চিনা বাদামের উপকারিতা

চিনাবাদাম কমবেশি সবারই পছন্দ। সিনেমা দেখতে দেখতে হোক কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে করতে এই বাদাম খেতে ভালোবাসেন না এমন মানুষ কমই আছেন। এতে অনেক ধরনের গুণ রয়েছে। শরীরে অল্প যেটুকু ফ্যাট প্রয়োজন হয়, তার অনেকটাই পূরণ হয় এই বাদাম খেলে।  তবে তা নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়া উচিত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চিনাবাদামের সঙ্গে ডায়াবেটিস, হৃদরোগের একটা সম্পর্ক রয়েছে। এতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম হলেও প্রোটিন এবং ফ্যাটের পরিমাণ যথেষ্ট। পুষ্টিবিদরা বলছেন, এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকায় এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ ঠিক থাকলে ইনসুলিনের সঠিক কার্যকলাপ বজায় থাকে। এ ছাড়াও চিনাবাদামে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। আর্জিনিন এবং হেলদি ফ্যাটের সঙ্গে এই ফাইবারের উপস্থিতি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ রোগীদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে। আমেরিকান জার্নাল অব নিউট্রিশন বলছে, মাত্র ৩০ গ্রাম চিনাবাদাম খেলেই রক্তচাপ ও খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল)-এর পরিমাণ কমে । আর শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।



পুষ্টিবিদরা বলছেন, সব ধরনের বাদামই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। যেহেতু চিনাবাদামে ফ্যাট রয়েছে, তাই নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খেতে হবে।

আমেরিকার ন্যাশনাল পি-নাট বোর্ডের সূত্র অনুযায়ী, চিনাবাদামে প্রচুর পরিমাণ মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। কিন্তু কোনওরকম ট্রান্স ফ্যাট থাকে না। হার্ভার্ড হেল্থ লেটার বলছে, আর্টারি ক্লিয়ারিং প্রসেসে অর্থাৎ ধমনী পরিষ্কারে মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের ভূমিকা রয়েছে। এটির উপস্থিতি রক্ত সংবহন নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে হৃদরোগ কিংবা স্ট্রোকেরও আশঙ্কা কম থাকে।

চিনাবাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই পাওয়া যায়। এটি ফ্যাটে দ্রবীভূত একটি অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সংক্রান্ত ক্ষতির থেকে রক্ষা করে। তাই ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়। বিপাকের হার বাড়িয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে চিনাবাদাম।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন ডায়াবিটিস অ্যান্ড ডাইজেসটিভ অ্যান্ড কিডনি ডিজিজের বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, রোজ অন্তত একটি কাঁচা চিনাবাদাম ভিজিয়ে খেলে গলব্লাডারে পাথরের সমস্যা ২৫ শতাংশ কমে যায়।

ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন অনুযায়ী, মস্তিষ্কের পুষ্টিতেও চিনাবাদাম অপরিহার্য । বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যালঝাইমার্স এবং ডিমেনশিয়ার ক্ষেত্রে চিনাবাদামে উপস্থিত নিয়াসিনের ভূমিকা রয়েছে।


 কতটা বাদাম খাওয়া উচিৎ?

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বলছে, সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ দিন ৬-৭ গ্রাম বাদাম খাওয়া যেতে পারে। তবে কারও অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কি ভাবে খেতে হবে চিনাবাদাম?

পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকদের মতে, কাঁচা বাদাম বা রোস্ট করে খাওয়া বাদাম থেকে সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় না। বাজারে প্যাকেটজাত বাদামেও অতিরিক্ত নুন থাকার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে অন্তত ৮-১০ ঘণ্টা বাদাম জলে ভিজিয়ে রাখলে খেলে এর সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ মেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven + 18 =