদা দিদি বোন ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে খেতেন মাছ ভাত।
![](https://www.abekshan.com/wp-content/uploads/2020/09/WhatsApp-Image-2020-09-02-at-8.16.59-PM-1024x578.jpeg)
![](https://www.abekshan.com/wp-content/uploads/2020/09/WhatsApp-Image-2020-09-02-at-6.49.55-PM-1024x682.jpeg)
দুর্গাপূজা থেকে চণ্ডীপাঠ সবকিছুই করতেন তিনি নিজেই। এত ব্যস্ততার মাঝেও পুজোর সময় আমাকে দেখতে পেলে তিনি ঠিক জিজ্ঞাসা করতেন খাওয়া হয়েছে কিনা। বড় ভাল লাগত তখন, একটা আন্তরিকতা খুঁজে পেতাম। পুজোর আর বেশি দেরি নেই কিন্তু মিরিটী গ্রামে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে এবার পূজো হবে অভিভাবকহীন। আমাদেরও পুজোয় সেই চেনা ব্যস্ততা আর রইল না, এবার পুজোয় আর মাইক্রোফোন বাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করতে হবে না কিছু, আর পাওয়া যাবে না পুজোর শুভেচ্ছা বার্তাও। যেখানেই থাকুন, ভাল থাকবেন।
অসংখ্য ধন্যবাদ এমন article প্রকাশের জন্য। এত ভালো লাগল বলেই বোধহয় মনে হল,লেখাটা তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল।
দারুন লাগলো পরিতোষ দাস।
অসংখ্যধন্যবাদ জানাই 🙏🙏🙏
খুব ভালো লাগলো । আর একটি নক্ষত্র পতন … যেখানে গেছেন ভালো থাকুন ,ওম শান্তি🙏
সুন্দর। কিন্তু শেষমেশ কেমন যেন মন খারাপ হয়ে গেল।
— সুদিন গোলদার।