আমের উপকারিতা

গরমে ওষ্ঠাগত প্রাণ, বর্ষা নামলেও রক্ষে নেই। বৃষ্টির সময়টুকুতেই যা একটু আরাম, বৃষ্টি কমলেই ফের সেই ভ্যাঁপসা গরম। তবে শুধু তাপ বা অস্বস্তি নয়, গ্রীষ্ম সঙ্গে নিয়ে আসে প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য্যের ভান্ডার। নানা রকম সুস্বাদু ফলের আসর বসে এ গ্রীষ্মকালেই। আম হচ্ছে গ্রীষ্মের সবচেয়ে উপাদেয় উপহার। আম খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর পুষ্টিগুণও ব্যাপক। এজন্যই আমকে কেউ বলেন ফলের রাজা, আবার কেউ বলেন অমৃত ফল। শুধু রসনা তৃপ্তিতেই নয়, রূপচর্চায়ও কাজে লাগে আম।

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক আমের বিভিন্ন গুণাগুণ-
স্বাস্থ্যকর দিক:
১. ক্যান্সার প্রতিরোধ: গবেষণায় দেখা গিয়েছে আমের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কোলন, স্তন, লিউকোমিয়া ও প্রোস্টেট ক্যান্সারব প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আমে রয়েছে ক্যারোটিন, আইসো-ক্যারোটিন, এস্ট্রাগ্যালিন, ফিসেটিন, গ্যালিক এসিড, মিথাইল গ্যালাট এবং আরো অনেক রকম এনজাইম; যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
২. কোলোস্টেরল কমানো: আম হচ্ছে ফাইবার, পেপটিন ও ভিটামিন সি এর ভালো উৎস। এসব উপাদানে রক্তে খারাপ কোলোস্টেরল তথা লো ডেনসিটি লিপো-প্রোটিন (এলডিএল) কম করে।
৩. ত্বক পরিষ্কারক: আমের খাদ্যগুণ ভেতর থেকে ত্বকের দ্যূতিময়তা ফিরিয়ে আনে এবং ত্বকে আনে নতুন জেল্লা।
৪. চোখের স্বাস্থ্য: এক কাপ আম কুচি দেহের ২৫% ভিটামিন এ-এর অভাব পূরণ করে। ভিটামিন এ চোখ ভালো রাখতে কতটা জরুরী সে কথা নিশ্চয় বলে দিতে হবে না।
৫. অ্যালকালী পদার্থ সংরক্ষণ: আমের টারটারিক এসিড, মেলিক এসিড এবং বিপুল পরিমাণে সাইট্রিক এসিড দেহের অ্যালকালী জাতীয় পদার্থ সংরক্ষণে অংশ নেয়।

৬. ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে: আম রক্তে ইন্সুলিনের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। সেজন্য আগের কালের নিয়ম অনুযায়ী কিছু পাতা জলে সেদ্ধ করে রাতভর ওভাবে রেখে দিয়ে সকালে ছেঁকে সে জল পান করুন। আমে রয়েছে তুলনামূলক কমগ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স (৪১-৬০), যা রক্তে সুগারের ভারসাম্য বজায় রাখে।
৭. ভিটামিন ই: আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই। ভিটামিন ই দেহেরজন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া ভিটামিন ই দেহের গোপন অঙ্গ সমূহের খেয়াল রাখে নিবিড়ভাবে।
৮. হজমে সহায়তা: আম হচ্ছে অনেক এনজাইম পূর্ণ একটি ফল। এনজাইম প্রোটিন ভাঙতে সাহায্য করে। আমের আঁশের স্বাস্থ্যকর গুনাগুণ হজমে ও পরিপাকে সহায়তা করে থাকে।
৯. হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে: তীব্র গরমে এক গ্লাস কাঁচা আমের জুস আপনাকে বাঁচাতে পারে হিট স্ট্রোক থেকে। আয়ুর্বেদিক এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে রোদের প্রচন্ড তাপে দেহের জীবনীশক্তি ও কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়, ফলে মাংস পেশী নিস্তেজ হয়ে শরীরকে চলচল অযোগ্য করে তোলে। তখন কাঁচা আমের রস, জল ও চিনি বা গুড়ের মিশ্রণে তৈরী পানীয় আপনার জীবন বাঁচাতে এবং হিট স্ট্রোক মোকাবিলায় অদ্বিতীয়।
১০. ইমিউন সিস্টেম: আমে আছে প্রচুর ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ আর সেই সঙ্গে ২৫ টির-ও বেশি রকমের ক্যারোটিনয়েডস। যা আপনার ইমিউন সিস্টেমকে রাখে সুস্থ্য।
১১. পুষ্টিগুণ: প্রতিটি ২২৫ গ্রাম আমে রয়েছে নিম্নোক্ত পুষ্টি উপাদান; যা প্রতিদিনের প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট।

– ১০৫ ক্যালরি,
– ৭৬% ভিটামিন সি,
– ২৫% ভিটামিন এ,
– ১১% ভিটামিন বি৬ প্লাস এবং অন্যান্য ভিটামিন বি,
– ৯% স্বাস্থ্যকর প্রো-বায়োটিক ফাইবার,
– ৯% কপার,
– ৭% পটাশিয়াম,
– ৪% ম্যাগনেসিয়াম ।


রূপচর্চায় আম:
রূপচর্চার ক্ষেত্রেও আমের জুড়ি মেলা ভার। দেখে নেওয়া যাক রুপচর্চায় আমের ভূমিকা –
১/ প্রতিদিন একটি আম খেলে ভেতর থেকে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
২/ প্রতিবার খাওয়ার সময় এক টুকরো আম ত্বকে বু্লিয়ে নিন। এতে ত্বকের ডালনেস কমবে আর জেল্লা বাড়বে।
৩/ পাকা আম ব্রণ সারাতেও সাহায্য করে।
৪/ রোদে পোড়া ত্বকে পাকা আমের ক্বাথ ও গুঁড়ো দুধ মিশিয়ে ব্যবহার করুন। উজ্জ্বলতা ফিরে পাবেন।
৫/ ত্বকের বিভিন্ন রকম দাগে নিয়মিত আমের রস ব্যবহারে দাগ হালকা করতে সাহায্য করে।

গাছ পাকা আম চেনার উপায়
দোকানে দোকানে দেখা মিলছে কাঁচা-পাকা, ছোট-বড় বিভিন্ন রকমের আমের। আর মানুষ কিনছেনও সমানতালে। কিন্তু এত আমের ভিড়ে বুঝবেন কীভাবে কোন আমটি ভালো? কোনটিতে দেওয়া নেই কোনো ফরমালিন বা কার্বাইড?
প্রথমেই লক্ষ করুন যে, আমের গায়ে মাছি বসছে কি না। কারণ ফরমালিন যুক্ত আমে মাছি বসবে না। আম গাছে থাকা অবস্থায় বা গাছপাকা আম হলে লক্ষ করে দেখবেন যে, আমের শরীরে এক রকম সাদাটে ভাব থাকে। কিন্তু ফরমালিন বা অন্য রাসায়নিকে চোবানো আম হবে ঝকঝকে সুন্দর।
কার্বাইড বা অন্য কিছু দিয়ে পাকানো আমের শরীর হয় মোলায়েম ও দাগহীন। কেননা আমগুলো কাঁচা অবস্থাতেই পেড়ে ফেলে রাসায়নিক দিয়ে পাকানো হয়। গাছ পাকা আমের ত্বকে দাগ পড়বেই। গাছপাকা আমের ত্বকের রঙে ভিন্নতা থাকবে। গোড়ার দিকে গাঢ় রঙ হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কারবাইড দেওয়া আমের আগাগোড়া হলদেটে হয়ে যায়, কখনও কখনও বেশি দেওয়া হলে সাদাটেও হয়ে যায়। হিমসাগর ছাড়াও আরও নানা জাতের আম আছে যেগুলো পাকলেও সবুজ থাকে, কিন্তু অত্যন্ত মিষ্টি হয়। গাছ পাকা হলে এইসব আমের ত্বকে বিচ্ছিরি দাগ পড়ে। ওষুধ দিয়ে পাকানো হলে আমের শরীর হয় মসৃণ ও সুন্দর।

আম নাকের কাছে নিয়ে ভালো করে শুঁকে কিনুন। গাছ পাকা আম হলে অবশ্যই বোটার কাছে ঘ্রাণ থাকবে। ওষুধ দেওয়া আম হলে কোনো গন্ধ থাকবে না, কিংবা বিচ্ছিরি বাজে গন্ধ থাকবে। আম মুখে দেওয়ার পর যদি দেখেন যে কোনো সৌরভ নেই, কিংবা আমে টক/মিষ্টি কোনো স্বাদই নেই, বুঝবেন যে আমে রাসায়নিক দেওয়া। আম কেনা হলে কিছুক্ষণ রেখে দিন। এমন কোথাও রাখুন যেখানে বাতাস চলাচল করে না। গাছ পাকা আম হলে গন্ধে ম ম করবে চারপাশ। রাসায়নিক পদার্থ দেওয়া আমে এই মিষ্টি গন্ধ হবেই না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − 9 =