ম্যাসাজ নিয়ে মেসেজ

সারা বিশ্বের পার্লার বা জিমগুলোতে আজকাল বডি ম্যাসাজের নানারকম অফার থাকে।আমাদের দেশে অনেকেই এটাকে অপ্রয়োজনীয় ভাবেন, আবার কেউ কেউ এটাকে মনে করেন বিলাসিতা। কিন্তু বাস্তবিক এ বডি ম্যাসাজের রয়েছে নানা ইতিবাচক দিক।

বডি ম্যাসাজের উপকারিতা:
– শরীরের রক্ত চলাচল এবং ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে বডি ম্যাসাজ। এরমাধ্যমে শরীরে রক্তচলাচল বৃদ্ধি পায় এবং ধীরে ধীরে ব্যথায় আক্রান্ত স্থানের টিস্যুগুলো স্বাভাবিক হয়ে আসে।
– দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ কমাতে পারে বডি ম্যাসাজ। প্রচণ্ড কাজের চাপ বা মানসিক অস্থিরতায় কিছুক্ষণের আরামদায়ক ম্যাসাজ অপনাকে ঝরঝরে করে তুলতে পারে। কেননা বডি ম্যাসাজে শরীরের স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা কমে মানসিক চাপ অনেকটাই দূর হয়ে যায়।
– বডি ম্যাসাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রাকৃতিক তেল, এসেন্স ত্বকের জন্য উপকারী। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন প্রেসার পয়েন্টে ব্যবহৃত হয় স্টোন বা হট কমপ্রেস। এইহট কমপ্রেস একটি থলির মতো, যাতে বিভিন্ন ভেষজ উপাদান থাকে, যা হালকা গরমতাপে আপনার শরীরের বিভিন্ন প্রেসার পয়েন্টের ওপর চেপে ব্যবহার করা হয়।
– সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন ভালো ঘুম। বডি ম্যাসাজ করালে গভীর ঘুম হয়। ম্যাসাজ শরীরের ডেলটা ওয়েভস বাড়িয়ে দেয় যা ঘুমে সহায়তা করে থাকে।

বডি ম্যাসাজের ক্ষেত্রে সতর্কতা:
বড়ি ম্যাসাজের নানা উপকারিতা থাকলেও এটা সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। যেমন:
– আপনার যদি হার্টের সমস্যা থাকে তাহলে বডি ম্যাসাজ করাবেন না।
– যে কোনো অপারেশনের পর এটা করা যাবে না।
– গর্ভবতী নারীরা সন্তান ধারণের প্রথম পাঁচ মাস বডি ম্যাসাজ করানো থেকে বিরত থাকুন।
– যদি আপনার শরীরের কোন অংশ ভেঙ্গে যায় তাহলে এটা করাবেন না।
– অ্যাজমা বা হাঁপানির সমস্যা থাকলে বডি ম্যাসাজ না করানোই উত্তম।

কীভাবে বডি ম্যাসাজ করবেনঃ
ব্যস্ত যারা তাদের পক্ষে পার্লার বা জিমে যাওয়ার সময় বের করা অনেক সময়ই মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু যদি বডি ম্যাসাজের উপায় জানা থাকে তাহলে বাড়িতেই ব্যাপারটা সেরে নিতে পারেন।
– ম্যাসাজের জন্য ভিটামিন ‘এ’ ও ভিটামিন ‘ডি’ যুক্ত তেল কিংবা অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। অবশ্য চন্দনের তেল বা ল্যাভেন্ডার অয়েল মিশিয়ে নেয়া যেতে পারে। গরমের সময় পাউডার ম্যাসাজ করতে পারেন। অ্যারোমা অয়েলও ম্যাসাজের জন্য খুবই উপযোগী।
– যে কোনও ব্যথার জন্য তিলের তেল, রসুন, আদা, নিমপাতা, হলুদ, গোলমরিচ গরম করে ঠাণ্ডা করে ছেঁকে রাখতে হবে। কাঁধ, হাঁটু এসব ব্যথায় হালকা ম্যাসাজ আরাম দেয়।
– কর্পুর গুঁড়ো করে পুদিনা পাতার সঙ্গে মিশিয়ে কপালে আলতো করে ম্যাসাজ করলে মাথাব্যথায় প্রশান্তি মেলে।
– অনেক হাঁটাহাঁটির পর যদি পায়ে ব্যথা হয় বা পা ক্লান্ত হয়ে যায় তাহলে কুসুম গরম জলে দু’ফোঁটা চন্দনের তেল, এক চিমটি নুন মিশিয়ে ১০/১৫ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন। এরপর নরম তোয়ালে দিয়ে পা মুছে তেল কিংবা ময়েশ্চারাইজার ক্রিম আঙুলের ডগায় নিয়ে ম্যাসাজ করুন। এতে ব্যথা কমে শরীরের ক্লান্তি অনেকটা কমে গেছে।

ম্যাসাজের ক্ষেত্রে যা মনে রাখা জরুরি:
– ম্যাসাজ করার সময় যদি ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
– আর্থ্রাইটিস থাকলে তেল দিয়ে ম্যাসাজ না করাই ভালো।
– পুরুষদের কেউ কেউ সেলুনে চুল কাটার পর ম্যাসাজ করিয়ে থাকেন। আঙুল বা হাতদিয়ে মৃদুভাবে বা মাথা-পিঠ ঠুকে দেয়া পর্যন্ত ঠিক আছে কিন্তু ঘাড়ের ম্যাসাজ না করানোই ভালো। ঘাড়ের স্পর্শকাতর টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এছাড়া স্পাইনাল কর্ডে চাপ পড়ে প্যারালিসিস পর্যন্ত হতে পারে।
– মনে রাখবেন পর্যাপ্ত আলো-বাতাস রয়েছে এবং উষ্ণ নয় এমন পরিবেশ বডি ম্যাসাজের জন্য উপযুক্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 + 18 =