চতুস্পদ পরিবার

মানুষ দ্বিপদ প্রাণী। ছোট বেলা থেকে পড়া, দেখা এবং জানা এই সত্যটা যদি পুরোপুরি সত্যি না হয়? কি একটু থমকালেন তো? অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, তুরস্কে এমন একটি পরিবারের সন্ধান পাওয়া গেছে, যে পরিবারের পাঁচ সদস্য হাঁটার জন্য শুধু দুই পা নয়, দুই হাত আর দুই পা এক সঙ্গেই ব্যবহার করে!

দক্ষিণ তুরস্কের হাতাই প্রদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রামে উলাস নামের এই কুর্দিশ পরিবারটির সন্ধান মিলেছে যে পরিবারের ছ’জন চতুষ্পদ। তবে একজন মারা যাওয়ায় এই পরিবারের চতুষ্পদ সদস্য সংখ্যা বর্তমানে পাঁচ। এরা কেউই দুই পায়ে হাঁটতে পারেন না। তাদের হাঁটতে হলে পায়ের পাশাপাশি দুই হাত ব্যবহার করে হাঁটতে হয়!
তবে বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে গিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। একদল বিজ্ঞানী গবেষকদের মতে ওই পরিবারটি না-কী মানুষের উল্টো বিবর্তনের উদাহরণ। কিন্তু এমনটা কেন হবে, তা নিয়ে এখনো গবেষণা জারি। অপর পক্ষের মতে এটা জিনগত কোন ত্রুটি যা বংশানুক্রমিক ভাবে এসে থাকতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের বিবর্তন নানা পর্যায় দিয়ে এসেছে, মানুষের বিবর্তন হয়েছে বানর থেকে বা মতান্তরে মাছ থেকে। তবে এই চতুষ্পদ পরিবার দেখে মনে হচ্ছে তারা বানরের মতই ভঙ্গি করে হাটছেন!

তুরস্কের ওই পরিবারটি মূলত পাঁচ ভাই বোনের। তাদের বয়স ১৯ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। বিজ্ঞানীরা ২০০৫ সালে ওই পরিবারটি সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন। বিবিসি টু চ্যানেল এই পরিবারকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করে। এরপর থেকেই বিজ্ঞানীরা এই পরিবারটি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা শুরু করেন।
বিজ্ঞানীদের দাবি করেন, এই পরিবারটি উল্টো বিবর্তনের উদাহরণ। শিম্পাঞ্জি বা হনুমান জাতীয় প্রাণী থেকে মানুষের উদ্ভব এই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেই বিজ্ঞানীরা এই দাবি করছেন। উলাস পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা সব সময় সোজা হয়ে থাকতে পারেন না, এই ক্ষেত্রে তাদের ভারসাম্য নষ্ট হয়। আর হাঁটার সময় তারা দুই পায়ে ভর দিয়ে মোটেই হাঁটতে পারেন না! তাদের এই ক্ষেত্রে অবশ্যই দুই হাত ব্যবহার করে চার পায়ে হাটতে হয়।

বিজ্ঞানীদের দাবিকৃত ‘উল্টো বিবর্তন’ বিষয়টিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন তুরস্কের বিজ্ঞানী-গবেষক উনার ট্যান। তার মতে, এই পরিবারটি এই পরিবারটি হাঁটা সংক্রান্ত এক প্রকার বিরল রোগে আক্রান্ত। তাদের ভাষা এবং মস্তিষ্কের গড়নও আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের মতো নয়। তবে আধুনিক পোশাক পরতেও কোনও সমস্যা নেই এই ভাই-বোনদের। চার বোন তো হাতের কাজে রীতিমত পারদর্শী। বাড়ির অন্য কাজকর্মেও এরা স্বচ্ছন্দ। তাদের চিন্তা চেতনাও অনেকটা স্বাভাবিক। শুধু সমস্যা হাঁটা-চলার ক্ষেত্রেই। এই রোগের নাম তিনি দিয়েছেন ‘উনার ট্যান সিনড্রোম’।

বিজ্ঞানের যেহেতু কোন সীমা নেই, তাই এখনও কিছু গবেশক বিষয়টি নিয়ে তাদের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে হয় তো উলাস পরিবারের এই চতুষ্পদ সদস্য সম্পর্কে আরও অনেক অজানা তথ্য মিলবে। আমরা সেই আশাতেই রইলাম।

তথ্যসূত্র এবং চিত্র সৌজন্যে বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two + 18 =