যে গ্রামে পুরুষের রাত্রিবাসের অধিকার নেই

প্রথমে ১৮ জন নির্যাতিত সাম্বুরু নারী নিয়ে উমোজা গ্রামটির সূত্রপাত হয়। এই গ্রামে শুধুমাত্র নারীদের শাসন চলে। গ্রামের বিশেষত্ব হলো, এখানে কোন পুরুষ পর্যটক হিসেবে প্রবেশ করলেও রাত্রি যাপন করতে পারেনা। নারীদের এ গ্রামটি কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির কাছে অবস্থিত।

১৯৯০ সালের দিকে এসব নারীরা ব্রিটিশ সৈন্য দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন। প্রায় ১,৪০০ সাম্বুরু নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। পরিবারের লোকেরা তাদেরকে আর গ্রহণ করেনি। বাধ্য হয়ে আশ্রয় খুঁজতে খুঁজতে ধর্ষিতা নারীদের আশ্রয়স্থল হয় এই গ্রাম। এ ছাড়াও পরবর্তীতে অনেক স্বামীহীন এবং নির্যাতিত নারীরাও আশ্রয় খুঁজে নিয়েছেন উমোজা গ্রামে।

পরিবার, আত্মীয় সবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে কোলের শিশুকে নিয়ে নারীরা ফাঁকা এক স্থানে বসতি স্থাপন করেন। যুগের যুগ ধরে তারা একতাবদ্ধ হয়ে গ্রাম তৈরি করে, নিজেদের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ গ্রামের নারীদের লক্ষ্য দারিদ্রতা এবং নিষিদ্ধ নারীদের জীবনধারনের উন্নতি। পরিবার কর্তৃক নারীদের ত্যাগ করার সমস্যা মোকাবিলা করা। তারা নিজেরাই ভাগ্যের উন্নয়নে একত্র হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

প্রথম থেকেই উমোজার নারীরা গ্রামে পুরুষদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন। পুরুষদের উমোজা গ্রাম দেখার অনুমতি থাকলেও গ্রামে রাত্রিযাপন করার অনুমতি নেই। যদি পুরুষ জোরপূর্বক গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করেন, সেক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশকে জানানো হয়।  উমোজার শিশুদের মধ্যে বেড়ে ওঠা পুরুষরা গ্রামে রাত্রিযাপন করতে পারে।

উমোজার নারীরা বেশ সৌখিন। তারা পুঁতি দিয়ে বিভিন্ন গয়না তৈরি করে থাকেন। যেগুলো পর্যটকরা ঘুরতে গিয়ে কিনে আনেন। এসব গয়না বিক্রি করে দিব্যি সংসার চালান উমোজার নারী। এ ছাড়াও কৃষি কাজ, পশু পালনসহ সন্তানদের পালন সবই করেন উমোজার নারীরা। 

এছাড়াও, উমোজার বাসিন্দারা ঐতিহ্যবাহী সাম্বুরু কারুকাজ করে থাকে। যা তারা উমোজা ওয়াসো মহিলা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বিক্রি করে কারুশিল্পগুলোর মধ্যে রঙিন পুঁতির মালা তৈরি করে। নারী পর্যটকদের জন্য একটি ক্যাম্পসাইটও চালান এবং প্রতিটি নারী তাদের আয়ের ১০ শতাংশ বিদ্যালয় এবং অন্যান্য প্রয়োজনের জন্য, কর হিসাবে গ্রামে দান করে। এখানে ৫০ জন নারী তাদের বাচ্চাদের নিয়ে একসঙ্গে খড়ের ঝোপে বসবাস করে। কোন গর্ভবতী নারী নির্যাতনের শিকার হলে উমোজা গ্রাম তাদেরকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে। এখানে বসবাসরত নারীরা ৯৮ বছর বয়সী থেকে ৬ মাস বয়সী পর্যন্ত রয়েছে।

উমোজা গ্রামে মহিলারা সম্পূর্ণ স্বাধীনতায় সুখে বসবাস করেন। এখানে তাদের কোনো কাজের অনুমতি নিতে হয় না। উমোজা গ্রামের নারীরা বর্তমানে সেখানকার জমির মালিক। তাদের রীতি-নীতি ও শাসনেই চলে পুরো গ্রাম। প্রশাসনও তাদেরকে মূল্যায়ন করেন। পর্যটনবান্ধব এই এলাকায় অনেক নারী-পুরুষরাই ঘুরতে যান। যদিও নারীদেরকেই বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয় উমোজা গ্রামে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 5 =