মিথোজীবি
অর্ণব ঘোষ, বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা ##
আজ একটা মজার অথচ করুণ ঘটনা শেয়ার না করে পারছি না। আমি বর্তমানে শহরের যে পাড়ায় থাকি, সে পাড়ায় অনেক গুলো বড় বড় প্রায় ফাঁকা বাড়ি। বাড়িতে লোক বলতে বৃদ্ধ বাড়ির মালিক ও তার স্ত্রী অথবা কেবল একা বৃদ্ধ না হয় একা বৃদ্ধা। আমি এদেরকে সচরাচর মেসোমশায় বা মাসিমা বলে থাকি। এদের কারোর ছেলে মেয়ে ব্যাঙ্গালোর , কারোর বা নিউ জার্সিতে সেটেল্ড। বড় বড় বাড়িতে একা এইসব বাবা – মা আর গুটি কতক কুকুর – বেড়াল। কাজের লোক রাখা আছে , তারা সময় মত কাজ সেরে চলে যায়। সারা দিন কথা বলার লোক বলতে ওই অবলাগুলো। তাদের কারোর নাম মিমি , কারোর বাবু কারোর বা সুখ। আমি ছুটির দিনে ঘরে বসে পাশের বাড়ির মাসিমার গলা শুনতে পাই। “মিমি তোর কি খিদে পায় না? না খেলে তো রোগা হয়ে যাবি!” কখনো অন্য বাড়ি থেকে “বাবু সারা দিন তুই কোথায় ছিলিস? আমি এদিকে ভেবে ভেবে সারা।” কোনও বাড়ি থেকে আওয়াজ আসে “না না একদম দুষ্টুমি করে না সুকু, অনেক হয়েছে, এবার ঘুমো।” রাস্তায় এখানে এত ভিড় যে রাস্তা আড়াআড়ি ক্রস করতে অনেককে ট্রাফিক গার্ডের সাহায্য নিতে হয়। উল্টো দিকে এই ঘর গুলোতে? আজ দুপুরে দেখি পাশের বাড়ির মাসিমা মিমি আর বাবুকে রীতি মত শাসন করছে। একটু কান খাড়া করে বোঝার চেষ্টা করলাম ব্যাপারটা কি। বুঝলাম—-মাসিমা , মিমি আর বাবুর প্রেম আর ঘনিষ্ঠ হওয়া হাতে নাতে ধরে ফেলেছে। ওদের নিরস্ত করতে ফ্রিজ থেকে বরফ জল বের করে ওদের গায়ে ছেটাচ্ছে আর বলছে “অনেক হয়েছে, আমার আর নাতি নাতনির শখ নেই! একা আছি একাই থাকব ! না পোষালে দূর হ সব !” এক নিমেষে কথাগুলো বলে মাসিমা মুখে আঁচল চেপে ঘরের মধ্যে ছুটে পালালো। মেঝে দিয়ে গড়িয়ে যাওয়া বরফ গলা জলের সাথে তার কয়েক ফোটা চোখের জল মিশে গিয়েছিল কিনা তা আমার জানা নেই। জানি না কেন খানিকক্ষণ বারান্দায় নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। মুহূর্তের মধ্যে এই ভরদুপুরে আমার শিরদাঁড়া দিয়ে একটা শীতল সিরসিরানী বয়ে গেল।
সন্তান সন্ততির এ বিষয়ে ভাবা দরকার ।
ভালো লাগলো পড়ে।
অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই ।
সকলে ভালো থাকবেন অবিরত ।_