সম্পাদকীয়

 

জানালার বাইরে তখন রোদ বৃষ্টির খেলা। সবুজের মাঝে সেই দুষ্টুমি দেখতে দেখতে চোখ সরালাম ভিতরের দিকে। তেমন ভিড় নেই, ইতিউতি তাকাতে তাকাতেই নজর গেল সামনের দিকে ট্রেনের দেওয়ালে।  গোবরডাঙ্গার ছেলে আমি। সেই সূত্রে শহরতলির লোকাল ট্রেনে যাতায়াতটা ছোট থেকেই অভ্যাসসিদ্ধ। এখন অবশ্য অতটা ট্রেনে চাপা হয় না। তাহলেও ট্রেনের দেওয়ালে নানা ধরনের পোস্টার ছোট থেকেই কৌতুহল জাগায়। ডি কে লোধ বা ঋতুবন্ধ, অচেনা মানুষ বা শব্দগুলি ওখান থেকেই চেনা। জানাটা অবশ্য পরে হয়েছে অনেক। তবুও সেদিন ট্রেনে যেতে যেতে ফের নজরে সেই পোস্টার বা বিজ্ঞাপন। আলগোছে নয় বেশ গভীর মনযোগ দিয়েই দেখতে দেখতে মনটা কেমন খুশি খুশি হয়ে উঠল। সামনে কোন মহান বা ত্যাগী মানুষের কাহিনী ভেসে উঠলে মনটা এভাবেই পবিত্রতার উঠোন বেয়ে শ্রদ্ধার বারান্দায় উঠে পড়ে।

সামনে কতগুলি অচেনা অজানা মানুষের নাম। তাদের অসীম ক্ষমতা। যে কোন সমস্যার প্রতিকার তারা করে দেন তুড়ি মেরে। যে কাউকে বশে আনতে তাদের কারও সময় লাগে পাঁচ মিনিট, কারও বা পাঁচ দিন। ডাকিনী যোগিনী বা তন্ত্র বিদ্যার সিদ্ধ পুরুষ বা নারী প্রায় সকলেই। এসব দেখতে দেখতে এমনিতেই সমীহ ভাসিয়ে নিয়ে যায় মনের অগোচরে। তারপরে যখন দেখি এই মহান মানুষগুলির দেশের প্রতি দশের প্রতি এহেন আত্মত্যাগ তখন তো মনে হল লুটিয়ে পড়ি ওদেরই পায়ে। অবিশ্বাসী, যুক্তিবাদীরা বোধহয় এতটা পড়েই আমাকে শূলে চড়াবার ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। আমি বলি কি দাঁড়ান একটু, শ্রদ্ধা ভালবাসায় নম্র হবেন আপনারাও। আচ্ছা বলুন তো যে মানুষগুলি সকলকেই বশে আনতে পারেন তাদের কাছে তো পৃথিবীর সব শক্তিই করায়ত্ব। তাই নয় কি? যেমন ধরুন বাংলায় মমতা, দেশে মোদী, বা বাইরে ট্রাম্প কিম্বা পুতিন নিদেন পক্ষে কিম জং উনকে বশ করতে পারলেই তো কেল্লাফতে হয়ে যেত। এঁরা যার বশে তার তো কোন চিন্তাই থাকার কথা নয়, সেই তো তখন শাসক। প্রবল সুযোগ থাকা স্বত্বেও এমন দুষ্টুমি কিন্তু এই মহান মানুষেরা কেউ করেননি। বরং আপনার সমস্যা শুনে ও পাড়ার পটলাদা, মাধু সোনার কমল মিত্র টাইপের বাবা বা অফিসের খেঁকুড়ে বসকে বশ করতেই ব্যস্ত। হাজার হাজার কোটি টাকার গদিতে না বসে সামান্য দক্ষিনায় দিন গুজরান এটা কি বড়সর কোন ত্যাগ বলে আপনি মনে করেন না?

আচ্ছা বলুন তো, এই যে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে এত পঞ্চতন্ত্র তার কি কোন দরকার ছিল? এত মারামারি খুনোখুনি না করে এই মহান মানুষগুলির কাছে গিয়ে হত্যে দিলেই তো সব সমস্যার সমাধান। যে যার প্রতিপক্ষকে বশ করে কাজ হাসিল করে নিলেই হত, মাঝখান থেকে এতগুলি নিরীহ বা নিরীহ নয় টাইপের মানুষের জীবন নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলতে হত না। নির্বাচন কমিশনটাই বা কি রকম বুঝি না বাপু। রাত দিন কোর্টে গিয়ে আমতা আমতা করে মোসাহেবি না করে এঁদের দিয়ে একটু গ্রহদোষটা কাটিয়ে নিলেই তো কোনও সমস্যা থাকত না। বলি তাতে তো পয়সাও বেশি লাগে না, ৫১ টাকা থেকে শুরু করে ১০১, ২০১ বা নিদেন পক্ষে ৫০১। ব্যাস এতেই কার্য সিদ্ধি। বাঘা বাঘা উকিলের ফিজের কাছে তো এটা নস্যি মাত্র।

আমার মত ছোট মানুষ একটা কথা এতক্ষণে বুঝে গিয়েছে, যে বড় বড় মানুষেরা এই সব লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করে না। তাই তারা এই মহান এবং পরম শক্তিধর মানুষগুলি সম্পর্কে সেভাবে জানেন না(এই সব পোস্টারগুলি মূলত ট্রেন এবং বাথরুমের দেওয়াল ছাড়া খুব একটা দেখা যায় না)। তাই তো এই পোস্টারের মহান মানুষগুলি অন্য মহান মানুষগুলির প্রায় অগোচরে বা অজান্তেই এমন ছোটখাটো মহৎ কাজ করে চলেছেন। এখানেই শেষ নয়, কেউ কেউ তো কাজ না হলে পয়সা ফেরৎ দেবেন বলেও জানিয়েছেন। কি উচ্চ বংশ? সে যাক গে নিন্দুকেরা অনেক কথা বলবে তাতে কোন মহান মানবেরই কোন দিন কিছু এসে যায়নি।

যাই হোক, এবার একটু অন্য কথায় আসি, অবেক্ষণ পত্রিকা অনেক দিন পর তার চেহারা পরিবর্তন করেছে। প্রায় পাঁচ বছর পর অবেক্ষণ এবারে আপনাদের সামনে এল নতুন সাজে, নতুন রূপে। কেমন লাগল নতুন অবেক্ষণ আমাদেরকে লিখে জানাতে পারেন মেইল করে অথবা ফেসবুক পেজে গিয়ে। কোন পরামর্শ থাকলেও দিতে পারেন। এবারেও রয়েছে দেশ বিদেশের নানা লেখকের অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক বিভিন্ন লেখা। আশা করি ভাল লাগবে আপনাদের। সকলে ভাল থাকবেন, আবার কথা হবে আগামী সংখ্যায়।

পলাশ মুখোপাধ্যায়

সম্পাদক, অবেক্ষণ

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 − two =