পাতে থাকুক ডিম
ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সবাই সচেতন। তবে ডিমের পুষ্টিগুণ ছাড়াও আরও কিছু বিষয় জানার আছে। চলুন জেনে নিই-
– ডিম কড়া সিদ্ধ খাওয়ার চাইতে আধা সিদ্ধ বা জল পোঁচ খাওয়া ভালো। এতে পুষ্টি বেশি পাওয়া যায়।
– অনেক সময় সিদ্ধ ডিমের খোসা ছিলতে গেলে ডিম ভেঙ্গে যায়। খোসার সঙ্গে উঠে আসে সাদা অংশটাও। এ সমস্যা থেকে বাঁচতে জলে এক চামচ বেকিং সোডা দিয়ে ডিম সিদ্ধ করুণ।
– ডিম অনেকদিন ভালো রাখতে সরু অংশটা উপরের দিক করে কেসের মধ্যে রাখুন। ভালো ফল পাবেন।
– চুনের জলে চুবিয়ে রাখলে ডিম দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে। ফ্রিজে রাখলে থাকে আরও বেশিদিন।
– অমলেট করার সময় সামান্য একটু দুধ মিশিয়ে দিতে পারেন। এতে অমলেট নরম আর ফুলকো হবে।
– রুক্ষ চুলের জন্য ডিম অসাধারণ এক প্রোটিন প্যাক। ডিম ফঁটিয়ে নিয়ে চুলে মাখুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
– ডিমের সমস্ত ক্যালরির বেশিরভাগ থাকে তার কুসুমে। একটা ডিমের সাদা অংশে মাত্র ৫০ ক্যালোরি। বাকিটা কুসুমেই থাকে। তাই কুসুম বাদ দেবেন না।
– ডিম পোঁচ করার সময় তেলের মধ্যে আগে একটু লবণ দিন, তারপর ডিম। তাহলে আর প্যানে লেগে যাবে না।
– সিদ্ধ ডিম তেলে ভাজার সময় কাঁটা চামচ দিয়ে কেঁচে নিন। নাহলে ফুটে উঠে বিরাট দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।
– আগুনে পুড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ লাগিয়ে দিন। আরাম তো হবেই, ফোসকা পড়বে না এবং দ্রুত সেরেও যাবে।
হাতের কাছে ডিম রাখুন। ব্যবহার করুণ, সুস্থ থাকুন!
ডায়াবেটিসে উপকারী ডিম
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডিম খাওয়া কি ঠিক? এ নিয়ে অন্তহীন বিতর্ক আছে। অনেকে ডিম এড়িয়ে চলেন, অনেকে আবার খান। মূলত কোলেস্টেরলের ভয়েই ডিম এড়িয়ে চলেন ডায়াবেটিস রোগীরা। তবে ডায়াবেটিসের জন্য ডিম ক্ষতিকারক নয়, বরং উপকারী।
সম্প্রতি আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, ডিম খেয়ে টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৩৭ শতাংশ কমানো সম্ভব। সপ্তাহে অন্তত চারটা ডিম খেলে এ সুবিধা পাওয়া যায়।
ইস্টার্ন ফিনল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ২ হাজার ৩৩২ জন ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাসের ওপর পাঁচ বছর ধরে (১৯৮৪-১৯৮৯) নজর রাখেন। এদের বয়স ৪২ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। প্রায় ১৯ বছর পর দেখা যায়, তাদের মধ্যে মাত্র ৪৩২ জন টাইপ-টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন।
কোলেস্টেরল ছাড়াও ডিমে বেশ কিছু পুষ্টিকর উপাদান আছে। যা শর্করার বিপাকে সহায়তা করে। এতে টাইপ-টু ডায়াবেটিসের প্রবণতা কমে।
এ ছাড়া ডিমের সাদা অংশে বিশেষ উপকার আছে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ওবেসিটির জরিপে দেখা গেছে, প্রতিদিন সকালে দুটো ডিমের সাদা অংশ শরীরে চর্বি কমায় অন্তত ৩৪ শতাংশেরও বেশি।
ডিমের সাদা অংশ উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। তাই এটা খাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই হজম প্রক্রিয়ার গতি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। আর হাই-প্রোটিন খাবার এমনিতেই চর্বি গলিয়ে দেয়। তাই স্লিম শরীরে পরিশ্রম করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডিমের ভূমিকা ইতিবাচক।
তবে ডিমের সাদা অংশে সোডিয়ামের পরিমাণ খানিকটা বেশি। তাই বেশি বেশি খাওয়ার আগে পুষ্টিবিদের পরামর্শ জরুরি।
ডিম খাওয়া কি ঠিক হবে?
ডিম মানব মানবশরীরের জন্য উপকারী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ডিম খাওয়ার বেলায় নানা প্রশ্নের উদ্ভব হতে দেখা যায়। এটা কি সবার জন্য উপকারী?
অনেকে ডিম এড়িয়ে চলে ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে। কেউ আবার রক্তে চর্বির পরিমাণ কম রাখতে ডিম খান না। হৃদরোগকে ভয় পেয়েও ডিম এড়িয়ে চলতে দেখা যায়। কিন্তু আসলেই কি ডিম এগুলোর জন্য দায়ী?
চিকিৎসকেরা কিন্তু বলেন মোটেই দায়ী নয়। বরং প্রতিদিন সকালের জলখাবারে একটি ডিম মাসে প্রায় ৩ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমাতে পারে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক ডিমের যত উপকার:-
১) হাজারো ভিটামিনের উৎস ডিম। আপনি যে সব খাবার খাচ্ছেন তাকে এনার্জি বা শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে ডিমের ভিটামিন বি-১২।
২) ডিমের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ। যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। ডিমের কেরোটিনয়েড, ল্যুটেন ও জিয়েক্সেনথিন বয়সকালের চোখের অসুখ ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। এ একই উপাদান চোখের ছানি কমাতেও সাহায্য করে।
৩) কেবলমাত্র ডিমেই রয়েছে ভিটামিন ডি। যা পেশীর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
৪) আছে ভিটামিন ই। এটি কোষ এবং ত্বকে উৎপন্ন ফ্রি র্যাডিক্যাল নষ্ট করে দেয়। এবং স্কিন ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
৫) ডিমের সবচেয়ে বড় গুণ, এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। ব্রেকফাস্টে রোজ একটি ডিম মানে সারাদিন ক্ষুধা কম হবে, খাওয়া হবে কম। গবেষণায় দেখা যায়, শরীর থেকে দিনে প্রায় ৪০০ ক্যালোরি কমাতে পারে সকালে একটি ডিম খাওয়া।
তার মানে মাসে ওজন কমার পরিমাণ প্রায় তিন পাউন্ড। সমীক্ষা বলছে, ৬৫% বডি ওয়েট, ১৬% বডি ফ্যাট, ৩৪% কোমরে জমে থাকা মেদের পরিমাণ কমাতে পারে ডিম!
৬) ডিমে আছে আয়রন, জিঙ্ক, ফসফরাস। মেনস্ট্রুয়েশনের জন্য অনেক সময় অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। শরীর তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ডিমের মধ্যে থাকা আয়রন এ ঘাটতি মেটাতে পারে সহজেই।
জিঙ্ক শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। আর ফসফরাস হাড় ও দাঁত মজবুত করে।
৭) প্রত্যেক নারীর শরীরে রোজ কমপক্ষে ৫০ গ্রাম প্রোটিনের দরকার। একটি ডিমে থাকে ৭০-৮৫ ক্যালোরি বা ৬.৫ গ্রাম প্রোটিন। সুতরাং চাঙা থাকতে নারীরা রোজ ডিম খেতেই পারেন।
৮) ২০০৩ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় একটি সমীক্ষায় দেখিয়েছে অ্যাডোলেশন পিরিয়ডে বা পরবর্তী কালে সপ্তাহে ৬টি করে ডিম নিয়মিত খেলে প্রায় ৪৪% ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
সঙ্গে এটাও বলা হয়েছে, ডিম হৃৎপিণ্ডে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। ফলে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনাও অনেকটা কম থাকে।
৯) শরীর সুস্থ রাখার আরও একটি জরুরি উপাদান কোলাইন। কোলাইনের ঘাটতি অনেক সময় কার্ডিওভাসকুলার, লিভারের অসুখ বা নিউরোলজিক্যাল ডিজ-অর্ডার দেখা দিতে পারে।
একটি ডিমে প্রায় ৩০০ মাইক্রোগ্রাম কোলাইন থাকে। যা কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম, স্নায়ু, যকৃত্ ও মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
১০) নতুন সমীক্ষায় জানা গেছে, ডিম কোলেস্টেরল বাড়ায় না। দিনে দুটো ডিম শরীরের লিপিড প্রোফাইলে কোনো প্রভাব ফেলে না। বরং ডিম রক্তে লোহিতকণিকা তৈরি করে।
১১) প্রোটিন শরীর গঠন করে। আর প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করে অ্যামিনো অ্যাসিড। একুশ ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড এ কাজে প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু আমাদের শরীর অতি প্রয়োজনীয় নয়টি অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরি করতে পারে না।
তার জন্য আমাদের প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট নিতে হয়। খাবারের মধ্যে এ প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট হল ডিম। যা ঝটপট শরীরে প্রোটিন উত্পাদন করতে পারে।
১২) নখ ভেঙে যাচ্ছে চটপট? চুলের স্বাস্থ্য একেবারেই বেহাল? চোখ বন্ধ করে রোজ ডিম খেয়ে যান। ডিমের মধ্যে থাকা সালফার ম্যাজিকের মতো নখ আর চুলের মান উন্নত করবে।