শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে স্বপ্নের উড়ান আসানসোলের সুকল্পর
পলাশ মুখোপাধ্যায় ##
ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়, আর এই ইচ্ছাশক্তির ডানা মেলেই নিজের ভাললাগার আকাশে, স্বপ্নের সন্ধানে উড়াল দিয়েছে সুকল্প। কিন্তু সুকল্প কেন সংবাদ শিরোনামে? কারণ সাধারণ দৃষ্টিতে সে অন্য সকলের চেয়ে কিছুটা আলাদা। সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত হয়ে সে বিশেষভাবে সক্ষম একজন। খুব ভাল করে হাঁটতে চলতে পারেনা সে, কথাও তেমন স্পষ্ট নয়। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কেড়ে নিতে পারেনি তার স্বপ্নকে, তার ভাললাগাকে। তাই তো অন্য বিভিন্ন মানুষের জীবনে আজ যখন রঙের বড় অভাব, তখন নিজের এবং পরিবারের জীবনে অন্যসুখ এনে দিয়েছে সুকল্পর রঙ তুলি।
আসানসোলের বার্নপুর শিল্পশহরে জন্ম সুকল্প ঘটকের ৷ জন্মের পরেই জানা যায় সুকল্প সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত ৷ একটু বড় হতেই, তার পড়াশোনা জন্য সপরিবার দুর্গাপুরে চলে যেতে হয় তাদের ৷ তাকে প্রথমে বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের স্পেশাল স্কুলে ভর্তি করানো হয় ৷ সেখানেই পড়াশোনা এবং অন্যান্য কাজকর্মের মধ্যে বড় হচ্ছিল সে ৷ বছর চারেক বয়স থেকেই ছবি আঁকা শুরু করে সুকল্প ৷ তার পর থেকে শুরু তার ভালবাসার পথ চলা। পাশে পেয়েছিল বাবা-মা এবং আঁকার শিক্ষক শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়কে ৷ এর পর বিশেষ সক্ষম শিশুদের স্কুল থেকে সাধারণ স্কুলে ভর্তি হন সুকল্প ৷ বর্তমানে তিনি কলাবিভাগের স্নাতক স্তরের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ৷ কিন্তু, আঁকার সঙ্গ ছাড়েনি সে, রঙ-তুলিই সুকল্পকে জীবনের যুদ্ধে জিততে শিখিয়েছে ৷ তাকে দিয়েছে অনাবিল আনন্দ এবং খুশি ৷ ছবিই তার প্রিয় বন্ধু ৷
সুকল্পর আঁকার শিক্ষক শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে ছবি আঁকার ক্ষেত্রে তিনি সুকল্পকে শুধু গাইড করেছেন ৷ বাকি চ্যালেঞ্জটা ও নিজেই নিয়েছিল ৷ তিনি ওকে নিজস্ব ফর্মে শেখাননি বলেই ওর ছবির একটা নিজস্বতা তৈরি হয়েছে ৷ সমাজ, পরিবেশ, মানুষের গভীর অনুভূতি উঠে এসেছে সুকল্পর ছবিতে ৷ সুকল্পর বাবা তরুণ ঘটক অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ৷ মা জয়শ্রী ঘটক বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের স্কুলে শিক্ষিকা ৷ তারা একসময় সুকল্পের বড় হয়ে ওঠা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন ৷ আজ সুকল্প ঘটকের নিজের আঁকা ছবি প্রদর্শনীতে জায়গা পেয়েছে ৷ গুণীজনদের প্রশংসা পাচ্ছে তার ছবির ভাবনা ৷ ছেলের এই সাফল্যে আজ তাই খুশি এবং গর্বিত তারাও ৷
সুকল্পর আঁকা ছবি নিয়ে একক প্রদর্শনী হয়ে গেল আসানসোলের বিদ্যাসাগর আর্ট গ্যালারিতে এই চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সুকল্পের শিক্ষক শ্যামল গাঙ্গুলী এরপর প্রদীপ প্রজ্জলন করেন শিল্পাঞ্চলের খ্যাতনামা শিল্পী মন্দিরা প্রতিহার। এই চিত্রপ্রদর্শনীতে দর্শকের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ইতিমধ্যেই সুকল্পের ছবি স্থান পেয়েছে কলকাতার প্রদর্শনীতেও। সকলেরই আশা একদিন সুকল্পের এই চিত্র প্রদর্শনী শিল্পাঞ্চল ছেড়েও দেশের বড় বড় শহরে প্রদর্শিত হবে। এ ব্যাপারে প্রত্যয়ী সুকল্প নিজেও।