এই কি স্বাধীনতা

প্রবীর কুমার চৌধুরী, গড়িয়া, কলকাতা

স্বাধীনতার সত্তর বছরে অনেক কিছুই ব্রাত্য,
স্বপ্ন আর উন্মাদনা থিতিয়ে গেছে অভাবে,
মূল্যবোধটিকে খুঁজতে হয় পুরানো পাতায় –
যা হারিয়ে গেছে সমাজে।
এখন নজরবন্দী শালীনতা,বেপরোয়া অবক্ষয় – অশালীনতাতে আনন্দ শান্তিহীন ঘরে।
স্বাধীনতার অন্তরালে কালিমা ছড়াও –
কে তুমি ছদ্মবেশী? মুখোশের আড়ালে?

স্বাধীনতা চুপি চুপি বলি-
তুমি আজও অধরা।
নিস্পৃহ যত আবেগ, যত ভালোবাসা,
তোমার পদভারে পদানত মানবিকতার মস্তক। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র, অধিকারবোধ, আজ –
দেওয়ালে টাঙ্গানো আবছা ছবি মাত্র,
প্রতিশ্রুতিগুলো লিপিবদ্ধ শুধু অসত্যের নামাবলি আজ।
আজও ক্ষুদিরাম কেদেঁ যায় রাজপথে –
বিপ্লবীদের আশাভঙ্গ,মিথ্যা স্বপ্ন,স্বাধীনতার নেই মানে,
প্রফুল্ল চাকির চোখভরা জল, বৃথাগেল রণাঙ্গনে ।
আজও রয়ে গেছে রহস্য, তবু অনেকে সহাস্য –
কৌতুহল মেটেনি, কেমনে হল নেতাজীর মৃত্যু।

পরাধীনতা নতুন মুখোশে আজও আঘাত হানে,
প্রাত্যহিক জীবনের হালখাতা আশাভঙ্গের অভিমানে।
শহরে, গ্রামে, অফিসে, কলে,কারখানায় –
শোষণ, বঞ্চনা,ব্যথাভরা ব্যর্থতার কাটে প্রহর গোনায়।
চেয়ে দেখো দূষিত বাতাস ভরা দুই ফুসফুসে,
স্বাধীনতা তুমি বিভীষিকা জাগাও রক্ত শুষে শুষে।
মিছিলে মিছিলে প্রতিবাদ দেখি ,প্রতিবাদ মায়ের বুকে,
ধর্ষণ,পণপ্রথায় বিদ্ধ অকূল প্রতিবাদ নারীর চোখে।
প্রতিটি রাতে স্বপ্ন ভাঙ্গে,ভাঙ্গে বেকারের মন,
প্রতিটি প্রহরে ব্যর্থতার আঘাতে বিপথে যায় যৌবন।

স্বাধীনতা তুমি এসেছিলে বহু আত্মবলিদানে-
মৃত্যুর মিছিল ডিঙ্গিয়ে,রক্তনদীতে স্নান করে,
বঞ্চিত,নিপীড়িত মানুষের মুখের হাসি ফেরাবার-
দৃঢ় প্রতিজ্ঞায়, আজ দেখি উল্টোপুরান –
অতৃপ্ত আত্মার কান্না শুনে তুমি ক্রোধান্বিত,রক্তচক্ষু-
দাম্ভিকতার পরাকাষ্ঠে শাসন কর নিষ্ঠুর বীজমন্ত্রে।
দেশের যত মহান সন্তান করেছিল আত্মদান,
আকাশে বাতাসে কাঁদে তাদের অতৃপ্ত আত্মা।
নীলাকাশে উড্ডীন পতাকার রং ফিকে,
জাতপাত,অসাম্য,শোষণ,জীবণযন্ত্রনা দিকে দিকে।
ব্যর্থতার প্রতিধ্বনি,স্বাধীনতাতো আমরা পাইনি,
এমন নির্লজ্জ,বেহায়া,পাপেদীর্ণ দেশ ওঁরা চাইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − 4 =