সন্ধান চাই

তাপস মুখোপাধ্যায় ##

রবিবার সকাল এক কাপ চা ও দৈনিক পত্রিকা আজকাল সঙ্গে নিয়ে টিভিতে রঙ্গোলী দেখতে বসেছি| প্রথম পাতার হেড লাইন গুলোতে চোখ বুলিয়ে দ্বিতীয় পাতা ওল্টালাম| চোখ বোলাতে বোলাতে এক জায়গায় এসে চোখ থেমে গেল, সন্ধান চাই কলমের এই অংশে ছিল –

–“শ্রীমান সর্ব্বেন্দু চট্টোপাধ্যায় ওরফে সবু বিবাহ বাসর হইতে অন্তর্ধান হইয়াছেন গত শুক্রবার| গায়ের রং শ্যামবর্ণ, উচ্চতা – পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি, পরণে – বিয়ের নতূন ধূতি পাঞ্জাবী, হাতের কব্জিতে হলুদ মাখানো দূর্বা সম্মিলিত এক গুচ্ছ সূতো, মাতৃ ভাষা – বাংলা| যদি কোন সহৃদয় ব্যক্তি এই ব্যক্তির সন্ধান জানাইতে সক্ষম হন তাঁহাকে নগদ ১000 টাকার পুরস্কার প্রদান করা হইবে| সন্ধান জানানোর ঠিকানা – শ্রীযুক্ত ভূবন মোহন ব্যনার্জী, ৩৪৷৩, গোপাল বসাক লেন, থানা – শিবপুর, হাওরা|”

ছোটবেলা থেকেই কিরীটি রায়, ব্যোমকেশ, দীপক, ফেলুদা-র গোয়েন্দাগিরির গল্প বই পড়ে আকৃষ্ট হ’তাম, আর কৌতুহলী হয়ে পরতাম কোন কিছু রহস্য উদঘাটনে| আজকের এমন একটা খবর আমার গোয়েন্দাগিরির সুপ্ত বাসনাকে চরিতার্থ করার জন্য যথেষ্ট ছিল| তৎক্ষনাত তৈরী হয়ে বেড়িয়ে পরলাম পেপার কটিংটা পকেটে পুরে রহস্যের উন্মোচনে|

ট্যাক্সি ছুটে চলেছে, উদ্দেশ্য শিবপুর গোপাল বসাক লেন| মনের গতি ট্যাক্সির গতিকে পরাস্ত করে চলেছে| নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের ও যেন ফুরসত পাওয়া যাচ্ছেনা| তাই অনেকক্ষন বাদে বাদে একটা দীর্ঘশ্বাস| সারা দেহ ছটপট করছে এক রহস্যভেদের আনন্দে|

সম্ভাব্য কতই না চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে| আমি দুঁদে গোয়েন্দাদের মতন একের পর এক প্রশ্ন সাজাচ্ছি আবার নিজেই সেসব খারিজ করছি| হঠাৎই বিরাট এক দরজার সামনে গাড়িটা ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে থামলো| মনটা আমার রহস্যের কিনারায় ছুটছিল তাই বিরক্ত হয়েই ড্রাইভারের কাছে জানতে চাইলাম –

কি হ’ল?

ড্রাইভার বললো -সাব হামলোক পৌঁছ গিয়া|

সঙ্গে সঙ্গে তাকালাম ঐ বিরাট দরজাওয়ালা বাড়ির দিকে| দেখলাম দরজার একদিকে লেখা আছে ৩৪৷৩| পেপার কাটিংটা পকেট থেকে বার করে মিলিয়ে ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে নিজের ব্যাক্তিত্বকে আরও একটু সানিয়ে নিয়ে দরজার কড়া নাড়লাম|

অল্পক্ষনেই দরজা খুলে গেল| ভেতরে ঢুকতেই কর্তব্যরত কাজের লোকের প্রশ্ম – কাকে চাই?

উত্তরে বললাম – ভূবন বাবুকে|

আবার প্রশ্ম কাজের লোকটির – কোথা থেকে আসছেন?

– ওনার প্রয়োজনেই এসেছি, ওনাকে খবর দিন|

লোকটি জীজ্ঞাসা করলো – আপনার নাম

– আমার নাম বললে উনি চিনতে পারবেন না| আপনি শুধু ওনাকে বলুন ওনার বিশেষ প্রয়োজনেই আমার এখানে আসা|

-‘ও ভেতরে আসুন| বসুন, আমি বাবুকে খবর দিচ্ছি’, বলে সু-সজ্জিত বৈঠকখানার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে ভেতরে চলে গেল লোকটি|

বৈঠকখানায় বসে দেখছি – দোতলা সাবেকি বাড়ি| বাড়ির গায়ে শিল্প কলার নিদর্শন এখনো বিলীন হয় নি| বাইরে থেকে বাড়িটাকে যতটা পোড়ো দেখায় ভেতর থেকে ততটা নয়| ভেতরে বিরাট এক উঠান যার একপ্রান্তে এই বৈঠকখানা অপর প্রান্তে অন্দর মহল| এই সুসজ্জিত বৈঠকখানায় আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করল এই ঘরেরই এক পাশের দেওয়ালে অয়েল পেন্টে অঙ্কিত একটা বটগাছ| যে বট গাছটি ঐ ব্যানার্জী বাড়ির বংশ পরিচয়ের ধারক|

ঐ গাছটার থেকেই জেনেছি ব্যানার্জী বংশের চৌদ্দ পুরুষের পরিচয়| ভূবন বাবুর কোন পুত্র সন্তান না থাকায় এইবার গাছের কালও শেষ| কারণ আনন্দ বাবু ও ছিলেন সুরেন্দ্র মোহনের একমাত্র পুত্র সন্তান| সুরেন্দ্র বাবুর ছোট ভাই জীতেন্দ্র সন্ন্যাস নিয়ে সংসার ত্যাগ করেন| এসবই লিপিবদ্ধ ছিল ঐ বটবৃক্ষের ছবিতে|

একটু পরেই ভূবন বাবু ঘরে ঢুকলেন| আমি নিজেকে আযাচিত অতিথি হিসাবে পরিচয় দেওয়ায় তিনি আমাকে সর্ব্বেন্দু বাবুর বন্ধু ভেবে পাকড়াও করলেন| অতি কষ্টে তাঁকে আমার সখের গোয়েন্দা পরিচয়টি বোঝাতে সক্ষম হলাম| তিনিও কিছুটা আশস্ত হলেন আর এ যাত্রায় আমিও বেঁচে গেলাম|

এরপর ভূবন বাবুর মুখে যা শুনলাম, তা হল – তাঁর একমাত্র মেয়ে সুমিতার খোঁজ খবর করে একটা ভাল ছেলের সন্ধান পেয়ে তার সঙ্গেই বিয়ের ঠিক করেন| সেই ছেলেটাই সর্ব্বেন্দু| গত শুক্রবার সায়াহ্নে কন্যাদান করে, বিবাহ পর্ব চুকিয়ে, বরযাত্রীদের সমস্ত রকম আপ্যায়ণ, আবদার মিটিয়ে, সকলকে বিদায় জানিয়ে, মেয়ে-জামাই কে বাসর ঘরে ঢুকিয়ে কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে স্ত্রীকে নিয়ে শোবার ঘরে গেলেন|

সমস্ত রকম আবেগ বুকে চেপে তিনি ও তাঁর স্ত্রী সরলা শুয়ে শুয়ে সুমিতার জন্ম লগ্ন থেকে বিয়ের দিন পর্যন্ত সব স্মৃতি হাতরাতে হাতরাতে সবে মাত্র তন্দ্রাছন্ন হয়েছেন| তখন প্রায় শেষ রাত্রি ভোরের আলো ফুটবে ফুটবে, এমন অবস্থায় বাড়িতে তোলপার – বরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না|

এই পর্যন্ত বলেই তিনি কেমন যেন অসুস্থ বোধ করায় একটু চুপ করে গেলেন| ওনাকে আর বিরক্ত না করে শান্ত হয়ে বসে থাকতে অনুরোধ করে, ওনার মেয়ের সাথে কথা বলার অনুমতি চাইলাম| ভূবন বাবু সঙ্গে সঙ্গে লোক পাঠিয়ে ভেতর থেকে সুমিতাকে ডেকে পাঠালেন|

সুমিতা ঘরে এসে বাবার কাছে দাঁড়াল| বাবা কাছে ডেকে বললেন -মা ইনি হচ্ছেন, সখের গোয়েন্দা, সর্ব্বেন্দুর নিখোঁজের খবর দেখে এসেছেন| সেদিনের ঘটনাটা এনাকে সব বল|

সুমিতা দূর থেকেই হাত তুলে নমস্কার করলেন| আমিও প্রতি নমস্কার জানিয়ে সুমিতা দেবীকে বসতে বললাম| উনি বসলেন| ভাল করে তাকিয়ে দেখলাম এখনও সুমিতা দেবীর মাথার সিঁথিতে অসংলগ্ন সিঁদুর জ্বলজ্বল করছে| এক চটক দেখলে আদর্শ নবগৃহবধুই মনে হবে| খুবই সুন্দরী, গায়ের রং ফরসা, ছিপছিপে গড়ন, ছোটখাটো এমন এক সুন্দরী বৌ ফেলে কেউ পালাতে পারে ভাবাই যায়না|

সমস্ত জড়তা কাটিয়ে গোয়েন্দাসুলভ কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম

-সুমিতা দেবী জানি আপনি মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছেন তবু কতগুলো কথা জানতে পারলে আমার খুব উপকার হয়|

সুমিতা দেবী স্বাচ্ছন্দে বললেন – হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন কি কি জানতে চান|

– যতটুকু সময় আপনি সর্ব্বেন্দু বাবুকে দেখেছেন তাতে তাঁর সম্বন্ধে কি ধারণা হয়েছে?

সুমিতা দেবী খুব সুন্দর ভাবে বললেন  – ধারণা করার মতন সময়তো আমি পাইনি|

এরপর আমতা আমতা করে বললেন – তবে যতটুকু অনুমান করেছি, ভূল ও হতে পারে, উনি শিক্ষিত হলেও ঠিক সোস্যাল নন| মানে আন-সোস্যাল| আর সেই জন্যই বিয়ের রাতে অমনভাবে পালিয়ে গেলেন|

সুমিতা দেবী বাগ্মী তাই বেশ সুন্দর ভাবে তারপরও বলে চললেন| আর আমিও যেন বাঙমুগ্ধ হয়ে একপলকে তাকিয়ে আছি সুমিতা দেবীর দিকে|

-যে পুরুষ মানুষের বাসরে এত ভয় তার এভাবে বিয়ে করা কেন? উনি আগে থেকে বললেই পারতেন রেজিস্ট্রী ম্যারেজ করতাম বা আমি নিজে ওনার বাড়ি গিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানটা সম্পন্ন করে আসতাম|

সুমিতাদেবীর বাবা ভূবন বাবু কথাটা শুনে বড় বড় চোখ করে মেয়ের দিকে তাকালেন| সুমিতা দেবী বাবার দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন

-আসলে বিয়ে মানেতো একটা সামাজিক অনুষ্ঠান আর সেটাকে কেন্দ্র করে যা যা ঘটবে তা তো ঐ অনুষ্ঠানেরই অঙ্গ| সেটাকে এড়িয়ে যেতে অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে যেতে হবে কেন – এর সঙ্গে দুটো পরিবারের মান সম্মান জড়িত, এটা বোঝার মতন বুদ্ধি নিশ্চয় ওনার আছে|

আমি বললাম – উনি যে পালিয়ে গেছেন আপনি কি করে নিশ্চিত হচ্ছেন, কত কি দূর্ঘটনাও তো ঘটে থাকতে পারে|

সুমিতা দেবী বললেন – শুনুন, ওনার অন্তর্ধানের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উপস্থিত সমস্ত বিয়ে বাড়ির লোক তন্ন তন্ন করে বেশ কিছুটা এলাকা দেখে এসেছিল| কিন্তু কোথাও কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি| শুধু বরযাত্রীদের ভাড়া গাড়িটা পাওয়া যায়নি|

আমি বললাম – আচ্ছা গাড়িটার কোন সন্ধান –

সুমিতা দেবী বললেন – না, ওনার বন্ধুরাও ওই গাড়ীর সম্বন্ধে কোন আলোকপাত করতে পারেন নি| এমনকি গাড়ির নাম্বারটাও ওনারা দেখে রাখেন নি|

আমি অসহায়ের মতন বললাম – উফঃ, আচ্ছা আপনারা পুলিশে জানান নি?

সুমিতা দেবী বললেন – পরিবারের কেউই চান নি এখনই এ নিয়ে দুটি পরিবার পুলিশি ঝামেলায় বিব্রত থাকুক|

কিন্তু বেশ কিছুক্ষন না ফিরে আসায় ওনার বন্ধুরাও চিন্তিত হয়ে পরেন| আমাদের বাড়ির লোকজন সঙ্গে নিয়ে এপাড়ার সম্ভাব্য সমস্ত ওলি-গলি খুঁজে ফেরেন তাঁরা| সবশেষে বিফল মনোরথে বিদ্ধস্থ চেহারায় আমাদের আসস্ত করে যান যে

-আমরা যেমন করেই হোক যতশীঘ্র সম্ভব সবুকে এনে হাজির করবই|

সুমিতা দেবী আরও জানালেন যে ওনাদের দু-এক জন বন্ধু তাঁদের ফোন নাম্বারও দিয়ে গেছেন আর বলেছেন নিশ্চিন্ত থাকুন আমরা ওকে নিয়ে হাজির করবই|

আমি সুমিতা দেবীর থেকে ঐ বন্ধুদের নাম ও ফোন নাম্বার নোট করে নিলাম|

সুমিতা দেবী আবারও বললেন  – যাইহোক অগ্নিসাক্ষী করা ঐ ভীরু কাপুরুষ মানুষটির জন্য অপেক্ষায় থাকব| কারণ উনিই আমার পতিদেবতা| প্রয়োজনে সারা জীবন অপেক্ষা করে থাকব|

হঠাৎই যেন পরিবেশটা ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ল| সুমিতা দেবী হঠাৎই ইমোশোনাল হয়ে পড়ায় আর কিছু প্রশ্ন করতে মন চাইলো না|

তবু ইতস্তত করে জীজ্ঞাসা করলাম  – কিছু মনে করবেন না একটা একদম ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করছি – এই বিয়েতে আপনার কোন নিকট জনের আপত্তি বা বিরোধিতা ছিল কি?

এবার সুমিতা দেবী হেসে ফেললেন ও বুঝেছি আপনি জানতে চাইছেন আমার কোন বয় ফ্রেন্ড আই মিন প্রেমিক এ কান্ড ঘটিয়েছে কি না?

আমি এবার একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললাম – না মানে হতেও তো পারে, আপনার সেই বিশেষ বন্ধুটি সর্ব্বেন্দু বাবুকে একা পেয়ে তুলে নিয়ে গেছে |

আবার হাসতে হাসতে সুমিতা দেবী বললেন – আপনিও পারেন, শুনুন আমার প্রেম করার মতন সময় বা ধৈর্য কোনটাই ছিল না তারপর ছোটবেলা থেকেই মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়ছিল এই বনেদী পরিবারের মান সম্মানের প্রশ্ন|

– তবুও আপনি কি এমন কাউকে সন্দেহ করেন যে বা যারা এই অন্তর্ধানে সর্ব্বেন্দু বাবুকে সাহায্য করছে বলে আপনার মনে হয়|

সুমিতা দেবী সলজ্জ ভাবে বললেন – না না না|

আবার যেন অন্যমনোস্ক হয়ে পরলেন সুমিতা দেবী|

আমার শুধু লজ্জা হচ্ছিল এ-হেন পৌরষহীন সর্ব্বেন্দু বাবুর কথা ভেবে| তবে মন মানছিল না, মনে হচ্ছিল এর পেছনে নিশ্চয় কোন রহস্য আছে| আর তা আমাকে খুঁজে বার করতেই হবে|

আমাকে সবিস্তারে সব কিছু বলার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে এই রহস্য উন্মোচনের জন্য তৎক্ষনাত উঠে পরলাম| আর সর্ব্বেন্দু বাবুকে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার ঠিকানা ফোন নম্বর ভুবন বাবুকে দিয়ে নমস্কার জানিয়ে বেড়িয়ে পরলাম|

সুমিতা দেবী চা খাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন| বললাম শুধু চা নয় পেট ভরে মিষ্টি খেয়ে যাব তবে আজ নয় যেদিন সর্ব্বেন্দু বাবুকে এনে হাজির করবো সেই দিনই|

সোজা বাড়িতে এসে নিজের মনে চিন্তা করতে শুরু করলাম যে লোকটা কোথায় কোথায় যেতে পারে| বিকেলেই বেড়িয়ে পরলাম ভূবন বাবুর থেকে নেওয়া সর্ব্বেন্দু বাবুর বাড়ির ঠিকানার উদ্দেশ্য|

অল্প সময়ের মধ্যেই হাজির হলাম সেই ঠিকানায়| এখানে এসে বেশ অবাকই হলাম| নিস্তব্ধ এই বাড়ির পরিবেশ| এখানের লোকেরা কেউ কিছু জানে না তাদের ছেলে কোথায় গেছে| প্রত্যেকেই কেমন যেন বাকরুদ্ধ|

তবে বাড়ির লোকেদের কথায় জানতে পারলাম আগেও সে কয়েকবার সাংসারিক অশান্তির কারণে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল আবার মাস খানেকের মধ্যেই ফিরে এসেছিল| সুতরাং তার অন্তর্ধাণ নিয়ে তারা যত না বিচলিত তার চেয়ে বেশী বিচলিত আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে অসম্মানিত হওয়ার লজ্জায়| এবং নতুন কুটুম্বের কাছে মুখ দেখাতেও লজ্জিত বোধ করছেন এ বাড়ির সকলে| এরই মধ্যে ভূবন বাবু ঘন ঘন লোক পাঠিয়ে খবরা খবর নিচ্ছেন সবুর কোন খবর এল কি না?

এই রকম একটা পরিবেশে আমার নিজেকেও কেমন যেন বিব্রত লাগছিল| তার মধ্যেই ঐ পরিবারের একজনকে প্রশ্ন করেছিলাম – আপনাদের সবু যে মাঝে মাঝে অন্তর্ধ্যান হয়, তা সে কোথায় যায়, কি করে, ফিরে এলে আপনারা কিছু জানতে পারেন না|

ঐ পরিবারের সদস্যটি উত্তরে জানাল – না আসলে সবু একটু অন্য ধরনের ছেলে তাই ওকে জিজ্ঞাসা করার সাহস এ বাড়ির কারুর নেই, কারণ আবার যদি ও বাড়ি ছেড়ে চলে যায়|

এরকমও শুনলাম সবু নিজে এখনই বিয়েতে রাজি ছিল না| কিন্তু মা-বাবার বারংবার অনুরোধ প্রত্যাখান করতে করতে ও নিজেও ক্লান্ত হয়ে পরেছিল| তাই নিজের সঙ্গে প্রচুর যুদ্ধ করে অবশেষে রাজি হয় এ বিয়েতে| এই সূত্র ধরে সবুর বাবা-মার কাছে আলাদা আলাদা ভাবে জানতে চেয়েছিলাম যে আপনারা কি জোর করেই এ বিয়েতে সবুকে রাজি করিয়েছিলেন, আর যার পরিনতিতে সে এ-হেন কাজ করে বসল|

সবুর মা মাতৃসুলভ ভঙ্গিতেই বললেন – দেখ বাবা আমরা ওকে বিয়ে করার জন্য বলেছিলাম ঠিকই এমনকি ওকে ওরই এক অবিবাহিত বৃদ্ধ মামার উদাহরণ দিয়েছিলাম যাঁকে আজ পরিচর্যা করার কোন লোক নেই, এইসব বলে ওকে রাজি করাতে চেয়েছিলাম| তবে সবই তো ওর ভালোর জন্য, না-কি বল| আমরা কেউই কিন্তু সেই অর্থে ওকে জোর করিনি বিয়ে করার জন্য|

জিজ্ঞাসা করলাম – আচ্ছা ওর প্রেম-টেম কিছু ছিল নাকি?

সবুর মা বললেন – আমার সবু অমন ছেলেই নয়| ও যখন বিয়েতে বারবার না করছে একবার আমি ওকে বললাম হা-রে কার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস যে এত সুন্দর সুন্দর মেয়ের সম্বন্ধ আসছে আর তুই না না করছিস| ও তখন বলেছিল মা একটা কথা জেনে রেখো বিয়ে করলেও করতে পারি কিন্তু প্রেম নৈব নৈব চ|

যাইহোক তেমন কিছু সূত্র পাড়া প্রতিবেশি, আত্মীয় স্বজন বা বাড়ির কারুর থেকে না পেয়ে খানিকটা বিফল মনোরথে বাড়ি ফিরলাম|

তবে যা সামান্য কিছু কিছু সূত্র জুড়ে জুড়ে আমি জট ছাড়ানোর চেষ্টা করেছি| আর হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি, আমাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে সুমিতা দেবীর ঐ করুন কাতর মুখ| বার বারই মনে হয়েছে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ – যেমন করেই হোক সর্ব্বেন্দু বাবুকে খুঁজে বার করতেই হবে|

প্রায় দিন দুয়েক কেটে গেছে| পাগলের মতন নানান ঠিকানা সংগ্রহ করে শহর থেকে শহরতলী ছুটে বেড়াচ্ছি| অতঃপর তদন্তের স্বার্থে সর্ব্বেন্দুর অফিসে গিয়ে উপস্থিত হলাম|

প্রথমেই বড়বাবুর সাথে দেখা করলাম তাঁকে আমার সখের গোয়েন্দা পরিচয় দিয়ে আমার আগমনের হেতু জানালাম| অমায়িক ভদ্রলোক, নাম রজত শুভ্র বসু, বসতে বললেন, চায়ের অর্ডার দিলেন|

কিছু ফাইল পত্রের কাজ মিটিয়ে তারপর বললেন –  হ্যাঁ বলুন গোয়েন্দা মশাই কি ঘটেছিল সর্ব্বেন্দুর বিয়েতে আর বৌভাত ও বাতিল করল কেন?

আমি বললাম – সর্ব্বেন্দু নিরুদ্দেশ, বিবাহ বাসর থেকে কোথায় তিনি অন্তর্ধান হয়ে যান কেউ জানে না| কিন্তু আপনি বৌভাত বাতিলের কথা কি করে জানলেন|

রজত বাবু বললেন – আরে আমরা তো সর্ব্বেন্দুর বিয়েতে যাব বলে সব উপহার টুপহার কিনে তৈরী| হঠাৎ ঐদিন সকালে অফিসের ল্যান্ড লাইনে এক ফোন ও প্রান্তে সর্ব্বেন্দু, বলল স্যার আজ বৌভাতের অনুষ্ঠান হচ্ছেনা, বাতিল করতে হয়েছে, সাক্ষাতে সব জানাব| আপনি স্যার, যদি দয়া করে সকলকে একটু বলে দেন তাহলে কৃতজ্ঞ থাকব| আমি বললাম ঠিক আছে ঠিক আছে| ব্যাস আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন ছেড়ে দেয় সে| আমি ঘটনার কথা সকলকে জানালাম, প্রত্যেকেই স্তম্ভিত এবং সকলেই জানতে চায় – কি এমন ঘটল যে বৌভাতের অনুষ্ঠান বাতিল করতে হল| দেখুন এর বেশি তো আমি কিছু জানি না যা আপনাকে বলতে পারি| শুধু বলতে পারি আমিও অপেক্ষাতে আছি ও কবে এসে সব ঘটনা জানায় তার জন্য|

আমি আরও অবাক হলাম, বড় বাবুকে বললাম – আচ্ছা ওর ঘনিষ্ট কলিগ কারা তাঁরা যদি কিছু রহস্যের উন্মোচনে সাহায্য করতে পারেন| তিনি আমার সামনেই দু-জনকে খবর পাঠালেন সেকশানে, একজন উত্তম দাস আর একজন রঞ্জন রায়| তাঁরা এলেন বড়বাবু আমার এখানে আসার উদ্দেশ্য ওনাদের জানিয়ে আমাকে যথাসম্ভব সাহায্যের জন্য তাঁদের নির্দেশ দিলেন|

উত্তম বাবু এবং রঞ্জন বাবু আমাকে ভিজিটর্স রুমে নিয়ে গেলেন| তারপর তারা নানান গল্প জুড়ে দিলেন ঐ সর্ব্বেন্দু বাবুকে নিয়ে|

রঞ্জন বাবু বললেন – সর্ব্বেন্দুর নানান উদ্ভট কান্ড কারখানায় মাঝে মধ্যেই বড় বাবুকে হস্তক্ষেপ করতে হয়|

উত্তম বাবু বললেন – একবার এক মহিলা ক্লাইন্টের সাথে কি কিচানটাই না হল|

আমি বললাম – মানে ?

এরপর দুজনে প্রায় পালা করে শোনাতে লাগলেন সর্ব্বেন্দুর কান্ডকারখানা|

রঞ্জন বাবু বললেন – আমাদের নতুন এক বেশ বড় মাপের ক্লাইন্ট তাদের এক মহিলা এক্জিকিউটিভকে পাঠিয়েছিল আমাদের অফিস ভিজিট করতে|

উত্তম বাবু – বড় বাবুর সাথে কিছু আলোচনার পর বড় বাবু সর্ব্বেন্দুকে ড়েকে পাঠান| তাঁর সাথে নতুন ক্লাইন্টের পরিচয় করিয়ে দেন| আর বলেন ইনি মিস অঞ্জনা সেন, রোজি ইন্টারনেশানালের এক্সিকিউটিভ, আর মিস সেনকে বলেন ইনি আমাদের এডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার সর্ব্বেন্দু চট্টোপাধ্যায়|

দুজনেই দুজনকে হাই হ্যালো বললেন| তারপরই বড়বাবু সর্ব্বেন্দুকে বললেন – আমাদের অফিসটা মিস সেনকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়ে দিন আর অন্যান্য অফিসারদের সাথে আলাপ করিয়ে দিন| ওনারা আমাদের প্রোডাক্টের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন|

রঞ্জন বাবু বললেন – সর্ব্বেন্দু, মিস সেন কে অফিসের অন্যান্য অফিসারদের সাথে আলাপ করিয়ে নিজের চেম্বারে ওনাকে নিয়ে বসলেন| মিস সেন অভিভুত এখানকার অফিসার ও অফিসের সব আধুনিক ব্যবস্থাপনা দেখে| সর্ব্বেন্দু কফির অর্ডার দিল|

উত্তম বাবু – সর্ব্বেন্দু আমাদের এডমিনিস্ট্রেশন দেখে| আমরা অমন একজন সুন্দরী মহিলা হয়তোবা সুন্দরী বললেও কম বলা হবে যেন অপ্সরাকে বাইরে থেকেই ঝারি মারতে থাকলাম| আর মনে মনে ঠিক করছিলাম একবার উনি বাইরে গেলে সর্ব্বেন্দুর ওপর হামলে পড়তে হবে|

রঞ্জন বাবু – পিওন কফি দিয়ে এল| কথা-বার্তা বেশ চলছিল কাঁচের দরজার বাইরে থেকে যেটুকু অনুমান করা যায় আর কি| হঠাৎই যেন মিস সেন ঝড়ের গতিতে সর্ব্বেন্দু বাবুর ঘর থেকে বেড়িয়ে একদম বড় বাবুর ঘরে| তারপর সেখানে উত্তেজিত হয়ে বেশ কিছু কথা বড় বাবুকে শুনিয়ে ভদ্র মহিলা গট মট করে বেড়িয়ে সোজা গাড়িতে উঠে সশব্দে দরজা বন্ধ করে চলে গেলন|

উত্তম বাবু – পরে আমরা জানতে পারলাম সর্ব্বেন্দু মিস সেনের উগ্র আধুনিক পোষাক নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছিল যার ফলে উনি সরাসরি বড় বাবুকে ওর নামে অভিযোগ জানিয়ে অফিস ছাড়েন|

রঞ্জন বাবু – এখানেই শেষ নয়, বড় বাবু সর্ব্বেন্দু কে সঙ্গে সঙ্গে ডেকে পাঠিয়ে এমন বকঝকা করেছিলেন যে তারপর দিন তিনেক সর্ব্বেন্দু আর অফিসেই আসে নি|

উত্তম বাবু – আরে আসবে কি আসলে বড় বাবু ওকে রগড়ে দিয়ে বলেছিলেন যদি এই জায়েন্ট ক্লায়েন্টকে আমরা মিস করি, ওপরওয়ালাকে জবাবদিহি করতে হবে| আর তার জন্য সর্ব্বেন্দু তুমিই দায়ী থাকবে| যেমন করে পার ওই ক্লায়েন্টকে আমাদের ক্লায়েন্টেলে অন্তর্ভুক্ত কর|

রঞ্জন বাবু – সর্ব্বেন্দু বড় বাবুর ঘর থেকে মাথা নীচু করে নিজের চেম্বারে এসে বসতে না বসতেই আমি আর উত্তম গেলাম জানতে কি হয়েছিল|

সর্ব্বেন্দু বলল – দেখ মিস সেনের সাথে অনেক কথা হওয়ার পর আমার কেমন যেন লাগছিল ঐ ভদ্রমহিলাকে ওনার তাকানো, কথা বলা, বেশ-ভূষা, চাল-চলন, আমি বলেই বসলাম – কিছু মনে করবেন না আমার নারীর উগ্রতাকে কিছুটা উন্নাসিকতা মনে হয়| উনি হঠাৎই লাফিয়ে উঠে বললেন হোয়াট ডু ইউ মিন? আমি এক মাল্টি ন্যাশানাল কোম্পানীর এক্সিকিউটিভ, আপনি আমাকে নারীত্ব শেখাচ্ছেন| আমি ওনাকে আমার এহেন বক্তব্যের কারণ বোঝাতে চাইলাম| কে শোনে কার কথা উনি দ্রুত এখান থকে বেড়িয়ে বড় বাবুর চেম্বারে|

উত্তম বাবু – লে হালুয়া, তোর অত মাইক্রোস্কোপিক লেন্সে ফেলে মহিলাকে মাপার কি ছিল| নে সামলা, কালই তুই ওনাদের অফিসে যাবি গিয়ে ক্ষমা টমা চেয়ে আবার ধরে নিয়ে আসিস|

রঞ্জন বাবু – না হলে বুঝতেই তো পারছিস বড় বাবু ভালোর ভালো কিন্তু রেগে গেলে তিনি কাউকেই তোয়াক্কা করেন না|

আমি যত এনাদের কথা শুনছি ততই তাজ্জব বনে যাচ্ছি| বললাম – একটু চা বা কফি পাওয়া যাবে|

রঞ্জন বাবু বললেন – যাবে মানে, এই কে আছিস এখানে তিনটে কফি দিয়ে যা|

উত্তম বাবু -দাদা এরপরের ঘটানা আরও মারাত্মক|তিনদিন সর্ব্বেন্দুর কোন খবর নেই| বড় বাবু ব্যতিব্যস্ত হয়ে আছেন কি রিপোর্ট পাঠাবেন ওপরওয়ালাদের কাছে|

রঞ্জন বাবু বললেন – তিনদিন বাদে বলব কি মশাই সর্ব্বেন্দু দেখি সেই মহিলার সাথে অফিসে ঢুকছে|

– বলেন কি?

রঞ্জন বাবু – সারা অফিসে সোরগোল পড়ে গেল| ওরা সোজা বড় বাবুর চেম্বারে|

উত্তম বাবু – এই মিস সেন কে আগের মিস সেনের সাথে কিছুতেই মেলাতে পারছিলাম না| কোথায় সেই আধুনিকা হাই হিল মিনি স্কার্ট স্কিন ফিটিং টপ| এতো দেখছি এক পরমা সুন্দরী রমনী, কেতাদুরস্ত শাড়ি ব্লাউজ পরিহিতা যেন কোন দেবী মূর্তি| শাড়ির পারতে পারতে যেন সৌন্দর্য ঠিকরে পড়ছে|

রঞ্জন বাবু – সারা অফিস এ ওর মুখ চাওয়া-চায়ি করছিল| আমরাও হতবাক| শুধু অপেক্ষা কখন উনি বেরিয়ে যাবেন, পাকড়াও করতে হবে সর্ব্বেন্দু কে|

এ আর এক রহস্য, আবার নতুন করে সব সাজাতে হবে, এইসব যখন ভাবছি তখনি এসে হাজির আমার সহকারী মানে আমার একমাত্র প্রিয় আদরের ভাইপো গুড্ডু| এখনও ভালমতন দাড়ি গোঁফ গজায় নি কিন্তু যথেষ্ট বুদ্ধি ধরে| আর দিন দিন আমার প্রকৃত অ্যাসিসটেন্ট হয়ে উঠছে| সহকারী হওয়ার সুবাদে ও আমার গতিবিধি সব জানতো| তাই সরাসরি উপস্থিত এখানে| বললাম – কিরে কিসে এলি চার চাকায় না দু-চাকায়?

– দু চাকায়|

ও নতুন বুলেট কিনেছে, এতদিন চারচাকার স্টিয়ারিং ঘুরিয়েছে কলকাতার বুকে| এখন এই বুলেট নিয়ে হিল্লি দিল্লী করে বেড়াচ্ছে|

গুড্ডু বলল -কাকা চল কথা আছে|

আমি জানি ও যখন আমার কাছে দৌড়ে এসেছে তারমানে কিছু খবর আছে| আমি উত্তম বাবু ও রঞ্জন বাবুকে বিদায় জানিয়ে মিস সেনের বাকি ঘটনা পরে শুনবো বলে উঠে পরলাম| বাইরে বেড়িয়ে বললাম কিরে কি খবর কোথাও যেতে হবে?

গুড্ডু বলল – হ্যাঁ কাকা, তাড়াতাড়ি ওঠ বাইকে|

আমি একটু ভয়ই পাই ওর পেছনে বসতে, নতুন হাত তারপর কলকাতার রাস্তাঘাট, তবুও উপায় নেই চাপলাম|

সোজা সল্টলেকে এক ট্রাভেল্স এজেন্সীর সামনে এসে থামল|

বললাম কি ব্যাপার এখানে কেন?

গুড্ডু গাড়ী স্ট্যান্ড করাতে করাতে বলল – কাকা ঐ বিয়ে বাড়ির পাশের এক বাড়ীর গোপন সি সি ক্যামেরা খুঁজে পেয়ে গিয়েছিলাম সেই বাড়িতে| সেখানে সর্ব্বেন্দু বাবুর হঠাৎ নিখোঁজের কথা জানিয়ে ঐ সি সি টিভির রেকর্ডটা চালাতে বলি| তাতে যা দেখলাম সর্ব্বেন্দু বাবু সেচ্ছায় গাড়িতে উঠে চলে গেলেন|

বললাম – গাড়ীর নাম্বারটা দেখেছিলিস|

– কাকা তা আর বলতে শুধু গাড়ির নাম্বারই নয় তার ইতিহাস ও মোটর ভ্যাহিকেলস থেকে নিয়ে এসেছি|

– তা কি দেখলি সেখানে?

– কাকা এই যে জৈন ট্রাভেলস এদেরই গাড়ী কমার্সিয়াল লাইসেন্স করা ঐ গাড়ীটা ভাড়া টারা খাটে| চলো ভেতরে যাই|

আমি আর গুড্ডু ভেতরে ঢুকলাম| এটাই জৈন ট্রাভেলস এর অফিস জীজ্ঞাসা করায় একজন কর্মী মাথা নারলেন, মাথা না তুলেই বলে চললেন – কবে লাগবে গাড়ি, কটা গাড়ি কোথায় রিপোর্ট করতে হবে, সামনের সপ্তাহে লাগলে পাবেন না সব গাড়ি এক সরকারী অফিসের সেমিনারের জন্য বুকড|

এতক্ষনে ভদ্রলোক একটু দম নিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবেন আমি তাকে থামিয়ে বললাম

–হরিষ জী আছেন?

এবার উনি কেমন যেন থতমত খেয়ে বললেন ও নমস্কার আমি ভাবলাম… যাক ঐ যে সোজা যে গ্লাস ডোর দেওয়া ঘরটা দেখতে পাচ্ছেন ওটা সাহেবের ঘর|

সোজা গিয়ে টোকা মারলাম, জৈন জী ওখান থেকে দেখে চেনার চেষ্টা করছেন এর মধ্যেই দরজা ঠেলে ঢুকে গেলাম| – নমস্কার মিঃ জৈন|

উনি কিছুক্ষন তাকিয়ে বললেন – আইয়ে আইয়ে নমস্তে| অবলোগোকো পয়চানা নেহি| বলিয়ে ম্যায় আবলোগোকো ক্যায়া সেবা করুঁ| আগর গাড়ি চাহিয়ে তো ম্যেনজার বাবু সামনে হ্যায় উনসে আবলোক বাত-চিত কর সাকতে|

বললাম – না গাড়ির জন্য নয়| একটা বিশেষ কাজে আপনার কাছে এসেছি|

গুড্ডু বলল – ইয়ে ডব্লু বি – জিরো ফাইভ 2694 আপকা গাড়ী হ্যায়|

– বিলকুল ও তো মেরা সবসে আচ্ছা নয়া গাড়ী হ্যায়| কিঁউ ক্যায়া হুয়া উসকা| আর আবকো ও গাড়ী ক্যায়সে মালুম হুয়া|

আমি বললাম – দেখিয়ে জৈন সাব ও গাড়ী তিন চার দিন প্যাহলে এক সাদি বাড়ি গিয়ে থে উসকো লেকর কুছ বাতচিত করনা জরুরী হ্যায়|

গুড্ডু বললো – ও গাড়ী কা ড্রাইভার কো থোরা বুলাইয়ে|

জৈন বললেন – আরে সাব ও গাড়ী তো এক মাল্টি ন্যাশানাল কোম্পানী পসন্দ করকে সাল ভর কে লিয়ে ভাড়া লে লিয়া| ওহি অফিস মে ই চলতা হ্যায়|

আরও ধন্দে পড়ে গেলাম|

গুড্ডু বলল – কাকা যদি ওই গাড়ীটা কোনো কোম্পানীতে চলে তবে কি করে বিয়ে বাড়ি ভাড়া খাটবে|

জৈন বললেন – সহি বাত

আমি জৈন জী কে বললাম – আপ মেরে কো ওহি কোম্পানী কা পাতা দে দিজিয়ে| হামলোগ দেখ লেঙ্গে ও গাড়ী সাচমুচ কোই সাদি বাড়ি মে উসদিন গিয়া থা কি নহি|

জৈন বললেন – হা হা কিঁউ নহি,

বলেই ওনার এক ডায়রি খুলে ঐ ঠিকানা ছোট একটা কাগজে খস খস করে লিখে দিলেন| আর বললেন

-দেখিয়ে মেরা কই নুকসান নহি হোগা তো? ইয়ে বহুত আচ্ছা ক্লায়েন্ট হ্যায়| ইসকা সাত নয়া নয়া সাল ভর কা কনট্রাক্ট হুই হ্যায়|

আমি বললাম – ঘাবরানেকা কোই বাত নহি | আপকা কোই নুকসান নহি হোগা

কাগজটা হাতে নিয়ে আমার চোখ কপালে|

গুড্ডু বলল – কাকা কি হয়েছে? তোমার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে কোন যোগসূত্র পেয়েছো ?

– হা রে চল তাড়াতাড়ি |

– কোথায়?

– 41 পার্ক স্ট্রীট

সল্টলেক থেকে বুলেট দৌড়াল পার্ক স্ট্রীট| কতবার গুড্ডুকে বলেছিলাম আমার সাথে এসব কাজে থাকিস না তাহলে এরকম নাওয়া-খাওয়া ভুলে দৌড়তে হবে| শুনলনা কথা তার ঠাকুমা বলে দিয়েছে একেবারে কাকার সাথে লেগে থাকবি| আর তার মা বাবা, কাকার সাথে থাকলে কিছুতেই আপত্তি নেই|

বিপ বিপ করে বুলেট ছুটছে বিধান নগর থেকে বেড়িয়ে, ভি.আই.পি., বেলেঘাটা, সারকুলার রোড হয়ে ঢুকে পরলাম পার্ক স্ট্রীট| তারপর সেকেন্ডের মধ্যেই রোজি ইন্টারনেশানালের নব নির্মিত বিল্ডিংএ| গেটে নাম লিখিয়ে ভেতরে গেলাম| ঝাঁ চক চকে অফিস| সোজা গিয়ে উপস্থিত এডমিনিসট্রেটিভ অফিসারের ঘরে| বাইরের দরজার নেমপ্লেটে লেখা শেখর চক্রবর্তী, প্রশাসক| বললাম – মিঃ চক্রবর্তী গুড আফটারনুন| উনি বসতে বললেন ধন্যবাদ জানিয়ে দুজনে বসলাম| তারপর চিরকুটে সেই ভাড়া গাড়ির নম্বর লিখে তাঁকে দিয়ে বললাম এই গাড়িটি আপনাদের এখানে ভাড়া খাটে|

– হতে পারে, কারণ আমাদের নিজস্ব গাড়ি ছাড়াও কিছু গাড়ি আমাদের বার্ষিক ভাড়ায় চলে, কিছু মাসিক ভাড়ায়, আবার কখনও কখনও অফিসের প্রয়োজনে বিশেষ বিশেষ দিনে আমরা গাড়ি ভাড়া করি| কিন্তু আপনারা এই গাড়িটার ব্যাপারে জানতে চাইছেন কেন?

ওনাকে বিস্তারিত বলার পর উনি অমল বলে একটি ছেলেকে ডাকলেন, তাকে বললেন দেখ তো এই গাড়ীর হোয়ার এবাউটস টা| অমল গিয়ে একটা খাতা নিয়ে এল তারপর গাড়ীর নাম্বার দেখে বলল ও এটা তো সেন ম্যাডামের ডিসপোসালে স্যার এর ড্রাইভার ছোট্টু সিং|

মিঃ চক্রবর্তী এবার আমাদের বললেন – তবে তো আপনাদের মিস সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে|

আমি বললাম – কে মিস. অঞ্জনা সেন|

চক্রবর্তী বললেন – আপনি চেনেন |

– না মানে ওনার নাম শুনেছি| তা ওনার সাথে দেখা হতে পারে|

চক্রবর্তী – না আজ তো উনি ছুটি নিয়েছেন| আগামী কাল আসবেন|

মিঃ চক্রবর্তীর থেকে কোনরকমে মিস সেনের ঠিকানা নিয়ে ছুটলাম কেয়াতলায়|

গুড্ডু বলল কাকা তুমি কি চেনো মিস সেনকে| আমি বললাম দেখিনি কখনও তবে শুনেছি| মনে হচ্ছে উনি আমাদের বিরাট ক্লু হতে চলেছেন|

গুড্ডু জানে কাকা এর বেশী আর কিছু বলবে না তাই চুপচাপ তারা চলল 26 কেয়াতলা রোড|

আমি গুড্ডুকে বললাম তোকে একটু বেশীই খাটালাম বল| ফেরার পথে কে.এফ.সি তে কিছু স্ন্যাক্স খেয়ে নেব| গুড্ডু খুশী কারণ ওদের ভাই বোনের হট ফেবারিট কে.এফ.সি|

অবশেষে পৌঁছলাম মিস সেনের বাড়ি| বেল দিলাম এক অতীব মায়াময়ী সুন্দরী রমনী দরজা খুললেন|

– বলুন কাকে চান

– মিস অঞ্জনা সেন আছেন|

– হ্যাঁ আমিই অঞ্জনা সেন, ভেতরে আসুন|

আমরা ভেতরে ঢুকতে ঢুকতেই নিজেদের পরিচয় দিলাম আমি সখের গোয়েন্দা আর আমার ভাইপো গুড্ডু|

মিস সেন নমস্কার জানিয়ে বললেন – আপনারা এখানে বসুন (আমাদের সামনেই সুসজ্জিত একটি ঘরে সোফায় বসতে বললেন)| আমি আসছি|

যত দেখছি ততই মোহিত হয়ে যাচ্ছি – এক অপরূপা রমনীর আনাহুত আগন্তুকদের প্রতি এহেন আচরণ ভাবাই যায়না |আমি সুসজ্জিত ঘরটা লক্ষ করছি কোথাও কোন খুঁত নেই| গুড্ডুও স্বভাবসিদ্ধভাবে ঘুরে ঘুরে ঘরের আসবাব পত্র দেখতে থাকল|  এ বাড়ির নিচের তলায় কেউ থাকে বলে মনে হল না| একটু বাদেই মিস সেন একটা ট্রেতে করে দুটো ফ্যান্সি গ্লাসে সরবত আর একটা প্লেটে কিছু মিস্টি সামনের মেহগনী কাঠের তেরী গ্লাস টপ যুক্ত টি-টেবিলে রাখলেন|

-আপনারা ক্লান্ত একটু মিস্টি মুখ করুন, তারপর আমি জানতে চাইব আপনাদের আগমনের হেতু| যদিও কিছুটা অনুমান আমি করতে পারছি| আর আমার অফিস থেকে মিঃ চক্রবর্তী ও আমাকে আপনারা যে এখানে আসতে পারেন জানিয়েছিলেন|

মনে মনে ভাবলাম অফিসে ভদ্রমহিলার সাংঘাতিক rapport| আমি আর গুড্ডু তাড়াতাড়ি সরবত সাবার করে মিস সেনের কাছে জানতে চাইলাম

– ডব্লু বি – জিরো ফাইভ 2694 গাড়িটা আপনার অফিসে চলে আমরা জেনেছি ঐ গাড়িটা এক্সক্লুসিভলি আপনার ব্যবহারের জন্য|

– হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন| ওটা একমাত্র আমার জন্যই ভাড়া করা| ওটা আমার রোজি ইন্টারনেশনালে চাকড়ীর একটা শর্ত ছিল|

গুড্ডু বলল – ম্যাডাম আপনার ঐ গাড়ীর ড্রাইভারের সাথে কথা বলা যাবে?

– কেন নয় তবে ছোট্টু সিং এখন আছে উড়িষ্যায়, আজই ফিরে আসার কথা|

আমি বললাম – মিস সেন যদি ছোট্টুর ঠিকানাটা দেন আমরা আজ রাতে বা কাল সকালে ওর সঙ্গে দেখা করে নেব| আপনাকে শুধু শুধু বিব্রত করবো না|

– ও একবার বলেছিল দমদম ছানা পট্টিতে ও থাকে| আসলে ওর ঠিকানা আমার প্রয়োজন হয়না, কারণ দরকার হলেই আমি ওকে ফোন করি অথবা ওর প্রযোজনে ও আমাকে ফোনেই জানিয়ে দেয়|

আমি বললাম – হ্যাঁ এখন মুঠো ফোনই তো সব| তাহলে আপনি ওর নাম্বার টা দিয়ে দিন আমরা যোগাযোগ করে নেব| গুড্ডু নাম্বার টা লিখে নে|

গুড্ডু সঙ্গে সঙ্গে লিখে নিল, আমরা মিস সেনকে বিব্রত করার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে উঠে পরলাম|

মিস সেন বললেন – না না ইটস ওকে| আপনাদের জন্য আমার দরজা সদা উন্মুক্ত থাকবে|

উনি আমাদের গেট অবধি ছেড়ে গেলেন| আমরাও হাত নাড়তে নাড়তে বিদায় নিলাম| তবে মিস সেন যেন কিছু বলতে চাইছিলেন তবুও বলতে পারলেন না| হয়তো সর্ব্বেন্দু বাবুর কথা| আসলে আমি ও ইচ্ছাকৃতভাবে সর্ব্বেন্দু বাবুর নাম তুলিনি ওনার কাছে| ফিরতি পথে এক কেএফসি-র দোকানে ঢুকে চিকেন বার্গার, কোল্ড ড্রিঙ্কস এগরা বেগরা খেয়ে পেটটা একটু ঠান্ডা করে নিলাম| গুড্ডুকে বললাম কি এবার যাওয়া যাবে, না আর কিছু|

গুড্ডু  বললো – না ঠিক আছে কিন্তু কোথায় যাবে|

আমি বললাম – কোথাও যাওয়ার আগে ছোট্টু কে একটা ফোন কর| দেখি আজই এই কেসের কিছু একটা সুত্র বের হয় কি না|

ছোট্টু সিং ফিরেছে শুনে সোজা ওর ডেরায়, মানে দমদম ছানা পট্টি, গিয়ে উপস্থিত আমরা| শুরু করলাম জীজ্ঞাসাবাদ| যাইহোক, সাক্ষাতে সে কিছুই প্রথমে বলতে চাইল না| পরে থানা পুলিশের ভয় দেখানোয় সে জানাল যে এই গাড়ি বর্তমানে রোজি ইনটারনেশনলে চলছে ম্যাডাম সেনের ব্যবহারের জন্য|

গুড্ডু জীজ্ঞাসা করল – তাহলে বিয়ে বাড়িতে কেন?

ছোট্টু শুধু বলল – ম্যাডাম সেন কা হুকুম বিনা এ গাড়ি হিলতা নহি| আভি আভি উনকা হুকুমসেই ওড়িষা সে ওয়াপাস আয়া হুঁ|

গুড্ডু বলল – তার মানে উনিও জানেন আপনার বিয়ে বাড়ির ভাড়া যাওয়ার কথা|

ছোট্টু বলল – বিলকুল

আমি বললাম – উনি কি জানেন বর মহাশয় ভোররাতে তোমার গাড়িতেই নিরুদ্দেশ হয়েছেন|

ছোট্টু বলল – এতনা কুছ ম্যায় বোল নাহি সাকতে আবলোক কাল সুবে ম্যাডাম কা ঘর আযাইয়ে ম্যায় ভি উধারই রহুঁ| আউর এক বাত ম্যাডাম উসদিন সুবে ফোন করকে বাতায়ে থে – ও সাহাব যাঁহা বলেঁগে উধারই চলা যানা|

অমরা অনুমান করলাম তার মানে এ রহস্যর জাল ছাড়াতে ম্যাডামের সহযোগিতা আবশ্যক| বাড়ি ফিরে মনস্থির করে ফেললাম| কাল সকাল সকাল মিস সেনের বাড়ি উপস্থিত হতে হবে |

সকাল সকাল গুড্ডুকে নিয়ে হাজির হলাম মিস সেনের বাড়ি| অদ্ভুত এই সকালেই ছোট্টু এসে গেছে, ম্যাডাম ও তৈরী| আমি দরজা নক করতেই ম্যাডাম সেন বেড়িয়ে এলেন, বললেন – আসুন আসুন|

আমরা ভেতরে যেতেই উনি আমাদের ভেতরের ঘরে বসতে অনুরোধ করলেন| আর এমন ভাবে বললেন যেন উনি জানতেনই ওনার কাছে আমাদের আবার আসতেই হবে|

আমি বললাম -কিছু মনে করবেন না আবার আপনাকে একটু বিরক্ত করতে এলাম কারণ তা-না করে আমাদের পক্ষে আর এগোনো সম্ভব নয়|

মিস সেন বুদ্ধিমতি বললেন কাকা ভাইপো জুটি যে আবার আসবে তা আমি জানতাম তবে আপনারা গতকালই যদি মনের কথা বলতে পারতেন তাহলে কালকেই আমি আপনাদের সাহায্য করতে পারতাম|

গুড্ডু বলল – মানে ম্যাডাম আপনি জানেন আমরা কেন এখানে এসেছিলাম|

মিস সেন – হু হয়তো পুরোটা নয় তবে অনুমান করতে পারি| আপনাদের এখানে আসার কারণ তো সর্ব্বেন্দু চট্টোপাধ্যায়| কি তাই তো?

গুড্ডু কিছুটা ঘাবরে গিয়ে বলল –  হ্যাঁ মানে আপনি চেনেন ওনাকে

মিস সেন কিছু বলার আগেই আমি বললাম- চেনেন মানে খাস দোস্তি| তাই তো মিস সেন?

মিস সেন একটু বিব্রত হলেন মনে হল, তাই শুধুই মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বললেন – খাস কি না বলতে পারবো না তবে অল্প দিনই ওনার সাথে পরিচিত হয়েছি|

এরই মধ্যে এক মাঝ বয়সী মহিলা চা বিস্কুট নিয়ে হাজির| মিস সেন বললেন – আপনারা চা টা নিয়ে নিন খেতে খেতেই না হয় কথা হবে|

আমি বললাম – এসবের কি দরকার ছিল তারওপর গুড্ডু চা খায় না|

মিস সেন সঙ্গে সঙ্গে ঐ মহিলা কে ডাকলেন – মালতী একটা সরবত নিয়ে এসো তাড়াতাড়ি |

গুড্ডু বলল – না না আপনি কেন ব্যস্ত হচ্ছেন| আমার কিছু লাগবে না|

মিস সেন বললেন – তা বললে হয়| সক্কাল বেলায় আমার পছন্দের দুই অতিথি এসেছেন, কেমন করে খালি মুখে কথা হয়|

এরই মধ্যে সরবত চলে এলো|

আমি বললাম – আমি গতকালই সর্ব্বেন্দু বাবুর কথা আপনাকে বলতে পারতাম কিন্তু আপনি যদি কিছু মাইন্ড করে বসেন তবে তো আমার গোয়েন্দাগিরি ওখানেই চৌপাট হয়ে যেত তাই ও ব্যপারটা সরিয়ে রেখেছিলাম|

গুড্ডু বলল – কাকা আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না|

আমি বললাম – সব জানতে পারবি বুঝতে পারবি, একটু অপেক্ষা কর|

মিস সেন বললেন- তোমাকে আর তোমার কাকাকে দেখে আমার সেই কাকাবাবুর রহস্য রোমাঞ্চ গল্পগুলোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে|

যাই হোক নানান কথাবার্তা চলার মাঝেই আমি মিস সেন কে বললাম – আমার মনে হয় এবার ছোট্টুকে ডাকা টা দরকার|

মিস সেন একটু মজা করেই বললেন – ও আমায় দিয়ে হবে না, ঠিক আছে – বলে সঙ্গে সঙ্গেই ডাক পারলেন|

বললাম – আরে না না আপনিই তো আমার গুপ্তধনের চাবি কাঠি|

ইতিমধ্যেই ছোট্টু ডাক শুনেই ভেতরে এসে বলল – নমস্তে মেমসাব|

মিস সেন বললেন – ছোট্টু উস দিন ও সাদি বাড়ি মে যো কুছ হুয়া, সাব লোগো কো বাতা দো|

ছোট্টু বলল – মেম সাব, হাম গাড়ি মে শো গিয়া থা| অচানক ও সর্ব্বেন্দু সাব ভাগ কে আয়া বোলা ছোট্টু জি তুরন্ত গাড়ি স্টা্র্ট কিজিয়ে| থোরা আঁধারি মে ম্যায় বোলা আভি কাঁহা জানা সাব| সাব বোলা জলদি চলো, কোই আনে সে প্যাহলে| ম্যায় ক্যায়া করতি ম্যাম| ম্যায় গাড়ি স্টার্ট করকে পুছা কাঁহা চঁলু সাব| বাবু সিধা ভি.আই.পি রোড কা তরফ দেখা দিয়া, ম্যায় লুকিং গ্লাস সে সাব কো দেখ রহা থা, উনকো বহুতই পরিসান লাগ রহে থে, পাসিনা নিকাল রহা থা, হাম ভি স্পীড চড়াকে ভি.আই.পি পকাড় লিয়া, পুছা সাব বল দেনা কাঁহা রুকনা |

আমি বললাম – তারপর

– ইসকা বাদ সাব কিসিসে ফোন মে কুছ বাতচিত কিয়া আউর হামকো বলা বাগুইআটি ছোড়নে কে লিয়ে|

গুড্ডু বলল – কোথায়! বাগুইআটি…

– হাঁ সাব| থোরি বাদ ম্যায় বাবুকো বোলা সাব হামলোগ পৌঁছ গিয়া| সাব বাগুইআটি উতার কে এক রিক্সো পকড় লিয়া| আউর উতারনেকে বাদ সাব নে বহুতবার বোলা কিসিকো কুছ মত বোলনা|

আমি বললাম – মিস সেন এবার আপনার পালা বলুন কোথায় গেলেন সর্ব্বেন্দু বাবু?

মিস সেন – আপনি কি আমাকে সন্দেহ করছেন না কি?

– ঠিক সন্দেহ নয় তবে তার বাইরেও আপনাকে রাখতে পারছিনা|

– কেন কেন ?

– অনেক কেনর উত্তর থাকে না মিস সেন||

গুড্ডু বলল – সর্ব্বেন্দু বাবু গাড়িতে উঠে ওই ভোর রাতে যাকে ফোন করেছিলেন তিনি হচ্ছেন আপনি ম্যাম| আমি সর্ব্বেন্দু বাবুর এই কদিনের কল লিস্ট যোগার করে ফেলেছি|

আমি বললাম – এ ছাড়াও কাল পর্যন্ত উনি আপনার সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছেন|

মিস সেন – এটা কি প্রমাণ করে আমি ওনাকে কিডন্যাপ করেছি| শুনুন সর্ব্বেন্দু বাবু আমার একজন শুভাকাঙ্খি বহু বিষয়ে উনি আমাকে সাহায্য করেছেন| আর তাই আমি ওনার কাছে কৃতজ্ঞ|

আমি বললাম – তা কৃতজ্ঞপরায়ণ হয়ে কি এমন বুদ্ধি দিলেন যে তিনি বিয়ে বাড়ি থেকে সটান ভেগে গেলেন|

মিস সেন অসন্তুষ্ট হয়ে বললেন – আপনি কিন্তু আমায় সরাসরি অভিযুক্তের তালিকায় নিয়ে আসছেন| আমার আপনাদের দু-জনকে বেশ মার্জিত রুচি সম্পন্ন মানুষ মনে হয়েছিল, তাই কোন রকম সঙ্কোচ না করেই আমি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম| কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমি ভুল করেছি|

আমি বললাম – না মিস সেন ভুল বুঝবেন না অনেক আশা নিয়েই আমরা আপনার কাছে এসে পৌঁছেছি আর আমাদের রহস্যের জটও খোলার মুখে| তাই এই মূহুর্তে আপনার সাহায্যের দরকার, তবে একান্তই যদি তার থেকে বঞ্চিত হই তবে অন্য রাস্তা নিতে বাধ্য হব| চল গুড্ডু| – বলেই গুড্ডুকে ইশারা করে উঠতে যাব, অমনি মিস সেন বললেন

– দাঁড়ান|

আমি ভাবলাম যাক টোটকায় কাজ হয়েছে| কিন্তু না, মিস সেন বললেন

– দেখুন যাদি সত্যিই ভেবে থাকেন আমি আপনাদের রহস্যভেদে কোনরকম প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছি আর আপনারা অন্য রাস্তা নিয়ে আমাকে বিব্রত করবেন, তবে চেষ্টা করুন| আপনারা সখের গোয়েন্দা আপনাদের সমস্ত কিছু আমি ইতিমধ্যে সংগ্রহ করে ফেলেছি|

মিস সেন আর কিছু বলার আগেই বললাম – আপনি কি ভাবছেন মিস সেন, যে সখের গোয়েন্দা এরা এদের আর কতটুকু ক্ষমতা আমার সাথে পাঙ্গা নেবে| আমরাও আপনার সমস্ত কিছু সম্বন্ধে অবগত হয়েই আপনার কাছে এসেছি|

মিস সেন বললেন – কি জানেন আপনারা, কিছুই জানেন না আমার সম্বন্ধে|

গুড্ডু বলল – ভুল করছেন ম্যাডাম, আমাদের সখের গোয়েন্দা বলে হেলা ফেলা করছেন| আমাদের নেটওয়ার্ক সম্বন্ধে আপনার কোন ধারণা নেই|

মিস সেন বললেন – তাই নাকি| তা কি জেনেছেন শুনি একটু|

আমি বললাম – আপনি একজন দুঁদে আই.পি.এস অফিসারের একমাত্র কন্যা| আপনার বাবা-মা বছর দুয়েক হল গত হয়েছেন| আপনি একা বোম্বেতেই ছিলেন কর্মসুত্রে| বর্তমানে রোজি ইন্টারনেশানাল আপনার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে কোলকাতায় এক্সিকিউটিভ অফিসার করে পাঠিয়েছে এই মাস ছয়েক হবে| কি তাই তো|

মিস সেন আমাদের কাছে প্রতিটি বর্ণনা শুনে স্তম্ভিত হলেন আর বললেন

– না আপনাদের নেটওয়ার্কের প্রশংসা না করে উপায় নেই| আর হ্যালো জুনিয়ার এবার আমি একটু তোমাদের না মানে বিশেষ করে তোমার ঐ কাকার সম্বন্ধে কিছু বলি|

গুড্ডু – ম্যাডাম, আমার কাকাকে আপনি এত তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলতে পারলেন| না মানে আমরা বাড়ির লোকেরাই এখনও পড়ে উঠতে পারিনি কাকা্কে, তাই বলছিলাম|

আমি বললাম – আঃ গুড্ডু বলতে দে না ওনাকে|

গুড্ডু – হ্যাঁ ম্যাডাম বলুন

মিস সেন – দেখো জুনিয়ার আমার বাবার এ দেশের নানান জায়গায় পোস্টিংয়ের সুত্রে আমি আর মা ও নানান রাজ্যে বাবার সাথে ঘুরে বেড়িয়েছি| বেশ কিছুদিন বাবা মধ্যপ্রদেশে অধুনা ছত্তিশগড়ে ভিলাই তে ছিলেন| তখন আমার স্কুলিং লাইফ, ভ্যাকেশন হলেই বাবা কোথাও না কোথাও বেড়াতে নিয়ে যেতেন বেশির ভাগই আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতেই আমরা যেতাম| যেহেতু বাইরে বাইরে থাকতাম তাই সুযোগ পেলেই বাবা আমাদের তাঁর নৈহাটির পৈত্রিক বাড়ি বা কাছা কাছি আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে নিয়ে আসতেন|

গুড্ডু – ম্যাডাম এখানে আমার কাকা আসছেন কোথা থেকে?

– দাঁড়াও বৎস| আমি মাঝে মাঝে  আমার এক পিসির বাড়ি যেতাম, সেখানে আমার পিশতুতো দুই বোন ছিল| ওদের সঙ্গে সখ্যতা আজও সমান| আর সেখানে গেলে আমরা তিন বোন একসাথে খেলাধুলা বেড়ানো দারুন মজা করতাম| আমার ঐ দু-বোন ওদের পাড়ার ক্লাবে রোজ বিকেলে আমাকেও নিয়ে যেত| সেখানে এক ভদ্রলোক দায়িত্ব সহকারে সকলকে নানান রকম পিটি, প্যারেড, শারীরিক কসরত, নানান বুদ্ধিদিপ্ত খেলাধুলায় মাতিয়ে রাখতেন| আমি দেখতাম সকলে বিকাল হলেই কি সুন্দর এসে হাজির হয়ে যেত সেই মাঠে| রোল কল করা হত লাইনে দাঁড় করিয়ে| ওখানকার অনেকের সাথে বন্ধুত্বও হয়ে গিয়েছিল|

তা একবার আমরা গেছি পিশির বাড়ি আমাকে আমার ঐ দুই বোন জানাল ভালো সময় এসেছিস দু-দিন বাদেই আমাদের ক্লাবের বার্ষিক অনুষ্ঠান| আমাদের সব ফ্যান্সি ড্রিল, পিটি, প্যারেডেরও প্রদর্শন হবে| আমি বললাম তবে তো আর তোদের সাথে আসরে যাওয়া যাবেনা তোরা সব ব্যস্ত থাকবি আমি কি করব| ওরা বলল চল-ই না|

এবার আমি বললাম – তুমি রিমলি ঝিমলির সাথে মাঠে এলে ওরা আমাকে আলাপ করিয়ে দিল| আমি তোমাকে বললাম তুমি তো দু-তিন দিন আছো তা হলে আমাদের ফাংসানের দিন চলে আসবে| এদিকে রিমলি ঝিমলি আমাকে বলল দাদা ও ভীষণ ভাল ফোক ডান্স করতে পারে| আমি বললাম তাই নাকি তা বেশ আমি তখন সেই লাল ফ্রক পরা সোনালী চুলের মেয়েটাকে বললাম তোমরা তিন বোন একটা সুন্দর ফোক ডান্সের পারফরম করবে আমি পাঁচ মিনিটের একটা স্লট রেখে দিচ্ছি| মেয়েটি রাজি হয়ে গেল|

মিস সেন – হ্যাঁ রাজি তো হয়ে গেলাম এবার ভাবছি কি করে এই দুই বোনকে এত তাড়াতাড়ি নাচটা তোলাতে পারব| তবে রিমলি ঝিমলি ভীষন বাধ্য স্টুডেন্টের মতন দিন রাত প্র্যাক্টিস করে নাচটা তুলে ফেলল|

আমি বললাম – আর একটা সুন্দর পারফরমেন্স তোমরা আমাদের উপহার দিয়েছিলে| ক্লাব কর্তিপক্ষের সাথে নানান বিতর্কের পর ঐ পাঁচ মিনিটের স্লট বার করতে আমাকে হিমসিম খেতে হয়েছিল, আর সেটা সার্থক হওয়ায় আমি ভীষণ খুশী হয়েছিলাম| স্টেজ থেকে নামতে না নামতেই জড়িয়ে ধরেছিলাম তিন বোনকে| রিমলি ঝিমলি আর অঞ্জু তাই তো| সত্যি কতদিন আগের কথা|

মিস সেন – দিন নয় দাদা বছর প্রায় কুড়ি পঁচিশ বছর আগের ঘটনা| তারপর দেখ আবার কেমন এক পরিস্থিতিতে আমরা এক জায়গায়| জুনিয়ার, তোমার কাকাকে আমরা সবাই ভীষণ ভয় পেতাম আবার একই সাথে ভীষণ ভালবাসতাম| তোমার কাকার গুরু গম্ভীর ভাব আমাদের ডিসিপ্লিনড করেছিল, আর তার উপকার আজও নানান বিষয়ে আমরা উপলব্ধি করি| আমি কোলকাতায় এলেই রিমলি ঝিমলির কাছে খোঁজ নিতাম তোমার কাকার| অদ্ভুত একটা আকর্ষণ ছিল আমাদের সবার|

গুড্ডু বলল – আপনি ম্যাডাম, কাকাকে দেখে আগেই চিনতে পেরেছিলেন|

– না দাদার বিগত পঁচিশ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে্| তোমার কাকার আগের চেহারা ছিল চাবুকের মতন, একগাল দাড়ি, তীক্ষ্ণ চোখ, মাথা ভর্তি কোঁকারানো চুল, ফর্সা নির্মেদ চেহারা| দু-হাত মাথার পেছনে রেখে আমাদের দু জনকে দু-হাতে ঝুলিয়ে অনায়াসে চড়কির মতন ঘোরাতে সক্ষম ছিল দাদা, দাদা মাঠে সাইকেল আনলে কমকরে পাঁচজন তাতে চেপে বসে মাঠে ঘোরানোর জন্য বায়না করতো, দাদা সেসব বায়না মেটাতে কখোনো না করত না|

আমি বললাম – থাক আর প্রশংসায় ভরাতে হবে না|

গুড্ডু বলল – না আমার জানতে ইচ্ছে করছে ম্যাডাম তোমাকে চিনলেন কি করে?

– দাদার বাইরের রূপ দেখে সেই পঁচিশ বছর আগের মানুষটাকে চেনা সত্যিই সম্ভব নয়, তাই প্রথম তোমার কাকাকে দেখে এতটুকুও অনুমান করতে পারিনি, তারপর আমি এখানে তো এসেছি এই কয়েক দিন এখনো সকলের সাথে সেভাবে যোগাযোগও করে উঠতে পারিনি|

মিস সেন আরও বলল – তোমার কাকার চোখে চশমা এসেছে, শরীরে বিশেষ করে মধ্যপ্রদেশে মেদ সঞ্চিত হয়েছে| সেই এক মাথা কোঁকরানো চুল অদৃশ্য| এত কিছুর পরও দাদার অপরিবর্তীত পশচার দাদাকে আজও একই রকম রেখেছে|

গুড্ডু বলল – যেমন

মিস সেন – ডান হাতে ঘড়ি যা মাঝে মাঝেই ঝাঁকিয়ে সময় দেখা, কথা বলার স্টাইল| আর চোখের তীক্ষ্ণতা যা চশমার ভেতর দিয়েও অনুমান করা যায়| তবে আমার অনুসন্ধিতসু চোখ একটু সময় নিয়েছে, তবে চিনে নিয়েছে সেই প্রিয় দাদাটাকে|

দাদা যেন আজও আমার মনে পরে সেই সময়কার তোমার আসরে আসা সেই বন্ধুদের – মানি, মেরী, কাজল, চন্দু, বিন্দু, ডল, মলি, পিয়া, সোনালী, পিয়ালী, শম্পা, রাখী, বুনি, সুমি, টুসি, পাপ্পু, টুম্পা, রুমা, পম্পা, বুলু, রম, পাপাই, তুতুন, চম্পা আরও কত কে ছিল সবার নাম আর মনে আসে না|

আমি অবাক অঞ্জু এক আধ বার সেই আসরে এসে এতকিছু মনে রেখেছে আমাকে চিনতেও পেরেছে| আর আমি তো এখনো কিছুতেই সেই ভিলাই থেকে আসা ছোট্ট ফরসা রোগা মেয়েটার সাথে আজকের অঞ্জনা সেনের কোন মিলই খুঁজে পাচ্ছি না|

বলেই ফেললাম – দুঃখিত আমি না কিছুতেই সেই সময়ের অঞ্জু কে আজকের অঞ্জনা সেন ভেবে নিতে পারছি না|

– দাদা মেয়েরা বোধহয় এমনই হয়| বাড়তে থাকলে অতীত কে একদমই ভুলিয়ে দেয়| আর আমাদের পরিবর্তন ভীষণ দ্রুত হয়| ছোটবেলার ছবিগুলো দেখে অনেক সময় আমিই আমাকে চিনতে পারিনা|

আমি বললাম – অঞ্জু এবার প্রসঙ্গে ফেরা যাক|

– হ্যাঁ দাদা| বল কি জানতে চাও আর কিছু গোপন করার নেই আমার|

– অঞ্জু আমি জেনেছি বোম্বেতে থাকার সময় তোর বাবা-মা তোকে বিয়ের জন্য চাপা চাপি করেছিলেন, সেই সময় তুই বলেছিলিস এখন নয় সময় হলেই সব হবে| তোর বাবা – মার মৃত্যুটা ভীষণই হঠাৎ ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা| প্রথমে বাবা সাত দিনের মধ্যেই মা|

– হ্যাঁ দাদা| আকস্মিক এই দুই জন্মদাতা আর জন্মদাত্রীকে হারিয়ে আমি দিশেহারা হয়ে পরেছিলাম|

আমি বললাম – আর তুই খড় কুটোর মতো এক যুবককে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলিস|

– ঠিক, তখন কোন অবকাশ ছিল না কাউকে যাচাই করার, রীতম ঝাঁপিয়ে পরে যেভাবে সেইসময় আমাকে সাথ দিয়েছিল তা আমি ভুলি কি করে। আর তাই অবচেতন মনে রীতম একটা জায়গা করে নেয়। আর আমিও ওকে নিয়েই স্বপ্ন দেখতে শুরু করি| কিন্তু তুমি কি করে জানলে এই যুবকের কথা?

– আমি না গুড্ডু| ও বোম্বের এক বন্ধুকে রোজি ইন্টারনেশনাল আর অঞ্জনা সেন সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলে| সেই জানায় যে বর্তমানে তোর আর রীতমের হঠাৎ ব্রেক-আপের কথা|

– না দাদা ঠিক হঠাৎই নয়| বেশ কিছুদিন ধরে ওকে লক্ষ্য করছিলাম রীতম আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে| একদিন সরাসরি প্রশ্ন করলাম – কি নতুন কোন গার্ল ফ্রেন্ড হয়েছে নাকি| রীতম এভোয়েড করলো. কোনো উত্তর না দিয়ে বললো তার নাকি জরুরী কাজ আছে কালই বোম্বে ছেড়ে দিল্লী যাচ্ছে সে|

আমি বললাম – সে কি তোদের মধ্যে যখন একটা রিলেশন বিল্ড-আপ হচ্ছে সেই সময় তোকে কিছু না জানিয়ে….

– হ্যাঁ দাদা আমি অবাক হয়েছিলাম | এমন কোন ঘটনা রীতমের নেই যা আমি জানি না| অথচ কোন আলোচনা ছাড়াই দিল্লী | আমি ও বসে থাকার মেয়ে নয়, খোঁজ নিলাম ওর আরও কিছু বন্ধুর কাছে, বন্ধুরা জানাল রীতম একটা বাজে চক্রে জড়িয়ে পড়েছে| ওকে ভুলে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ|

আমি বললাম – রীতমের অধঃপতনের খবর খুব তাড়াতাড়িই সর্ব্বত্র ছড়িয়ে পরে | যাতে সে আর তোর সাথে যোগাযোগ করতে না পারে তুই সটান কোলকাতায়|

– হ্যাঁ দাদা, এখানে বেশ আছি| অফিস আমাকে নানান সুবিধা দিয়েছে| আর আমার দায়িত্ব এই রিজিওনে ব্যাবসাটা বাড়ানো|

– আর তাই ব্যাবসাটা বাড়াতে গিয়ে সর্ব্বেন্দু বাবুর সাথে আলাপ| প্রথমেই তোদের দু-জনের সংঘাত আর তারপর তোদের ঘনিষ্টতা|

– দাদা ঐ মানুষটাকে কষ্ট দিয়ে আমি খুব অনুতপ্ত ছিলাম কিন্তু কি করতাম| দীর্ঘ দিনের রুচিতে কেউ আঘাত করবে তা ভাবতে পারিনি| যাই হোক পরে বুঝেছি সর্ব্বেন্দু বাবুর নামে তার অফিসারের কাছে নালিশ করাটা ঠিক হয়নি|

বললাম – তা পরদিনই তো সর্ব্বেন্দু বাবু তোর অফিসে যায়| এবং সে নিশ্চয় তোর কাছে তার ভুল স্বীকার করে নেয়|

– হ্যাঁ দাদা পরদিনই উনি আমার অফিসে আসেন, আর ওনার সেই করুন মুখটা দেখে আমার ভীষণ অপরাধবোধ হচ্ছিল|

– আর এর থেকেই তোরা দু-জন ভাল বন্ধু হয়ে গেলি| আর ওর কথামতন নিজেকে সম্পূর্ণ বদলে ফেললি|

– তা যা বলেছো দাদা| আমার নিজেরই নিজেকে দেখে কেমন অবাক লাগে| পুরো বঙ্গ নারী সাজে আমার বেশ লাগে এখন|

আমি বললাম – আজ একটা কথা হলপ করে বলতে পারি তোর বোনেরা মানে রিমলি-ঝিমলি ও বোধহয় এত সুন্দর করে শাড়ি পরে উঠতে পারেনি| আচ্ছা আর একটা কথা বল তো তোর এই পরিবর্তন কি সর্ব্বেন্দু বাবুর দূর্বলতার কারণ হয়ে পরেছিল, আর তাই বিয়ের রাতে….

অঞ্জু হাসতে হাসতে বলল – ধ্যাত, তুমি যে কি বলো না| সর্ব্বেন্দু ভীষণ সুন্দর এক ব্যক্তিত্ব ও নিজের বিয়ে নিয়েই একটু ব্যস্ত ছিল| আমাকে বিয়ের নিমন্ত্রণ ও করেছিল, ইভেন আমার বরযাত্রীও যাওয়ার কথা ছিল| হঠাৎই বাইরের এক ক্লায়েন্ট এসে যাওয়ায় আমার যাওয়া হয়ে ওঠেনি| তবে আমি সর্ব্বেন্দু বাবু কে আশ্বস্ত করেছিলাম যে আমি অবশ্যই বৌ-ভাতে যাব|

গুড্ডু বলল – ম্যাডাম তা সর্ব্বেন্দু বাবুকে কোথায় পাঠালেন আই মিন টু সে কোথায় লোকালেন?

অঞ্জু হাসতে হাসতে বলল – জুনিয়ার এবার তো খোঁজার পালা তোমার| তুমিতো জেনেই ফেলেছো যে সে বাগুইআটিতে নেমেছিল| বাগুইআটিতো আর একটা আস্ত জেলা নয়|

গুড্ডু বলল – তা ঠিক কিন্তু আপনার সাথেই তো সেদিনের সেই ভোররাতে ফোনে যোগাযোগ হয়েছিল সর্ব্বেন্দু বাবুর তাই এটা তো অনুমান করাই যায় যে আপনি ই তাকে কোন আস্তানার সন্ধান দিয়েছেন|

অঞ্জু – একদম তাই অনুমান করাই স্বাভাবিক, কিন্তু জুনিয়ার, আমি তাকে কোথাকার কোন আস্তানার সন্ধান দেবো আমিই তো এখানে কিছুই চিনিনা| আমার কাছে এই শহরতো একদম নতুনের মতন| যাই হোক দাদা এটা কিন্তু জুনিয়ারের খুঁজে পাওয়াই উচিত|

আমি বললাম – তুই গুড্ডুকে চিনিস না ও যদি মনে করে ওর নানান সোর্সের সাহায্যে ঠিক পৌঁছে যাবে|

অঞ্জু বলল – জুনিয়ার আমি তোমাকে আরও একটু সাহায্য করতে পারি, যদিও দাদা আমি এখানে কিছুই চিনি না তবে আমি সর্ব্বেন্দু বাবুর কাছে একটা জায়গার নাম শুনেছিলাম যেখানে ওর পরিচিত কেউ থাকে| জায়গাটা কি চ্যাংড়া না জ্যাংড়া এরকমই কিছু একটা হবে|

গুড্ডু লাফিয়ে উঠল বলল কাকা চলো তাড়াতাড়ি| আমিও অঞ্জুকে বিদায় জানিয়ে আবার পরে দেখা হবে বলে বেড়িয়ে পরলাম |

অঞ্জু আমাদের দুজনের উদ্দেশ্যেই বলল – দাদা, জুনিয়ার বেস্ট অব লাক|

আমরা বেড়িয়ে একটু দূরে গিয়ে দুজন দু রাস্তা নিলাম| গুড্ডু ছুটল বাগুইআটির জ্যাংড়া আর আমি লালবাজার|

আমি গুড্ডু কে বললাম সাবধানে ফোনে যোগাযোগ রাখবি আমি একটু লালবাজার যাচ্ছি|

গুড্ডু বলল – আবার কি অন্য কোন কেস কাকা|

আমি বললাম – সব বলবো তুই সর্ব্বেন্দু বাবুর খোঁজটা নিয়ে আয়|

আমি সোজা একটা ওলা নিয়ে লালাবাজারে| এখানে গোয়েন্দা দপ্তরের অফিসার গৌতম ব্যানার্জী, আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত কলেজ লাইফের বন্ধু, তার চেম্বারে গিয়ে উপস্থিত| গৌতমকে নক করার সাথে সাথে বলল

– ভেতরে আয়| তারপর সখের গোয়েন্দা কি সমস্যা হলো| তোর ভাইপো কেমন আছে সে তোর সাথেই তো আছে,| বাড়ির সব কেমন ভালো তো, এবারে অনেক দিন পরেই এলি তুই|

আমি বললাম – ভাইরে আগে একটু বসতে তো দে|

– আরে তোকে কি আপ্যায়ন করতে হবে নাকি, বস বস|

– ধন্যবাদ, হ্যাঁ গুড্ডু আমার সাথেই কাজ কর্ম করছে, বাড়ির সবাই মোটামুটি, তবে  গুড্ডুটার একটা সরকারী চাকরি হয়ে গেলে নিশ্চিন্ত হতাম||

গৌতম ইতিমধ্যেই বেল দিয়ে পিওন কে দু কাপ কফির অর্ডার দিয়ে ফেলেছে| তারপর সে বলল – হ্যাঁ তা ঠিক, তবে তোর সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে ওরতো কিছু অভিজ্ঞতাও হচ্ছে| যাইহোক এবার বল হঠাৎ তোর উপস্থিতি কারণ|

– দেখ একটা জিনিস না ঠিক মেলাতে পারছি না| একজন স্বেচ্ছায় বিয়ে করতে গেল তারপর বিয়ের রাতে আই মিন ভোর রাতে নিখোঁজ, দু বাড়ির লোক কিছুই জানে না, গল্পে একটি মোয়ের আবির্ভাব, আমার পূর্ব পরিচিত, কিন্তু ভীষণ অচেনা, তার বাবা ছিলেন আই.পি.এস অফিসার ভিলাইযে পোস্টিং, বর্তমানে প্রয়াত, মা –ও মারা গেছেন সম্প্রতি| মেয়েটি বর্তমানে একা, বোম্বের রোজি ইন্টারনেশনালে পদস্থ অফিসার এখন কোলকাতার অফিসে প্রমোসন নিয়ে এসেছেন|

গৌতম – দাড়া দাড়া কি বললি আই.পি.এস মিঃ সেন অবসর নেবার কয়েক বছরের মধ্যেই মারা যান| তাঁর একমাত্র কন্যা বোম্বের এক অফিসে কর্মরতা ছিলেন| চাকুড়ীরতা অবস্থাতেই এক স্মাগলিং গ্রুপের সঙ্গে জড়িয়ে পরেন একটি ছেলের মাধ্যমে|

– তুই এত কিছু জানলি কি করে| ঐ ছেলেটিই কি রীতম যার সাথে বর্তমানে ওর ব্রেক-আপ চলছে|

– না বন্ধু কোন ব্রেক-আপ টাপ নয় দিব্য সব ঠিক আছে| আমাদের কাছে যা খবর এক মহিলা নাম সাকিরা অনেক গুলো ভাষা জানে, অনর্গল বাংলা, ইংরাজী, মালোয়ালাম, হিন্দী, উর্দ্দু বলে যেতে পারে এছাড়াও জার্মান ভাষাও রপ্ত করেছে| সেই সাকিরা ই রিমোট কন্ট্রোলে একটা স্মাগলিং গ্রুপ অপারেট করছে| আর সেই গ্রুপেরই একজন রীতম|

– তার মানে মিস সেন ও সন্দেহের উর্দ্ধ নয়|

গৌতম (একটু মুচকি হেসে)– না কখনই নয়| সম্প্রতি রীতম ওরফে রাজার নামে বোম্বে পুলিশ ওযারেন্ট জারি করেছে| আর সেও গা ঢাকা দিয়ে আছে| আমাদের কাছে খবর ও হয়তো কলকাতায় কোথাও শেল্টার নিয়ে আছে|

আমি বললাম – এ তো সাংঘাতিক, তার মানে রীতম অঞ্জনা সেনের সাথে এখনও যোগাযোগ রাখে আর ওর ভরসাতেই রীতম কলকাতায় উপস্থিত হয়েছে|

– মনে তো হয় তাই | হঠাৎ গৌতমের টেবিলের ফোনটা বেজে উঠলো, আমি বললাম চলি, গৌতম ইশারা করে বসতে বলল| ফোনে কথা বলতে বলতে ওর চোখ মুখ কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছিল| মনে হচ্ছিল কোথাও কিছু গন্ডগোল হয়েছে বোধহয়|

ও ফোনে বলছিল সব রাস্তা বন্ধ করতে বল লোকাল থানাকে, আর ফোর্স রেডি রাখতে বল আমি এখুনি এখান থেকে কিছু ফোর্স নিয়ে পৌঁছচ্ছি| বলেই ফোনটা রেখে দিল| আমার দিকে তাকিয়ে বলল যা সন্দেহ করেছিলাম তাই|

আমি বললাম – কি রে কি হয়েছে কোথাও কোন গন্ডগোল

গৌতম বলল – এই চাকরিতে তোকে নিশ্চিন্তে চা খেতে দেবে| শোন তোকে যা বলছিলাম সাকিরা সেই মহিলা অনুমান করা হচ্ছে এখন রিমোটে কলকাতায় ব্যবসা ফাঁদতে রীতম কে বরাত দিয়েছে | এখনই দিল্লীর ইন্টালিজেন্স থেকে ফোন এসেছিল, ওরা জানতে পেরেছে বাগুইআটিতে একটা গোপন আস্তানা তৈরি হয়েছে যেখানে নতুন নতুন ছেলে-মেয়ে রিক্রুট করা হচ্ছে| নানান ধরনের স্মাগলিংয়ের ট্রেনিং দেওয়ার তোরজোর চলছে| ওপরতলা থেকে নির্দেশ এখুনি অপারেশন বাগুইআটি|

আমার বুকটা কেঁপে উঠল, আরে গুড্ডুতো ওখানেই গেছে| আমি আস্তে করে গৌতমকে বললাম| শোনা মাত্র গৌতম চেঁচিয়ে উঠল – ও মাই গড, তুই আগে বলবি তো| এখুনি গাড়িতে ওঠ|

আমি বললাম – কি হয়েছে ওখানে কোন গন্ডগোল হয়েছে নাকি|

গৌতম বলল – চল গাড়িতে সব বলছি|

এরই মধ্যে গৌতম কয়েকটা থানায় ফোন করে ফোর্স রেডি রাখার জন্য বলল| আর লালবাজারের এক ভ্যান আর্মড পুলিশ, নিজের গাড়িতে তিনজন এস.আই আর আমাকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল| গৌতম গাড়ি ছাড়ার আগেই ড্রাইভার রতনের সঙ্গে আলোচনা করে নিল কোথা দিয়ে গেলে দ্রুত পৌঁছে যেতে পারবে| গাড়ী তীরের গতিতে ছুটে চলেছে, বি.বি.গাঙ্গুলী স্ট্রীট, শিয়ালদহ ছুঁয়ে বেলেঘাটা মেইন রোড দিয়ে সোজা ই.এম.বাই পাস, সেখান থেকে সেক্টর ফাইভকে পাশে রেখে নিউটাউন রাজারহাট| ভ্যানও নির্দেশ মতন তাদের ফলো করে আসছিল|

আমি অনেকক্ষন গুড্ডুর ফোন না পেয়ে আর ঐ অঞ্চলেই এরকম একটা গন্ডগোলের খবরে একটু ঘাবরেই গেছি| এদিকে আমিও ফোন করতে পারছি না কারণ আমাদের কিছু বাধ্যবাধকতা আছে| চরম বিপদ বা গুরুত্বপূর্ণ কিছু না হলে একজন আরেকজনকে ফোন করতে পারবো না| আর ও কি অবস্থায় আছে না জেনে ফোন করে ওকে বিব্রতা না করার সিদ্ধান্তই নিলাম|

গৌতম জীজ্ঞাসা করল – গুড্ডুকে বাগুইআটি পাঠালি কেন?

আমি বললাম – ঐ নিখোঁজ বরের একটা সন্ধান পাওয়া গেছে| সে সেদিন বাগুইআটি তে নেমে অন্তর্ধান হয়, তা আজ অঞ্জনা সেন জানায় যে সে সর্ব্বেন্দু বাবুর মুখে শুনেছিল, তার কোনো এক পরিচিত বাগুইআটির জ্যাংড়াতে থাকে, তাই গুড্ডু এ শুনেই বেড়িয়ে পরল|

গৌতম কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়েই বলল – তুই ও যেতে দিলি আগে পুলিশকে তো ইনফর্ম করবি অন্তত আমাকে জানালে আমি তোকে নিষেধ করতাম এখনি ওখানে পাঠাতে|

– আসলে এর সাথে তো তেমন কোন ক্রাইম কেস নেই তাই তোকে আর বিরক্ত করতে চাই নি|

গৌতম – আরে সব কেসই এমন হয় পরে গিয় দেখা যায় কোন না কোন ক্রাইম এক্টিভিটিতে তা জড়িয়ে আছে| যাই হোক দুটো ঘটনা আলাদা হলেই ভালো হয়| ঐ মিস সেন কিন্তু খুব ভালই জানেন রীতম বর্তমানে কোলকাতায়|

আমি বললাম – বলিস কি, তুই জানলি কি করে?

– আরে আমাদের কাছে খবর আছে যে রীতম এখানে তাদের আস্তানা গোছাচ্ছে| রীতম ওরফে রাজা হচ্ছে সাকিরার বিশস্ত অনুচর| সাকিরা রীতমকে দিয়ে এখানে স্মাগলিং ব্যবসাটা বাড়াতে চায়| সেই কারণে ওরা জ্যাংড়া অঞ্চলে অনেকটা ফাঁকা জায়গা কিনেছে মার্কেটিং কমপ্লেক্স বানাবার নামে| আর সেখানেই বেশ কিছুদিন ধরে নানান অসামাজিক কার্য কলাপের খবর পাওয়া যাচ্ছে| আমাদের ইন্টেলিজেন্স ও চুপ করে নেই লোকাল থানাকে দিয়ে দু তিন বার রেট করানো হয়েছে বড় সর কিছু পাওয়া যায়নি|

আমি বললাম – এর সঙ্গে মিস সেনের কি সম্পর্ক|

গৌতম – দেখ রীতম মিস সেনকে খুব ভালোই চেনে, এমনকি বর্তমানে কোলকাতায় কোথায় উনি থাকেন তাও রীতম জেনে গেছে, ও চাইছে মিস সেনকে আবার জড়িয়ে ফেলতে, যেভাবে বোম্বেতে ওরা ওনাকে প্রায় কব্জা করে ফেলেছিল| আর সেটা বুঝেই উনি কাউকে কিছু না জানিয়ে সটান কোলকাতায়|

– তা না হয় হলো, কিন্তু তুই কি ভাবছিস আজ কিছু পাওয়া যাবে?

গৌতম বলল – জানি না তবে আশা করছি কিছু পান্ডা আজ আমাদের হাতে আসবে| কথা বলতে বলতেই আমরা নানান গলি-ঘুপচির মধ্যে দিয়ে পৌঁছে গেলাম অকুস্থলে| গাড়িতে বসেই দেখতে পাচ্ছিলাম এক বিশাল নির্মিয়মান মলের ধাঁচে শপিং কমপ্লেক্স| অনেকটা জায়গা নিয়ে এই কমপ্লেক্স, মিস্ত্রীরা সব নানান কাজে ব্যস্ত| শুনলাম এই কমপ্লেক্সের আন্ডার গ্রাউন্ডে দ্বিতল কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা| জ্যাংড়ায় আসার যে আরও রাস্তা ছিল তা আমার জানা ছিল না| আমরা তো জানতাম বাগুইআটির মোর থেকে পূর্ব দিক বরাবর গেলে শেষ বাস স্টপেজ জ্যাংড়া| যাক নতুন একটা রাস্তাও জানা গেল গৌতমের সৌজন্যে|

গৌতমের নির্দেশে বিশাল পুলিশ বাহিনী, এই কমপ্লেক্মের তিন দিক ঘিরে ফেলছে, ইচ্ছে করেই একটা দিক ফাঁকা রাখা হয়েছে মানে পেছনের দিকটা ওটাই একটা ফাঁদ, যারাই তিন দিকের পুলিশের তাড়া খেয়ে পেছন দিক দিয়ে পালাতে যাবে তাদের জন্যই একটা ঝোপের মধ্যে অপেক্ষা করছে বিধান নগর পুলিশের বিশাল এক রেজিমেন্ট| ওদের হাত থেকে পালানোর পথ নেই|

আর একটু সামনে এগোতেই দুর থেকে আবঝা মনে হলো সারিবদ্ধ বাইক পার্কিংয়ের মধ্যে গুড্ডুর বাইক| গৌতমকে সঙ্গে সঙ্গে ডেকে দেখালাম|

গৌতম বলল – আমি এই সন্দেহই করেছিলাম| যাই হোক আরও একটু সামনে গিয়ে আমরা মাইকিং করবো ভেতরে যারা আছে তাদের আত্ম সমর্পনের জন্য| মিস্ত্রীদেরও কাজ বন্ধ রেখে জায়গা খালি করতে বলা হয়ে গেছে| তুই কি ভেতরে আসবি?

আমি বললাম – আসবো না মানে| চল দেখি সেখানে কি অবস্থা|

গৌতম বলল – সাবধানে আসবি আমরা আমাদের লোক আস্তে আস্তে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছি|

আমি বললাম – আমাকে নিয়ে চিন্তা করিস না| তোরা তোদের কাজ কর, আমি এদিকটা দেখি|

গৌতম এক এস.আইকে মাইকিং শুরু করতে নির্দেশ দিল|

তারা ঘোষনা করতে থাকল – বাড়ির ভেতরা যারা আছো বেরিয়ে এসো, আমরা এই পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেছি, অবিলম্বে তোমরা আত্মসমর্পণ কর| পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হবে| গৌতমের নির্দেশে বাকি পুলিশ বাহিনী একদম কমপ্লেক্সের গায়ে এসে পৌঁছাল| ভেতরে যেন নিঃশব্দ বিরাজ করছে|

আমি পাশ কাটিয়ৈ মুল প্রবেশদ্বারের পাশের এক সিঁড়ি দিয়ে ওপরের দিকে ওঠার চেষ্টা করতেই দেখি, গুড্ডু আর ওর বন্ধুরা মিলে ওখানকার তিনজন সিকিউরিটির সাথে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পরেছে| গুড্ডুর চার জিমের বন্ধু আর ঐ সিকিউরিটির লোকেরা শরীরের দিক থেকে প্রায় সমানে সমানে| শুধুমাত্র সংখ্যায় গুড্ডুরা বেশী, তিন বনাম চার| এরই মাঝে ওদের একজন সিকিউরিটি গুড্ডুকে জাপটে ধরে রেখেছে আর গুড্ডুও আপ্রান চেষ্টা করছে ছাড়াতে| কোনরকমে ছাড়িয়ে বেধরক কিল চর ঘুসি চালাতে লাগল গুড্ডু| এমন সময় হঠাৎই আমার উপস্থিতিতে সেই সিকিউরিটি যেন প্রাণে বাঁচল|

গুড্ডু আমাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এসে বলল – কাকা তুমি এখানে কি করে|

– না এসে উপায় আছে, কতক্ষন হয়ে গেছে কোন কান্ডজ্ঞান আছে তোদের একবার ফোন করবি তো|

আমাকে দেখে সিকিউরিটির লোকেরা একটু আশ্বস্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো ওরা বেশ কাহিল| বেশ সুঠাম গড়নের নির্মেদ শরীরের লোকগুলো এভাবে কখনও মার খেয়েছে বলে মনে হয়না, একেক জন এমন ভাবে পরে আছে যেন সোজা হয়ে দাঁড়াতেই পারছেনা, কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা তাদের নিষ্ঠায় অবিচল| গুড্ডুদের কাউকেই তারা ওপরে যেতে দেবে না| এসব দেখে সিকিউরিটিদের জন্য যেমন কষ্ট হচ্ছিল, তেমনি গর্বও হচ্ছিলো গুড্ডু আর তার বন্ধুদের জন্য|

তবু আমি গুড্ডুকে বললাম – তোরা এই নিরীহ সিকিউরিটিদের পেটাতে গেলি কেন| ওদের বুঝিয়ে বললেই তো হতো|

গুড্ডু বলল – কাকা আমরা মারামারি করতে চাইনি, ওদের ভালোমতন বলেছিলাম যে আমরা একজনকে খুঁজতে এখানে এসেছি তাকে পেলেই চলে যাব| ওরা আমাদের ওপরে উঠতে না দিয়ে ধাক্কা ধাক্কি শুরু করে দিল| বলল কিছুতেই আমাদের যেতে দেবে না| ওদের ধাক্কায় পানু তো প্রায় সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছিল আমরা সবাই মিলে ধরে ফেললাম আর এটাই আমাদের তাতিয়ে দিল আর আমরা বাধ্য হয়েই বল প্রয়োগ শুরু করি|

আমি বললাম – ঠিক আছে আমি দেখছি, তোরা কি জানিস এখন এ কমপ্লেক্স পুলিশ ঘিরে রেখেছে| তোরা কি মাইকিং শুনিস নি|

গুড্ডু বলল – কই না তো| ও তার মানে লালবাজার আর তাদের সাথেই তুমি এসেছো|

আমি বললাম – একদম তাই, ভাবলাম কি জানি কোন বিপদে তোরা, এখানে তো একটা স্মাগলিং ট্রেনিং সেন্টার খোলার পরিকল্পনা চলছে|

বলতে বলতেই গৌতম হাজির ও গুড্ডু কে দেখেই

-কি ভাইপো কেমন আছো?

গুড্ডু বলল – আরে গৌতম কাকা তুমি, আমি ভালো আছি, তোমরা সব কেমন, সৌর্য, পলি ওরা সব ভালো আছে তো|

গৌতম – তোমার মনে আছে ওদের কথা, সেই কবে একবার কাকার সাথে গিয়েছিলে| এখন ওরা বেশ বড় হয়ে গেছে| পারলে কাকার সাথে আবার একদিন চলে এসো| তা তোমাদের কেস কতদুর? সলভড|

গুড্ডু – না গৌতম কাকা, তবে আমরা প্রায় পৌঁছে গেছি আমাদের লক্ষ্যে| আর এখন তো তুমি আর কাকা এসেই গেছ আর কি, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা|

এমন সময় এক এস.আই গৌতমকে এসে জানাল – স্যার আন্ডার গ্রাউন্ডে এক মস্ত ওয়ার্কশপ, পাইপ গান, শর্ট গান, দেশী রিভলবার, ছোড়া, ভোজালি তৈরি হচ্ছে, কি নেই স্যার| প্রায় জনা কুড়ি কর্মচারী ধরা পরেছে| আর আমাদের অতর্কিত হানায় চার পাঁচ জন পান্ডাকেও ধরা গেছে ওরা মুলত মাল সাপ্লাইয়ের কাজ করত| বাকিরা পেছনের গুপ্ত পথ দিয়ে পালিয়েছে|

গৌতম নির্দেশ দিল সারা এলাকা চিরুনি তল্লাশী করার, কারন আরও কিছু পান্ডারও খবর ছিল, তাদের যেমন করেই হোক অ্যারেস্ট করতে হবে | এস.আই চলে গেলেন|

গৌতম এবার আহত সিকিউরিটিদের ডাকল বলল – তোরা এখানে কত দিন হল কাজ করছিস?

ওরা জানাল মাস খানেক, গৌতম আর আমি দেখলাম ওদের এজেন্সির নামাঙ্কিত পোষাকেই আছে ওরা, যেখানে লেখা আছে এভার গ্রীন সিকিউরিটি, মানে ঐ সিকিউরিটি এজেন্সিরই লোক এরা|

আমি বললাম – তোমরা এনাদের আটকাচ্ছিলে কেন?

সিকিউরিটি-(প্রথমজন) – স্যার এর ভেতরে কোম্পানীর অনুমতি ছাড়া কাউকেই ঢুকতে দেওয়ার নিয়ম নেই|

গৌতম – আচ্ছা আমি যদি ভেতরে যাই তোরা আমাকে আটকাবি|

সিকিউরিটি-(দ্বিতীয়) – না স্যার, আপনাকে কেমন করে আটকাব স্যার|

গৌতম – কেন আমাকে যেতে দিবি আর (গুড্ডুদের দিকে দেখিয়ে) ওদের যেতে দিবিনা

সিকিউরিটি –(তৃতীয়) – স্যার, আমাদের কোম্পানী মাইনে দেয় শুধুমাত্র বাইরের লোক আটকানোর জন্য স্যার| ওনাদের ছেড়ে দিলে আমাদের চাকরি কি আর থাকবে স্যার|

আমি বললাম – ঠিক আছে তোমাদের কিচ্ছু হবে না, তোমাদের এজেন্সিকে শুধু বলবে লালবাজারের অফিসারেরা এসেছিলেন |

গৌতম বলল – বেশি কিছু বললে তোদের কোম্পানীকেই হাজতে ঢুকিয়ে দেব | এই গুড্ডু যা তোদের বন্ধুদের নিয়ে ওপরের ঘর গুলো দেখে আয়| আমি এখানেই আছি|

গুড্ডু আর তার চার বন্ধু লাফিয়ে লাফিযে ওপরের দিকে উঠে গেল|

আমি বললাম – গৌতম আমি ও যাই ওদের সাথে|

গৌতম বলল – আরে না না এখানেই দাঁড়া না | ভয়ের কিছুই নেই, সেরকম হলে আমি কি ওদের ওপরে পাঠাতাম|

এমন সময় কমপ্লেক্সের সামনের মাঠে একটা গাড়ি পার্ক করতে দেখলাম| তারপর দেখি ছোট্টু সিং গাড়ি পার্ক করে নেমে এসে পেছনের গেট খুলে দাঁড়াল| সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে দেখলাম অঞ্জু কে| আমি ধন্দে পরে গেলাম অঞ্জু কেন এখানে তবে কি সত্যিই ও এই স্মাগলিং দলটার সাথে জড়িয়ে আছে| আহলে তো ওর আজ মস্ত বিপদ এখানে স্বয়ং লালবাজারের ক্রাইম বিভাগের অফিসার|

অঞ্জুর সাথে যাতে চোখাচুখি না হয় তাই নিজেকে একটু আড়ালে নিলাম| কারণ আমার মনে হয় অঞ্জু আমাকে দেখলে লজ্জিত হবে নিজের অপরাধ বোধের জন্য| আমি দেখছি পা পা করে গৌতম যেন অঞ্জুর দিকেই এগোচ্ছে, আর অঞ্জু ও ক্রমশ সামনের দিকে এগিয়ে আসছে| আমার মনে হচ্ছিল চেঁচিয়ে বলি অঞ্জু পালা এখানে বিপদ আছে| কিন্তু হঠাৎই দেখলাম ওরা একদম সামনা সামনি প্রায় মুখোমুখি|

গৌতম – মিস সেন, কনগ্রাচুলেশন, আপনার খবরের ভিত্তিতে আজ হাতে নাতে বেশ কিছু ক্রিমিনাল ধরা পরেছে| কিন্তু……..

অঞ্জনা – কিন্তু কি মিঃ ব্যানার্জী|

গৌতম – আসল কালপিট আবারও পালিয়েছে|

অঞ্জনা – ওঃ শিট!

আমি আড়াল থেকে সব শুনে বুঝলাম অঞ্জু আর যাই হোক সাকিরা-র গ্যাংয়ে নেই| একটু আশ্বস্ত হয়ে এগোলাম ওদের দিকে|

অঞ্জু – একি দাদা তুমি এখানে, জুনিয়ার কই|

গৌতম – ঐযে ওরা তোমাদের নিখোঁজ বর কে নিয়ে আসছে|

সর্ব্বেন্দু – একি অঞ্জনা দেবী আপনি এখানে?

অঞ্জু – সেসব পরে বলছি, আগে বলুন আপনি বাসর ত্যাগ করলেন কেন? আমাকে বে-কায়দায় ফেলে বিয়ে থেকে পালিয়ে গেলেন|

সর্ব্বেন্দু – আপনাকে বে-কায়দায় মানে –

অঞ্জু – আপনার নিখোঁজের ব্যাপারে এনারা আমাকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন| এনারা একজন আমার পূর্ব পরিচিত ভীষণ প্রিয় এক দাদা, সখের গোয়েন্দা, আর তার এসিসটেন্ট ভাইপো আমাকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে| কি দাদা তাই তো?

আমি বললাম – ঠিক তা নয়, তবে অঞ্জু তুই জড়িয়ে পরেছিলিস এই নিখোঁজের কেসে| কি করি বল তোর গাড়ি তোর ড্রাইভার আর সর্ব্বপরি তোর অতি সম্প্রতি সর্ব্বেন্দু বাবুর সাথে ঘনিষ্ঠতা|

অঞ্জু – হ্যাঁ দাদা একদম তাই তুমি কেন যে কেউ আমাকেই সন্দেহ করবে, আর আমি বা কি করি আমার এই উপকারী বন্ধুটি গাড়িটা চেয়েছিলেন আমি কি না করতে পারি| যাক এবার উনি তোমার সামনে তুমিই জেনে নাও তার পলায়ণ রহস্য||

আমি বললাম – নমস্কার সর্ব্বেন্দু বাবু আমার পরিচয়টা আগে দিয়ে রাখি, আমি সখের গোয়েন্দা সাথে ঐযে আমার ভাইপো গুড্ডু আর তার চার বন্ধু| আপনার পলায়ন রহস্য সমাধানে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব নিয়েছি, আর আপনাদের বাড়ির সকলকে আশ্বস্ত করে এসেছি যে আপনাকে নিয়েই ফিরবো| তা এবার আপনি বলুনতো আপনি এই বিপদজনক এলাকায় কি করে এলেন?

সর্ব্বেন্দু বাবু বললেন – দাদা একটা ছোট্ট জায়গায় নিজেকে বন্দী করে এক ঘেয়ে লাগছিল, তাই শুনলাম এখানে একটা খুব বড় মাল্টিপ্লেক্স তৈরী হচ্ছে যাই গিয়ে একটু দেখে আসি|

আমি বললাম – তা আপনাকে কেউ সাবধান করে নি| মানে আপনি মিস সেন কে জানিয়েছিলেন|

সর্ব্বেন্দু বাবু – না না ছিঃ ওনাকে সব সময় কেন বিরক্ত করব|

গৌতম বলল – ও তা বিয়েবাড়ি থেকে পালাবার সময় ওনাকে ফোন করাটা বিরক্ত করা হয়নি|

মিস সেন – মিঃ ব্যানার্জী শুধু কি বিরক্ত আমার ভীষণ প্রিয় এই দাদার চোখে আমাকে প্রায় দোষী সাব্যস্ত করে ফেলেছিলেন|

গৌতম – আচ্ছা সে সব না হয় হলো কিন্তু সর্ব্বেন্দু বাবু আপনাকে এখানে বন্দী করল কে আর কেন|

সর্ব্বেন্দু বাবু – স্যার কি বলব, আমি এই নতুন কমপ্লেক্সটা খুব ভালভাবে নিরীক্ষন করছিলাম| ভাবছিলাম এত বিশাল ইনভেস্টমেন্ট কে বা কারা করল| এমন একটা গ্রাম্য জায়গায় এই বিশাল একটা মাল্টিপ্লেক্স| সেরকম কমিউনিকেশন গড়ে ওঠেনি| এই সব ভাবতে ভাবতে আন্ডারগ্রাউন্ডে কার পার্কিং জোনটা দেখছিলাম| হঠাৎই কিছু যন্ত্রের শব্দ পাচ্ছিলাম|

আমি বললাম – তারপর আপনি সেখানে ঢুকে গেলেন, আচ্ছা এত কম বুদ্ধির লোক তো আপনি নন|

সর্ব্বেন্দু – না মানে কৌতুহলবশঃত উঁকি মেরে দেখতে গেলাম ভেতরে কি হচ্ছে| ব্যাস দুজন ষন্ডা মার্কা লোক আমাকে পাঁজাকোলা করে তুলে ওপরের ঐ ঘরটায় হাত পা চেয়ারে বেঁধে মুখে কাপড় বেঁধে বলে গেল, বস আসুক তারপর তোর টিকটিকি গিরি বার করছি| স্যার আমি অনেক করে বোঝাতে চেয়েছিলাম যে আমি পুলিশের লোক নই| কিন্তু শোনে কে কথা|

গৌতম বলল – তা মিঃ চ্যাটার্জী আপনি ভেতরে কি দেখছিলেন|

সর্ব্বেন্দু – স্যার একটা কমপ্লিট ফ্যাক্টরি, কি নেই স্যার – গ্রাইন্ডিং, ওয়েল্ডিং, গ্যাস কাটিং, লেদ মেসিন, একটু দুরে প্লেট বেন্ডিং মেসিন, একটা মোটা কাঠের লম্বা টেবিলে দু-তিনটে বলপ্রেস মেসিন|

আমি বললাম – মানে একটা সাজানো গোছানো কারখানা| তা সেই কারখানা দেখার জন্যে ওনাকে হাত-পা-মুখ বেঁধে ফেলে রাখার কি মানে হয় গৌতম|

গৌতম – আসলে বুঝছিস না এটা হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির গোপন একটা কারখানা| এটার খবর মিস. সেন আমাকে আগেই দিয়েছিলেন| আমি আর মিস সেন বলতে পারিস সর্ব্বেন্দু বাবুকে টোপ করেই ওদের হাতে নাতে ধরতে চেয়েছিলাম|

আমি বললাম – মানে ?

মিস সেন – দাদা সর্ব্বেন্দু বাবু সব যে ঠিকঠাক বলছেন তা নয়| উনি পুলিশ, লালবাজার শুনে ঘাবরে গেছেন| আমি রীতমের আস্থাভাজন হওয়ায় বেশ কিছু খবর আগেই জেনে যাই| ঘটনাক্রমে মিঃ ব্যানার্জীর সাথে যোগাযোগ আমার অনেক আগে থেকেই| যখন আমি বোম্বেতে বিপথগামি উনি তখন ওথানে সাকিরা এন্ড গ্রুপের তদন্তে গিয়েছিলেন| উনিই আমার এই ট্রান্সফারের দ্রুত ব্যবস্থা করান| আমি ওনার কাছে কৃতজ্ঞ আমাকে ঐ রাস্তা থেকে সরিয়ে আনার জন্য| সাকিরার প্রলোভনে না থেকে আমি তাদের জানাই আমার বদলিজনিত কারনে আর তাদের সঙ্গে থাকতে পরবো না|

গুড্ডু বলে – ম্যাডাম আপনিতো সাংঘাতিক ঝুঁকি নিয়ে এখানে চলে এসেছেন| আপনি জানেনতো ঐসব গ্যাংয়ের লোক সারা দেশে ছড়ানো|

অঞ্জু – তা জানি আর তাই এখনো আমাকে রীতমের সাথে নাটক করে যেতে হয়| তবে আমি এবার ভেবেছিলাম ও বোধহয় ধরা পরবে| আমরা যেরকম ঘুঁটি সাজিয়েছিলাম|

আমি বললাম – অঞ্জু গৌতম তোরা এমন একটা অতি সাধারন মানুষকে তোদের ঘুঁটি করলি কি করে|

সর্ব্বেন্দু – হ্যাঁ স্যার আমি এত কিছুই জানি না| মিস সেনের সাথে আলাপ হওযার পর দেখলাম উনি রাতারাতি কি সুন্দর নিজেকে বদলে ফেলেছেন|

আমি বললাম – আর অমনি সুমিতা দেবী কে ভুলে আপনি মিস সেনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পরলেন আর তাঁকে পেতে চেয়ে বাসর ঘর থেকে পালালেন|

বিরাট বড় জিভ বার করে সর্ব্বেন্দু বললেন – না না স্যার, আমি ওনাকে যথাযথ সম্মান দিয়ে নিঃস্বার্থ ভাবে ওনার সাথে বন্ধুত্ব করেছি|

গৌতম বলল – একদমই তাই ওরা দুজন দুজনার খুব ভাল বন্ধু| আমি মিস সেনকে এখানে নিয়ে আসার কারণ ছিল আমার মনে হয়েছে উনি ওখানে থাকলে ঐ চক্র থেকে কিছুতেই বেরোতে পারবেন না| আসলে ওনার বাবা মিঃ সেন ছিলেন আমাদের গৌরব| তাঁর চরিত্রে কেউ কখনও দাগ লাগাতে পারেনি| যা পুলিশ কূলে খুবই দুর্লভ| তাই এই দুর্লভ ব্যাক্তির একমাত্র সন্তান কে আমি ঐ অন্ধ গলি থেকে বেরিয়ে আসতে কিছুটা সাহায্য করেছি মাত্র | তবে আমরা চব্বিশ ঘন্টা ওনার ওপর নজর ও রাখতে বলেছি স্থানীয় থানাকে|

সর্ব্বেন্দু – যেটা বলছিলাম স্যার, মিস সেন আমাকে বললেন আপনি যখন ওখানে আছেন তাহলে একটা কাজ করবেন আমার জন্য, আমি বললাম হ্যাঁ বলুন এত ইতস্তত করার কি আছে|

এরপরের টা অঞ্জু বলল – দাদা আমি মিঃ ব্যানার্জীর সাথে কথা বলে ওনাকে তখন এই নির্মিয়মান মাল্টিপ্লেক্সের ঠিকানা দিয়ে গোপনে খোদ্দের সেজে কিছু আগ্নেয়াস্ত্রের দাম দস্তুর করতে বলি| আর যতদুর সম্ভব গোপনে ওদেরকে জানাতে বলি যে যদি ওনাদের দাম দস্তুর ঠিকঠাক হয় তবে একটা বড় ড্রিল আমরা করব|

আমি বললাম – গৌতম তোরা তো সাংঘাতিরক একটা ঝুঁকি নিয়েছিলিস এমন এক সিভিলিয়ানকে নিয়ে|

গৌতম – তা একটু নিয়েছিলাম তবে আমাদের লোক সর্ব্বদা ওনার সামনে পেছনে ছিল| শুধুমাত্র এই ভদ্রলোকের এরকম একটা নিপাট ভালোমানুষ সুলভ চেহারাকে কাজে লাগিয়ে ধরতে চেয়েছিলাম আসল পান্ডাকে| কারণ আমরা জানতাম ওদের লোকেরা ওনাকে ধরে ওদের বস রীতম ওরফে রাজুর কাছে হাজির করবে আর আমরা সেই সুযোগে ওদের গ্যাংটাকে ধরে ফেলবো|

গুড্ডু – যারা ধরা পরেছে তাদের মধ্যে কেউ রীতম নয় তো?

আমি বললাম – রীতম তো সাংঘাতিক ও নিশ্চয় জেনে ফেলেছে অঞ্জুর ক্রিয়া কলাপ, তবে তো ওর বিপদ|

গৌতম – ভাবিস না, রীতম আজই ধরা পরবে|

গুড্ডু – গৌতম কাকা তুমি এতটা নিশ্চিত হচ্ছো কি করে?

গৌতম – ভাইপো আমরা তো এই কাজই করি চারিদিক বেঁধে তবে অপারেশনে নামি| তুমি ঘন্টা খানেকের মধ্যেই খবর পাবে যে রীতম অ্যারেস্টেড|

আমি বললাম – আমরা সকলেই সেটা চাই আর এই অস্ত্রাগারের কি হবে রে?

গৌতম – চিন্তা করিস না ওটা আপাতত সিল করা থাকবে তারপর কোর্টের নির্দেশে ব্যবস্থা নেওয়া হবে| যাই হোক তোরা এবার এদিকটা দেখ সর্ব্বেন্দু বাবু যখন অক্ষত অবস্থায় সুস্থ শরীরে আমাদের সামনে, তখন বাকি কাজ শ্রীমান সখের গোয়ান্দা আপনার|

মিস সেন – তো নাউ ইটস ওভার টু দাদা|

গুড্ডু – হ্যাঁ কাকা এবার আমরা কি করব|

আমি বললাম – তোর বন্ধুদের ডাক সবার জন্য একটু চা-বিস্কুটের ব্যবস্থা কর তার পর দেখছি|

মিস সেন – দাদা কিছু যদি মনে না করো এটা কিন্তু আমার খরচ|

আমি কিছু বলার আগেই অঞ্জু ব্যাগ থেকে টাকা বার করে জুনিয়ার কে ডেকে ধরিয়ে দিল| অল্প সময়ের মধ্যেই জুনিয়ার আর তার বন্ধুরা চা-সিঙারা নিয়ে হাজির|

আমি বললাম – আবার সিঙারা কেন?

অঞ্জু বলল – থাক না ওদের ভালো লেগেছে এনেছে নাও এবার সর্ব্বেন্দু বাবুর পর্বটা চোকাও|

আমি বললাম – হ্যাঁ ঠিকই |

১0

এবার সর্ব্বেন্দু বাবুকে তাঁর এবং সুমিতা দেবীর দুই পরিবারের পরিস্থিতির কথা জানিয়ে এই অজ্ঞাতবাসের কারণ জীজ্ঞাসা করলাম| আমি যতটুকু জেনেছি তাতে নেহাতই সখের গোয়েন্দাগিরি করতে এখানে আসা, টাকা-পয়সা রোজগারই উদ্দেশ্য হলে সবুকে নিয়ে আমি সোজা ভূবন বাবুর বাড়ি হাজির করতাম| যাইহোক আপাততঃ উপস্থিত সকলের এবং আমার সুশ্রী পাঠকমন্ডলীর সামনে সবুকে নিজের মুখে সব কিছু বলার জন্য অনুরোধ করছি| তারপর দেখি কি করা যায়|

অঞ্জু – ও দ্যাট মিনস নাউ ওভার টু সর্ব্বেন্দু চ্যাটার্জী

সর্ব্বেন্দু বেশ বক্তিতা মঞ্চে নেতাদের মতন শুরু করল

– নমস্কার! হ্যাঁ আমিই শ্রীমান সর্ব্বেন্দু চ্যাটার্জ্জী আমার গোপন আস্তানা থেকে, এই সখের গোয়েন্দার অনুরোধে আপনাদের উদ্দেশ্যে নিরুদ্দেশের দিনের ঘটনার কথা বলছি | হ্যাঁ মানে আমার বিয়ের দিনের কথা| আমি জানি আপনারাও সুমিতা দেবীর মতই আমাকে ভীরু কাপুরুষ, আন-সোস্যাল ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করে ফেলেছেন| আপত্তি করবনা তবে আগে আমার সেদিনকার অভিজ্ঞতার কথা শুনুন তারপর না হয় আরও কিছু বিশেষণে আমাকে সম্বোধিত করবেন|

দিনটা ছিল শুক্রবার, ভালোর মধ্যে ভালো ছিল মা, বাবা, গুরুজনদের আশীর্বাদ নিয়ে টোপর মাথায় চাপিয়ে, ধূতির কোচা পাঞ্জাবীর পকেটে ঢুকিয়ে বর বর সেজে বিয়ে করতে যাওয়া| বেশ একটা আমেজ| গলায় দুলছে মোটা গোড়ের রজনীগন্ধার মালা, কপালটা চন্দনের টানে চর চর করছে, পারফিউমের গন্ধ ম-ম-ম করছে| এই অবস্থায় মেয়ের বাড়ি থেকে পাঠানো কনটেসা গাড়িতে আমি কোনঠাসা| যেন স্বপ্নলোকে ভেসে ভেসে চলেছি| টান টান উত্তেজনা শরীরের প্রতিটা শিরা-উপশিরার মধ্যে দিয়ে অনর্গল প্রবাহিত হচ্ছে|

 যে উত্তেজনা আমাকে আমার মধ্যেই হারিয়ে দিচ্ছে| কে আমি? কোথায় আমি? কেন আমি? কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না|

সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যেন গাড়িটা আস্তে আস্তে থেমে গেল, সানাইয়ের সুরে আমি সম্বিত ফিরে পেলাম| কারা যেন বলাবলি করছিল বর এসেছে বর এসেছে| গাড়ীর জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, আমাদের গাড়ি এক নহবত গেটের নীচে| হঠাৎ দেখি পিঁপড়ের সারির মতন দলে দলে ছোট বড় মানুষ এসে আমাদের গাড়িটাকে ঘিরে ফেললো| এদের মধ্যে মহিলা আর ছোটদের সংখ্যাই বেশী| অস্বস্তি কাটাতে চোখদুটো যখন এই দঙ্গল ছেড়ে গাড়ির জানলা দিয়ে ওপরের দিকে আকাশ দেখতে চাইল, তখন দেখি রাস্তার দু-ধারের বাড়ির ছাদ ভর্তী লোক গাড়ির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে আছে| মনে হচ্ছিল বোধহয় মহামান্য কোন জনদরদী নেতা এখুনি এ গাড়ি থেকে নেমে জনগনের উদ্দেশ্যে তাদের সুখ-সাচ্ছন্দের জন্য কিছু ঘোষনা করবেন| আবার পর মুহূর্তেই রাগে গা গিন-গিন করছিল| ভাবছিলাম এ কেমনতর আদেখলার দল – জন্মে তোরা বর দেখিস নি নাকি? যাই হোক এরই মধ্যে ভীর ঠেলে কোনক্রমে সুমিতার মা কয়েক জন সধবা মহিলার সহচর্যে বরণ জাতিয় কারিক্রমটা সেরে ফেললেন|

আমাকে গাড়ি থেকে নামানো হল| মনে হচ্ছিল বলির পাঁঠাকে টেনে গাড়ি থেকে বার করে আনা হল বদ্ধভুমিতে| চারিদেকে ধাক্কা-ধাক্কিতে আমার কোঁচাটা গেল হারিয়ে, পরে বন্ধু সায়নের চেষ্টায় তাকে কোনরকমে পকেটস্থ করলাম| এরপর একজন তে-ঢ্যাঙা মতন মানুষ, পরে শুনেছিলাম উনি সুমিতার পিশেমশাই, এক্ম মিলিাটরী অফিসার, ছ-ফুটের ওপর লম্বা, মানানসই চওড়া, আমাকে একেবারে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে চললেন| ভাবুন আমার কি করুন অবস্থা, পাংশুটে মুখ, বিদ্ধস্ত ধূতী-পাঞ্জাবী, গলদ ঘর্ম চেহারায় যেন আমি নেই আমাতে| আমার নিজেকে ইঁদুর ছানার মতন মনে হচ্ছিল, যাকে ছোঁ মেরে নিয়ে চলেছে এক বাজ পাখী|

এই অবস্থায় সহচর্যের বদলে উপস্থিত জনগনের সেকি হাসির বহর| বিশ্বাস করুন ওদের দিকে তাকিয়ে আমার হাত-পা কেমন অসার হয়ে যাচ্ছিল লজ্জায়| সবার উদ্দেশ্যে বলতে ইচ্ছা করছিল – শুনুন হাসবেন না আমি স্বেচ্ছায় কোলে উঠিনি, আমারও দুটো সচল পা আছে আমি হাঁটতে পারি| কিন্তু বৃথা চেষ্টা, ভদ্রলোক এমনভাবে আমায় জাপটে ধরেছিলেন যে কথা বলার মতন পরিস্থিতি আমার ছিল না|

অতঃপর ভদ্রলোক আমাকে সুমিতাদের সুসজ্জিত বৈঠকখানায়, বর আর বরযাত্রীর জন্য নির্দিষ্ট ধব-ধবে সাদা চাদরে মোরা মেঝেতে পাতা মোটা গদিতে এনে ফেললেন| অনেকটা আমার দেখা রেশন দোকানে চিনির বস্তা যেভাবে মুটেরা পিঠে করে লরী থেকে দোকানে এনে ফেলে সেরকম| আমিও চিনির বস্তার মতনই দু-পাশে রাখা লাল ভেলভেটের আস্তারনের তাকিয়ায দু-হাত রেখে পেছনে একটা বালিশে হেলান দিয়ে খানকক্ষণ পরে রইলাম| প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আমার সহযাত্রীরাও এসে বসল আমারই চারপাশে| কেউ কেউ গিয়ে কৌতুহল বশতঃ উঁকি মারছিল কনের ঘরে, যেখানে সুমিতা দেবীকে বসানো হয়েছিল|

চুপ-চাপ বসে নিজেরা আড্ডা মারছি, বাইরে থেকে উঁকি মারছেন অনেকেই বর দেখার জন্য| এমন সময় হঠাৎই এক বৃদ্ধা ঘরে ঢুকে সোজা আমার কোলে এসে ধপ করে বসে পরলেন| নিজের মনে মনেই বললাম চোখে দেখতে পায় না, অন্ধ না কি? ধরে তুলে দিতে চেষ্টা করলাম কিন্তু উনিতো ওঠার জন্য বসেন নি, সেটা পরে বুঝলাম| আমার থুতনি ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললেন –

দেখ তো বর এ বউ তোর পছন্দ কি-না?

নিজের অজান্তেই একটু হাসি হাসি মুখে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালাম| ব্যাস আর পায় কে, বৃদ্ধা দু-হাতে গলা জড়িয়ে এগালে ওগালে চুমু খেতে লাগল| এই দেখতে জমা হওয়া একদল মেয়ে সে কি হো হো করে হাসি| বৃদ্ধা গোড়ের মালার মতন আমার গলায় ঝুলছেন আর বলছেন –

ওরে শুনে যা লো আমাদের বরের এই বউ পছন্দ হয়েছে|

ঘর ভর্ত্তি লোকেরা ফেটে পড়ছে হাসিতে| ওরা যত হাসছ আমিও যেন ততই বোকা হয়ে যাচ্ছি| বুঝুন আমার অবস্থাটা| এক একবার মনে হচ্ছে বুড়িটাকে ধাক্কা মেরে নামিয়ে দিই| যাক তার আর দরকার হয়নি বাইরে থেকে এক ভদ্রমহিলা – ঠানদি ঠানদি বলে ডাকতেই উনি সোজা আসছি আসছি বলে ভেতরে চলে গেলেন| কপালটা আর চরচর করছেনা কারণ প্রথমে পিশেমশাই পরে ঠানদির অত্যাচারে চল্দন নামক বস্তুটি কপাল থেকে উধাও হয়েছে|

এসবই গেল প্রাক বিবাহ বন্ধন কর্মসূচী| তারপর অগ্নিদেবতাকে সাক্ষী মেনে ঘন্টা আড়াই তিনের এক এপিসোড, ইয়া তাবড়া তাবড়া সংস্কৃত উচ্চারণ, হোম যজ্ঞ, ক্যামেরার ফ্লাশের ঝলকানি, আরো কত কিছু নাটকীয় ঘটনা, টীকা টিপ্পনী দিয়ে সাজানো| ইতিমধ্যে গাঁটছড়া বেঁধে দিয়েছেন পুরোহিত মশাই সম্পন্ন করিয়েছেন সিঁদুর দান অনুষ্ঠান, আর সাথে সাথেই সমাপ্তী ঘটল একটি পর্বের|

নৈশ ভোজের পর, আমাদের দু-জনকে স-পারিষদ নিয়ে যাওয়া হল অন্দর মহলের এক সুসজ্জিত ঘরে| রমনী বেষ্টিত এই ঘরটাই বাসর ঘর| বেশ কিছু বাসরঘর কাটানোর অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ আমি, জানতাম নানান কিছু অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে রাতটা কাটাতে হবে| মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছি, নিজেরা বন্ধুদের মধ্যে নানান রকম গল্প করতে করতে ঘরের আবহাওয়াটা মেপে নেবার চেষ্টা করছি| দেখলাম এক এক করে জনা পঁচিশেক মহিলা, বয়স্ক, মাঝ বয়স্ক, দু-এক পিস অপ্রাপ্ত বয়স্ক আর সুমিতার বন্ধু স্থানীয়রা এসে বাসরের এই ঘরকে কানায় কানায় পূর্ণ করল|

আর আমরা হলাম পুরুষে পৌরুষে আমাকে নিয়ে পাঁচজন| অর্থাৎ ঘরের পুরুষ মহিলার রেসিও টা হল ফাইভ ইসটু ওয়ান| বুঝতেই পারছেন আমাদের অবস্থাটা| আমরা বীর পুঙ্গমেরা যেন পঞ্চপান্ডব| যদি মহিলা মহল এক্ষুনি হুঙ্কার ছাড়ে – আসো বাছারা মাঠে নামো, আমাদের লুকোবারও কোন জায়গা নেই আর ওয়াক-ওভার দেওয়া ছাড়া কোন উপায়ও নেই|

বহু বাসরঘরের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ আমি আজ নিজে বর হয়ে কেমন যেন ঘাবরে গেছি| এই বিশাল নারী বাহিনী দেখে মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল এঁরা প্রত্যেকে এক একজন ফুলন দেবী|

গলা শুকিয়ে আসছে, বন্ধুদের সাথে কথা বলতে গিয়ে বেশ বুঝতে পারছি প্রতি মুহুর্তে স্বর পরিবর্তিত হচ্ছে| যাইহোক প্রথমেই এক সুমিষ্ট নারী কন্ঠ আমাদের স্বাগত জানাল| আমি ধিক্কারদিলাম আমার বিশ্রী সব কল্পনাগুলোকে| নিজেকে গুছিয়ে চাঙ্গা হয়ে বসলাম| এমনসময় এই হলঘরের দেওয়ালে ঝুলন্ত ঘড়ি, পেন্ডুলামের দোলায় বারো টি ঘন্টা বাজিয়ে জানান দিল এখন রাত বারোটা|

ঘরের কোনা থেকে এক ভদ্রমহিলা চেঁচিয়ে বললেন

– এই বারোটা বেজে গেল রে

আমার এক বন্ধু রসিকতায় খানিকটা আপারহ্যান্ড নেবার জন্য প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল – কার?

ফোঁস করে উঠল অপর একটি মেয়ে বলল – কেন দেখতে পাচ্ছেন না আপনাদের বন্ধুটির, বলেই আমার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করল|

আমি একটু গম্ভীর গলায় বললাম শুধুকি আমার?

এবার তৃতীয় মেয়েটি বেশ বিশ্রী ভাবে বলে উঠলো

-আপনি একঘর লোকের সামনে নির্লজ্জের মতন বউয়ের আঁচল ধরে বসে আছেন, তা আপনার বারোটা বাজবে না তো বাজবে কার|

উত্তর তৎক্ষনাত মুখে এসে গিয়েছিল কিন্তু মেয়েটার কথা বলার ভঙ্গি আর ঘর ভর্তী লোকের ব্যঙ্গার্থক হাসি আমার মনের সব রস এক মুহুর্তে উড়িয়ে নিয়ে গেল| বিশ্বাস করুন ওদের কয়েকজনের আচার আচরণ আমার কাছে ভীষণ খারাপ লাগছিল| সারা সন্ধ্যা বা বলতে পারেন সারা দিনের নানান বৈবাহিক ক্রিয়া-কলাপের ধকলের পর এই বাসর ঘরের বিভিন্ন উক্তি-বক্রোক্তি শুনতে শুনতে আমি কেমন যেন অসুস্থ হয়ে পরেছিলাম| আর আমার মানসিক অবস্থার সুযোগে আরও বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলল স্লেজিং|

এর সাথেই চলছে বিশ্রী সব গানের কলি নিয়ে ছেলে খেলা| এসবই হচ্ছে আমাদের কেন্দ্র করে| আমি নির্লিপ্তই ছিলাম হঠাৎ কখন যেন ওদের ব্যবহারে আমি রূঢ হয়ে পরলাম|

ঘরের আবহাওয়া ক্রমেই যেন ভারী হয়ে উঠল| বাসর জাগার আনন্দটা যখন প্রায় মাটি হতে চলেছে তখন সুমিতার এক আত্মীয়া ঘরের পরিবেশটা হালকা করতে আমার পাশে এসে বসে বললেন –

এই যে বাবা হাঁড়ি মুখো বর দিলে তো বাসর ঘরের আনন্দটা মাটি করে|

জানিনা ঐ সময় আমার মুখ সত্যিই হাঁড়ির মতন ছিল কি না, তবে হলেও আশ্চর্য হতাম না কারণ ওটাই স্বাভাবিক ছিল| ওদের বিশ্রী কথা-বার্তাগুলো আমার শরীরকে একদম অবশ করে দিচ্ছিল, কানে তখন কোন কথাই ঢুকছিল না| আমি যেন সম্বিত হারিয়ে মহাশুন্যে ভাসছি, একা একা একদম একা চারিদিক কী ভীষণ অন্ধকার| লোকের মুখে শুনতাম চোখে সড়ষের ফুল দেখার কথা আজ নিজেই যেন উপলব্ধি করছি, আর কানে যেন সহস্র ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক| একবার আমার এই অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করুন, টের পাবেন|

‘সবু –সবু- এই সবু’ বন্ধুদের ডাকে যেন সম্বিত ফিরে পেলাম| আড়ষ্ট ভাবে জড়ানো গলায় বললাম – একটু জলের ব্যবস্থা কর আমার শরীরটা কেমন করছে|

সারা শরীর দিয়ে দর দর করে ঘাম গড়াচ্ছে| ‘আমার শরীর কেমন করছে’ – এই কথাটা যেন বাসরে প্রাণের সঞ্চার করল|

কিছুক্ষণ চুপ চাপ থাকার পর আবার শুরু হ’ল টিকা-টিপ্পনী| কি কুক্ষনেই না বিয়ে করতে আসা| মনে মনে ভাবছি রেজিস্ট্রী ম্যারেজ এর চেয়ে ঢের ভাল|

আর শুধুই বা মেয়েদের দোষ দিই কি করে, আমারই তিন বন্ধু সুমিতার এক মাসতুতো বোনকে নিয়ে এতই ব্যস্ত যে কে কার আগে প্রস্তাবটা পারবে তারই এক অলিখিত প্রতিযোগিতা চলছে| যে কোন মূহুর্তে হাড্ডা হাড্ডি একটা লড়াই বেধে যেতে পারে তিনজনের মধ্যে| আর এই মজাটাই লুটছে আমার মাসতুতো শালি আরো সমবয়সী কয়েকজন মিলে| আমার ঐ শালিটি ছিপছিপে শরীর, গায়ের রং মাঝারী, মুখ চোখ নাক যেন শিল্পীর সৃষ্টি| আর ওর চনমনে ভাব দেখলেই মনে হবে বিচ্চু নাম্বার ওয়ান| আমার ঐ তিন বন্ধুর কাছে বাসর ঘরে থাকার চেয়ে প্রস্তাব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাটাই বড় কথা| আহাম্মুকের দল|

হ্যাঁ যে কথায় ছিলাম, আমার শরীর খারাপ আর ঘর ভর্তি লোক সেটা নিয়ে তামাশা করছে| মনে হয় বলি – তোমাদের কি কখনও শরীর খারাপ হয়না? না-কি বোঝ না শরীর খারাপ হলে মানুষের কি অবস্থা হয়|

এরই মধ্যে একটি মেয়ে হয়তো বা আমার ব্যাথাটা অনুভব করেছিল সে দৌড়ে গিয়ে এক গ্লাস জল এনে দিল| সেই মূহুর্তে মনে হচ্ছিল আমার অতি প্রিয় কোন জিনিষ উপহার স্বরুপ ওর হাতে তুলে ওকে কৃতজ্ঞতা জানাই | হাতের কাছে কিছু না পেয়ে ভগবানের কাছে ওর চির মঙ্গল কামনা করে জলের গ্লাস হাতে নিয়ে ধন্যবাদ জানালাম| মেয়েটি সলজ্জ দৃষ্টিতে একটু তফাতে গিয়ে বসল|

আমি মহা তৃপ্তিসহ ঢকঢক করে সেই জল গলদগরন করছি হঠাৎই আমার মনে হল আমি সমুদ্র পান করছি| প্রায় অর্ধেক গ্লাস শেষে উপলব্ধি করলাম প্রচুর পরিমানে লবন মিশিয়ে মেয়েটি আমায় জল পরিবেষণ করেছে| রাগে মনে হচ্ছিল বাকি জল শুদ্ধ গ্লাসটা মেয়েটাকে ছুঁড়ে মারি|

 কিন্তু তার আগেই ঐ লবনমিশ্রিত জল পেটে যাওয়ায় প্রচন্ড বমি বমির বেগ আসতে লাগল| কিন্তু আমার অবস্থাটা প্রকাশ্যে আনা যাবে না তাহলে ওদের মজা আরও দ্বিগুন বেড়ে যাবে| তাই অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করেও বসে আছি| আর আমার এই করুন পরিস্থিতিতেও ঐ বাসরের উপস্থিত মহিলা মন্ডলীর কোন হেল-দোল দেখতে পেলাম না, ওরা জানে এটা আর এমন কি, এমন তো হয়েই থাকে| তাই তারা ঐ জল পরিবেষনকারি মেয়েটিকে নিয়ে আদিখ্যেতা করছিল|

ঘড়িতে তখন তিনটে আমি আমার বন্ধুদের বললাম আমি একটু বাইরে যাব বমি বমি পাচ্ছে চল| রতন, ভজা আর টুলু আমাকে নিয়ে বাইরে এল| বন্ধুদেরকে বললাম বাসর ঘরে বলে আয় আমার শরীর খারাপ লাগছে বাইরে কয়েক পা ঘুরে আসছি| বন্ধুরা ভেতরে বলতে গেছে আর আমি সামনেই দেখি আমাদের ভাড়া করা গাড়িটা, ভেতরে ছোট্টু সিং ঘুমাচ্ছে| ওকে দেখেই সারা রাতের তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাকে উসকে দিল এখান থেকে পালাতে| আর আমিও কোনরকম সময় নষ্ট না করে ছোট্টুকে ডেকে বললাম চল তাড়াতাড়ি| ও অবাক হয়ে বলল – আভি কাঁহা জানা হায় বাবু? ওকে গাড়ি স্টার্ট করতে বলে একদম এই গোপন আস্তানায়| 

বিশ্বাস করুন শ্রোতামন্ডলী, আমার ওপর বিশেষ করে কয়েকজন অপরিচিত মহিলা যে ধরনের এক কথায় নির্যাতন ঐ কয়েক ঘন্টা ধরে চালিয়েছিলেন তাকে পরিশোধিত ভাষায় বোধহয় ‘ragging’ বলা হয়ে থাকে| আমরা যা সাধারনতঃ কলেজ হোস্টেল গুলোতেই হয়ে থাকে বলে জানি| এরকম একটা পরিবেশ পরিস্থিতির মধ্যে পরলে আপনাদের অবস্থা কি হত একবার কল্পনা করে দেখুন তো|

এখোনো কি আপনারা আমাকে আসামীর কাঠগোড়ায় দাঁড় করাবেন? যদি সত্যিই কাউকে আসামীর কাঠগোড়ায় দাঁড় করাতে হয় তবে সেই সমস্ত মহিলাদের হাজির করুন যাদের জন্য আজ আমার এই অবস্থা|

বিশ্বাস করুন বহু বাসরের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ আমি রাত জেগে দেখেছি কি সুন্দর সুন্দর গান বাজনা, কবিতা আবৃত্তি, নাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে| কত মজার গল্প পরিবেষন হয়েছে|

আমি তাই বেছে বেছে আমার দুই বন্ধুকে রেখেছিলাম গানের জন্য আর এক জন ছিল আবৃত্তির জন্য আর গান যোগান দেবার জন্য আমার ছিল অফুরন্ত গানের স্টক|

এইবার থামালাম সর্ব্বেন্দু বাবু কে, বললাম অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আপনার বিস্তারিত ঘটনা সুন্দর ভাবে বর্ণনার জন্য| এবার যাই শ্রোতাবর্গের কাছে –

প্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা আশাকরি আপনারা সকলে মন দিয়ে সর্ব্বেন্দু বাবুর কথা ও কাহিনী শুনলেন| গৌতম, আমার মনে হয় আমাদের ও কিছু একটা করা উচিত| না না না পুরুষবাদি কোন আন্দোলন বা নারীবাদিদের আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নয়| চলুন আমরা সবাই মিলে সর্ব্বেন্দু বাবুকে নিয়ে ভূবন বাবুর বাড়ির অন্দর মহলে সুমিতা দেবীর সামনে হাজির হই| সেখানে বিবাহের বাকি ক্রিয়া যদি কিছু থেকে থাকে তা সম্পন্ন করে নব দস্পতি কে নিয়ে সর্বেবেন্দু বাবুর বাড়ি পৌঁছে যাই|

কি গৌতম তাই তো, অঞ্জু তুই বল আমরা তো এখন বরযাত্রী, কনে যাত্রী সবই | গুড্ডু বন্ধুদের বল বাইক স্টার্ট দিতে| গৌতম তোর গাড়িতে বর কে তুলে নে|

গৌতম – না না এই পুলিশের গাড়িতে বর সেটা হবে না মিস সেন আপনার গাড়িতেই বর কে তুলুন| আমি আর শ্রীমান সখের গোয়েন্দা মানে আমার এই প্রিয় বন্ধু আছি আপনাদের আগে আগেই|

এমন সময় একজন এস.আই এসে খবর দিলেন বিধান নগর পুলিশের জালে রীতম গ্রেপ্তার| গৌতম সকলকে সেই খবর জানাতেই যেন খুশীর হাওয়া বয়ে গেল| যাক যার শেষ ভাল তার সব ভাল এখন ভালোয় ভালোয় বৌ-ভাত টা মিটে গেলেই হয়|

আমি বললাম – বাঃ এটা তো বেশ আনন্দের খবর| চল সব গাড়িতে ওঠো| তা বর মহাশয় অঞ্জুর গাড়িতে আপনাকে দেথে সুমিতা দেবী আবার মনে কিছু করবেন না তো

সর্ব্বেন্দু বাবু বলেন – তা নিশ্চই করবে না, যখন আপনি সঙ্গে আছেন|

এবার বিনীত ভাবে সকল শ্রোতামন্ডলীর উদ্দেশ্যে সর্ব্বেন্দু বাবু বললেন

–এই সখের গোয়েন্দা মানুষটি আমায় কথা দিয়েছেন আর বিবাহ সংক্রান্ত বিশেষ কোন এপিসোডে আমাকে অংশ নিতে হবেনা| তাই আমরা প্রথমে সুমিতাদের বাড়ি তারপর সেখান থেকে সেই পরিবারের অনুমতিক্রমে আমরা আমার পৈত্রিক ভিটায় পৌঁছে যাব| আশা করি আপনারাও রাজি তো আমাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য| নিমন্ত্রণের প্রয়োজন নেই আসুন সকলে দলে দলে শামিল হই এই মহা মিছিলে|

আমি গুড্ডুকে কোথাও না দেখে জানতে চাইলাম – আচ্ছা গুড্ডু কোথায়?

অঞ্জু সাড়া দিয়ে বলল – দাদা জুনিয়ার আমার গাড়িতে|

আমি বললাম – গুড্ডু তোর বাইক কি হবে?

আবারও অঞ্জু বলল – দাদা জুনিয়ারের বন্ধুরা ওর বাইক নিয়ে আসছে|

আমি অবাক, গুড্ডু কিছু বলছে না আর অঞ্জুই তার উত্তর দিচ্ছে| ব্যাপারটা কি? আমার কি রকম কি রকম মনে হচ্ছে| আচ্ছা আমি যা সন্দেহ করছি আপনারাও কি তাই? যাইহোক আমি লক্ষ্য রাখছি আপনারাও রাখুন| আমার পরবর্তী কাহিনীতে নাহয় এই নিয়ে বিশদ আলোচনা করা যাবে|

গৌতম বলল – দেখ ভায়া যা করবে ভেবে চিন্তে করবে কারণ মিস সেন খুব শীঘ্রী আমাদের ডিপার্টমেন্টে যোগ দিতে চলেছেন|

আমি বললাম – বলিস কি ওর রোসি ইন্টারন্যাশনাল

গৌতম বলল – ভাই মিস সেনের ফাইলটা আমিই চালাচ্ছি যাতে এই নবতম সংযোজন রীতমের অ্যারেস্ট|

আমি বললাম – এর সঙ্গে রীতম অ্যারেস্টের কি আছে?

গৌতম বলল – আমি হেড কোয়ার্টারে জানিয়ে মিস সেন কে রীতম এন্ড গ্যাং ধরার জন্য গোপনে নিযুক্ত করি| আর মিস সেনের ব্যাক গ্রাউন্ড ওপর তলার সকলেরই জানা| মানে ওনার বাবার চাকুরী জীবন| তাই ওরাও রাজি হয়ে যায়|

আমি বললাম – ও বুঝেছি তার পর এই সাফল্য অঞ্জুর চাকরীটা কনফার্ম করল|

গৌতম – একদম তাই, আশা করি মাস তিনেকের মধ্যেই ওর চাকরীটা হয়ে যাবে|

আমি বললাম – তার মানে তুই ওদের মধ্যে আমাকে নাক গলাতে বারণ করছিস|

গৌতম – মোটেও না তোকে শুধু সাবধান করে দিলাম, পরে এ নিয়ে আমার কাছে আসতে পারবি না কিন্তু|

এদিকে সর্ব্বেন্দু বাবুর উদাত্ত আহ্বাণে এক প্রিজন ভ্যান ভর্তি লোক তাছাড়াও কত লোকের সমাগম হয়েছে| বাঃ চলুন আমরাও শুরু করি আমাদের এই নবতম মিছিল| যে মিছিলে থাকবেনা কোনো স্লো-গান, ফা-ষ্ট গান, মে-শি-ন গান বা অন্য কোন গান এখানে শুধুই হবে আনন্দের মিলন মধুর গান|

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × two =