পাশে আছে পূর্বাশা
আয়লার পর প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল সুন্দরবনের জঙ্গল বেষ্টিত প্রান্তিক দ্বীপগুলি। সাতজেলিয়া চরঘেরি, পরশমনি লাহিরিপুর, শান্তিগাছি এমন নানা এলাকা ভেসে গিয়েছিল নোনা জলে। ভেঙে গিয়েছিল বসত বাড়ি, ডুবে যাওয়া ক্ষেতে মরা ফসলের নীরব আর্তনাদ। অসহায় মানুষগুলি কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। সেই সময় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল পূর্বাশা। মানুষের জন্য চাল, ডাল, গৃহস্থালী জিনিসের ব্যবস্থার পাশাপাশি ওষুধ মেডিক্যাল ক্যাম্পও করা হয়েছিল পূর্বাশার উদ্যোগে। ২০০৯ সালের ২৫ শে মে, জন্মের পর শুধু দুর্যোগের সময়ই নয়, পূর্বাশা ধীরে ধীরে সুন্দরবনের এই সব গ্রামের মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে বিভিন্ন কাজে।

চরঘেরী গ্রামের দীর্ঘ নদীবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মানুষজনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় পিছিয়ে গিয়েছে। এই সময় চরঘেরীর চরে প্রথম ম্যানগ্রোভ বীজ রোপন শুরু হয় অর্থাৎ ম্যানগ্রোভ অঞ্চল গড়ে উঠলে নদীর বাঁধ রক্ষা হবে, বাঁচবে লোকালয়। পাশাপাশি ২০০৯, ২০১৭, ২০১৯ এই তিন বছরে গাছের বীজ রোপন ও সংরক্ষণ করার কাজ হয়েছে। বর্তমানে এই কাজ আরও নিবিড় ভাবে এগিয়ে চলেছে পাশাপাশি এই চরে গড়ে তোলা হয়েছে রাজকাকড়াঁ সংরক্ষণ এলাকা। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রেখে উন্নয়নের জন্য অক্লান্ত ও নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন পূর্বাশার কর্মীরা।

গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়মমাফিক প্রতিবছর শিখন সামগ্রী ও বয়স্কদের শাড়ি কম্বল দেওয়ার পাশাপাশি গড়ে তোলা হয়েছে ছোট্ট একটি লাইব্রেরী যেখানে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে। মেডিক্যাল ক্যাম্পের পাশাপাশি নতুনভাবে অ্যাম্বুলেন্স চালু করা হয়েছে। গ্রামের বাঘে ধরা বিধবাদের যেমন এক ফ্রেমে এনে নজির সৃষ্ঠি করেছে তেমনই স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে গ্রামের ছেলে মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে ভাল কাজের নজির সৃষ্টি করে চলেছে।

জোর দেওয়া হয়েছে আয়লার পরে ক্ষতিগ্রস্থ জৈব প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায়। এই সব অঞ্চল থেকে ক্রমেই কমে আসছিল পাখপাখালির কুজন। পূর্বাশার কর্মীরা গাছে গাছে মাটির ভাঁড় বেঁধে কৃত্রিম বাসা তৈরি করাতে পাখির আনাগোনা বেড়েছে। লাল-নীল-হলুদ কাঁকড়া ফের আধিপত্য বিস্তার বিস্তার করেছে। জোয়ার-ভাটার মাঝে ফের ধীরে ধীরে মাথা তুলেছে জীবন। এখানেই থেমে নেই, পূর্বাশার কর্মীরা সুন্দরবন নিয়ে বিভিন্ন স্কুল কলেজে সেমিনারের মাধ্যমে পরিবেশ সুন্দরবন সম্পর্কে নতুন নতুন চিন্তাভাবনা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

শুধু সুন্দরবন নয় উত্তরবঙ্গেও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে পূর্বাশা। প্রত্যেক বছর ময়নাগুড়ি ব্লকের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের শিখন সামগ্রী দেওয়া থেকে শুরু করে সরস্বতী চাবাগানে আদিবাসীদের গ্রামের মানুষজনকে শাড়ি ও কম্বল দিয়ে আত্মীয়তা তৈরি করেছে। চা বাগান অঞ্চলের পদ্মশ্রী প্রাপ্ত সমাজকর্মী করিমুল হক এর গ্রামের মানুষজন জামাকাপড় ও মানব সেবা সদন তৈরি করার জন্য আর্থিক সাহায্য করছেন।

সারা বিশ্ব যখন করোনা ভাইরাসে গৃহবন্দী, আমাদের দেশেও প্রভাব পড়েছে তার। সুন্দরবনের বেশ কিছু দ্বীপ আক্ষরিক অর্থে সারা বছরই যেন লকডাউন এর মতই থাকে। যাই হোক এই লকডাউন পর্বে খাদ্যসংকট সুন্দরবনের সাধারণ মানুষের কাছেও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুঃসময়েও সুন্দরবনবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছে পূর্বাশা। চাল, ডাল, সোয়াবিন, পেঁয়াজ, আলু, তেল, ডেটল, সাবান ইত্যাদি দিয়ে চলেছে সাধ্য মত। “যতদিন পারবেন, যতটুকু পারবেন, এভাবেই সব দিক থেকে এই মানুষগুলির পাশে দাঁড়াবেন তারা”; পূর্বাশার তরফে উমাশঙ্কর মণ্ডলের গলায় শোনা গেল এমনই আশার সুর। তাদের এই কাজে যারা পাশে থেকেছেন, উমাশঙ্করবাবু ধন্যবাদ দিতে ভোলেননি তাদেরও। সুন্দরবন, মুর্শিদাবাদ উত্তরবঙ্গ মিলিয়ে প্রায় ২২ জন স্বেচ্ছাসেবক নিরসল পরিশ্রম করে চলেছেন এই সংগঠনের মধ্যে থেকে।

ভাল কাজে পাশে থাকে অবেক্ষণও। তাই আমাদের তরফ থেকেও রইল শুভেচ্ছা এবং এগিয়ে যাওয়ার কামনা।
This works really spellbound me. I convey my gratitude and sincere thanks to Umasankar Mondal and entire team of Purbasha Eco-tourism, for their Nobel initiative for people of Sundarban….
With regards
Shasanka Gayen