সারান্ডায় সারাক্ষণ

পলাশ মুখোপাধ্যায় ##

পুজোর মরসুমে সকলেরই উড়ু উড়ু মন। এমন এক শারদীয় সন্ধ্যায় ভাই বোনেরা মিলে সকলে একসঙ্গে কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা চলছে জোর কদমে। সকলেই একবাক্যে পাহাড় জঙ্গলের পক্ষে সায় দিল। এমন গন্তব্য আলোচনাতে এলে প্রথমেই উত্তরবঙ্গের কথাই মাথাতে আসে। কিন্তু বেড়ানোর মরসুমে এত অল্প সময়ে উত্তরবঙ্গে যাওয়ার টিকিট পাওয়া অসম্ভব। তাই সকলের অনুরোধে শুরু হল বিকল্প খোঁজা। আমার মাথাতে কদিন ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছিল একটা নাম, এই সুযোগে পেশ করেই ফেললাম, সারান্ডা। প্রায় সকলেই দেখলাম সারান্ডার ব্যাপারে কিছুই জানে না। তাই একটু দোদুল্যমান। আমি কিন্তু জোর দিয়েই বললাম ডুয়ার্সের বিকল্প হিসেবে ঘরের কাছে এর চেয়ে ভাল ডেস্টিনেশন হতেই পারে না। পাহাড়, নদী, জঙ্গল, সব মিলিয়ে জমজমাট প্যাকেজ একেবারে।

টিকিটের খোঁজ করতেই দেখা গেল একটাই ট্রেন যায় বারবিলে, অথচ রাশি রাশি টিকিট পড়ে আছে এসি, নন এসি দুটোতেই। তার মানে আম বাঙালি এখনও এখানে সেভাবে ভিড় জমাতে পারেনি। বেশ ভরসা পেলাম। হাওড়া বরবিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেসে আমাদের যাত্রা শুরু হল নির্দিষ্ট দিনে। ভোর ছটা কুড়িতে ট্রেন হাওড়া থেকে ছেড়ে পৌঁছয় বেলা একটা নাগাদ। খড়গপুর ছাড়াতেই যাত্রাপথটিও চমৎকার। সোয়া একটা নাগাদ ট্রেন পৌঁছল বারবিলে। ষ্টেশনেই ছিল আমাদের আগে থেকে ঠিক করা গাড়ি। তাতে চেপে সদলবলে আমরা পৌছলাম কিরিবুরু। কিরিবুরু ওড়িশা ঝাড়খণ্ড সীমানায় একটি শৈল শহর, এটি ওড়িশা রাজ্যে পড়ে। এর ঠিক পাশেই যমজ শহর মেঘাহাতাবুরু, ঝাড়খণ্ড রাজ্যে। দুটি শহরই আদতে সেইল বা স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার নিজস্ব শহর। কারন পাহাড়তলির বিস্তির্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে আকরিক লৌহের খনি। সেখান থেকেই লোহা উত্তোলনের কাজ করে সেইল। সেই কাজের জন্যই এই শহরদুটির পত্তন।

এই বেলা বলে রাখি পাহাড়ের উপরে সেইলের নিজস্ব গেস্ট হাউজ ছাড়া থাকার তেমন ব্যবস্থা নেই। সেই গেস্ট হাউজে থাকা যায় বটে, কিন্তু গোল বাধে সেইলের বড় আধিকারিক বা মন্ত্রী সান্ত্রী কেউ এলে। তখন ছেড়ে দিতে হতেও পারে আপনাকে ঘর। আমরা তাই সেই ঝামেলায় যেতে চাইনি, খোঁজ খবর করে জেনেছিলুম কিরিবুরু হিলটপে একটি থাকার হোটেল আছে। তার মালিক অশোকবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানেই থাকার ব্যবস্থা হল। আমাদের জন্য গাড়ি পাঠিয়েছিলেন অশোকবাবুই। খুব ভাল বন্দোবস্ত নয়, কারন সেইলের এই টাউনশিপে নাকি অন্য হোটেল করবার অনুমতি নেই। তাই অশোকবাবু তার বাড়ির চত্বরেই কয়েকটি ঘর করে আমাদের মত ভ্রমণ রসিকদের থাকার জায়গা করে দিয়েছেন। খাওয়ার ব্যবস্থাও সেখানেই। দুপুরে পৌঁছে খাওয়া দাওয়া সেরে সামান্য বিশ্রাম। এরপরে আমাদের বেড়ানোর শুরু।

যাওয়া হবে মেঘাহাতাবুরুতে, সবুজে ঘেরা পাহাড়ী পথে কিরিবুরু সেইল টাউনশিপ পেরিয়ে মেঘাতুবুরু ভিউ পয়েন্ট পৌছতে পৌছতে প্রায় বিকেল পাঁচটা। ঢলে যাওয়ার আগে লাজে রাঙা সূর্য, চারিদিকে হাল্কা কমলা মায়াবি এক কনে দেখা আলো। এই এলাকাকে সাতশো পাহাড়ের দেশ বলা হয়। ভিউ পয়েন্টে এসে মনে হল স্বর্গ বুঝি এখানেই। পড়ন্ত মায়াবী আলোয় আমরা দেখলাম কুয়াশায় ঘেরা হালকা নীলাভ সাতশো পাহাড়ের রূপ। সে যেন শিল্পীর আঁকা কোন নিখুঁত ছবি। প্রত্যেকেই দেখলাম মোহিত। আমার দেখা অন্যতম অসাধারণ সূর্যাস্ত। মন ভাল করে দিল সেই দৃশ্য। ফেরার পথে দেখে নেওয়া হল পাশেই থাকা একটি পার্ক। দুটি শহরই কিন্তু বেশ সুন্দর। ছিমছাম, সাজানো গোছানো, খুব পরিচ্ছন্ন এবং প্রচুর গাছপালায় ছাওয়া। এমনিই হেঁটে বেড়াতে দারুণ লাগে।

সানসেট পয়েন্টটা একটু দূরে হলেও আমরা যেখানে ছিলাম সেই হিলটপের কাছে নাকি সানরাইজ পয়েন্ট। ব্যাস পরদিন সকালে সদলবলে সানরাইজ পয়েন্টে হাজির আমরা। এ জায়গাটা অতটা সাজানো গোছানো নয়। কুয়াশা এবং মেঘের সৌজন্যে সেভাবে সূর্যোদয় দেখা না গেলেও আমাদের সকালের আড্ডাটা দারুণ হল ওই সানরাইজ পয়েন্টে। এর পর যতদিন ছিলাম রোজ সকালেই আমরা সানরাইজ পয়েন্টে গিয়ে আড্ডা দিয়েছি।

পরদিন সকালে আমাদের গন্তব্য থলকোবাদ। সারান্ডা ফরেস্টের কোর এরিয়া। জঙ্গলের গভীরে থাকা একটি বন বাংলো এখানকার প্রধান আকর্ষণ। গোটাটাই মাও অধ্যুসিত এলাকা, এখানে যেতে হলে আগে থেকে বনবিভাগের অনুমতি জোগাড় করে নিতে হয়। আমাদের ড্রাইভার সেই সব কাজ করে রেখেছিল। যাওয়ার পথেই পড়ল কিরিবুরু মাইনস,  সেখানে যে কর্মকান্ড চলছে তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। বিশাল বিশাল খাদান থেকে লৌহ আকরিক উত্তোলন চলছে। চারিদিক শুধু লাল। বাঁকুড়া, বীরভূমে লাল মাটি দেখেছি বটে, কিন্ত মাটি যে এত লাল হতে পারে তা এখানে না দেখলে বোঝা মুশকিল।

খাদানগুলিরও এক অপরূপ শোভা। এখানে বেশিক্ষণ দাঁড়ানো যায় না, তাই চটপট দেখে ফের গাড়িতে। এরপর করমপদা জঙ্গল হয়ে থলকোবাদ। ঘন সবুজ জঙ্গলের নিস্তব্ধতা ভেদ করে গাড়ি চলছে।  মাঝে মধ্যে অবশ্য বিপত্তি ঘটাচ্ছে রাস্তায় পড়ে থাকা গাছ। ড্রাইভার বলল এখানে এই এক সমস্যা মাটি আলগা হওয়ায় প্রায়শই গাছ পড়ে রাস্তা আটকে দেয়। তখন নাকি যাওয়াই মুশকিল। আমাদেরও তো এক জায়গায় নেমে পড়ে থাকা গাছ ঠেলে রাস্তা ফাঁকা করতে হল।  থলকোবাদ এলাকাতে যখন টোয়বো ঝর্নাতে পৌছলাম মনে হলো এখানেই থেকে যাব চিরকাল। চুপ করে বসে রইলাম, উপভোগ করছি সেই পরিবেশ। কিন্তু বেশিক্ষণ বসতে দিল না ড্রাইভার এই জায়গাটি নাকি মাওবাদীদের স্বর্গ। তাই চলে যাওয়াই ভাল। অগত্যা উঠলাম, থলকোবাদ বনবিভাগের গেষ্টহাউস যাবার আগে, ছোট্ট করে লিগিদরা ওয়াচ টাওয়ার আর লেপার্ড কেভ দেখে নেওয়া হল। ভারি সুন্দর জায়গা। খুব নির্জন, তার মাঝে আমাদের ড্রাইভার বলে কিনা, আপনারা অপেক্ষা করুন,  ওপরে ভালু আছে কিনা দেখে আসি। বলে কি এখানে ভল্লুক থাকে নাকি? স্থানীয় এক কাঠুরের মুখে শুনলাম কয়েকদিন আগেই নাকি তাকে একটি ভল্লুক তাড়া করেছিল। গুহার মধ্যে থেকে কি একটা আওয়াজ পেয়ে আমরা আর সাহস করে সেখানে দাঁড়াইনি।

থলকোবাদের মূল আকর্ষণ এখানকার বনবাংলো। একেবারে ঘন জঙ্গলের মাঝে এই বাংলো। মাওবাদীরা নাকি বছর দশেক আগে এই বাংলোটি পুড়িয়ে দিয়েছিল। বছর খানেক হল ফের এটিকে নতুন করে বানিয়েছে বন দফতর। ওই বাংলো চত্বরেই আমাদের মধ্যাহ্ন ভোজন হল। খাবার অবশ্য হোটেল থেকেই প্যাক করে আনা হয়েছিল। কারন এ তল্লাটে কিছুই মেলে না। এই বাংলোতে বিশেষ অনুমতি নিয়ে রাত্রিবাস করা যায়। কিন্তু সব রকম রসদ এমনকি জেনারেটরের ডিজেল পর্যন্ত আপনাকে সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। কেয়ারটেকার মঙ্গল সিং অবশ্য রান্নাবান্না করে দেবে। দেখেশুনে মনে হল জ্যোৎস্না রাতে একবার এই বনবাংলোতে থাকতে পারলে হয় তো জঙ্গলের প্রকৃত স্বর্গীয় শোভা দেখা সম্ভব। এবার ফেরার পালা, দিনের আলো থাকতে থাকতেই চলে যেতে চাইছে ড্রাইভার, তাই আর দেরি না করে কিরিবুরুর পথে।   

তৃতীয় দিন সকালে আমাদের আড্ডা সেরে বেরিয়ে পড়লাম বেশ কিছু ঝরণার উদ্দেশে। সঙ্গে উপরি পাওনা জঙ্গল সাফারি। আমাদের গন্তব্য পুন্ডুল ঝর্ণা আর স্বপ্নেশ্বর মন্দির। ঘন জঙ্গলের মধ্যে, রাস্তায় গাছ পড়ে মাঝে মধ্যেই খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে। এক দুবার পথ হারিয়ে পৌছলাম পুন্ডুলে। খুব উঁচু বা বড় কিছু নয়। কিন্তু স্নিগ্ধ রূপ আমাদের মুগ্ধ করে দিল। সব চেয়ে বড় কথা এত নির্জন সবুজ পাহাড়ে ঘেরা পরিবেশে পুন্ডুলের সৌন্দর্য যেন কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। সেখান থেকে এবার গেলাম পাচেরি ঝর্ণা দেখতে, তার আবার অন্য ধরনের রূপ। কি সুন্দর রাস্তা, দুধারে ঘন জঙ্গল, বেশ কিছু জায়গায় সূর্যের আলোও প্রবেশ করে না। গা ছমছমে পরিবেশ। জঙ্গুলে রাস্তা ধরে প্রায় এক কিমি হাঁটার পর আবার এক মায়াময় পরিবেশের সামনে আমরা। দুই পাহাড়ের মাঝ খান দিয়ে ধাপে ধাপে জল নেমে এসে একটা জলাধারে পড়ছে। খুব সুন্দর, চারপাশে কত অজানা পাখির ডাক, ঝর্নার শব্দ, এবং জঙ্গলের নিজস্ব শব্দ। সেও অপূর্ব। পাচেরি থেকে আমাদের গন্তব্য  কারো নদী। এই নদী থেকেই পানীয় জল যাচ্ছে দুই শৈল শহরে। এখানেই আমাদের মধ্যাহ্ন ভোজন সারা হল।

তারপর বোলানি মাইনস হয়ে ঝিকরা ঝর্ণার দিকে যত এগোচ্ছি তত দৃশ্যপট পাল্টাচ্ছে। দু পাশে দেখি কিছু ঘরবাড়ি, তারপর হঠাৎ করে জঙ্গল শুরু। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর গাড়িটা যেখানে দাড়ালো সেখানে ঘন জঙ্গল, শুধু একটু পায়ে হাটা রাস্তা ছাড়া কিছু নেই। কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দেখি, সেটাও বেমালুম হাওয়া হয়ে গেছে। ড্রাইভার বলে দিয়েছিল জলধারা অনুসরণ করে চলতে। সেই মত চলে প্রায় এক কিলোমিটার পরে দেখা মিলল ঝিকরার। অন্য ঝর্ণার সঙ্গে ঝিকরার পার্থক্য হল এখানে প্রায় পঞ্চাশ ফুট উপর থেকে জল ছড়িয়ে বৃষ্টির মত নিচে পড়ছে। ছোট ছোট জলকণার মাঝে সূর্যালোক রামধনুর রূপ নিয়েছে। আমরা সকলেই সে রূপ দেখে বাকরুদ্ধ। চারিদিকে অদ্ভুত মোহময় পরিবেশ, শুধুই জলের কলতান থুড়ি জলতান। এখানে কিন্তু স্নানও করা যায়। আমরাও সেই সুযোগ ছেড়ে দিইনি, সকলেই নেমে পড়লাম ঝর্ণার নিচে। একটি সাবানের সেই বিজ্ঞাপনী তরুনীর মত আমরাও খুব মজা করে স্নান করলাম সকলে।

 পরের দিন অর্থাৎ চতুর্থ দিন আমাদের ফিরবার কথা। ট্রেন দুপুর একটা চল্লিশে, তাই সকাল ৯ টার মধ্যে খাওয়া দাওয়া সেরে বেরিয়ে পড়লাম জটেশ্বর মন্দিরের উদ্দেশে। পাহাড় ঘেরা গ্রামের রাস্তা আর কিছুটা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পৌঁছলাম মন্দিরে। জঙ্গলের মধ্যে পাহাড় ঘেরা পরিবেশে মন্দির। গা ছমছমে আবহ, তবুও বেশ চমৎকার লাগছিল। এখান থেকে বেরিয়ে আমরা সোজা বরবিল স্টেশনে, চড়ে বসলাম জনশতাব্দীতে। ট্রেন ছাড়তেই সকলের মুখ ভার। ডুয়ার্সের বিকল্পটা যে এতটা ভাল হবে কেউ কল্পনাই করতে পারেনি। তাই এই কদিনেই মনে মনে সারান্ডাকে ভালবেসে ফেলেছিলাম সকলেই। ভালবাসাকে দূরে ফেলে একটু একটু করে এগোতেই মন খারাপের কুয়াশা ঘিরে ধরছিল আষ্ঠেপৃষ্টে। আবার আসব সারান্ডায়, সুরটা গুনগুনিয়ে উঠছিল মাথার মধ্যে।

কয়েকটি বিশেষ তথ্যঃ সেইলের গেস্ট হাউজ থাকার জন্য সব চেয়ে ভাল জায়গা। বুকিং পাওয়া মুশকিল, কলকাতায় সেইলের অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। বরবিল শহর পাশেই, সেখানে অবশ্য প্রচুর হোটেল আছে। বরবিল থেকেও সহজেই ঘোরা যায়। সঙ্গে সকলের সচিত্র পরিচয় পত্র এবং তার ফোটো কপি রাখবেন। জঙ্গলে বিভিন্ন অনুমতি এবং সিআরপিএফ ক্যাম্পে দেখাতে বা দিতে হতে পারে। জঙ্গলে বের হলে সঙ্গে খাবার এবং পানীয় জল গুছিয়ে নিয়ে যাবেন, ওখানে কিছুই পাওয়া যায় না। থলকোবাদে থাকতে হলে সব রকমের প্রয়োজনীয় জিনিস কিরিবুরু শহর থেকে নিয়ে যেতে হয়। মাওবাদী এখনও আছে, তবে সাধারণত তারা পর্যটকদের কিছু বলে না, অকারণ ভয় পাবেন না। প্রায় প্রতিটা ঝর্ণাতেই কম বেশি এক কিলোমিটারের মত হাঁটাপথ আছে, সেই রকম প্রস্তুতি নিয়ে যাবেন। ট্রেনের টিকিট প্রায় সব সময়েই মেলে। বেড়ানোর মরসুমে এক মাস আগে থেকে টিকিট কেটে নেওয়া ভাল।     

One thought on “সারান্ডায় সারাক্ষণ

  • February 24, 2020 at 2:56 am
    Permalink

    সুন্দর লেখা। ভ্রমণ পিপাসুদের অবশ্যই ভালো লাগবে। কয়েকটি তথ্য জানতে চাই।অশোক বাবুর সাথে যোগাযোগের হদিশ, থাকা খাওয়ার ব‍্যয়, বেড়াবার প্রতিদিনের গাড়ির ভাড়া।goutam

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − six =