মুক্তি

দেবস্মিতা রায় চৌধুরী, কলকাতা 

 

“মুক্তি” বাংলা অভিধানের এই শব্দটি সকলের জীবনেই উত্তরণের প্রতিশ্রুতি বয়ে নিয়ে আসে; অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণ। আর যদি এই উত্তরণ মাদকাসক্ত অন্ধকার জীবন থেকে নেশামুক্ত আলো ঝলমলে জীবনের পথে হয়, তবে সেই পথের দিশারী, সেই মুক্তির ঠিকানা হল “মুক্তি” আবাসন। সদ‍্য কৈশোরে পা দেওয়া ত্রিশজন ছেলে আর পাঁচজনের মতোই সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে এই আবাসনে। অথচ এদের প্রত্যেককেই একসময় দারিদ্র্য, বঞ্চনা এবং অসৎ সঙ্গ ড্রাগের নেশার দিকে ঠেলে দিয়েছিল। মুক্তি আবাসনের প্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণমূর্তি বিশ্বনাথ বাবুর নিরলস চেষ্টা ও পরিশ্রম আজ ওদের জীবনের মূল শ্রোতে ফিরিয়ে আনতে সফল।

তার এই কর্মযজ্ঞে সামিল হতে গত ২৫শে নভেম্বর Little treats সদলবলে হাজির হয় এই আবাসনে। গত এক বছর যাবৎ Little treats এর সদস্যরা অসহায় মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে গিয়েছেন। তারা এবং বিশ্বনাথ বাবু উভয় পক্ষই মানুষ হয়ে বৃহত্তর স্বার্থে মানুষের সেবায় অঙ্গীকারবদ্ধ, স্বাভাবিক ভাবেই সখ্যতা হতে দেরি হল না। Little Treats এর সব সদস্যরা তাই সংগঠনের প্রথম জন্মদিন উদযাপনের আনন্দ  “মুক্তি” আবাসনের আবাসিকদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

ত্রিশ জন ভাইদের সঙ্গ ছাড়াও উপরি পাওনা ছিল ১২ টি ক্ষুদের মায়া জড়ানো ভালোবাসা। হ‍্যা, বিশ্বনাথ বাবু মুক্তি আবাসনের পাশাপাশি অনাথ শিশুদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি adoption center “Specialised Adoption Centre, Badhan Home”। আবাসন আর এই center এর সকলের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্ন সংস্হানের দায়িত্ব বিশ্বনাথ বাবু ও তার সহকারীদের। কিন্তু সাধ ও সদিচ্ছার অভাব না থাকলেও সাধ‍্য সবসময় সহায় হয় না। তাই ওদের সঙ্গে প‍রামর্শ করে কিছু উপহার সামগ্রী আর রোজের প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে উপস্হিত হন সকলে। তবে তখনও কেউ জানতেন না যে একটি সুন্দর দিনের স্মৃতি উপহার ঝুলিতে নিয়ে ফিরতে চলেছেন Little treats এর সদস্যরা।

কেক কাটা , হইহুল্লোড় এর মধ্যেও যা নজর কাড়ল, তা হল ওদের সবার শৃঙ্খলাবোধ, নিয়মানুবর্তিতা ও আন্তরিকতা। বড়রা প্রত‍্যেকেই স্হানীয় এপিজে স্কুলে পড়াশোনা করে। পড়াশোনার পাশাপাশি এই আবাসিকদের আলাদা করে আঁকা, কম্পিউটার শিক্ষা ও খেলাধুলার ব‍্যবস্হা করা হয়েছে। বয়স কম হলেও অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে খারাপ অভিজ্ঞতা এদের অনেক পরিণত করে তুলেছে। নতুন জীবন পেয়ে তাই তারা আজ অনেক দায়িত্বশীল ও যত্নশীল। আড়ম্বরে মোড়া রবিবারের হাতছানি সত্ত্বেও ওরা নিজেদের পড়াশোনা সেরে এই উৎসবে সামিল হল।

দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসার আরও উৎকৃষ্ট উদাহরণ মিলল জন্মদিনের খাওয়াদাওয়ার সময়। বড়রা তাদের অনাত্মীয় ভাই বোনদের যত্ন করে বসিয়ে খাওয়ালো, সব ক্ষুদেরা যাতে ঠিক মতো উপহার পায় সেই ব‍্যবস্হা করতে ব‍্যস্ত দাদারা। আর এই মণিমুক্তদের কিছুটা আনন্দ দিতে পেরে সমৃদ্ধ Little treats এর সদস্যরাও। বিকেলে জন্মদিনের উৎসব শেষে ফেরার পালা। ফিরে আসার সময় ওদেরকে কথা দিতেই হল যে আবার আসব।

 

অবশ্য শুধু কথায় কাজ হবে না ভেবে ওরা আবদারের সুরে হুকুম করল, “খুব শিগিগির আসবে কিন্তু”। বুঝতে বাকি রইল না যে এই অকৃত্রিম স্নেহের বীজ এই আবাসনের কাণ্ডারিরাই ওদের মধ্যে বপন করেছেন। আমরাও উপলব্ধি করলাম Little treats  এবং মুক্তি আবাসন যে চারাগাছ লালন পালনে সদা সচেষ্ট তা ওদের মাধ্যমে মহীরুহ হবে। এই তো ওদের পাওয়া, আমাদেরও চাওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − two =