সাওর বিপ্লব : পিপল’স ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ আফগানিস্তান (PDPA )

ধিরাজ সাউ ##

সাওর বিপ্লব এর কথা বললে, যাকে April Coup ও বলা হয়ে থাকে – এটি ১৯৭৮ সালে ২৭ ও ২৮ এপ্রিল এ হয়। সাওর বা সৌর শব্দটি হল হিজরী ক্যালেন্ডার এর দ্বিতীয় মাসের নাম,সেই মাসে সংঘটিত হয়ে ছিল। এবার আফগানিস্তান এর কথা করলে আমরা দেখতে পাই মর্ডার্ন আফগানিস্তান আজকে আফগানিস্তান এর যা অবস্থা আছে তা প্রথম থেকে বিস্তর ভাবে পর্যালোচনা করতে  হলে তিনটি পর্ব বা নির্দিষ্ট সময়কাল ধরে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো কে জানা প্রয়োজন। – তার মধ্যে প্রথমত হল,১) সাওর বিপ্লব ( Saur Revolution ), দ্বিতীয়ত হল, ২) অপারেশন সাইক্লোন ( Operation Cyclone ) এবং ৩ ) তৃতীয়ত – তালিবানের উত্থান ( Rise of Taliban )। এইগুলি ১৯৭৯ থেকে শুরু করে ২০২০ সাল পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভাবে আফগানিস্তান এর নিয়ে বিস্তর আলোচনায়  উল্লেখযোগ্য। ১৯৭৮ সালে যে বিপ্লব হয়,যে বিপ্লব আসে তা আফগানিস্তানকে সম্পূর্ণ ভাবে বদলে দেয় কিন্তু এই বিপ্লব টি বেশি দিন সক্রিয় থাকে নি – টিকে থাকতে পারেনি। সাধারণের আশা ছিল,যে কমিউনিস্ট পার্টি এসছে যে PDPA এসছে তা তাঁদের জন্য খুব ভাল কাজ করবে এবং ভাল কাজ ও হচ্ছিল কিন্তু তা বিদ্ধ্ংস এর মূলে ছিল  আন্তর্জাতিক রাজনীতি …।

আফগানিস্তান তার প্রকৃতিক সম্পদ এর দিক থেকে খুবই সমৃদ্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ কেন না, সারা পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে বেশি  প্রাকৃতিক সম্পদ এর বৃহৎ সমৃদ্ধি এখানে বর্তমান, যেমন প্রধান খনিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে ক্রোমিয়াম, তামা, স্বর্ণ, লৌহ আকরিক, সীসা ও দস্তা, লিথিয়াম, মার্বেল, মূল্যবান ও অর্ধ মূল্যবান পাথর, সালফার এবং অন্যান্য অনেক খনিজ পদার্থ। তাই তো যতগুলো দেশ আছে এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এমনই আছে যে আফগানিস্তান এ আমেরিকা এই জন্য তো এসছে বা প্রবেশ করেছে। আমেরিকা ভেবে ছিল বা তার ধারণা ছিল আফগানিস্তানের ওপর নিজ নিয়ন্ত্রণ জ্ঞাপন করে নেবে। আফগানিস্তানে প্রাকৃতিক গ্যাস ও পাওয়া যায় এখানে তেল ও পাওয়া যায় কিন্তু অস্থিতিশীলতা এতটাই বেশি এখানে যে তাঁকে ব্যবহার বা কাজে লাগানোই গেল না, এই জন্য আমেরিকার স্বার্থ ছিল, ভারতীয় হিসেব অনুযায়ী ১ লক্ষ কোটি কোটি অর্থ বিনিয়োগ করার পরেও আমেরিকার তেমন কিছু প্রাপ্তি হয় নি,কেন না আফগানিস্তান এর ওপর একক দখলদারি সম্ভব হয়নি। আফগানিস্তান একটি ট্রাইবাল এলাকা এই আফগানিস্তান ট্রাইবাল রা নিয়ন্ত্রণ করে। পাকিস্তানের উত্তর -পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের ফেডারেল -অ্যাডমিনিস্ট্রেটেড ট্রাইবাল এরিয়া নিয়ে গঠিত সাতটি এজেন্সি আছে, এখানে নিয়ন্ত্রণ করা নানা সমস্যা আছে এবং কোনও দেশের এরূপ নিয়ন্ত্রণ করার ধারণা তার চিন্তার ঠিক বিপরীত প্রতিফলন ঘটাবে। খাইবার, কুড়রম, ওরাকজাই, মোহম্মদ, বাজাউর, উত্তর ওয়াজিরিস্তান এবং দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান – এগুলি আফগানিস্তানের সাথে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং জাতিগত সম্পর্ক রয়েছে। এবং অনেক বছর ধরেই চলে আসছিল নিয়ন্ত্রণ করার বিষয় টি। কিন্তু যখন ব্রিটিশরা ভারত জয় করে,অর্থাৎ যখন ব্রিটিশ উনিশ শতক আসতে আসতেই ভারতে পুরো ভাবে তার দখলে নেই। বড় বড় সাম্রাজ্য অর্থাৎ ব্রিটিশরা বাংলা দখল করে তারপর মারাঠাদের সঙ্গে সংঘাত বাঁধে,তারপর শিখ দের পরাজিত করে তখনি আফগানও এদের দখলাবস্তায় আসে।,কেন না শিখ দের সঙ্গে আফগানিস্তান এর সু-সম্পর্ক ছিল। যা মহারাজা রণজিৎ সিং এর পর্যালোচনাই পরিলক্ষিত হয়। এবং এই সময় আহমেদ-শাহ-আব্দালি এসে গিয়েছিলেন,এবং তিনি আহমেদ-শাহ-দুররানি নামেও পরিচিত। তিনি আফগানিস্তান এর যে আলাদা নিয়ম ছিল তা এক করে দিয়েছিলেন। আহমেদ-শাহ-আব্দালি নেতিবাচক মনোভাবি হিসেবে ভারতে থাকলেও আফগানিস্তানে তাঁকে,ভক্তি-ভাব সহকারে দেখা হত। এবং তাঁকে আধুনিক আফগানিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা ও বলা হয়। এবং আফগানিস্তান এ এর যে আসল কাহিনি বা প্রেক্ষাপট আছে তা হল – ব্রিটিশ যখন ভারতে দখল করে,তখন ব্রিটিশ চাইছিল আশেপাশের এলাকা গুলো অঞ্চল গুলো যত পারবে লুট করবে এবং এক্ষেত্রে ‘আফগানিস্তান’ অনেকাংসে লাভজনক ছিল ব্রিটিশ এর ক্ষেত্রে কেন না ব্রিটিশ চাইছিল আফগানিস্তানকে বাফার জোন হিসেবে ব্যবহার করতে। তাই আফগানিস্তানে ব্রিটিশরা দখলদারির পদক্ষেপ নেয়,- ইঙ্গ আফগান যুদ্ধ শুরু হয়। প্রথম ইঙ্গ আফগান যুদ্ধ হয়েছিল ১৮৩৯-১৮৪২ সাল পর্যন্ত। প্রথম ইঙ্গ আফগান যুদ্ধ “ অকল্যান্ডের বোকামি নামেও পরিচিত “ আফগানিস্তান ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে সংঘটিত হয়। এতে আফগানরা জয়লাভ করে। … গ্রেট গেমের সময় সংঘটিত সংঘর্ষের মধ্যে এটি অন্যতম প্রধান যুদ্ধ ছিল। এটি  এই সময়কাল ছিল যখন শিখ এবং ব্রিটিশদের মধ্যে প্রবল শত্ত্রুতা পরিলক্ষিত হচ্ছিল। এটি বোঝা যায় এই প্রসঙ্গে কেন না রণজিৎ সিং তো চলে গিয়েছিলেন এই সময়। আফগানিস্তানে বহুলাংসে সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। ইঙ্গ আফগান যুদ্ধ যখন হয় তখন ব্রিটিশ কে পরাজিত হতে হয়,আফগান জয়ী হয়,তারপর যখন দ্বিতীয় ইঙ্গ আফগান যুদ্ধ হয় ( ১৮৭৮-১৮৮০ সাল ) তাতে ব্রিটিশ জয়ী হয়। এবং ব্রিটিশ জয়ী হওয়ায় আফগানিস্তান এর কয়েকটি এলাকা বা অঞ্চল তাঁদের দখলে আসে। এবং বৈদেশিক বিষয় গুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ ব্রিটিশ দের হাতেই থাকে,এবং এরূপ এইজন্য করা হয়ে ছিল যাতে ভারতের দিকে রুশ সাম্রাজ্যের বিস্তার হ্রাস বা রোধ করা যায়। কিন্তু তৃতীয় ইঙ্গ আফগান যুদ্ধ যা শুরু হয় ৬ই মে ১৯১৯ সালে,এবং  এই যুদ্ধ টি আফগানিস্তানের স্বাধীনতা যুদ্ধ হিসাবে পরিচিত,১৯১৯ সালে শুরু হয় যখন আফগানিস্তানের আমিরাত ব্রিটিশ ভারত আক্রমণ করে এবং একটি যুদ্ধবিরতি দিয়ে শেষ হয়  সেই একই বছরের। এবং আফগানরা  বৈদেশিক বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায় এবং ব্রিটিশরা আফগানিস্তানকে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।  ব্রিটিশ লেখক মাইকেল বার্থর্পের মতে, এটি ব্রিটিশদের জন্য একটি কৌশলগত বিজয়ও ছিল কারণ ডুরান্ড লাইনটি আফগানিস্তান এবং ব্রিটিশ রাজের মধ্যে সীমানা হিসেবে পুনরপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখানে কূটনৈতিক বিজয় ছিল,আসলে এই ছিল যে রাশিয়া ও চাইছিল আফগানিস্তানে দখল করা যায়,আর ব্রিটিশরা ও চাইছিল আফগানিস্তানে দখল করতে এবং এটি অনেক সময় ধরেই চলে আসছিল। রাশিয়া ও ব্রিটিশ এই দুটির মধ্যে রাশিয়ান সাম্রাজ্য অনেক বৃহৎ ছিল তো দুটোর মধ্যে দাবি ছিল এই – যে আফগানিস্তান এ দখল কে করবে, কিন্তু পরে ব্রিটিশ জয়ী হয় এবং ব্রিটিশ চলে যাই,আফগানিস্তান কে স্বীকৃতি প্রদান করে।  এবার এখানে রাজতন্ত্র এর প্রচলন ঘটে,রাজা মহারাজার নিয়ম এখানে চলতে শুরু করে। এখানে রাজা জাহির শাহ এর আগমন ঘটে,তিনি ১৯৩৩ সালে আফগানিস্তানে এ আসেন। ১৯৩৩-১৯৭৩ প্রায় ৪০ বছর তিনি ছিলেন ; ও খুবই নিয়ম নিরপেক্ষ ছিলেন। তিনি পাশ্চাত্য কে খুব বেশি সমর্থন করতেন না,আসলে ব্রিটিশ এর সমর্থন তো ছিলই,তবুও বিশ্ব যুদ্ধ চলাকালীন ও নিরপেক্ষ থাকতে দেখা যায়,কেন না তখন তিনি বেশির ভাগ কারোর সঙ্গে সঙ্গ প্রদান করেন নি। তার তৎকালীন বিশেষ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি গুলি ছিল যেমন আধুনিকিকরনের নীতি, সংস্কার চালু করা,ব্যক্তির অধিকার নিয়ে কথা বলা ইত্যাদি।তবে ১৯৭৩ সালে জাহির শাহ এর অপসারণ ঘটে,ক্ষমতায় অপসারণ হয়। ঘটনা ছিল এই যে – জাহির শাহ এর যে ভাই ছিলেন,অর্থাৎ জাহির যখন বাইরে গিয়েছিলেন তখন মহম্মদ দাউদ খান যাকে ১৯৬৩ সালে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছিল এবং জাহির শাহ এরই আত্মীয় ছিলেন মোঃ  দাউদ খান। এবং তিনি নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে যান,১৯৭৩ এ যখন জাহির শাহ এর ক্ষমতার অপসারণ ঘটে তখন মোঃ দাউদ খান এর আগমন হয়। তিনি নেতা হন, তথা কথিত রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী দুটোই হয়ে যান তিনি। কিন্তু এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হল – সমর্থন কার ছিল ? এটি পর্যালোচনা করতে হলে ‘ PDPA ‘ কে বুজতে হবে। PDPA হল People’s Democratic Party Of Afganisthan (PDPA, Minority Political Party )। যেহেতু ‘ Democratic ‘ শব্দটির ব্যবহার হয়েছে সেহেতু বুজে নিতে হবে যে এটি একটি নিশ্চয়ই একটি গণতান্ত্রিক দল,কিন্তু এটি তাঁর নামের অর্থ বহনে সমর্থ ছিল না,এটি কার্যত আফগানিস্তানের একটি মার্কসবাদী লেনিনবাদী রাজনৈতিক দল ছিল।,এই প্রেক্ষিতে পূর্বে প্রস্থান করলে দেখা যায় এই দল টি গড়ে ওঠে ছিল ১৯৬৫ সালে এবং এটি গঠিত বা তৈরি হয়েছিল কেন না আফগানিস্তান এ যে কমিউনিস্ট আছে,যাঁরা শ্রেণীহীন সমাজের কথা বলে, অধিকার এর কথা করে অর্থাৎ বাম্ পন্থা এর কথা বলা হয় – PDPA তাদের জন্যই গঠিত হয়েছিল কারণ জনসাধারনের অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না। এছাড়া ১৯৬০ এর যে সময়কাল ছিল তা সারা পৃথিবী জুড়ে বিশেষ করে মধ্য প্রাচ্য দেশ গুলোতে প্রায় কয়েক জায়গায় আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছিল ; তো আফগানিস্তান কি করে পিছপা হবে। ১৯৬৫ সালে আফগানিস্তানে PDPA গঠিত হয় যার প্রতিষ্ঠাতা রা ছিলেন নুর মুহাম্মদ তারাকি ( Nur Muhammad Taraki ), হাফিযউল্লাহ আমিন ( Hafizullah Amin ), বাব্রাক কারমাল ( Babrak Karmal )। মূলত এই তিন জন প্রধান উল্লেখিত ছিলেন। অধিকাংশ অস্তিতের জন্য কট্টরপন্থি দের মধ্যে বিভক্ত PDPA এর দুটো দল বা গোষ্ঠী ছিল,প্রথমত ছিল ‘ Parcham ‘ এর অর্থ হল পতাকা, এরা ন্যাশনালিস্ট ছিলেন এবং ‘ পারচাম ‘ সমর্থকরা বেশিরভাগ শহুরে নাগরিক থেকে এসেছিলেন যারা দেশে সামাজিক-অর্থনৈতিক সংস্কারকে সমর্থন করেছিলেন। তবে আর একটি কথা বলা প্রয়োজন, আফগানিস্তান এ পাস্তুন জনসংখ্যা খুবই বেশি আছে এবং পাস্তুন রা আফগানিস্তান এও থাকে এবং পাকিস্তানেও থাকে,আফগানিস্তান এর একটি ইচ্ছা রয়েছে যা সকল পাস্তুন এক হয়ে যায়। কিন্তু ব্রিটিশ এখানে বিভক্তিকরণ এর শাসনে অভস্থ হওয়াই আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান এর মধ্যে ‘ Duren Line ‘ করে দেওয়া হয়।

এবার ব্রিটিশ চাইছিল না কেন না ব্রিটিশ জানত ; এবং ব্রিটিশ সর্বদা শক্তির বা ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্য সর্বদা লড়াই করে। সে কখনও চাইবে না ক্ষমতা একক প্রতি অর্পণ বা সমৃদ্ধ হোক। তাই ব্রিটিশ এর দিকনির্দেশ ছিল দুটোকে বিভক্ত করে দেওয়া,এবং এটি হয়েছিল Duren Line এর মাধ্যমে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মাঝে। এবং তাঁর ই ফল স্বরূপ বহুলাংসে পাস্তুন রা পাকিস্তানেও চলে যায় অর্থাৎ বহু সংখ্যক পাস্তুন আফগানিস্তান এ থাকতে শুরু করে এবং বহু সংখ্যক পাস্তুন পাকিস্তানে চলে যায়,তাই এরা সংখ্যাগরিষ্ট বা একত্রিত হতে পারেনি এবং এটি ছিল ব্রিটিশের বিভক্তিকরণ শাসনের ফলরুপী প্রতিফলন। তবে, আফগান দের প্রায়ই প্রয়াস ও ইচ্ছা ছিল যে তাঁরা একদিন সকল পাস্তুন কে ঐক্য – একত্রিত করবে। এবং এটি বহু সময় কাল ধরেই চলে আসছিল কিন্তু মোঃ দাউদ খান যখন ক্ষমতায় আসেন তখন জনসাধারন তাঁকে আহ্বান জানাই। কিন্তু পরে তিনি নিজের উদ্দেশ্য থেকেই সরে দাঁড়ান,পরবর্তীকালে দেখা যায়। আফগান জনগন এর যা দাবিনামা ছিল তা দাউদ খান এর চিন্তাধারার বিপরীতে ছিল – অমিল ছিল নানা মত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছিল তবে PDPA এর আলোচনা প্রসঙ্গে করা যায় না। PDPA এর দুটি উপদল ছিল একটি ছিল PDPA এর পারচাম(Parcham),এটি তে প্রায় ধনী লোকেদের ই সমাগম থাকত।এটি উপদল টি ছিল আধুনিক,অর্থাৎ কট্টর ছিল না এবং দ্বিতীয় উপদল টি ছিল খালক (Khalq) আফগানিস্তানে এই খবরের কাগজের ও প্রচলন ছিল বিদ্যমান।যে দ্বিতীয় উপদল টি ছিল ‘ Khalq ‘ এটির অর্থ হল ‘ জনসাধারন ‘ People বলা হত,মানে যারা লোকেদের জনগণের জন্য কাজ করতেন। এবং ‘ খালক ‘ কে গ্রামীণ সমর্থন ছিল এবং যাকে গ্রামীণ সমর্থন থাকবে – কেন না আফগানিস্তান এর ৮০-৯০ % জনতা বা জনগন গ্রামে থাকত। এবং এটি বিশেষ উন্নত ছিল না উল্লেখিত মর্মে যে ১৯৭০ এর সময় কাল চলছে এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দেশ গুলোর মধ্যে একটি ছিল আফগানিস্তান। কেন না এখানে জমি সংস্কার এর ব্যবস্থা ছিল না ও অনেক সমস্যাদি ছিল। এখানে খালক উপদল টি কট্টর ছিল এবং গ্রাম গুলোর বিশেষ সমর্থন ছিল এবং সোভিয়েত ও খালক উপদল টিকে সমর্থন করত। এবং এই খালক ই PDPA এর একটি অংশ যা পূর্বে আলোচিত হয়েছে। ১৯৬৭ সালে এই দুটি উপদলে বিভক্ত হয়েগিয়েছিল। এবং দুটোর মধ্যে পার্থক্য বর্তমান থাকত।

১৯৭৩ এর ক্ষমতার রদবদলে মোঃ দাউদ খান এর আগমন ঘটে ও সোভিয়েত তার সমর্থন অর্পণ করে এখানে PDPA অবশ্যই সমর্থন ছিল দাউদ খান এর ; অর্থাৎ PDPA,সৈন্যদল সকলে দাউদ খানের সমর্থন জ্ঞাপন করেছিল। কিন্তু মোঃ দাউদ খান অ প্রান্তিককরণের নীতি অনুসরণ করেন। আফগানিস্তানিরা যে পাস্তুন দের এক করার কথা ভেবে ছিল,দাউদ তাঁর থেকে সরে যান,দাউদ খান চাইছিলেন সংস্কার। যা সোভিয়েত ও PDPA এর আশার প্রতিকূল এ গড়িয়ে ছিল। অর্থাৎ দাউদ তার নিজ বিষয় সূচি থেকেই সরে দাঁড়ান,যা PDPA আসা করেছিল দাউদ খান তা চান নি। এখানে নানা সম্যসা দেখা দিচ্ছিল,১৯৭৮ আসতে না আসতেই – এই ৫ বছর এ জনসাধারণ দাউদ খান থেকে অসন্তুষ্ট ছিলেন তাঁর নিয়ম রীতি নীতি কারোর পছন্দই ছিল না। এবং প্রায়শই দাউদ ও PDPA এরমধ্যে শত্রুতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হতে শুরু করেছিল এবং ১৯৭৮ সালে ১৭ই এপ্রিল খুবই বড় মাপের নেতা ‘ Trade Unionest Leader ‘ মির আকবার খ্যবার এর হত্যা হয়ে যায় এই মর্মে কথা হল যে – এটি কে বা কার দ্বারা ঘটিত হয় এক্ষেত্রে মত বিরোধ আছে। তবে বলা হয় মোঃ দাউদ খানের সম্পূর্ণ পরিকল্পনা ছিল এর মূলে।,যেহেতু PDPA এর ভাল সম্পর্ক যাচ্ছিল না দাউদ এর সঙ্গে,এবং তিনি অনুভব করেছিলেন যে ভবিষ্যতে নানান অসুবিধের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে PDPA তাই এটিকে সরিয়ে বা দুর্বল করে দেওয়ার পরিকল্পনা রচিত হয়েছিল। এরূপ পরিস্তিতি তে PDPA এর নেতা দের মধ্যে অস্থিরতার সৃষ্টি হতে থাকে এবং হাফিয উল্লহা আমিন কে সগৃহে বন্দী করা হয় খালকিস্ট সেনা অফিসারদের সরকার উৎখাতের নির্দেশ দিয়েছিল। এখানে PDPA এর যে নেতারা ছিলেন তাঁদের সমাপ্ত করার প্রয়াস প্রায়ই সামনে আসতে থাকে। এই মর্মে পডপআ কর্তৃক স্থির করা হয় যে অনেক সহ্য করা হল এবার ক্ষমতার রদবদল করতেই হবে,দাউদ এর অপসারণ দাবি হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৮ সালে PDPA এর নেতারা সৈন্যকে নির্দেশ দেয় তাঁরা যেন আত্মসমর্পণ করেন এবং মোঃ দাউদ খানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।,কোনও দেশের সরকার তখনি পরিবর্তন করা সম্ভব হবে যখন তা দেশের সৈন্যদল নিয়ে হবে- গণতান্ত্রিকভাবে নয় ; অর্থাৎ যখন পুলিশ ও সৈন্য এর যৌথ সমর্থন ও ঐক্যতা প্রদর্শীত হবে। আলোচিত প্রসঙ্গে PDPA সৈন্যকে নিজের সঙ্গে আনে,সৈন্যদলের বড় বড় জেনরেল ও উচ্চ পদস্থ অফিসার দের প্রভাবিত করে,এবং তারই ফলসরুপ মোঃ দাউদ খানের বাড়িতে সৈন্য হানা দেয় এবং তাঁকে বাইরে আনা হয়,গুলি ছুলে এবং সে মারা যায়,এই সময় ১৯৭৮ সালের ২৭ ও ২৮ এপ্রিল এ PDPA ও সৈন্যদল প্রায় ২৫০ এরও বেশি ট্যাঙ্ক নিয়ে গিয়েছিল, এবং তাঁদের লক্ষ্য পূরণ হয়েছিল। PDPA এর নিয়ম কানুন চালু হয়েছিল এবং এত বছরের অতিক্রমে আফগানিস্তান প্রথমবার প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় এবং PDPA আসে। এবং একথাও উল্লেখ্য যে ‘ Parcham ‘ ও ‘ Khalq ‘ উপদল দুটোই এক হয়েগেছিল কেন না ১৯৭৭ সাল আসতে না আসতেই এদের মনে হয়েছিল যে যৌথভাবে কাজ শুরু করতে হবে,তাই তাঁরা এক হয়ে যায়। এবং এরা একত্রিত হয়েছিল এইজন্যই যাতে করে দাউদ খানকে সরানো যায় এবং ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা যায় কিন্তু যখন ক্ষমতায় আসে তখন আবার এরা পৃথক হয়ে যায় ১৯৭৮ সালে আলাদা আলাদা হয়ে যায়। এবং তৎকালিন আফগানিস্তানের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে,আফগানিস্তানের সময় খুব একটা ভালো ছিল না,যখন PDPA আসে তখন নেতাদের বিশেষ খাতিরদারি হয় এবং জনসাধারণের ও নানা বিশ্বাস ও আশা আকাঙ্খা ছিল এর প্রতি। এরূপ হওয়ার কারণ হল সে সময় আফগানিস্তান এর জনগণের শুধুমাত্র ১৪% অংশ শহরে থাকত এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিল না,রাস্তা ও শিল্প ব্যবস্থা উন্নত ছিল না ও প্রায় ছিল না বললেই চলে। বাকি ৮৬% লোক প্রায় গ্রামে থাকত ১.৩ কোটির কাছাকাছি লোকেরা অশিক্ষিত ছিল,৯৫% আফগানিস্তান এর লোকের পড়া শুনো ছিল না। আফগানিস্তানে ১.৬ কোটি একর জমি আছে যার মধ্যে শুধুমাত্র ১২% এমন জমি যাতে চাষ করাই যাবে না এবং কেবল ৫% জনগন ছিল যাঁদের কাছে জমি ছিল। অর্থাৎ তাঁদের কাছে প্রায় সকল সম্পদ ছিল,৯০% লোকেরা গরিব ছিল। কোন উন্নতি ছিল না খুবই দূরাবস্থা ছিল। কোন শিল্প ছিল না,কাবুল এ কিছু শিল্প থাকলেও পুরো আফগানিস্তানে কোনও শিল্প ছিল না,এখানে PDPA  যখন ক্ষমতায় আসে তখন এরা জমি সংস্কার শুরু করে,চাষে অউপযোগী জমি গুলোকে চাষের উপযোগী করে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করে যে গরিবদের কাছে জমি ছিল না,সেদিকেও দৃষ্টি নিক্ষেপ করা হয়। এবং অন্যতম হল ‘মহিলাদের অধিকার’ দেওয়া হয় ; এবং প্রথম থেকে চলে আসা আফগানি প্রথার প্রবর্তন করা হয়, বিবাহ সম্পর্কে বিশেষ সংস্কার আনা হয়। কম বয়সে বিয়ে দেওয়া নিজের সমতে বিয়ে না করা ইত্যাদির ক্ষেত্রে ভাবধারাগত পার্থক্য আনা শুরু হয়। এছাড়া কৃষি ও শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও সংস্কার হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে,হাসপাতাল তৈরি হয়,জল সম্যসার জন্য জল বণ্টন এর ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া নানান সামাজিক ক্ষেত্র PDPA সংস্কার নিয়ে আসে । তবে, হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা সভ্যতা সংস্কৃতি ও আচার অনুষ্ঠান রীতিনীতি দ্বারা প্রভাবিত ও অভস্থ আফগানিদের হঠাৎ করে এরূপ পরিবর্তন এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারছিল না। এবং সকলে PDPA এর বিরুদ্ধে দাঁড়ায়,মূলত প্রথা ও ঐতিহ্য গত পরিবর্তনের জন্য।

যদি সাম্যবাদ এর কথা আসে তাহলে সোভিয়েত এর কথা আসবেই,PDPA এর সুসম্পর্ক ছিল সোভিয়েত এর সঙ্গে এবং এই পরিস্থিতিতে সোভিয়েত PDPA এর সাহায্য করবে বলে,আস্সাস দেয় এবং সাহায্যের হাত বাড়ায় – সৈন্য পাঠায়,PDPA এর নীতি প্রচারে বা বাস্তবায়নে বাধা প্রদর্শনকারী যে কোনও ব্যক্তিকে ও সংখ্যাগরিষ্ট কে বিদ্ধন্স করার  উদ্দেশে অর্থাৎ সোভিয়েত এর সম্পূর্ণ সমর্থন ছিল PDPA এর ওপর, কিন্তু ১৯৭৮-৭৯ এই ১ বছর এ PDPA এ তে  সমস্যা দেখা দেয় এবং দুই উপদল ‘Parcham’ ও ‘Khalq’ দুটির মধ্যে  ক্ষমতা নিয়ে অভন্তরিন বিবাদ সংঘটিত হতে থাকে। প্রথমবারের মতো আর ঐকতা ছিল না তৎকালীন নতুন রাষ্ট্রপতি ছিলেন – নুর মুহাম্মদ তারাকি (Nur Muhammad Taraki) এবং তিনি ‘ Khalq ‘ উপদলের ই একজন ছিলেন। যাইহোক, 1979 সালের সেপ্টেম্বরে, তারকী নিজেই উৎখাত হন এবং আমিন দ্বারা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। হাফিযউল্লাহ আমিন ১৯৭৯ সালে ক্ষমতায় আসেন এবং ইনি একটু পৃথক ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন অনেকে তাঁকে সাইকোপ্যাথ ও বলতেন। সোভিয়েত কে হাফিযউল্লাহ পছন্দ হননি,যার ফলসরুপ পরবর্তীকালে হাফিযউল্লাহ এর মৃত্যু হয় এবং এটির মূলে ছিল সোভিয়েত। সবশেষে এখানে কামাল বার্বাদ (kamal barwad) নেতা হয়ে আসেন এবং তাঁর রাজনৈতিক চলন ছিল সোভিয়েত এর নির্দেশে। সোভিয়েত এর আশা ছিল যাতে আফগানিস্তান এ অধিক আধিপত্য আসুক তাই ১৯৭৯ সালের মার্চ মাস আসতে না আসতেই নিজের সৈন্য পাঠায় সোভিয়েত এবং ঠিক যখনি সোভিয়েত সৈন্যরা আসে তখনি সোভিয়েত আফগান যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ১৯৭৯-৮৭ এই বছর গুলিতে PDPA অনেক কিছুই করে ছিল বা করার প্রচেষ্টাও করছিল কিন্তু আমেরিকা এটিকে সম্পূর্ণ হতে দেয়নি। কেন না সোভিয়েত আফগানিস্তানের প্রবেশ করে ছিল … এই অবস্থায় আমেরিকা কীভাবে পিছিয়ে থাকত ! তখন সকলে সোভিয়েত ও PDPA এর বিরোধ করছিল,শহর ও বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা এটি তে যুক্ত ছিল এবং এই সুযোগ নেয় আমেরিকা, আমেরিকা প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে – বিপুল অর্থ প্রদান করে। ১৯৭৯-১৯৮৯ এই সময়কালে সোভিয়েত আফগান যুদ্ধ শুরু হয় ও চলতে থাকে। এখানে যে লোকেরা ছিলেন,’ মুজাহিদীন’ অর্থাৎ যারা যুব ছিলেন যারা বিদ্যমান সরকার অপসারণের কথা বলতে শুরু করে ছিল তাঁদের পরোক্ষ বা প্রতক্ষ ভাবে আমেরিকা,পাকিস্তান,চিন,ব্রিটেন সকলেই সমর্থন করছিল। ১৯৮৯ সাল আসতে না আসতেই সোভিয়েত এর পরাজয় হয় মানে পরাজয় না এক হিসেবে সোভিয়েত বুজতে পেরেছিল যে এখানে তাঁদের বিশেষ প্রাপ্তি কিছু হবে না এবং নিজ সৈন্যদল ফিরিয়ে নেয়,এবং ১৯৮৯ সালের পরবর্তীকালে যেসব ঘটনা গুলো হয়েছিল তা সম্পূর্ণ অপারেশন সাইক্লোন ও তালিবানের উত্থান এর পর্যালোচনাই পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।

তবে, ‘মুজাহিদীন’ যে ছিল তাঁদের বিশেষ গোষ্ঠী ছিল – ‘ বিদ্রোহী গোষ্ঠী, মুজাহিদীন শব্দটির ব্যবহার ব্যাপক ভাবে শুরু হয় সোভিয়েত আফগান যুদ্ধে, বর্তমানে শব্দটি মায়ানমার,সাইপ্রাস ও ফিলিপাইন এর মতো বিভিন্ন দেশে জিহাদি গোষ্ঠী নামে বিস্তৃত। মুজাহিদীন শব্দটি হল মুজাহিদ শব্দের বহুবচন,এটি আরবি শব্দ যা ইসলামি গেরিলাদের বোঝায় যারা জিহাদে জড়িত।  এরা সর্ব – সম্পূর্ণ ভাবে PDPA ও USSR এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। শেষ পর্যন্ত মুজাহিদীনরাই জয়ী হয়।,কেন না এর পেছনে ছিল আমেরিকার সমর্থন – অর্থ সাহায্য প্রবল ছিল এবং মূল উদ্দেশ্য ছিল -যে করেই হোক সোভিয়েত কে সরাতে হবেই যাতে করে সাম্যবাদ এর বিস্তৃতি না ঘটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 + seven =