দ্বৈত চাষে ধানের সাথী হিসাবে নাইট্রোজেন সরবরাহকারী উদ্ভিদ

অগ্নিভ হালদার ##

বিশ্বের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং অনেক শীতপ্রধান অঞ্চলেই ধান প্রধান খাদ্য। এই বিশাল চাহিদা পূরনের জন্য এখন কৃষকরা সম্পূর্ণ রূপে রাসায়নিক সারের উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে নাইট্রোজেন সরবরাহকারী সারের প্রয়োগ সব থেকে বেশি, যা মাটি তথা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার ব্যবহারে সাধারণত গাছের কোষ প্রাচীর পাতলা হওয়ায় কাঠামোগত শক্তি কমে যায়। গাছের কাণ্ড স্বাভাবিকের চেয়ে লম্বা ও নরম হয় এবং কাণ্ডের চেয়ে পাতা বেশি ভারী হয়। ফলে গাছ সহজেই হেলে পড়ে। এ অবস্খায় গাছের প্রতিরোধ শক্তি কমে যাওয়ায় রোগ ও পোকামাকড় সহজেই আক্রমণ করতে পারে। পাতার রঙ কালচে সবুজ হয়ে যায়। তাই জৈব উৎসের ব্যবহার করে রাসায়নিক সারের পরিমান কমানো যেতে পারে।

সাধারণত ধান চাষের আগে নাইট্রোজেন সরবরাহকারী উদ্ভিদের চাষ করে তাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে অথবা অন্যত্র চাষ করে সেখান থেকে তুলে এনে ধানের জমিতে মিশিয়ে দেওয়ার প্রথা চালু আছে (সবুজসার) ।

কিন্তু ধানের জমিতেই ধানের সাথী হিসেবে নাইট্রোজেন সরবরাহকারীর চাষ করে এবং নির্দিষ্ট সময় পর তাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে নাইট্রোজেন ঘাটতি মেটানোর যে নূতন পদ্ধতি সেটা নিয়েই এখানে আলোচনা করব। এক্ষেত্রে সবুজ সারের মতই সিম্ব গোত্রিয় উদ্ভিদ, অ্যাজোলা বা নীলাভ সবুজ শৈবালকে নাইট্রোজেন সরবরাহকারী হিসাবে ধানের সাথেই চাষ করা হয়।

বাদামি সার:

পদ্ধতি:এই পদ্ধতিতে সিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদ (ধৈঞ্চা) কে ধানের সাথে চাষ করে নির্দিষ্ট সময়ে মাটির সাথে মিশিয়ে নাইট্রোজেন এবং অন্যান্য জৈবপদার্থ সরবরাহকারী করা হয়।

সারিতে বোনা আমন ধানের সাথে ধৈঞ্চা চাষ করা হয়। এর জন্য আলাদা করে জমি তৈরি বা আন্তঃকালীন কার্যের প্রয়োজন হয় না। সেই জন্য ধান রোয়ার দুই থেকে তিন দিন পর ধৈঞ্চার বীজ ছড়ানো হয় ২-৩ কেজি বিঘা প্রতি হারে। মোটামুটি ছয় সপ্তাহ পর যখন ধৈঞ্চা গাছগুলো দুই থেকে তিন ফুট লম্বা ও গাড় সবুজ বর্নের হয় তখন তাদের 2, 4-D সোডিয়াম লবন নামক আগাছা নাশক স্প্রে করা হয়। ফলে সমগ্র গাছটি আস্তে আস্তে বাদামি রং ধারন করে এবং মাটিতে পড়তে থাকে। তাই একে বাদামি সার বলা হয়।

অ্যাজোলা:

অ্যাজোলা এক প্রকার জলজ ফার্ন। এদের পাতার বিন্যাসের মধ্যে এনাবিনা নামক এক প্রকার নীলাভ সবুজ শৈবাল পারস্পরিক উপকারী সিম্বিয়টিক সম্পর্ক করে বসবাস করে। এই নীলাভ সবুজ শৈবালের নাইট্রোজেন বন্ধনকারী ক্ষমতা আছে, যা বিনিময় করে আজেলার সাথে।

পদ্ধতি

অ্যাজোলা খুব সহজে সারা বছর ধরেই ধানের ক্ষেতেই উৎপন্ন করা যায়। এ জন্য ধানের জমিতে ৯-১০ সেমি গভীর জল রেখে বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ কেজি অ্যাজোলা ছড়িয়ে দিতে হবে। এরা ২৫-৩০ দিনের মধ্যে অঙ্গজ জনন পদ্ধতিতে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে সম্পূর্ণ জমিটিকে আবৃত করে দেবে। তখন জমির জল বের করে দিলেই ২-৩ দিনের মধ্যে অ্যাজোলা পচে জৈব সারে পরিনত হবে। এই পদ্ধতিতে প্রতি বিঘায় ৫-৮ কেজি নাইট্রোজেন যোগ করা যায় এবং অ্যাজোলা মাটির স্বাস্থ্যকেও সুস্থিত করে।

পদ্ধতিদুটিরকিছুউপযোগিতা:

১। ইহারা নাইট্রোজেন এর সাথে সাথে মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমান বৃদ্ধি করে। ফলে মাটির গঠন উন্নত হয় এবং জলধারন ক্ষমতা বাড়ে।

২। উপস্থিত উদ্ভিদ খাদ্যগুলি ধীরে ধীরে মুক্ত হয় বলে ধান দীর্ঘ সময় ধরে পরিমান মত খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে।

৩। খরচ অত্যন্ত কম।

৪। আগাছার উপদ্রব অনেক কম হয়।

৫। ধানের ফলন শতকরা ৩৬-৩৮ ভাগ বৃদ্ধি হতে পারে।

লেখক বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × five =