ফুলটু ফুচকা

সুপ্রভাত বিশ্বাস, ঠাকুরনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

 

ট্রেন থেকে নেমে রাস্তায় উঠতেই চক্ষু ছানা বড়া। এক ফুচকার দোকানের সামনে লেখা ১০ টাকায় ২০ টা ফুচকা। আমি সব থেকে বেশি ১০ টাকায় ৮ টা ফুচকা পেয়েছি। নিজেকে আর সামলাতে না পেরে প্রায় হন্ত দন্ত হয়ে ফুচকার দোকানের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, এটা কি সত্যি? দোকানদার আমার হাতে কাগজের প্লেট ধরিয়ে বলল আগে খান তারপর নিজেই হিসেব বুঝবেন। ঘটনাস্থল বনগাঁ রাণাঘাট লাইনের আকাইপুর স্টেশন।

যতই হোক বর্তমান যুগের ছেলে টক ঝালটাই আগে পছন্দ করি। সত্যি সত্যি সে আমায় ১০ টাকার ২০ টা ফুচকা দিল তার উপর আবার ১ টা ফাউ। নিজেকে যেন রাজা মনে হচ্ছিল। পকেট বেশি খসল না ওদিকে মন ভরে ফুচকা খেতে পারলাম। ফুচকা খেতে খেতে গল্পে মেতে গেলাম ফুচকা বিক্রেতার সঙ্গে। বছর ২৬ এর শুভ দেব নামে ওই ফুচকা বিক্রেতা আকাইপুর এলাকার বাসিন্দা। তার দোকানের ফুচকা খেতে নাকি বহু দূর দূর থেকে মানুষ আসেন তার দোকানে। গ্রামের দিকে ফুচকার দাম কম ঠিকই কিন্তু তা বলে ১০ টাকায় যে ২০ টা পাওয়া যাবে স্বপ্নেও ভাবা যায় না। কিন্তু এটাকেই বাস্তব রূপ দিয়েছেন শুভ। তাতেই বাজিমাৎ।

ফুচকা খেতে খেতেই মনে হল এমন সুস্বাদু খাবারের একটু হাল হদিশ জানা কর্তব্য। খোঁজ নিয়ে দেখলাম ফুচকা অত্যন্ত বনেদি এবং অতি জনপ্রিয় খাবারের মধ্যেই পড়ে। কোথাও কোথাও শোনা যায় মগধ বংশ থেকে নাকি ফুচকার উৎপত্তি। কিন্তু মহাভারতেও কিন্তু ফুচকার অস্তিত্ব ছিল। ইন্টারনেটে ফুচকা নিয়ে একটু চোখ বোলালেও মিলবে ফুচকার ইতিহাস। মহাভারতের নব্য বিবাহিত দ্রৌপদী বাড়িতে ফেরার পর শাশুড়ি কুন্তী দ্রৌপদীকে বলেন এমন কিছু বানিয়ে খাওয়াতে যাতে তার মন ভরে যায়। আর তাই দ্রৌপদী ময়দার মণ্ড বানিয়ে তা দিয়ে ছোট ছোট পুরি তৈরি করে আলুর সবজী দিয়ে তেঁতুল গোলা জল সহযোগে পরিবেশন করে। তাতেই মুগ্ধ হন কুন্তী। আর সেই খাবারই আজকের ফুচকা।

ভারতে ফুচকা বহু নামে পরিচিত। মধ্য প্রদেশে ফুল্কি নামে, উত্তর প্রদেশে গোলগাপ্পা নামে, ঝাড়খণ্ড বিহারে গুপ চুপ নামেও পরিচিত ফুচকা। বর্তমানে ইংরাজিতে ফুচকাকে কিং অফ অল স্ন্যাক্সও বলা হয়। পাড়ার মোড়ে, মেলার মধ্যে, রাস্তার পাশে আমি কোনদিন ফুচকা বিক্রেতাকে একাকী কর্মহীন অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। সব সময়ই কেউ না কেউ ফুচকা খাচ্ছেন। ক্রেতাদের মধ্যে অল্প বয়স্কদের প্রাধান্য থাকলেও ফুচকা খেতে বয়স্কদেরও খুব একটা অনীহা লক্ষ্য করিনি। সব বয়সের সব মানুষের প্রিয় এমন খাবার বড় একটা মেলে না। তাই তো বলছি আপনিও নিশ্চয় একজন বিশিষ্ট ফুচকাপ্রেমী? তাহলে আপনাকেও একবার যেতেই হবে আকাইপুরে শুভর কাছে। এই বাজারে ১০ টাকায় ২০ টা; থুড়ি ২১ টা ফুচকা খাওয়ার সুযোগ ছেড়ে দেওয়া যায় নাকি!

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 1 =