রাজার টোপর চুরি

           দীপকুমার ##

 একদিন মন্ত্রীর স্ত্রী মধ্য রাতে স্বপ্ন দেখে কাঁদতে শুরু করলো, মন্ত্রীর ঘুম ভেঙে গেল l মন্ত্রী অবাক হয়ে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, 

মন্ত্রী : কি হয়েছে?   মধ্যে রাতে এমন করে কাঁদছো কেন? 

স্ত্রী : ওগো কবে তুমি রাজা হবে,  কবে আমি রানী হবো? তুমি কি চিরকালই রাজার ভাঁড়ামি করে যাবে? আমার কি এ জনমে আর রানী হওয়ার সাধ মিটবেনা? 

মন্ত্রী মনে মনে বললো সাধ তো নয় যেন আমার সাড়ে সব্বোনাশ করা ! রানী বললো, “কি গো কিছু বললে?  “

মন্ত্রী :না, মানে এমন এমন দু স্বপ্ন দেখতে নেই তাতে অকল্যাণ হতে পারে !

স্ত্রী : তার মানে তুমি রাজা হবেই না ! আমি চিরকালই এমন ফড়িং মন্ত্রীর স্ত্রী হয়ে কাটাবো, তুমি যদি রাজা হওয়ার প্রতিজ্ঞা না করো এক্ষুনি, তাহলে আমি সকালেই  বাসি কাপড়ে বাপের বাড়ি চলে যাবো… হু… বলে দিলাম !

মন্ত্রী মনে মনে বললো, ” কি ফাঁদে ফেঁদে গেলাম রে বাবা ! “

অতি উৎসাহে স্ত্রী বললো,” আচ্ছা শোনো, এখন রাজ্যের রাজা না হলেও চলবে,  সিংহাসনের রাজা না হলেও চলবে, সৈন্যের রাজা না হলেও চলবে, এখন আপাতত রাজার টোপরের অধিকারী হও l “

মন্ত্রী : মানে, 

স্ত্রী : মানে তুমি রাজার মাথার টোপর চুরি করে নিয়ে আসবে কাল l ঘরে পড়বে l তুমি রাজা সাজবে আর আমি রানী l 

মন্ত্রী একটু চোখ উপরে তুলে রাজা হওয়ার সুখ কল্পনা করে খুবই আনন্দিত হলো, বললো বাহ্ এই না হলে তুমি আমার গিন্নি !  কাজটা যদিও বিপদ জনক তবুও বুদ্ধির দ্বারা বিনা যুদ্ধে নিজের ঘরে রাণীর রাজা হওয়া যাবে – ঠিকই আছে, দেখা যাবে, এখন ঘুমাও দেখি l

পরের দিন রাজা শিলাদিত্যের রাজসভায় সকলে বসে আছেন l ঘোড়ায় চড়ে ডাঙরুবাজের নবাবের দূত এসে বললেন, সামনে  মাসের কৃষ্ণপক্ষের দ্বিতীয় দিনে ডাঙরুবাজের নবাব আপনার রাজ্যে আসছেন l পিতৃ বিয়োগের পরে তাঁর অবসন্ন কাটানোর জন্যই তার এ সিদ্ধান্ত l তাই আপনি নবাবের জন্য যথা যথ আপ্যায়ন, খাতির ব্যবস্থা প্রদর্শন করবেন নবাব এ প্রত্যাশায় আর্জি পাঠিয়েছেন l 

রাজা শিলাদিত্য বললেন বাহ্ সেতো খুবই সু খবর !

নবাব কে খাতির দেখাতে পারলে আমিও ধন্য হবো !

এ তো পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার, যে নবাব আমার এখানে থেকে তাঁর মন কে উৎফুল্ল করতে চেয়েছেন, যাও দূত নবাব কে যেয়ে বলো নবাবের খাতির যত্নে রাজা শিলাদিত্য নিজেই থাকবেন, সেবা যত্নের কোনোও ত্রুটি থাকবেনা l 

রাজাকে সম্ভোধন জানিয়ে দূত 

ঘোড়ায় চেপে টগবগ টগবগ করে  ধুলো উড়িয়ে চলে গেলেন l 

রাজা শিলাদিত্য আনন্দিত হলেও আবার দুশ্চিন্তায় ডুবলেন l সকলকে ডেকে বললেন, শোনো সভাসদ গণ নবাব আসছেন আমার রাজ্যে তাই তোমরা তোমাদের সর্বোত্তম পরিশ্রম দিতে শুরু করো, নবাব  যেন কিছুতেই অখুশি হয়ে ফিরে না যান আমার রাজ্যে এসে l 

রাজসভার ছড়াকার ছড়া কাটলো –

“নবাব আসছে নবাব আসছে 

রাজা শিলাদিত্যের সভায়, 

যাঁর যাঁর কাজে লেগে পড়ো 

অলসতা ছেড়ে সবাই ” l

রাজা শিলাদিত্য বললেন, বাহ্ ছড়াকার বাহ্ !

হ্যা, সবাই লেগে পড়ো সবার কাজে নবাবের মন জয় করতেই হবে যে… 

আচ্ছা,  সবাই কে দেখছি “নেপো ” কোথায় নেপোকে দেখছিনা যে? 

ডাকো ডাকো নেপো কে ডাকো দেখি… 

নেপোর প্রবেশ l 

শিলাদিত্য : ওই তো নেপো এসেগেছে 

আমার খুশির জাহাজ ভেসে গেছে 

সভার জোতিষী : বাহ্ ! রাজা তো বেশ ভালোই ছড়া কাটলেন দেখছি… 

শিলাদিত্য : ওই খুশিতে একটু বেরিয়ে এলো আর কি l

নেপো : কি ব্যাপার ! আজকে দেখছি সূর্য আকাশে না উঠে যেন রাজা শিলাদিত্যর রাজসভায় উঠেছে !

একেবারে সবার মুখ খুশির আলোতে যেন ঝকমক করছে কি ব্যাপার !…

মন্ত্রী মনে মনে বললো, হু… যেন নবাব এসেছে ! চলন বলন দেখে গা জ্বলে যায় একেবারে… আর রাজার আদিখ্যেতাও দেখে পারিনে !

রাজা শিলাদিত্য : নেপো, কয়েকদিনের মধ্যেই নবাব আসছেন আমার এখানে, তাই মগজে সান দাও, ভালো ভালো গল্প শুনিয়ে খুশি করো নবাব কে, নবাব খুশি হলে দু হাত ভরে  ভালো বকশিস ও পাবে l

নেপো : ও তাই ভাবি ! কোনও কিন্তু যে একটা লুকিয়ে আছে তা আন্দাজ করতে পারছিলাম l

মন্ত্রীর চোখ যায় রাজার মাথার টোপরের দিকে, মনে মনে টোপর পড়ে সিংহাসনে রানীকে নিয়ে বসে আছে এমনটা কল্পনা করছে… 

 রাজা শিলাদিত্য ঘোষণা করে, আজকে তাহলে সভা এ পর্যন্তই… 

মন্ত্রীর কল্পনা ভেঙে যায় l 

রাজা শিলাদিত্য তার মহলে প্রবেশ করেন, টোপরটি যথা স্থানে রেখে পাশে রানীর কক্ষে খবরটি জানাতে যায় যে নবাব তার এখানে কয়েক দিন কাটাতে আসছেন l সেই ফাঁকে মন্ত্রী সুকৌশলে রাজার ঘরে ঢুকে, রাজার টোপরটি নিয়ে ধূতির মধ্যে দুই উরুতে চেপে নিয়ে রাজ সভা থেকে পালিয়ে যায়, আর মনে মনে বলতে থাকে যা, যা হবার দেখা যাবে, গ্গিন্নি কে খুশি না করতে পারা ওই অশান্তির কাছে সমস্ত অপরাধের সাজা তুচ্ছ !

মন্ত্রী বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে টোপর টি দেখাতেই অতি আশ্চর্য হয়ে আনন্দের সাথে টোপরটি হাতে নিলো, আর বললো, ও মা তুমি আমাকে এত ভালোবাসো? মুখের কথা বাসি না হতেই তুমি আমার এমন স্বপ্ন পূরণ করে দিলে, ধন্য আমি !

মন্ত্রী : বাহ্ করবোনা,  তুমি আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র রানী, তোমার আবদার কি আমি সহজে ফেলতে পারি !

রানী পালঙ্কের পরে মন্ত্রীকে বসিয়ে  মাথায় টোপর টি পরিয়ে বললে, রাজ্য নেই তো কি হয়েছে ! হাতি ঘোড়া সৈন্য নেই তো কি হয়েছে  রাজার মুকুট তো আছে ! 

আজ থেকে তুমি রাজা আর আমি রানী !

মন্ত্রী : আস্তে ! আস্তে বলো ! দেয়ালেরও কান আছে  ! 

মন্ত্রী : শোন্ এটি সাধারণ মুকুট নয় l এই রাজ্যের সমস্ত সম্পত্তি বেঁচলেও এই টোপরের একটি মণি-মুক্তও মিলবেনা ! এটি নবাবের পিতামহের মুকুট l জঙ্গলে একসাথে হরিণ শিকারে গিয়েছিলেন একদিন নবাব, সাথে ছিলেন আমাদের রাজা শিলাদিত্য  l রাজা শিলাদিত্য তখন নবাবের সভার সেনা প্রধান l নবাব বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হন, মানে কয়েকটা বাঘ আক্রমণ করে , অনেক সৈন্য ভয়ে পালিয়ে গেলেও শিলাদিত্য একাই লড়ে সেদিন বাঘের হাত থেকে নবাব কে প্রাণে বাঁচিয়ে ছিলেন l আর তারই উপহার হিসেবে নবাব এই রাজ্য আর ওই দামি মুকুট উপহার দেন l 

তাই সাবধান, রাজা যখন জানতে পারবেন যে তার টোপর চুরি হয়েছে, পাওয়া যাচ্ছে না, তখন রাজা শিলাদিত্য অনাহারী পাগলা কুকুরের মতো হন্যে হয়ে খুঁজবেন ! তাই এটি কে আমাদের সাবধানে লুকিয়ে রাখতে হবে, যাতে করে একটি পিঁপড়াও টের না পায় l 

স্ত্রী : বুঝলাম, বজ্রের আলো দেখলাম যখন শব্দ তো তখন শুনতেই হবে !

মন্ত্রী : বেশ বলেছো… !

সেদিন রাতটা কেটে গেল l

 সকালে যখন শিলাদিত্য চন্দ্র রাজসভায় যাবেন বলে তৈরী হচ্ছেন তখন টোপর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না l সমস্ত রাজবাড়িতে যেন একটি শব্দ শুধু শোনা যাচ্ছে, 

রাজার টোপর চুরি ! রাজার টোপর চুরি! রাজার টোপর চুরি !

নেপো দাদুর বাড়িতে যখন পেয়াদা খবর খবর নিয়ে গেল, তখন নেপো দাদু তার নাতি নাতনিদের সাথে গোয়াল ঘরে বাতা বাঁধছে আর মজার মজার গল্প বলছে l

যেমন, টুরি বললো,  ও দাদু তোমার এত বুদ্ধি আছে, এত সব কিছু জানো তা তোমার মাথায় টাক কেন?  একটু তো চুল গজিয়ে নিতে পারো…? 

নেপো দাদু হেসে বললো,  ওরে দেখ দিন দিন শরীরের ওজন অনেক বেশি  বেড়ে যাচ্ছে, নিজের ভার নিজেই বইতে কষ্ট   হচ্ছে, শুধু শুধু চুলের ভার বইবো কেন বল… 

মাদুলি হেসে বলে দাদু, চুলের ভার বুঝি তোমার কানের চেয়েও ভারী… !

নেপো : তা যা বলেছিস !

পেয়াদা উপস্থিত, হাঁফাতে হাঁফাতে বললো নেপো দা ! নেপো দা ! সব্বোনাশ হয়ে গেছে, মহারাজের মুকুট চুরি হয়ে গেছে ! রাজ মুকুট কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, এক্ষুনি একবার রাজ দরবারে চলে এসো, বুঝতেই পারছো মহারাজের কি অবস্থা !

নেপো দা জিজ্ঞেস করলো পেয়াদাকে, আচ্ছা, রাজবাড়িতে শুধু রাজার মুকুট ছাড়া আর  কিছু চুরি গেছে কিনা, 

উত্তরে পেয়াদা বললো : না, নেপো দা আর সব ঠিকই  আছে, রাজার মুকুটের পাশে রানীমার হীরের মুকুট সোনার গহনা আরও যা যা থাকে তা সবই আছে,,, আমি যাই মন্ত্রী মশাই কে খবর টা দিতে হবে তুমি তাড়াতাড়ি পৌঁছাও নেপো দা l 

পেয়াদা চলে গেল… 

নাতি টিপু বললো, দাদু? এটা কি করে সম্ভব, যে চোরে চুরি করলো বেচে বেচে চুরি করলো, অন্য সব কিছু ফেলে শুধু রাজার টোপর নিয়ে পালালো !

নেপো : আমিও তাই ভাবছি, তোরাও ভাব… মাথা যাঁর যাঁর ভাবনা তার তার 

ভাঙা : দাদু আমরা কি আর রাজার মুকুট পরতে পারবো?  চোরে তো পরে নিলো !

নেপো :ওরে মুকুট কি আর মাথায়?  থাকে সে তো থাকে কপালে !

চল উঠ দেখেনি সব, রাজার বাঁধন খুলে গেছে আর গোয়াল বেঁধে লাভ নেই, যা তোরা দিদার কাছে যেয়ে চিড়ে গুড় খেয়ে খেলতে লেগে যা, আমার আর হাতে সময় নেই শুনলি তো সব…

গোপাল খুব জোরে হেটে রাজবাড়িতে এসে দেখে সবাই খুব চিন্তায় আছে গালে মুখে হাত দিয়ে বসে আছে… রাজা মূর্তির মতো যেন কেশর ছাড়া সিংহের মতো সিংহাসনে বসে আছে l

নেপো আসাতে রাজা একটু নড়ে চড়ে বসলো, সেই ছাড়া আর যেন কোনও ভরসা নেই l 

রানী ঘোষণা করলেন, যে চোরকে ধরে দিতে পারবেন, উত্তরের বিলের দশ বিঘা জমি এবং একশো স্বর্ণ মুদ্রা তাকে দেওয়া হবে l

এতক্ষনে মন্ত্রী এলো… 

এসে বললো, 

মন্ত্রী : রাজা মশাই আমি খবর পেয়েই ছুটে চলে এসছি, আপনার মতো একজন রাজা থাকতে, আমার মতো একজন মন্ত্রী থাকতে এত গুলো সৈন্যসামন্ত থাকতে কিনা আপনার মুকুট চুরি যায়, ভাবতেই অবাক লাগছে মহারাজ ! তবে আমার উপরে ভরসা রাখুন, আমি ঠিক চোরকে  খুঁজে এনে আপনার হাতে তুলে দেবো,  সাথে আপনার টোপর অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনবই ! আমার হাত থেকে চোর কিছুতেই রক্ষা পাবেনা ! রাজা মশাই আপনি একদমই চিন্তা করবেন না !

নেপো : মন্ত্রীর উৎসাহের মধ্যে যেন কেমন একটা গন্ধ পাচ্ছি ! বিশেষ সুবিধার বলে তো মনে হচ্ছেনা !

…. হু গন্ধটাকে তো ভালো করে শুখতে হচ্ছে !

রাজা শিলাদিত্য চন্দ্র : মন্ত্রী, নেপো, সেনাপতি যাও তোমরা সব  মহল ছেড়ে টোপর খোঁজো, আর মাত্র কয়েক দিন পরেই নবাব আসছে, টোপর যদি না পাওয়া যায় , আর এই খবর যদি নবাবের কানে যায়, আমার মান সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে  ! 

যাও  সব যত শীঘ্রই পারো টোপর খুঁজে বের করো… 

সকলেই:  যথা আজ্ঞে মহারাজ.. 

নেপো : রাজা মশাই টোপর খুঁজতে যাওয়ার আগে একটু কথা ছিল, মানে অত্যান্ত গোপন, তাই আর কি একান্তে যদি বলা যায়… 

রাজা শিলাদিত্য চন্দ্র : হ্যা… হ্যা চলো আমার কক্ষে l 

মন্ত্রী  মনে মনে বলতে লাগলো সব বিষয়ে এই নেপোর বাহাদুরি আমাকে একদম দিন দিন শুকিয়ে ফেলেছে ! সব সহ্য করা যায় কিন্তু নেপোর বুদ্ধির কাঁটা… ও বাবা !… ভয়ংকর !

…. না, লুকিয়ে লুকিয়ে তো শুনতে হয় l

রাজার কক্ষে উপস্থিত… 

রাজা শিলাদিত্য চন্দ্র : বলো নেপো কি বলতে চাও l 

নেপো : না,  বলছিলাম যে রাজা মশাই যতদূর শুনলাম যে আপনার টোপর ছাড়া মহলের আর কিছুই চুরি যায়নি, রানীমার  হীরের মুকুট ও নাকি চোরে ছুঁয়ে দেখেনি… 

তার মানে আমার ভীষণ খটকা লাগছে ! 

রাজা শিলাদিত্য চন্দ্র : বিষয় টা আমাকেও ভাবাচ্ছে  !

নেপো !… ও নেপো আমার মাথা কাজ করছে না, কোনও একটা উপায় দেখো তাড়াতাড়ি, আমার বিশ্বাস তুমি পারবে !

মন্রী কক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে  আড়ি পেতে মনে মনে বললো, যতই চিন্তা করো নেপো  ভেবে আর কোনও উপায় পাবে না, এমন চাল দিয়েছি যে… হু… ঠেকাও !

নেপো : রাজা মশাই এমন কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মহলে চোর প্রবেশ করা অসম্ভব, তাই আমি যেটা মনে করছি যে কাল সকালেই একই সময়ে এই রাজ কার্যের প্রধান বিভাগের সকলের বাড়িতে প্রহরী দিয়ে খোঁজ করা হোক আমার বিশ্বাস এদের কারোও একজনের কাছে পাওয়া গেলে যেতে পারে আর যেহেতু খুবই মূল্যবান মুকুট তাই সেই চোর  তার ঘরের বাইরে রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেনা, আমার এও বিশ্বাস আছে যে বাইরের  কেউ স্বপ্নেও কল্পনাও করবেনা আপনার মুকুট চুরি করার l 

রাজা শিলাদিত্য চন্দ্র : কথাটা মন্দ বলোনি ! আর উপায়টাও  বেশ ভালো বলেছো, তবে তাই হবে l কাল সকালে সবার বাড়িতে প্রহরী দিয়ে খোঁজ করা হবে তাও একই সময়ে l

 চোর কে ধরতে পারলে, শূলে  চড়ানো হবে ! আমি তাঁকে শূলে ছড়িয়েই ছাড়বো !

মন্ত্রী মনে মনে শূলে চড়ার কল্পনা করে আঁতকে উঠলেন !

নেপো যেতে যেতে বলে , তাহলে ওই কথাই থাকলো কাল সকালে… আর হ্যা আমার বাড়িতেও পেয়াদা পাঠিয়ে তল্লাশি চালাতে ভুলবেননা যেন… 

মন্ত্রী বাড়ি ফিরে সব কথা স্ত্রীকে খুলে বললো l 

স্ত্রী : ওগো কি হবে এবার, যদি ধরা পড়ে যাই তাহলে আমাদের দু জনকেই শূলে চড়তে হবে ! আমি আর রানী সাজতে চাইনা ! আর তোমায় রাজাও সাজতে হবে না ! 

এ আপদ বিদায় করো আগে, অন্তত প্রাণে বেঁচে তো থাকবো ! 

মন্ত্রী : কালকে তো মুকুট চাই মুকুট চাই করে পাগল করে দিয়েছিলে, আর এখন… !

স্ত্রী : তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসোনা !….. হু….. হু.. 

মন্ত্রী : থামো ! এখন কান্নার সময় না, এখন ভাবার সময়, যদি বাঁচতে চাও ভাবো, এই টোপর নিয়ে কি করা যেতে পারে ভাবো l

কিছুক্ষন চুপ থেকে স্ত্রী বলে –

স্ত্রী : আচ্ছা, এই টোপরটা কে রাতে  নদীর জলে ফেলে  দিলে 

কেমন হয়?

মন্ত্রী : হ্যা ভালো হয় কিন্তু তাতে আমার দায়িত্ব কমবেনা বরং বেড়ে যাবে – মন্ত্রী বলে কথা, আর এই টোপর যে পাবে সেও ধনী হয়ে যাবে, তাই অন্য উপায় দেখতে হবে l 

স্ত্রী : আর কি উপায়? 

মন্ত্রী ভাবছি….. 

মন্ত্রী কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি করে… হ্যা… উপায় একটা পেয়েছি… সেই রকম উপায় 

স্ত্রী : কি উপায়? 

মন্ত্রী : তোমাকে আর এ নিয়ে ভাবতে হবে না l 

কোন কাঁটা কোথায় কিভাবে পুঁততে হবে তা আমি ভালো করেই জানি ! 

যাই একবার পাচুর  কাছে যাই…. 

স্ত্রী : হ্যা যাও, যা ভালো বোঝো করো l 

মন্ত্রী পাচুর  বাড়িতে উপস্থিত হয়ে, পাচুর  সাথে গোপনে কথা বলে চলে এলেন l

সন্ধ্যার আঁধারে চাঁদর গায়ে পাচু মন্ত্রীর বাড়িতে এলো, মন্ত্রী এদিক ওদিক তাকিয়ে পাচুকে ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন l এরপর রাজার মুকুটটি একটি কালো কাপড়ে মুড়ে পাচুর হাতে দিয়ে দিলেন l মুকুটটি হাতে নিয়ে পাচু বললো, মুকুটটি যা ভার তা রাজা এ ভার বয়তো কেমন করে ! আর মুকুটটি হাতে আসতেই মনে হচ্ছে হুজুর এ শুধুই মুকুট না জাদুর মুকুট বলতে হবে, মনে হচ্ছে আমি রাজা, সমস্ত শক্তির অধিকারী আমি ! আমি জেনো এই মুকুটের জন্য যোদ্ধা হতে পারি !

মন্ত্রী : আর একটুও স্বপ্ন দেখলে তোর ধড়ে আর মাথা থাকবেনা বুঝলি ! 

পাচু : আজ্ঞে হুজুর !

মন্ত্রী : যা, যা বলছি, আর কাজটা সাবধানে করবি, যেন রাতের জোনাকিও জানতে না পারে ! না হলে বুঝতেই পারছিস… !… চিন্তা করিসনে সময় মতো বকশিস পেয়ে যাবি l 

পাচু : জী হুজুর ! আপনি কিচ্ছুটি চিন্তা করবেন না ! কালকে সকালে খেলা দেখতে পাবেন l

পাচু মন্ত্রীর বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে পা টিপে টিপে নেপোর বাড়িতে পৌঁছে গেল  l নেপো নেপোর ঘিন্নি ততক্ষনে ভাত ঘুমে নাক দেকানোর জো তুলে দিয়েছে l পাচু বুঝলো যে কাজটি করার উত্তম সময়, কেউ-ই  জেগে নেই, তাই দক্ষিণ কোনের বারান্দায় রান্না করার কাঠের মাচানের তলায় চুপিসারে রেখে চলে গেল l 

সকাল হলো l আগের দিনের পরিকল্পনা মতো রাজার পেয়াদা একই সময় মতো মন্ত্রীর বাড়ি, কবিয়ালের বাড়ি, বৈজ্ঞানিকের বাড়ি, সেনাপতির বাড়ি এমনকি নেপোর বাড়িতে চিরুনী তল্লাশি দেওয়া হলো, দেওয়া হলো রাজ প্রাসাদের সমস্ত কর্মচারীদের বাড়িতে কিন্তু কোথাও রাজ টোপর বা রাজ মুকুট খুঁজে পাওয়া গেলোনা l

মন্ত্রীর বাড়িতে তল্লাশি নেওয়ার সময়, মন্ত্রী মনে মনে বললো, নেপো এবার আর তোমার রক্ষা নেই, এতক্ষনে হয়তো তোমার ঢোল ফেটেই গেছে !

তোমার বুদ্ধির মাথা হবে এবার লোক নিন্দার ছাতা !

মন্ত্রী প্রহরীদের বলে, রাজা মশায়ের মুকুট চুরি হয়েছে চুলের আগা থেকে গড়া পর্যন্ত খোঁজ করো l খোঁজায় কোনও ফাঁকি রেখোনা !

কিছুক্ষনের মধ্যেই আমি যাচ্ছি দরবারে –

একি অবিশ্বাসী !

মন্ত্রীর বাড়িতে তল্লাশি !

….দেখছি !

টোপর ছাড়া রাজা সিংহাসনে বসে আছেন, সকলেই উপস্থিত, একে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে নীরব দৃষ্টিতে বসে আছেন, মন্ত্রী ফন্দির যে আগুন জ্বালিয়েছিলেন  তা নেপোর বাড়িতে টোপর না পাওয়া যাওয়ায় আর সে আগুনে ঘি ঢালা হলোই না !

মন্ত্রী মনে মনে ভাবছেন, তবে কি পাচু টোপরের লোভ সামলাতে না পেরে নিজেই টোপরটি হাপিস করে দিল ! না কি নেপোর বউ আর নেপো মিলে টোপরটি সরিয়ে ফেললো ! 

না…. ! বিষয় টা জটিল বলে মনে হচ্ছে l এক্ষুনি একবার পাচুর সাথে দেখা করতে হবে l 

রাজা শিলাদিত্য চন্দ্র : নেপো তুমি তো বলে ছিলে এই বেড়া জালে টোপরটি বেরিয়ে আসতে পারে ! কিন্তু কই?  টোপরের একটি মণি মুক্তাও তো বের হলোনা ! 

নেপো : হ্যা রাজা মশাই, তাই তো দেখছি ! অনেক আশা রেখেছিলাম, কিন্তু ব্যর্থ হলাম, আমাকে অন্য উপায় ভাবতে হবে l 

মন্ত্রী : আর ভাবতে হবে না, আমি এ রাজ্যের মন্ত্রী, এবার আমাকেই কিছু করতে হবে l

রাজা মশাই এখন আমার বসে থাকার সময় না, আমাকে অনুমতি দিন, মুকুটের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ি l

নেপো মনে মনে বললো, 

নেপো : হু ! এমন বিদায় চাইছে যেন মুকুট না নিয়ে আর ফিরবেন-ই  না ! 

দিন দিন মহারাজ বরণ ডালা সাজিয়ে বিদায় দিন !

রাজা শিলাদিত্য চন্দ্র : যাও যাও  মন্ত্রী যেখান থেকে পারো আমার মুকুট খুঁজে বের করে আনো, এই বীরঙ্গনা রাজ্যের রাজার সম্মান রক্ষা করো l আমার রাজ সভার সব অকম্মার ঢেঁকি – খেয়ে খেয়ে সব কেমন ভুঁড়ি বাড়িয়ে বসে আছে দেখোনা !

যাও যাও মন্ত্রী টোপরের ফুল ছাড়া আমি যেন যন্ত্রণার কাঁটার উপরে বসে আছি !

মন্ত্রী : আজ্ঞে মহারাজ !… আমি আসি… 

মন্ত্রী আগে পিছে দেখতে দেখতে পাচুর বাড়িতে প্রবেশ করলো l 

মন্ত্রী : কি রে পাচু তোকে না মহারাজের টোপর টা নেপোর বাড়িতে রাখার কথা ছিল, তুই সেখানে না রেখে টোপর টা নিজেই হাপিস করে দিয়েছিস? 

পাচু : আজ্ঞে হুজুর আপনার কথা মতো তো আমি নেপোর বাড়িতে রেখে আসছি l ছোটো খাটো চোর হতে পারি, সোনাদানা টাকা পয়সার লোভী হতে পারি কিন্তু মহারাজের টোপর হজম করার খিদে আমার নেই হুজুর !

মন্ত্রী : তাহলে টোপর গেল কোথায় !

নেপোর  বাড়িতে তো টোপর খুঁজেই পাওয়া গেলোনা !

পাচু : তাহলে দেখেন নেপো বুঝতে পেরে হয়তো সরিয়ে নিয়েছে l 

মন্ত্রী :  যদি করে চালাকি বুঝবে পরে জ্বালা কি !

আমিও সেই রকম, সামান্য প্রহরী থেকে যেমন মন্ত্রী হয়েছি, তখন ফাল ফেলে লাঙ্গল দিয়ে ফাল আমি ভালোই তুলতে পারি l

শোন্ পাচু… 

মন্ত্রী বিড় বিড় করে পাচুর কানে মুখ লাগিয়ে কিছু বললো,

পাচু বলে না হুজুর এ কাজ আমার দ্বারা হবে না, রাজা জানতে পারলে গর্দান দেবে !

মন্ত্রী বলে আর তুই এ কাজ না করলে আমিই তোর ধড় মাথা আলাদা করে দেবো বুজলি… কালকে সময় মতো হাজির হবি, বাকিটা আমি সামলে নেবো l

পরদিন রাজসভায় সবাই বসে আছেন এমন সময় মন্ত্রী পাচুকে জোতিষী সাজিয়ে নিয়ে এলেন l 

রাজা শিলাদিত্য চন্দ্র : মন্ত্রী তোমার সাথে এ কাকে দেখছি, দেখে তো মনে হয় জোতিষী সন্ন্যাসী, আমার মুকুট খুঁজতে যেয়ে তুমি এই মানুষ টা কে খুঁজে পেয়েছো নাকি !

নেপো : মনে মনে ভাবছে, এ শালা মন্ত্রী বেটা কোনও দুষ্ট ফন্দি আবার নিশ্চয় বের করেছে, আর তো কোনও কাজ নেই এই ছাড়া, দুষ্ট চিন্তা ভাবনা করতে করতে পাতার বিড়ির মতো চেহারা হয়েছে  মন্ত্রী মশায়ের… খালি ধান্দা !

দেখা যাক কি গল্প বের হয় এখন শকুনির মস্তিস্ক থেকে !

মন্ত্রী : মহারাজ আপনি প্রায় ঠিকই ধরেছেন, এই না হলে আপনি রাজা ! আপনার চোখই আলাদা 

রাজা শিলাদিত্য চন্দ্র : আহা ! কি বলবে সোজাসুজি বলো, এখন ফতুয়া জারির সময় না !

মন্ত্রী : আজ্ঞে রাজা মশাই ইনি হলেন তান্ত্রিক জোতিষী প্রকটং বিশ্বামিত্র l ঋষি বিশ্বামিত্রের বংশধর l বহুবছর হিমালয়ে সাধনা করে সিদ্ধ লাভ করেছেন, আমার শশুর বাড়ির পাশেই ওনার আশ্রম, বছরে এক আধবার আসেন আবার হিমালয়ে চলে যান l গতবছর আমার শশুর বাড়িতে চুরি হয়েছিল, উনি ওনার সাধনা বলে সব কিছুই বের করে দিয়ে ছিলেন l শুনলে আশ্চর্য হবেন মহারাজ ওনার সাধনার শক্তিতে আয়নার মধ্যে চোরের মুখ দেখতে পারেন ! এবং চুরির মাল  কোথায় আছে তা সম্পর্কে একটু হলেও সঠিক বলতে পারেন l 

রাজা : এই জন্যই তো তোমাকে মন্ত্রী বানিয়েছি ! আর দেরি করোনা এখুনি কাজ শুরু করতে বলো, আমার মুকুট বের করে দিতে পারলে কি পুরস্কার যে দেবো তা তো তুমি জানোই l

মন্ত্রী : যথা আজ্ঞা মহারাজ এক্ষুনি কাজ শুরু করতে বলছি…. 

নেপো : হু… মনে মনে যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই

ব্যাটা ফন্দিবাজ ! ঠিক ছেড়ে দিল ফন্দির চাল, আমিও এর শেষ না দেখে ছাড়ছি না l তুমি যেখানে শেষ করবে সেখান থেকেই আমি শুরু করবো l

পাচু ঝোলা থেকে আয়না বের করে রঙ মাখা ছাঁই ভস্ম  মুঠিতে নিয়ে মন্ত্র বলতে শুরু করলো , 

সত্য মুখং আয়নং 

কিং করং ঢপং 

কার আজ্ঞে হিমালয় পুত্র প্রকটং বিশ্বামিত্রের আজ্ঞে… 

আজ্ঞে বলে বিড় বিড় করে মন্ত্র বলতে থাকলো আর ফু দিতে লাগলো… 

একসময় বলে উঠলো, মহারাজ?  এই মুহূর্তে চোর আপনার রাজ সভায় উপস্থিত আছে ! আপনার টোপর সেই চোরের বাড়ির দক্ষিণ দিকের বারান্দায় কাঠের মাচানের তলায় কালো কাপড়ে ঢাকা ছিল এ পর্যন্ত আমি আমার এই আয়নায় দেখতে পেলাম,  বাকিটা এক্ষুনি যেয়ে একবার দেখা যেতে পারে !

রাজা শিলাদিত্য চন্দ্র  উৎসুক কণ্ঠে, কে ? কে সেই চোর?  বলো? আমি এক্ষুনি তাঁকে শূলে  চড়াবো !

এত বড় স্পর্ধা রাজার টোপর চুরি, 

আমি লাথিয়ে তার ফাটিয়ে দেবো যে টুকু আছে ভুঁড়ি !

রাজার কথা শুনে সকলের মুখ শুকিয়ে গেল, একে অন্যের মুখ চাওয়া চাওয়ি শুরু হয়ে গেল… 

 পাচু জোতিষী : আজ্ঞে মার্জনা  করবেন মহারাজ, যদি অভয় দেন তাহলে বলতে পারি !

রাজা শিলাদিত্য চন্দ্র : নির্ভয়ে বলো… 

পাচু জোতিষী :  মহারাজ আমার আয়নায় যাঁর মুখ এখন দেখলাম তিনি বর্তমানে আপনার সভাসনে গেরুয়া পাঞ্জাবী এবং বাদামি রঙ এর ধূতি পরে আছেন… ব্যক্তি কে আপনি নির্ধারণ করুন !

 চোখের তীর নেপোর দিকে এক মুহূর্তে বর্ষিত হলো,  নেপোর বুঝতে বাকি রইলোনা যে এ মন্ত্রীর ষড়যন্ত্র ! 

রানী বলে উঠলেন, এ অবিশ্বাস্য ! কখনোই হতে পারেনা ! 

রাজা নির্বাক ! 

মন্ত্রী : রাজা মশাই আপনি এক্ষুনি একবার আমার সাথে পেয়াদা নিয়ে চলুন নেপোর বাড়িতে, যদিও আমার ও বিশ্বাস হচ্ছে না ,কিন্তু তবুও…  দেখা যাক….

আর বিলম্ব নয় রাজা মশাই…. 

রানী : হ্যা ! হ্যা ! যাও যাও, তিন পুরুষ ধরে ওদের বংশধর এই রাজ সভায় আছে এমন কখনো শুনিনি যে হাত বাড়িয়ে কিছু নিয়েছে !

মন্ত্রীর তদারকিতে সকলেই নোপোর বাড়ির দিকে রওনা হলো 

নেপো ভাবতেই পারেনি মন্ত্রী তার দুষ্ট বুদ্ধি দিয়ে এভাবে তাঁকে ফাঁদে ফেলবে !

পথে নোপোর নাতি নাতনিরা খেলা করছিলো, তারা বললো, ও দাদু, রাজা মশাই মন্ত্রী দলবল নিয়ে এদিকে হটাৎ !কোথায় যাচ্ছেন ? 

নেপো : আর বলিসনে ! আমার সাথে আয়, আমিও কিছুই বুঝতে পারছিনে !

মন্ত্রী মনে মনে বললো, বুঝবে বেটা এবার বুঝবে ! কোথায় লুকিয়ে রাখবে রাজার টোপর ! বের তো এবার করবোই !

বিজ্ঞানী : আমার মনে হচ্ছে এটা অনেক বাড়াবাড়ি হয়ে গেল, 

কবি /ছড়াকার : সন্দেহের বশে যেন আমরা সবাই চোর !

শুধু রাজার মুকুট যাহার হাতে 

সেই ভেঙেছে দোর !

মন্ত্রী : রাজার টোপর না পাওয়া গেলে একে একে সব কটা কে বন্দী বানাবো, কাউকেই রেহাই দেবোনা… তাই যেমন ইচ্ছে ছড়া কাটো !

এ ভাবে সকলকে নেপোর  বাড়িতে ঢুকতে দেখে নেপোর গিন্নির চোখ তো কপালে উঠে গেছে, গিন্নি নেপোকে জিজ্ঞেস করে, হা গো কি হয়েছে?  আমিতো কিছুই বুঝলাম না !

নেপো : আমিও তাই ! তবে যা ঘটতে চলেছে মনে হয় ভালো কিছুই নয় !

 দক্ষিণ বারান্দায় মাচানের কাছে সবাই চলে গেল, একে একে মাচানের দিকে সকলের উঁকি ঝুঁকি মারা দেখে নেপোর স্ত্রীর তো গোটা মুখটাই একটা চোখ হয়ে গিয়েছে ! 

অনেক খোঁজাখুঁজির  শেষে সবাই যখন ক্লান্ত,  নিরাশ, তখন সেনাপতি মাচানের একটি কাঠের গায়ে কালো কাপড়ের টুকরো লেগে আছে দেখতে পেলেন, টুকরোটি দেখে বুঝলেন খুবই কাঁচা ছেড়া, একটু ভিজেও আছে, সেনাপতি চোখ এদিক ওদিক ঘুরাতেই দেখলো রাজার মুকুটের একটি মুক্ত পড়ে আছে,  সন্দেহ যেন প্রমাণিত হলো, সেনাপতি বললো রাজা মশাই এই মূল্যবান মুক্তটিই  তো আপনার মুকুটের? 

রাজা শিলাদিত্য চন্দ্র : হা ! হা ! এ তো আমার মুকুটেরই মুক্ত…. 

নেপো নেপোর স্ত্রী মাথায় যেন বজ্র পড়লো !

নেপো : কিন্তু রাজা মশাই এ মুক্ত এখানে এলো কি করে ! আমি এর কিছুই জানিনা ! আমি নির্দোষ রাজা মশাই ! এ সব ষড়যন্ত্র ! 

মন্ত্রী : ষড়যন্ত্র না ! ষড়যন্ত্র ! কাঁঠাল খেয়ে বিচি ফেলতে ভুলে গিয়ে ধরা পড়েছো আর এখন বলছো ষড়যন্ত্র ! সেনাপতি বন্দী বানাও 

আর নেপোর এই ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দাও ! বুঝিয়ে দাও রাজা মশায়ের টোপরের মুক্ত যেখানে পড়ে সেখানে আগুনের পাহাড় জ্বলে !

রাজা শিলাদিত্য চন্দ্র : বাহ্ মন্ত্রী ! তোমার মতো মন্ত্রী পেয়ে আজ  আমি গর্বিত ! 

বিজ্ঞানী : না ! কোথাও একটা যেন  ভুল থাকছে !

ছড়াকার : চোখে যা দেখছি, তা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি !

মন্ত্রী : ব্যাটা ! এবার ব্যাটা কি হবে !  হু… এমন প্যাচ দিয়েছি যে এ জীবনে আর ছাড়াতে হবেনা, সোজা শূলে চড়তে হবে !

রাজার পেয়াদারা মন্ত্রীরনির্দেশে  নেপোর ঘরে আগুন লাগিয়ে দিল, তাই দেখে নোপোর নাতিনানীরা হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলো !

নোপোর গিন্নি কেঁদে কেঁদে বলে, ওগো এবার আমাদের কি হবে?  ওরা যে ঘরটাকে পুড়িয়ে দিল !

নেপো : কান্না কাটি করোনা, আমার এই ভাঙা ঘরের থেকে রাজার কারাগার অনেক ভালো, আরাম করে ঘুমানো যাবে !

গিন্নি :  তুমি এখনোও রসিকতা করছো !… সত্যি মাইরি…. !

নেপো : রাজার আশ্রয়ে থাকার কপাল সবার হয়না ! চলো চলো…. 

নেপো নাতি নাতনিদের কে বললো, তোরা আর কাঁদিস নে ! যত তাড়াতাড়ি পারিস আমার সাথে দেখা করিস, মজার একটা গল্প শোনাবো ! 

মন্ত্রী : এ শালার মাথা মনে হয় গেছে ! যাক বাঁচা গেল, ফুল দিয়ে তো  কাঁটা সরানো গেল l 

আজ বাজারে যেয়ে এই খুশিতে জোড়া ইলিশ কিনতে হবে এবার থেকে একটু নিশ্চিন্তে কব্জি ডুবিয়ে খেতে পারবো l

রানী : যাইহোক, নেপোর ঘর পুড়িয়ে দেওয়া ওকে বন্দী বানানো  , কাজটা ঠিক হলোনা মহারাজ !

মহারাজ শিলাদিত্য চন্দ্র : আমি জানি, কিন্তু এই ছাড়া আর উপায় নেই, 

রানী : মানে?  

রাজা শিলাদিত্য চন্দ্র : আরে নেপোকে না রাগালে যে ওর মাথা খুলছেনা, যা আমি বুঝতে পেরেছি l ওর সম্পর্কে আর আমার চেয়ে কে জানবে বলো,  ও বন্দী থাকলেও যে কোনও ফন্দির মোকাবেলা ও করতে পারবে, যে কোনও উপায় ঠিক বের করবে এটা আমি ভালো করেই জানি… 

রানী : তাই যেন হয়, নেপোকে যে আমি বড্ডো ভালোবাসি !

বন্দী কারাগারে নেপো মন্ত্রীর দুষ্ট বুদ্ধির উপায় ভাবতে লাগলো, একসময় নাতি নাতনিরা নেপোকে দেখতে এলো l নেপো তাঁদের কে বললো, দেখ তোরাই এখন আমার একমাত্র ভরসা !

মাদুলি বলে, তুমি কিচ্ছু চিন্তা করোনা দাদু দরকার হলে আমরা ইঁদুরের মতো মাটি খুঁড়ে তোমাকে আর দিদাকে নিয়ে সুড়ুৎ করে পালাবো !

নেপো : শোন্, আমাদের নিয়ে তোদের পালাতে হবেনা, আমি যেটা বলছি তোরা  মন দিয়ে শোন্ l আমার মন বলছে টোপর টা তোরা উদ্ধার করতে পারবি বুঝলি… 

তোরা হিমনাথের বাগান তো চিনিস? 

ভাঙা : আরে দাদু চিনবোনা মানে ! কালকে আমি আর মিনু যেয়ে আম চুরি করে পেড়ে নিয়ে এলাম, 

কাঁচা আম তাই যা মিষ্টি দাদু চিনি ফেল !

নেপো : হা ওই বাগানের পুকুর পাড়ের ও পাশে বাঁশ বাগান আছে l ওই বাঁশ বাগানে শিয়ালের বাস আছে l

নাতি নাতনিরা সকলে বলে, ওরে দাদু আছে মানে ! আমাদের পাড়ার কুকুরের থেকে তাঁদের চেহারা আরও উন্নত l

নেপো :  আমার যা অনুমান তাতে করে এই দাঁড়ায়,  মন্ত্রী মশাই তার বাজার করা ব্যাগে করে টোপর টি আমার বাড়ির কাঠের মাচানে কাউকে দিয়ে রাখিয়ে ছিল, ওই ভন্ড জ্যোতিষীর বলা আর মন্ত্রী মশায়ের উৎসাহ দেখে তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে l আর মাছ মাংস লাগা ব্যাগের গন্ধ পেয়ে ভোর রাতে শিয়াল মুখে করে নিয়ে গেছে, শিয়ালের পায়ের ছাপ আমার নজরে এসেছিলো, কিন্তু তখন বললে মন্ত্রী দাবার চাল ঠিক পাল্টে দিতো l

নাতি নাতনিরা বললো বুঝে গেছি দাদু, তার মানে টোপর এখন শিয়াল পন্ডিতের রাজত্বে !

নেপো : আস্তে ! আস্তে ! দেয়ালের ও কান আছে ! কেউ শুনে ফেলবে  !  আর শোন্, কাজটা সাবধানে করবি, যদি পেয়ে যাস তাহলে টোপর টি কোথাও লুকিয়ে রেখে এসে আমাকে জানাবি… ততক্ষনে আমি আরেকটা চাল সাজাই ! মন্ত্রী যা দিয়ে রেখেছে তা বড়ই কঠিন চাল যে !

যা যা তোরা আর দেরি করিসনে বেলায় বেলায় কাজ সেরে নে l রাজার এ তৈরী ঘর তোদের দিদার কপালে সইছেনা !

নাতি নাতনিরা : হা দাদু, তুমি চিন্তা করোনা, আমরা আসি…. 

নাতি নাতনিরা হিমনাথের বাগানে ঢুকে পড়লো, হাতে লাঠিসোঠা নিয়ে এ গাছের গায় ও গাছের গায়  আঘাত করে শব্দ তুলে খোজা শুরু করলো , অনেক খোঁজার পরে একটা ঝোপের ধারে শিয়ালের বাচ্চাদের ছুটোছুটি নজরে এলো, সবাই মিলে এগিয়ে গেল, যেয়ে দেখে দাদুর কথাই ঠিক সেই কালো ব্যাগটি শিয়ালের বাচ্চারা নিয়ে কামড়ে কামড়ে টানা টানি খেলা করছে l সকলে লাঠি দিয়ে শব্দ করতেই বাচ্চা গুলো এক দৌড়ে বাঁশ বনের নিচের গর্তে  ঢুকে গেল l এর পর টোপর টি সংগ্রহ করে নিদ্রিষ্ট একটা জায়গায় রেখে আনন্দে লাফাতে লাফাতে নেপো দাদুর সাথে  সবাই দেখা করতে গেল l 

সবাইকে হাসি খুশি মুখে আসতে দেখে নেপো দাদু বললো, 

নেপো : কি রে তোরা আম কুঁড়াতে গিয়েছিলিস তা আম পেয়েছিস? 

 নাতি নাতনিরা: হা দাদু আমরা আম পেয়েছি l কিন্তু আম আমরা কি করবো এবার তুমি বলে দাও l 

নেপো বললো, শোন্, দুষ্ট কে উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে, তাই কাজটা খুব সাবধানে করতে হবে l 

নাতি নাতনিরা : কি কাজ শুধু বলো দাদু 

নেপো : শোন্, আজ রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়বে, তোরা একটা নির্দিষ্ট জায়গায় মিলিত হয়ে খুব সাবধানে ওই টোপর টি নিয়ে মন্ত্রী মশায়ের রান্না ঘরের কোনে লুকিয়ে রেখে আসবি,খেয়াল রাখবি দিনের বেলায় যেন নজরে না আসে সহজে l 

কালকে রাজ সভায় আমার বিচার হবে, এখন যা যা বলছি বাড়িতে যেয়ে জিতেন বুড়োকে আমার কথা গুলো বলবি , অবশ্যই ছদ্দ বেশে আসতে বলবি বলে কানে কানে কিছু বললো l নাতি নাতনিরা শুধু বললো, চিন্তা করোনা দাদু তোমার কথা মতো কাজ হয়ে যাবে l

আমরা এখন আসি… 

নেপো : হা, আয় l 

গভীর রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে নাতি নাতনিরা মাঠের মধ্যের একটি গাছ তলায় হাজির হলো l এবং টোপর টি নিদৃষ্ট জায়গা থেকে তুলে পা চেপে চেপে মন্ত্রীর বাড়ীর দিকে রওনা হলো l 

সকলে মন্ত্রীর বাড়িতে পৌঁছে বুঝলো যে মন্ত্রী ভাত ঘুমের স্বপ্নে বিভোর l তাই দেরি না করে সবাই কাজে লেগে পড়লো l দেখলো রান্না ঘরের কাঠের মাচানে যেতে হলে তালা বা দরজা ভেঙে ঢুকতে হবে না হলে পৌঁছানো যাবেনা, হটাৎ ভাঙা বললো, ধুর আমি যা রোগা পাতলা তা বিড়ালের মাথা যেখানে ঢোকে সেখান দিয়ে আমি অনায়াসে ঢুকতে পারি !

ভাঙা ছোট্টো একটি ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়লো তার পরে সেই ফাঁক দিয়ে খুব যত্নে টোপর টি ঢুকিয়ে নিলো,  সেটিকে খুব সুন্দর করে কাঠের মাচানের তলায় এক কোনে ঠেলে রেখে দিল l হঠাৎ ভাঙার ঘ্রাণ ইন্দ্রিয় কাজ করলো, উপলব্ধি করলো মাংসের তরকারির গন্ধে রান্নাঘর ভাসছে l তাই সে শিকায় ঝুলানো কড়াই টা নামালো, খুলে দেখলো মাংসের তরকারি, খিদে বেড়ে গেল কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া শুরু করলো, এমন রান্না যেন সে জীবনের প্রথম পেল l বাইরে ওদের দিকে ও কড়াইটা এগিয়ে ধরলো ওরাও কব্জি ডুবিয়ে খেলো l মাংসের গন্ধে একটি বিড়াল মেউ মেউ করে এগিয়ে এলো l ভাঙা বুঝলো তার পেটে আর খালি জায়গা নেই, তাই সে বিড়াল টি কে খেতে দিল আর তার সারা গায়ে মাংসের ঝোল মাখিয়ে দিল l 

কড়াই উপুড় করে রেখে বিড়াল কে দোষী করে দস্যি ছেলেমেরা চলে এলো l

পর দিন সকালে রাজসভায় সকলে হাজির, একটু পরেই নেপোর বিচার হবে l

মন্ত্রী তো বেজায় খুশি l টোপর যেখানে যায় যাক নেপোর তো চুরির অপরাধে শূলে চড়তেই হবে l 

এমন সময় নাতি নাতনিরা জিতেন  বুড়োকে জোতিষীর সাজে সাজিয়ে নিয়ে সভায় হাজির l ওদের কে দেখে নেপো নিঃশ্বাস যেন ফিরে পেল l

মাদুলি বলে, দাদু চিন্তার কোনও কারণ নেই আমরা এসে গেছি l 

নেপোর স্ত্রী বলে, ওরে তোরাই এখন ভরসা রে… !  

নাতি নাতনিরা বললো, রাজা মশাই এক্ষুনিতো  নেপো দাদুর  বিচার হবে, তো তার আগে একবার আমাদের এই জোতিষীর আয়নাপড়া টা দেখুন, আমাদের মনে হয় ইনি আসল চোর এবং মুকুট কোথায় আছে তা খুঁজে বের করে দিতে পারবেন, আর তা না পারলে আমাদের কে বন্দী বানাবেন !

রাজা শিলাদিত্য চন্দ্র  : আসল নকল বুঝিনা, মুকুট না বের করতে পারলে এমন দুঃসাহস দেখানোর জন্য, রাজকার্যের সময় নষ্ট করার জন্য  সোজা নেপোর সাথে শূলে চড়ানো হবে ! আর বের করতে পারলে তো কথায় নেই… পুরস্কার ঘোষিত আছে l

নাতি নাতনিরা : যথা আজ্ঞা মহারাজ  l

সভাসদ গণ বাচ্চাগুলোর এমন নিষ্ঠা ও গুরু প্রেম দেখে অতি আশ্চর্য হলেন l 

ছড়াকার /কবি বিজ্ঞানী কে বললেন, আচ্ছা সত্যিই যদি এই জোতিষী টোপর না বের করতে পারে তাহলে বাচ্চা গুলোর কি হবে? বিজ্ঞানী বললো,  আমিও তাই ভাবছি !

মন্ত্রী মনে মনে বললো, আমার দাবার চালে এ বুড়ো ঘোড়া  আর বাচ্চা বোড়ে গুলো কোথা থেকে এলো?  কিছুই তো বুঝতে পারছিনা !

সত্যিই যদি আয়নায় আমার মুখ ভেসে ওঠে ! তাহলে কি হবে !

মন্ত্রী বললো : রাজা মশাই আসল নকল আবার কি?  নেপো যে চোর  তার প্রমাণ হয়ে গেছে, শুধু দু ঘা কষিয়ে দিলেই টোপর বেরিয়ে আসবে !

 নেপো মুচকি হেসে বলে, রাজা মশাই এক টুকরো কাপড় আর একটি মুক্ত তে যদি আমি অপরাধী হই, তাহলে তো রাজার ধন দিয়ে এ রাজ্যের সকলকে চোর বানানো এবং শূলে চড়ানো সম্ভব !

মন্ত্রী : থামো থামো চোরের মা’র বড়ো গলা !

রানী : আমার মনে হয় সময় নষ্ট না করে  একবার দেখা যাক এই জোতিষীর আয়নাপড়া l কারণ আমাদের চোখে এখনো প্রমাণিত হয়নি যে আসল চোর কে বা কারা l

রাজা শিলাদিত্য চন্দ্র : ঠিক বলেছো রানী l

তো জোতিষী আর বিলম্ব না করে তোমার আয়নাপড়া শুরু করো দেখি ! 

জোতিষী পাচু :যথা আজ্ঞা  মহারাজ l

পাচু তার ঝোলা থেকে আয়না বের করে অশুদ্ধ মন্ত্র উচ্চারণ করতে লাগলো, 

ইচিং বিচিং চিচিং চা 

মুকুট কোথায় বলে যা 

যদি না বলবি ঘাড় মুচকে দেবো 

যদি না বলবি পা ভেঙে দেবো 

… ফু… ফু… ফু… 

সভার সবাই যেন মোমের পুতুল, কেবল মন্ত্রীর গলার হুড়কুনিটা একটু নচাচড়া করছে l

 জোতিষী বলে ওঠে রাজা মশাই অপরাধ নেবেন না আপনার আজ্ঞা পেলে কে চোর তা নির্ভয়ে বলতে পারি !

রাজা শিলাদিত্য চন্দ্র : তুমি নির্ভয়ে বলতে পারো, সে যত বড়ই হোকনা কেন শাস্তি তাকে পেতেই হবে ! 

জোতিষী পাচু : আজ্ঞে আপনার মন্ত্রীই আপনার টোপর টি চুরি করেছেন, আর টোপর টি এই মুহূর্তে তার বাড়িতে আছে ! আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি l

একথা শুনে মন্ত্রীর সারা গায়ে ঘাম ঝরতে শুরু করলো , মন্ত্রী বললো, রাজা মশাই এ ভন্ড জোতিষী ! এ মিথ্যে বলছে, আমি আপনার সামান্য  অনুদাস হয়ে আপনার টোপর চুরি করতে পারি !  এর কথা আপনি কিছুতেই বিশ্বাস করবেন না !

জোতিষী পাচু : সেটা ওনার বাড়িতে গেলেই বুঝতে পারবেন মহারাজ l

রাজা শিলাদিত্য চন্দ্র : সেটা ভালোই হবে যদি টোপর টি তোমার বাড়িতে না পাওয়া যায় l আর পাওয়া গেলে বুঝতেই পারছো… 

সেনাপতি : চলুন মহারাজ, একবার সবাই মিলে  দেখে আসি l 

রাজা শিলাদিত্য চন্দ্র : হা চলো সবাই l 

নেপো : বুঝবে মশাই, এবার বুঝবে ! কার শূলে কে চড়ে !

মন্ত্রী এক পায় এগোয় তো দু পা পেছোয় ! 

এভাবে একসময় সবাই মন্ত্রীর বাড়িতে পৌঁছায় l 

পেয়াদারা মন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকতেই  মন্ত্রীর স্ত্রীর শরীর ভূকম্পনের মতো কাঁপতে শুরু করলো l পেয়াদাদের চিরুনী তল্লাশিতে মুকুটটি বেরিয়ে এলো, স্বস্ত্রীক মন্ত্রীকে বন্দী করা হলো, নাতি নাতনিরা নাচতে লাগলো,  রাজা টোপরে চুমু দিয়ে মাথায় পরে নেপো নেপোর সঙ্গীদের রথে করে রাজ প্রাসাদের উদ্দেশ্য রওনা হলো l

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − 6 =