উপকারী আতা

আতাকে নিয়ে অনেকেই ঠাট্টা করেন, আতাকে গালির অংশ হিসেবেও ব্যবহার করতে শোনা যায় অনেকের মুখেই, কিন্তু জানা আছে কি আতা রীতিমত উপকারী একটি ফল? আতা হল অ্যানোনেসি (Annonaceae) পরিবারভুক্ত এক ধরনের যৌগিক ফল। এটি নোনা নামেও পরিচিত। এই ফলের ভিতরে থাকে ছোট ছোট কোষ। প্রতিটি কোষের ভেতরে থাকে একটি করে বীজ, বীজকে ঘিরে থাকা নরম ও রসালো অংশই খেতে হয়। পাকা ফলের বীজ কালো এবং কাচা ফলের বীজ সাদা। বীজ বিষাক্ত। এটি গুচ্ছিত ফল অর্থাৎ একটি মাত্র পুষ্পের মুক্ত গর্ভাশয়গুলো হতে একগুচ্ছ ফল উৎপন্ন হয়৷

পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই ফলটির প্রতি ১০০ গ্রামে পাওয়া যায় শর্করা ২৫ গ্রাম, জল ৭২ গ্রাম, প্রোটিন ১.৭ গ্রাম, ভিটামিন এ ৩৩ আই ইউ, ভিটামিন সি ১৯২ মিলিগ্রাম, থিয়ামিন ০.১ মিলিগ্রাম, রাইবোফ্লাবিন ০.১ মিলিগ্রাম, নিয়াসিয়ান ০.৫ মিলিগ্রাম, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড ০.১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৭ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২১ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৩৮২ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৪ মিলিগ্রাম। আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে নানা গুণে ভরা আতা।

আতার  উপকারিতা

১. হজমশক্তি বৃদ্ধিতে

খাবারের হজম শক্তিকে বাড়িয়ে তুলতে আতায় থাকা ফসফরাস উপকারী ভূমিকা পালন করে। এর খাদ্য আঁশ হজমশক্তি বৃদ্ধি করে ও পেটের সমস্যা দূর করে। তাই যাদের হজমের সমস্যা তারা এই আতা ফল খেলে অনেক উপকার পাবেন।

২. দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে

আতায় রাইবোফ্লাভিন ও ভিটামিন সি আছে। আর এই ভিটামিন উপস্থিতির কারণে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে। সেক্ষেত্রে আতা অনেক সহায়ক। যাদের চোখের সমস্যা তারা আতা খাবেন, এতে আপনার চোখের উপকার হবে।

৩. আমাশয়ে

আতা গাছের মূলের ছালের রস ২০/২৫ ফোঁটা ৭/৮ চা চামচ দুধ সহ খেতে হবে, তবে ছাগলের দুধ হলে ভাল হয়। আথবা আতা গাছের মূলের ছাল চূর্ণ ২০০ মিলিগ্রাম একবার বা দুইবার খেতে হবে। এর দ্বারা ২/৩দিনের মধ্যে আমাশয় ভালো হয়ে যাবে।

৪. হাড় মজবুত করতে

আতায় প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে। আর শরীরের হাড় গঠন ও মজবুত রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করতে সক্ষম এই ফলটি। তাই হাড় মজবুত করতে আতা খাওয়া উচিত।

৫. রক্তে নিস্তেজ ভাব কমে গেলে

ঠাণ্ডার কোনো ব্যধি না থাকলে তাহলে পাকা আতার শাঁসের রস ২/৩ চা চামচ করে সকালে ও বিকালে ২ বার খেলে রক্তের নিস্তেজ ভাবটা সেরে যায়। আবার যদি রস করা সম্ভব না হয় তাহলে পাকা আতা এমনি খেলেই চলবে।

৬. চুল ও ত্বকের যত্নে

আতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা একটি উন্নতমানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্রি রেডিক্যাল নিয়ন্ত্রণে রক্ষা করে। এছাড়া ত্বকে বার্ধক্য বিলম্বিত করে। এতে উপস্থিত ভিটামিন এ চোখ, চুল ও ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।

৭. অপুষ্টিজনিত কৃশতায়

শিশু, যুবক যুবতী বৃদ্ধ যে কোনো বয়সেরই হোক এ ক্ষেত্রে পাকা আতাফলের রস ২/৩ চা চামচ করে একটু দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়ালে ধীরে ধীরে পুষ্টি সঞ্চার হয় এবং কৃশতাও দূর হয়। অপুষ্টিজনিত কৃশতায় আতার রস অনেক উপকারি।

৮. উকুন নাশে 

মাথায় উকুন হলে নির্বংশ করতে আতা পাতার রস ২ চা চামচ তার সঙ্গে ২/১ চা চামচ জল মিশিয়ে চূলে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখলে উকুন মরে যাবে। একদিনে না গেলে ২/৩ দিন পর আবার লাগাতে হবে। এ ছাড়া পাতা বেটে লাগালেও উকুন মরে যাবে। তবে সাবধানে ব্যবহার করতে হবে যেন চোখে না লাগে, তাহলে চোখ জ্বালা করবে ও লাল হয়ে যাবে। তাছাড়া এই রস লাগানোর পর মাথা ঘুরতে থাকলে না লাগানো উচিৎ। তবে প্রথমে আধা চামচ জল মিশিয়ে লাগিয়ে দেখা ভালো।

৯. রোগ-প্রতিরোধে

আতায় থাকা উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। দুরারোগ্য ব্যাধিকে তাড়িয়ে আপনাকে সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে। এছাড়া আতার খাদ্য উপাদান এনিমিয়া প্রতিরোধ করে থাকে।

১০. রক্তপিত্তজনিত দাহরোগে

আতার শাঁসের রস রক্তের শক্তি বৃদ্ধিকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অল্প রক্তচাপের কারণে মাঝে মাঝে বমির সংগে রক্ত বের হয়। এ ক্ষেত্রে পাকা আতার রস ২/৩ চা চামচ করে খাওয়ালে সেরে যাবে। কারো কারো দেহে সর্বদা একটা দাহ ভাব আসে, আতা খেলে সেটাও চলে যাবে।

১১. খনিজ পদার্থসমূহ সরবরাহে

আতা শরীরের ডিএনএ ও আরএনএ সংশ্লেষণ, শক্তি উৎপাদনের জন্য ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি ও খনিজ পদার্থসমূহ সরবরাহ করে থাকে।

১২. হৃৎপিণ্ডের রোগ প্রতিরোধে

আতা ফলের ম্যাগনেসিয়াম মাংসপেশির জড়তা দূর করে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এর পটাশিয়াম ও ভিটামিন বি৬ রক্তের উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

তাহলে দেখতেই পাচ্ছেন, আতা কতখানি উপকারী। তাহলে এবার আতাকে নিয়ে ঠাট্টা না করে বরং বাড়ি ফিরবার পথে আতা কিনে নিয়ে যান পরিবারের সকলের জন্য।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 5 =