শেষ দৃশ্য

নবনীতা দাস,  রঘুনাথগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ ##

দুর্গাপুজোর পরে প্রতিবারই আমাদের একটা পারিবারিক ভ্রমণের আয়োজন হয়েই থাকে। হাতে পাঁচ থেকে সাতদিন নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি আমি, মা, বাবা ও পাসি। এই পাসি শব্দটা নিয়ে সকলেই প্রথমবার শোনার পর একটা সাধারণ প্রশ্ন করে, পাসিটা আবার কে! তাই প্রথমেই বলে রাখি ইনি হচ্ছেন আমার পিসি কাম মাসিমনি। ছোটোবেলা থেকেই তাই দুটো শব্দকে জুড়ে দিয়ে পাসি বানিয়ে নিয়েছি। সে যাইহোক, এবার আমাদের ভ্রমণ স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল পশ্চিম সিকিমের পেলিংকে। বাঙালির ভ্রমণ স্থান হিসেবে সিকিমের গ্যাংটক আর পেলিং জায়গা দুটোর জনপ্রিয়তা সর্বকালীন।  যদিও গ্যাংটকটাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সকলে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। গ্যাংটক আমাদের প্রায় দুই থেকে তিন বার ঘোরা, তাই এবার পেলিং যাত্রাই স্থির হলো। 

লক্ষীপুজোর ঠিক আগের দিনের ট্রেনের টিকিট কাটাই ছিল ফারাক্কা জংশন স্টেশন থেকে। বাড়ির কাছের স্টেশন জঙ্গিপুর রোড হলেও নিউ জলপাইগুড়ি যাওয়ার যে দু তিনটে ট্রেন এই স্টেশনের উপর দিয়ে যায় তাতে রিজার্ভেশন পাওয়া যায়নি। তাই অগত্যা ফারাক্কা থেকে টিকিট কাটা হয়। কিন্তু কপালটা এক্ষেত্রেও সাথ দিলো না। বাস লেট করায় ট্রেনটা মিস হয়ে গেল।  এই পরিস্থিতিতে হয় ভ্রমণ বাতিল করে ফিরে যেতে হয় নয়তো বাসে যাওয়াই ভরসা। কিন্তু রাত তখন নটা প্রায়। এতো  রাতে বাসের খোঁজ পাওয়াও মুশকিল। স্টেশনেই লোকজনদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগলাম আমি আর বাবা যে বাস এই সময় বাস পাওয়া যাবে কিনা। কাছেই তিন চারজন মাঝবয়সী লোক রুকস্যাক হাতে দাঁড়িয়েছিল। আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুনে এগিয়ে এলো। 

“আপনারও ট্রেন মিস করলেন বুঝি?” একটা লোক বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললো। ওই লোকগুলোকে দেখেও কিছুটা উদ্বিগ্ন লাগছিলো। বাবা ঘটনাটা খুলে বলায় লোকটি উদ্বেগ মেশানো স্বরে বললো, “আর বলবেন না, আমাদেরও একই অবস্থা। ট্রিপটা ক্যান্সেলও করতে পারছি না। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম এখন আকাশ একেবারে পরিষ্কার, তার উপর কালকেই পূর্ণিমা। ফটোগ্রাফিটা প্রফেশনালিই করি আমরা। এই সময়টার জন্যই এখন পেলিং যাওয়া আমাদের। লক্ষ্য করে দেখলাম ওই ভদ্রলোকদের প্রত্যেকের হাতেই একটা করে ডিজিটাল এস এল আর ক্যামেরার ঝুলি রয়েছে। কয়েকদিন হলো আমিও শখ করে ওই বস্তুটি কিনেছি। যদিও এখনো তেমন সরগর নই এই ধরণের ক্যামেরার ব্যবহার নিয়ে। তবে শেখার ইচ্ছেটা প্রবল। তাই স্বাভাবিকভাবেই খুব কৌতূহলী হয়ে উঠলাম। মনে মনে চাইছিলাম এনাদের সঙ্গ প্রাপ্তিটা যেন ঘটে। ওদের মধ্যে একজন একটু দূরে ফোনে কথা বলছিল। সে ফোনটা রেখে হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে এসে জানালো যে সে তার এক পরিচিত মারফত খবর পেয়েছে একটা কলকাতা থেকে শিলিগুড়িগামী বাস আর পনেরো মিনিটের মধ্যেই মেন রাস্তার উপর দিয়ে যাবে। তাতে অনেক সিটই খালি। NH 34 ফারাক্কা স্টেশনের প্রায় পাশেই তাই আমরা সকলেই তাড়াহুড়ো করে স্টেশন থেকে নেমে মেন রাস্তার দিকে এগিয়ে গেলাম। আধঘন্টার মধ্যে বাসটিকে দেখা গেল এবং আমরা সকলে তাতে চড়ে বসলাম। বাসে উঠে লাগেজ রাখতে রাখতে প্রথম ভদ্রলোক আমাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, “যা মনে হচ্ছে আমাদের যাত্রাটা তবে একসঙ্গেই হবে। আমাদের পরিচয়টা দেওয়া হয়নি। এই হলো আমার তিন বন্ধু প্রিয়তোষ ঘোষ, দীপঙ্কর বোস, সুমন অধিকারী। আর আমি অনির্বান চ্যাটার্জী। নমস্কার।“

ওই বাসে শিলিগুড়ি বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছতে বাজলো সকাল সাতটা। আমাদের গাড়ি ঠিক করা ছিলোনা। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকেই কোনো গাড়ি শেয়ারে নিয়ে নেওয়া যাবে এই কথাই ছিল। কিন্তু সেসব তো আর হলো না। এক্ষেত্রেও অনির্বানবাবুরাই সাহায্য করলেন। ওদের গাড়ি হোটেল থেকেই ঠিক করে পাঠিয়ে দিয়েছিল। আমাদেরও ওই গাড়িতেই যাওয়ার জন্য অফার করায় আর আপত্তি করলাম না আমরা। রাস্তায় জানা গেল ওদের হোটেলটাও আমাদের হোটেল চত্বরেই। অনির্বানবাবু ও তার বন্ধুরা বেশ রসিক মানুষ। বয়স সকলেরই প্রায় চল্লিশ উর্ধ। আমার কাছেও একটা ক্যামেরার ব্যাগ দেখে অনির্বানবাবু আমাকে বললেন, “তুমিও তো দেখছি ছবি টবি তোলো”। আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, “না মানে নতুন কিনেছি। অতটা ভালোভাবে এখনো পারিনা ব্যবহার করতে। তবে শিখতে চাই ভালোভাবে।“ বলে ওনার ক্যামেরার ব্যাগটার দিকে নিজের অজান্তেই চোখ চলে গেল। উনি বোধয় বুঝলেন আমার আন্তরিক ইচ্ছেটা। অর্থাৎ আপনি একটু দেখিয়ে দিলে মন্দ হয়না আরকি। “বেশ, তবে বলো কতদূর কি জানো ডি. এস. এল. আর. -এর ব্যাপারে।“ এই বলে উনি আমাকে ক্যামেরার ব্যবহারের বিভিন্ন খুঁটিনাটি সহ তার নিজের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সম্পর্কে উৎসাহ সহকারে বলতে শুরু করলেন। ওদিকে বাবা এবং বাকিদেরও আড্ডা জমল ভালোই। রাস্তাটা বেশ হৈচৈ করতে করতেই কেটে গেল। পেলিং পৌঁছতে পৌঁছতে আমাদের প্রায় বিকেল চারটে বাজলো। এর মধ্যেই দিনের আলো প্রায় কমে এসেছে। পৌঁছে দেখলাম আমাদের হোটেলটা ওদের হোটেলের প্রায় পাশেই। 

পেলিংএ এসে যে যেখানেই থাকুক না কেন,  হেলিপ্যাডে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে সকলকে আসতেই হয় আলাদা করে। কিন্তু আমাদের হোটেল দুটো একদম হেলিপ্যাডের গায়ে লাগোয়া। তাই বলা যায় আমরা হেলিপ্যাডেই আছি। ঠিক হলো হাতমুখ ধুয়ে একটু কিছু খেয়েই আমরা সকলে আবার হেলিপ্যাডে জমায়েত করবো। যখন হেলিপ্যাডে গেলাম ততক্ষনে দিনের আলো নিভে গিয়েছে এবং পূর্ণিমার চাঁদটা আকাশের এককোনে দেখা যাচ্ছে। সেই চাঁদের আলোতে সামনেই একসারি সাদা বরফাবৃত শৃঙ্গ দেখা যাচ্ছিলো স্পষ্ট। কাঞ্চনজঙ্ঘা। দিনের আলোয় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখেছি অনেকবার, কিন্তু এ যেন অন্যরকম, বড়োই অদ্ভুত সে দৃশ্য, বড়োই মায়াবী। মোহাচ্ছন্ন করে দেয়। 

“বুঝেছেন এবার কেন এই সময়ে আসার জন্য হন্তদন্ত করছিলাম আমরা?” দীপংকরবাবু ভ্রু নাচিয়ে বললেন বাবাকে। আমরা অত গণনা করে আসিনি যদিও, তবু এদৃশ্য কপালে না থাকলে সত্যিই দেখা যায়না। অনির্বানবাবু আমার দিকে ইশারা করে বললেন, “চলো তোমাকে এবার লং সাটার এ ছবি তোলা দেখিয়ে দিই।“ ওনার কাছে ট্রাইপড ছিলই। উনি ক্যামেরাটা ট্রাইপডে সেট করতে করতে বললেন, ”ধুর, এই সামনের বাড়িটা ভিউটাই নষ্ট করে দিচ্ছে।“ তাকিয়ে দেখলাম সামনেই হেলিপ্যাডের একদম শেষ প্রান্তে একটা প্রায় চারতলা আন্ডারকন্সট্রাশন হোটেল সম্ভবত। আমি হোটেলটার দিকে তাকিয়েই বললাম, “এটা তো এখনো তৈরিই হয়নি। কাঠামোটা হয়েছে মাত্র। আমরা তো ওই চারতলায় উঠে ছবি তুলতে পারি। ওখানে সামনে কোনো বাধা থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই।“ কি একটা হিসেব করে নিয়ে অনির্বানবাবু লাফিয়ে উঠলেন,” সাব্বাস! দারুন বুদ্ধি দিয়েছ তো!” আজ রাতে তবে ওখানেই যাবো।“ “রাতে মানে? এখনই তো আটটা পার হয়ে গেছে। এখন গেলেই তো হয়।“ আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে বসলাম। উনি বললেন, “এখন চাঁদের আলোটা অতটা জোরালো নয়। আরো খানিকটা রাত বাড়লে জোৎস্নার আলোটা বাড়লে কাঞ্চনজঙ্ঘা আরো হয়ে উঠবে।“ আমার শুনে একটু মন খারাপ হয়ে গেল। আমার আর দেখা হলো না লং সাটারের ব্যাপারটা আরকি। উনি বোধয় বুঝতে পেরে আমাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য বললেন, “তুমি বরং কাল সানরাইজের আগে ওই বাড়িটার চারতলায় চলে এসো। আমরাও সবাই আসব তখন ছবি তুলতে। দেখবে তোমার জীবনের প্রথম সেরা ছবিটা পেয়ে গেছো।“ আমি একটু তেতো হাসি হাসলাম। যদিও বুদ্ধিটা খারাপ না। আরো কিছুক্ষন পর আমরা সবাই হোটেলে ফিরে এলাম। খেয়ে বিছানায় যেতে যেতে প্রায় সাড়ে দশটা বাজলো। আমি জানলা দিয়ে দেখলাম তীব্র চাঁদের আলোয় ঝকঝক করছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। সাথে দেখা যাচ্ছে ওই আন্ডার কন্সট্রাশন বাড়িটাও। অনির্বানবাবু হয়তো পৌঁছে গেছেন ছবি তুলতে ওই বাড়িটার চারতলায়, এই ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরদিন সকালে এলার্ম দেওয়া ছিল ঠিক পাঁচটায়। হোটেল ম্যানেজারের কাছে জেনেছিলাম সূর্যোদয় সাড়ে পাঁচটার দিকেই হবে। উঠেই কোনোরকমে চোখ মুখটা ধুয়ে হোটেল থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। বাবা ও বাকিরা একটু পরেই আসছে বললো। অন্ধকার ঘুচে গেছে, তবে আকাশে আবছা চাঁদটা এখনো দেখা যাচ্ছে আকাশের এক কোণে। যদিও সূর্যোদয় হয়নি এখনো। সেই আন্ডারকনস্ট্রাশন বাড়িটার চারিদিকটা ফাঁকা হওয়ার জন্য দূর থেকেই চারতলায় একপ্রান্তে রাখা ট্রাইপডটা দেখা যাচ্ছিল। বুঝলাম ওরা সবাই পৌঁছে গিয়েছে। আমি তাড়াহুড়ো করে সেই বাড়িটার চারতলায় উঠতে শুরু করলাম। বাড়িটায় পিলার ও ছাদ ঢালাই ছাড়া কিছুই বিশেষ তৈরি হয়নি। সিঁড়িতে বা অন্য কোনো জায়গায় কোনো রেলিংও নেই, বলাই বাহুল্য। কাজ এখনো চলছে তাই বাড়িটার চারিদিকে বাঁশের মাচা বাঁধা। সিঁড়ি দিয়ে উঠেই দেখি অনির্বানবাবু বাড়িটার এক রেলিং বিহীন প্রান্তের প্রায় ধারে কাঞ্চনজঙ্ঘার দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। চারতলায় পা দিতে না দিতেই উনি বললেন, “ঠিক সময় চলে এসেছ দেখছি। এবার তৈরি হয়ে নাও। যেকোনো সময় সূর্যের আলো ওই দেখছো, ওই যে চূড়াটা, ওটাতে পড়বে।“ আমি ক্যামেরাটা অন করতে করতে বললাম, “বাকিরা এখনো আসেনি বুঝি?”  উনি নিরুত্তাপ গলায় বললেন, “আসবে আসবে, এখনো সময় হয়নি। কই দাও তোমার ক্যামেরাটা সেট করে দিই।“ ক্যামেরাটা সেট করে উনি আমার হাতে দিলেন। কিছুক্ষন পরেই কাঞ্চনজঙ্ঘার একেবারে পূর্বপ্রান্তের শৃঙ্গটাতে একটা কমলা আভা দেখা দিল। ধীরে ধীরে সেই আভা পাশের শৃঙ্গগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলো। কাঁঞ্চনজঙ্ঘাকে যেন কেও সোনা দিয়ে মুড়ে দিচ্ছে। আমরা দুজনেই মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখতে থাকলাম। অনির্বানবাবু ওই দৃশ্য থেকে চোখ না সরিয়েই বললেন, “জীবনে প্রকৃতির চেয়ে বেশি ভালো আর কিছুকে বাসতে পারিনি জানো? তাই হয়তো বিয়েটাও করা হয়ে উঠলো না। তাই হয়তো এই প্রকৃতিকেই ক্যামেরাবন্দি করা আমার নেশা। তাই হয়তো সারাজীবন ধরে আমি চেয়েছিলাম এমনই কোনো স্বর্গীয় দৃশ্যই যেন আমার দেখা ইহজগতের শেষ দৃশ্য হয়।“ সত্যিই তো এর চেয়ে বড় স্বর্গীয় অনুভূতি, এর চেয়ে বেশি রোমান্টিসিজম আর কিসে থাকতে পারে। কোথায় যেন হারিয়ে গেছিলাম এই দৃশ্যের ভিতর। 

“দাও তোমার একটা ছবি তুলে দিই সোনায় মোড়া কাঞ্চনজঙ্ঘার সাথে। এই যে তুমি ফটোগ্রাফি শুরু করলে, আর তোমার ছবি তুলে দেওয়ার কোনো লোক পাবে না। তোমাকেই সবাইকে ছবি তুলে দিতে হবে, বুঝলে!” অনির্বানবাবু হেসে বললেন। তারপর আমার ক্যামেরাতেই আমার একটা ছবি তুলে দিলেন। কয়েক মিনিট পরেই সারা আকাশটা সূর্যের আলোয় ভোরে গেল। আমি অনির্বানবাবুকে বললাম, “এখনো তো কেও এলো না। যাই আমি দেখে আসি। কি যে করছে ওরা। আপনি কি আসবেন?” “নাহ তুমি যাও। আমি এখানেই থাকবো। এখানে এলেই পাবে আমাকে।“ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে শুনলাম উনি বলছেন, “ফটোগ্রাফিটা ছেড়োনা। এই আমি আশীর্বাদ করে গেলাম। তোমার হবে।“

হোটেলের দিকে ফিরে দেখি স্থানীয় একদল মানুষের ভিড়। সঙ্গে আসে পাশের হোটেলগুলো থেকেও সবাই নেমে এসেছে। আমাকে দেখে বাবা এগিয়ে এলো। “এই যে কোথায় গিয়েছিলে। তোমার মা পাসি দুজনেই কান্নাকাটি করছে।“ আমি অবাক হয়ে বললাম, “আমি তো ওই চারতলা বাড়িটায় ছিলাম। তোমরা হেলিপ্যাডে আসবে বলে এলে না, আবার উল্টে আমাকে বলছো?” বাবা কেমন যেন চমকে গিয়ে বলল,”ওখানে তুই কি করছিলি। তুই তো হেলিপ্যাডে থাকবি বলেছিলি। ওখানে যাওয়ার কথা তো একবারও বলিসনি।“ “আরে তোমরা হেলিপ্যাডে এলে উপর থেকে ডেকে নেব ভেবেছিলাম। কি হয়েছে টা কি বলো তো?” 

যা শুনলাম তার সারাংশ এই, অনির্বানবাবু তার কথা মতো রাত সাড়ে দশটার দিকে ওই বাড়ির চারতলায় গিয়েছিলেন। ফেরার কথা ছিল আধ ঘন্টার মধ্যেই। আজ ভোর চারটের দিকে ওই দলের বাকিরা ওনার ট্রাইপড সহ ক্যামেরাটা ওই বাড়ির চারতলায় পেলেও ওনাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সবাই আশঙ্কা করছে হয়তো রাতের অন্ধকারে পা হরকে খাদে পড়ে গেছেন উনি। তখন থেকে ওদের হোটেলের ম্যানেজার সহ অনির্বানবাবুর বাকি বন্ধুরা লোকাল থানাতেই ছিল। এই মাত্র ফিরেছে। এখন খাদে সার্চ পার্টি নামানো হবে। অনির্বানবাবুর বন্ধুরা এখনো আশা করছে যে উনি হয়তো এখনো বেঁচে আছেন, হয়তো ওনাকে জীবিত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া যাবে। আমার ক্যামেরায় অনির্বানবাবুর তোলা শেষ ছবিটা দেখতে দেখতে আমি ভাবলাম, শুধু আমিই জানি উনি কোথায় আছেন। ওনাকে আর খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয় এই পৃথিবীতে। উনি সেই জোৎস্না রাতের মোহময়ী এক স্বর্গীয় দৃশ্যের মাঝে চিরতরে হারিয়ে গেছেন। আমি জানি কাল ভোরে ওই চারতলায় গেলে আমি তাকে আবার খুঁজে পাবো এক ভয়ংকর সুন্দর দৃশ্যের অন্তরালে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four − 1 =