জ্বালানির ভবিষ্যৎ হাইড্রোজেন

 

হাইড্রোজেন জ্বালানি হিসেবে যেমন ব্যবহারের উপযোগী, তেমনি গ্রিনহাউস গ্যাস নিগর্মন কমানোর ক্ষেত্রেও অবদান রাখতে পারে। তবে কম দামে এবং কাবর্ন নিরপেক্ষ উপায়ে হাইড্রোজেন উৎপাদনের জন্য নতুন প্রযুক্তি প্রয়োজন। ভার্জিনিয়া টেকের গবেষক পাসির্ভ্যাল ঝ্যাং বলেন, তাদের উদ্ভাবিত নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করলে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নিভর্রশীলতা কমতে পারে। আর হাইড্রোজেনই হবে ভবিষ্যতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জৈব জ্বালানি।

ঝ্যাং ও তার সহযোগীরা নতুন ওই পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিমাণে হাইড্রোজেন উৎপাদনের লক্ষ্যে গবেষণার জন্য ইতোমধ্যে অর্থ বরাদ্দ পেয়েছেন। তাদের ওই পদ্ধতিতে ভুট্টাজাতীয় শস্যের বর্জ্য হিসেবে জমে থাকা চিনির শতভাগই হাইড্রোজেন গ্যাসে রূপান্তরিত করা সম্ভব। এতে বায়ুমণ্ডলে কোনো কাবর্ন ডাইঅক্সাইড নিগর্মন হবে না। আর এ পদ্ধতিতে ভুট্টার খোসা এবং শাঁসেরও সদ্ব্যবহার হবে। চিনির বড় উৎস হিসেবে পরিচিত জাইলোজ থেকে বিপুল পরিমাণ হাইড্রোজেন উৎপাদনের বিষয়টি আগে কেবল তাত্বিক পর্যায়েই সীমাবদ্ধ ছিল।

পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল জ্বালানির ওপর নিভর্রশীলতা কমাতে দীঘির্দন ধরে বিকল্প জ্বালানির অনুসন্ধান চলছে। হাইড্রোজেন ব্যবহারের ধারণাটি বেশ পুরনো। মার্কিন জ্বালানি দপ্তর স্বীকার করছে, বিশুদ্ধ ও পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন জ্বালানির ব্যবহার শুরু হলে জীবনযাত্রার ধরনে নাটকীয় পরিবর্তন আসবে।

বিকল্প জ্বালানি চালিত মোটরগাড়ির ধারণাটি এখনো অনেকের কাছে আজগুবি মনে হতে পারে। কিন্তু গবেষকদের তৎপরতায় অজির্ত অগ্রগতির ফলে সে রকম ভাবনা থেকে সরে আসার সময় হয়েছে। ‘নর্থ আমেরিকান অটো শো’ শীষর্ক মোটরগাড়ি প্রদশর্নীতে চলতি বছর হাইড্রোজেনচালিত গাড়িও ঠাঁই পেয়েছে।  বিদ্যুৎচালিত গাড়ির বাজার এত দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে জ্বালানি ব্যয় ১ হাজার ৩০০ কোটি ব্রিটিশ পাউন্ড কমে যাবে। নতুন এক গবেষণায় এমনই তথ্য মিলেছে। পশ্চিম বিশ্বের পাশাপাশি চীনও থেমে নেই। সবচেয়ে বেশি কাবর্ন নিগর্মনকারী দেশগুলোর তালিকায় চীনও রয়েছে। চিন সম্প্রতি তাদের প্রথম হাইড্রোজেনচালিত ট্রাম চালু করেছে। বতর্মান বিশ্বে হাইড্রোজেন গ্যাসের ১০ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে। এ হাইড্রোজেন যেমন অবিশুদ্ধ, তেমনি এর উৎপাদন খরচও অনেক বেশি।

বিশ্বে প্রথম হাইড্রোজেনচালিত ট্রেন ইতিমধ্যেই চালু করেছে জার্মানি। কার্বন নিঃসরণহীন এই ট্রেন পরিবেশ দূষণকারী ডিজেলচালিত ট্রেনের বিকল্প হয়ে উঠবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ফরাসি টিজিভি ট্রেন নির্মাতা আলস্টোমের তৈরি করা দুটি উজ্জ্বল নীলাভ কোরাডিয়া আইলিনট ট্রেন সোমবার জার্মানির উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি শহর ঘোরে। কুক্সহাফেন, ব্রেমারহাফেন, ব্রেমারফোয়ারডে ও বুক্সটেহুডে শহরের মধ্যে ১০০ কিলোমিটারের রেলপথে এটি চলে। ২০২১ সালের মধ্যে লোয়ার সাক্সনি রাজ্যকে জিরো কার্বন নিঃসরণের ১৪টি ট্রেন দেওয়ার কথা রয়েছে বলে জানায় অ্যালস্টোম। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, জার্মানির অন্যান্য রাজ্যও এই ট্রেনের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। হাইড্রোজেন ট্রেনের জ্বালানির জন্য ‘ফুয়েল সেল’ ব্যবহার করা হয়, যা হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এই প্রক্রিয়ায় শুধু জলীয়বাষ্প ও জল বের হয়। ট্রেনে রাখা লিথিয়াম আয়নের ব্যাটারিতে অতিরিক্ত শক্তি সঞ্চিত থাকে। কোরাডিয়া আইলিনট ট্রেন এক ট্যাংক হাইড্রোজেন দিয়ে  এক  হাজার  কিলোমিটার  পথ চলতে পারে, যা ডিজেলচালিত ট্রেনের মতোই। বিদ্যুৎহীন রেললাইনে চলাচলকারী ডিজেলচালিত ট্রেনের বদলে পরিবেশবান্ধব ট্রেন আনতে এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে আলস্তম।

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী এবার জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহারের একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। মোটরগাড়িতে এ গ্যাস ব্যবহার করাটা যেমন সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হবে, তেমনি গাড়ির গতিও হবে তুলনামূলক বেশি।

বিজ্ঞানীরা শস্যের পরিত্যক্ত অংশ থেকে ওই হাইড্রোজেন জ্বালানি উৎপাদন করবেন। ফলে ভবিষ্যতে হয়তো একসময় রাস্তার আশপাশে পেট্রলপাম্পের জায়গা দখল করে নেবে জৈব জ্বালানি উৎপাদন কারখানাগুলো। ভার্জিনিয়া টেকের বিজ্ঞানীদের ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

ভার্জিনিয়া টেকের বিজ্ঞানীদের প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে হাইড্রোজেন উৎপাদনে কোনো গ্রিনহাউস গ্যাস নিগর্মন হবে না। পাশাপাশি কোনো ভারী ধাতব পদার্থ ব্যবহারেরও প্রয়োজন নেই।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 − three =