সুভাষ ভৌমিককে খোলা চিঠি

বাগানে এখন বসন্ত ঘোরাফেরা করে না৷ শুধুই খরা৷ ট্রফির খরা৷ ব্যর্থতা হতাশায় মর্মাহত হাজার হাজার মোহনবাগান সমার্থক৷ পাড়ায় রকে ঠাট্টা-টিটকারীতে জর্জরিত তারা৷ এর মধ্যেই সুভাষ ভৌমিক টি ডি হওয়ায় কিছুটা শীতল বাতাসের আভাস মিলেছে৷ মোহন টিডিকে এরকমই নিজের মনোকষ্টের কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছেন জনৈক সমর্থক৷ সেই খোলা চিঠি কুড়িয়ে পেলেন প্রসূন বিশ্বাস৷

সুভাষদা,

আপনি আমাদের টি ডি হয়ে এসেছেন এবার৷ আমরা বড় খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছি৷ আমরা মানে মোহনবাগান সমর্থকরা বড় মনোকষ্টে রয়েছি, সে কথা আপনি একজন প্রাক্তন মোহনবাগান ফুটবলার হিসাবে বেশ বুঝতে পারছেন৷ হাইস্কুল থেকে কলেজ হয়ে বেকারের খাতায় নাম লিখিয়েছি গত চার বছর, কিন্তু তার পরও আই লিগ দেখিনি৷ তার থেকেও যন্ত্রনাদায়ক গত তিন বছর ৷ মাঝে করিমের কোচিংয়ে আপনার ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে পাঁচ-তিনের জয়টা ছাড়া কি পেয়েছি আমরা ? চার্চিল থেকে ওডাফাকে ছিনিয়ে এনেছি, টোলগেকে নিয়ে কামড়া কামড়ি করেও লাভ হয়নি৷ সদ্য শেষ হওয়া মরসুমেও চাপা টেনশন ছিল, এই বুঝি দল আই লিগ থেকে নেমে গেল l

ওরাও আই লিগ পায়নি ঠিকই কিন্তু ফেডকাপগুলো অধিকাংশ সময় ঘরে তুলে এ এফ সি কাপে খেলতে গিয়েছে l গতবারও ওরা এএফসি কাপের সেমিফাইনালিস্ট, আর আমরা? ভাবতেও লজ্জ্বা লাগেl পাড়ার পটলার চায়ের দোকানে বুঝে শুনে যাইl রামু, ছোটকারা যখন থাকে তখন যাই নাl গেলেই যে গা জ্বালানো প্রশ্ন করে , ” তোরা এবার এই লিগ অবনমন থেকে বেঁচে যাবি তো ? আসলে তোরা না থাকলে আমাদের চার্মটাই নষ্ট হয়ে যাবে” l এই সব কথা শুনতে কার ভালো লাগে সুভাষদা ? কিন্তু গত কয়েক বছর এই ঘটনাগুলো আমার মতো মোহনবাগান সমর্থকের কাছে নিত্য-নৈমিত্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে l

বাপ-জেঠাদের কাছে আপনার কথা শুনেছি l বিশেষ করে আপনার সিংহের মতো মেজাজের কথা l কোচ পি কে কেও চালেঞ্জ দিয়ে বলতেন ‘ ম্যাচ শেষে বলবেন যা বলার’৷ আপনার সেই ‘সিংহবিক্রম’ মেজাজটাই আমাদের বড় ভরসা৷ বহু দিন আমরা ট্রফি জিতিনি৷ ট্রফি জিতে ভিকট্রি ল্যাপ দিতে দেখিনি সবুজ-মেরুন ফুটবলারদের৷ বহুদিন দেখিনি স্যার, বহুদিন৷ আমাদের বাড়িতে একটা সবুজ মেরুন ফ্ল্যাগ রয়েছে৷ ছোটবেলায় দেখতাম, মোহনবাগানের খেলা থাকলে বাবা সদর দরজায় টাঙিয়ে দিতেন ফ্ল্যাগটা৷ বাবা আজও আদ্যপান্ত মোহনবাগানী৷ কিন্তু ইদানিং আর ফিকে হয়ে যাওয়া ফ্ল্যাগটাকে খেলার দিন লাগাতে দেন না৷ খালি বলেন, ‘ওটা লাগাস না, ওদের আর কিছু হবে না’৷ সত্তরোর্ধ একজন মানুষের এই মনোকষ্ট কার ভালো লাগে বলুন তো ? তবু আপনি যেদিন টি ডি হলেন, সেদিন এই গ্রীস্মের দাবদাহতেও যেন বাবার চোখে বৃষ্টি নামল হালকা হয়ে , বাবার মুখেই আপনার ফুটবলার জীবনের বহু গল্প শুনলাম৷ আমার মতই – তিনিও যেতেন ছ আনার গ্যালারিতে খেলা দেখতে৷ যেদিন যেতেন, সেদিন চাষবাস বন্ধ৷ সকাল সকাল ট্রেনে চেপে কু ঝিকঝিক করতে করতে কলকাতা৷ মোহনবাগান জিতলে চিংড়ি নিয়ে বাড়ি ফেরা৷

সেই সোনালী দিনগুলোই ফিরিয়ে দিন ভৌমিকদা৷ আমাদের এই আবেগ আপনি আর বাবলুদা ছাড়া কে বুঝবে বলুন ? সব ভুলে যেতে চাই৷ হতাশা, ব্যর্থতা, দু:স্বপ্নের কালো দিনগুলো আর মনে রাখতে চাই না৷ টিভিতে, রেডিওতে কান পেতে শুধু শুনতে চাই-গো ও ও ল ল ল৷ এ আর্জি শুধু আমার নয়৷ এ দাবী গ্রাম-শহরের হাজার হাজার মোহন সমর্থকের৷ আমরা ফের একটু হাসতে চাই৷ আমাদের সেই হাসিটা ফিরিয়ে দিন সুভাষদা৷ ভালো থাকবেন৷

ইতি –
জনৈক মোহনবাগান সমর্থক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − 7 =