এক মুঠো রোদ্দুর
শারদীয়া ভট্টাচার্য
উত্তর ২৪ পরগণার অন্যতম সংস্কৃতি চর্চাক্ষেত্র গোবরডাঙ্গা। শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতির ধারাবাহিক অনুশীলনে সমৃদ্ধ কলকাতা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের এই মফঃস্বল শহর। এই সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার ইচ্ছাই গোবরডাঙ্গায় জন্ম দিয়েছে একের পর এক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের। সেই গতিময় ধারারই নবতম সংযোজন ‘রোদ্দুর ‘। সংস্কৃতি উন্মুখ চার তৎপর তরুণ তরুণী পার্থজিত বণিক, দেবদীপ বণিক, ইমন হালদার ও শারদীয়া ভট্টাচার্যের সম্মিলিত প্রয়াসে আলো দেখছে ‘রোদ্দুর’। যাদের ট্যাগ লাইন ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি” তাদের বাঁধে সাধ্য কার?
১৪২৩ সনের ৪ঠা বৈশাখ অর্থাৎ ১৭ এপ্রিল’১৬, রবিবারের সকাল। গোবরডাঙ্গার বাবুপাড়ায় বরদাকান্ত পাঠাগারে এক বর্ষবরণের বৈঠকি আড্ডার মাধ্যমেই ঘটল রোদ্দুরের শুভসূচনা। সোহম রায়ের স্বতঃস্ফূর্ত এবং টানটান সঞ্চালনায় গোটা অনুষ্ঠানটি হয়ে উঠেছিল আকর্ষক। সোহমকে সহযোগিতা করেন পলাশ মুখোপাধ্যায়। স্থানীয় মানুষ তথা গুণীজনদের সমাবেশে সকালের জমজমাট আড্ডা যেন অন্য স্বাদ নিয়ে এসেছিল। উতসাহ দিতে সকাল সকাল হাজির হয়েছিলেন গোবরডাঙ্গা পুরসভার পুরপ্রধান সুভাষ দত্তও।
কি ছিল না এই আড্ডায়? সঞ্চারী, সহস্রায়ণের আবৃত্তি, শারদীয়া ও গৌতম বসুর গল্পপাঠ, সৈকত ভট্টাচার্যের গানে জমে উঠেছিল আসর। সবশেষে অর্ণব ঘোষের গানের ডালি মন্ত্রমুগ্ধ করেছে সকলকে। সৌমী মুখোপাধ্যায়ের সুরেলা নেতৃত্বে সংগীত সপর্যার গান দিয়ে শুরু করে দেবদীপ বণিকের গানে শেষ হওয়া গোটা আড্ডাটাই যেন বিনিসুতোর ঘন বুনোট। পবিত্র কুমার মুখোপাধ্যায়ের মুখে গোবরডাঙ্গা গোষ্ঠবিহার মেলার ইতিহাস শুনে স্মৃতিমেদুর হলেন অনেকেই। পুরনো কথায় ঋদ্ধ হল নতুন প্রজন্মও। “মনের ইচ্ছের ডানায় ভর করে যে সংস্কৃতির পাখিরা উড়তে চায়, তাদের রোদ্দুরের আলোয় স্নান করানোই আমাদের লক্ষ্য। অনুষ্ঠান শেষে উদ্যোক্তাদের মনের ভাব প্রকাশ পেল এমনই কাব্যিক আঙ্গিকে।
রবিবারের সকাল, ছুটির আমেজ আর সোনালী রোদ গায়ে মেখে এসেছিলেন সংস্কৃতি প্রেমী মানুষজন। নিরাশ হননি তারা, হতাশ করেননি তারা। জয়ন্ত বনিকের ভাবনায় তাল পাতার পাখা, আম পাতা, চাঁদ মালা দিয়ে সাবেক সাজে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল গোটা আসর। সুর এবং তালের মতই গুণী শিল্পী এবং যোগ্য দর্শকের সঠিক মেলবন্ধনে গোটা অনুষ্ঠান ছিল ছন্দময়।