সম্পর্ক

মন্দিরা মিশ্র

পর্ব–১

রজত তৈরী হয়ে বেরোতে গিয়ে বললো‚ দেরি হয়ে গেল আজ‚ অথচ এনি হাউ আজ আমাকে অফিসে টাইমলি পৌঁছতেই হবে |
ইন্দ্রাণী ‚ তুমি মুনিয়ার টেষ্টগুলো করতে দিও | আমি ওবেলা ফিরে‚ রিপোর্ট দেখে‚ তবে দুজনে মিলে ডিসিশন নেব‚ কি করা যায় |
মুনিয়া ঘুমোচ্ছে ‚ তাই ওকে আর বিরক্ত করলাম না…….
না‚ রজত তুমি আর এসো না‚ সুবর্ণা হয়তো কিছু ভাবতে পারে |
ড্যাম ইয়োর সুবর্ণা | সুবর্ণার থেকেও অনেক বেশী বড় আর ইম্পোর্ট্যান্ট‚ আমার আত্মজা ‚ আমার মুনিয়া |

রজত ‚ সত্যি তুমি মুনিয়ার জন্য এতোটা ভাবো ?
সেটাই তো স্বাভাবিক ইন্দ্রাণী | আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে বলে কি‚ আমার মুনিয়াকে আমি ভুলে যেতে পারি ?
রজত বেরিয়ে যাওয়ার একটু পরেই‚ সুবর্ণার ফোন …….
না ভাই‚ রজত তো অফিসে চলে গেছে | তুমি ওর মোবাইলে কর….
আচ্ছা ইন্দ্রাণী | তুমি কি বলতে পারবে‚ আজও রজত ওখানেই থাকবে ? নাকি…..
না গো ‚ আমি বলতে পারছিনা | কারণ সেরকম কিছু কথা তো আমার সঙ্গে হয়নি |
ওকে ‚ থ্যাংকস বলে সুবর্ণা ফোনটা কেটে দিল |
রজতের মোবাইলে ট্রাই করতেই স্যুইচড অফ ……
সুবর্ণা যেন অকুল পাথারে | তা হলে কি ‚ মেয়ের অসুখের অছিলায় ‚ রজত আবার পুরনো সংসারে ইন্দ্রাণীর কাছেই ফিরে যাবে ?
ফিরে গেলেও ওকে তো দোষ খুব একটা দিতে পারবেনা সুবর্ণা ……
ডুবে যায় অতীতের ভাবনায়…..
রজতকে দেখার পর থেকেই‚ নানা বাহানায়‚ আমার রজতের দ্বারস্থ হওয়া শুরু…
রজত আমার উপস্থিতিকে মোটেই পছন্দ করত না জেনেও‚ আমি খানিকটা নিরুপায় হয়েই ‚ পিছনে লেগে থাকতাম |
ছত্রিশ বর্ষীয়া এক অনাঘ্রাতা নারী‚ কখনো পুরুষের সঙ্গ প্রায় পায়নি | আসলে সেভাবে কাউকে পছন্দ হয়নি বা মনে ধরেনি |
একদিন হঠাৎই কাকতালীয় ভাবেই আলাপ রজতের সঙ্গে ……
স্কুল ছুটির পরে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলাম বাসের অপেক্ষায় |
একটু পরেই রজত এসে তার নিজের মতই দাঁড়িয়েছিল |
আমিই শুরু করি ‚ দেখুন না এই একচল্লিশের বি-টা মাঝে-মাঝেই এতো দেরি করে না …..আবার হঠাৎ করে বন্ধও হয়ে যায় |
রজত খানিকটা অবাক হয়েই বললো‚ দেখুন‚ আমি তো এই রাস্তায় রেগুলার যাতায়াত করিনা‚ তাই ঠিক……..
আমার ইচ্ছে ‚ কথা চালিয়ে যাওয়ার | তাই বলেই ফেললাম‚ আমার স্কুলটা আবার এখানেই‚ সে জন্যেই রোজই এই রাস্তায় আমার যাতায়াত করতে হয় |
রজতের ছোট্ট উত্তর‚ ও‚ বলেই সে আবার আপন জগতে |
তারপরেই বাসটা এসে গেল | উঠে পড়লাম দুজনেই | কিন্তু আমি খুব লক্ষ্য রাখছিলাম‚ রজত কোথায় নামে ?
কিন্তু বিধি বাম | ভীড়ের চাপে‚ কখন উনি নেমে গেছেন‚ টেরই পাইনি আমি |
তারপর একদিন বাজারে …..উনি আপনমনে বাজার করছেন | হঠাৎ‚ পাশ থেকে‚ আরে আপনি?
রজত মুখ তুলে তাকিয়ে আছে দেখে, হাঁ……….আমিই মনে করাই….সেই যে সেদিন বাসষ্ট্যাণ্ডে ‚ আমাদের দেখা হয়েছিল |
ওহো‚ হ্যাঁ ‚ মনে পড়েছে |
আচ্ছা‚ আমরা কিন্তু এখনো‚ একে অপরের নামটাই জানি না | বাই দা ওয়ে‚ আমি সুবর্ণা লাহিড়ী|
নমস্কার‚ আমি রজত বসু‚ বলেই পিছন ফিরলো রজত | হনহন করে বেরিয়ে গেল‚ বাজার থেকে |
বাব্বা‚ লোকটাকে তো বাগ মানানো‚ বেশ ঝামেলা | কথাই বলতে চায় না মোটে‚ ভাবলাম আমি |
এইভাবে মাঝেমধ্যে দেখতে পেলেই‚ হামলে পড়তে লাগলাম আমি | এতো দিন পর এই রজত লোকটাকেই আমার মনে ধরেছে| এনি হাউ ‚ ওকে আমার চাইই|
এবার একদিন এমন জায়গায় দেখা‚ সেখান থেকে‚ রজতের সট করে সরে পড়ার উপায় নেই |
গিয়েছিলাম‚ ন্যাশনাল লাইব্রেরীতে একটা বইয়ের খোঁজ করতে| হঠাৎই তাকিয়ে দেখি‚ আমারই পাশে রজত‚ অন্য একটা বইয়ের খোঁজে ব্যাস্ত |
ব্যাস‚ এবার ক্যাচ‚ কট কট |
একটা টেবিলেই দুজনে বসলাম | বই খোলা দুজনের সামনেই | কিন্তু একের পর এক প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে তুলেছি রজতকে |
প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে যেতে যেতে‚ অবশেষে ফ্যামিলি |
রজত বলে‚ আমি এখন সম্পুর্ণ একাই থাকি | দু-বছর আগে‚ ইন্দ্রাণীর সঙ্গে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে | আমাদের একটি মেয়ে আছে‚ মুনিয়া |
বড় মিষ্টি মেয়ে মুনিয়া | বাপি বলতে অজ্ঞান | তার টান আমি উপেক্ষা করতে পারিনা | কিন্তু কোর্টের নিয়মানুযায়ী‚ আট বছর বয়েস পর্য্যন্ত‚ মায়ের কাষ্টডিতেই থাকবে মুনিয়া | আমি কেবল সপ্তাহে একদিনই কাছে পাব |
কিন্তু‚ মুনিয়া আমার বড় দুর্বল জায়গা | তাই নিয়মিত অফিস যাওয়ার আগে‚ ওর স্কুলে গিয়ে‚ ওকে আদর করে‚ তবে অফিস যাই |
মুনিয়াও ঐসময়টা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে‚ তার বাপির জন্য | আমাকে দেখলেই ছুট্টে এসে‚ বাপি……..‚ বলেই গলা জড়িয়ে ধরে কোলে উঠে পড়ে | দুজনেই দুজনকে খুব আদর করি|
তারপর স্কুলের ঘণ্টা পড়লেই‚ নামিয়ে দিই‚ ও বাই করে চলে যায় |
আমি ভাবছি‚ যাক আবেগের আতিশয্যে মনটাকে উজাড় করে মেলে দিয়েছেন ভদ্রলোক| এটাই বা কি কম ?
আমি বলে উঠি‚ তোমার বড় স্পর্শকাতর জায়গায় আঘাত করে ফেললাম বোধ হয় |
নাঃ‚ এতো আমায় সর্বক্ষণই বয়ে বেড়াতে হয় | নতুন করে আর আঘাত পাই না |
বাই দা ওয়ে‚ সুবর্ণা‚ আপনার সম্বন্ধে তো কিছু………
উঁহু‚ আপনি নয় তুমি | বলে সস্নেহে নিজের হাতটা‚ ওর হাতের ওপরে রাখি |
রজত‚ আমার মাত্র ছমাসের জন্যই বিয়ে হয়েছিল | কিন্তু কয়েকটা রাতই মাত্র পেয়েছিলাম ‚ অম্লানকে | নতুন জীবন শুরু করার চিন্তায় বিভোর ছিলাম | তার আগেই‚ অম্লানের চরিত্র আমার পুরো পড়া হয়ে গেছে |
তাই অধ্যায় শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেল |
উদ্দাম ভালোবাসার জালে জড়িয়ে গেছি‚ ভেবে বাড়ির অমতেই বিয়ে করেছিলাম |
কিন্তু প্রতি উইকএণ্ডে, অফিস ট্যুর বলে বেরিয়ে, পরদিন সকালে ফিরত। মাসখানেক পরই ধরা পড়ে গেল। জানতে পারলাম তার ষ্টেনোকে নিয়ে, কোন হোটেলে রাত্রিবাস, সেটাই অফিস-ট্যুর।
বলিনি কিছু, সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম।
বিধির বিধান…………….
ছমাস পরেই কার একসিডেণ্টে‚ একটি মেয়ের সঙ্গে‚ অম্লানের বডি সনাক্ত করলাম |
ঘরে স্বীকৃতি দেওয়া বৌ রেখে‚ বাইরে মধু খেয়ে বেড়ানোর প্রমাণ সহ সব শেষ হয়ে গেল |
বাপের বাড়ি ফিরে যাওয়ার মুখ আর রইলো না | সেই থেকে একাই বয়ে চলেছি জীবন-তরী |

পর্ব-২

এইভাবে কিছুদিন দেখা-সাক্ষাৎ চলতে-চলতে‚ ম্যারেজ রেজিষ্টারের অফিসে হাজির হলাম দুজনে |
বাঁধা পড়লাম সংসার বন্ধনে |
ইন্দ্রাণীও খবরটা জেনে গেছিল | তবে মুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগটা ধরেই রেখেছিল রজত |
সেই অফিস যাওয়ার পথে রোজই স্কুলের গেটে‚ মুনিয়ার বাপি বলে ছুটে কোলে উঠে আদর‚ আর প্রতি রবিবারে ‚ কলকাতার এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ানো | সেখানে কোনদিনই আমার কোন স্থান ছিল না….
ইনফ্যাক্ট, বিয়ের সময়ই আমাকে দিয়ে অঙ্গীকার করিয়ে নিয়েছিল রজত | দুটি শর্ত, প্রথম-আমাদের কোন বাচ্চা হবেনা ‚ আর দ্বিতীয় – প্রত্যেক রবিবার রজতকে ছেড়ে দিতে হবে মুনিয়ার জন্য |

আমি তখন রজতকে আঁকড়ে ধরতে মরিয়া | তাই ওর দুটো শর্তই মেনে নিয়ে‚ বিয়ে করেছিলাম |
কিন্তু‚ বিয়ের পরে দুটো বছর সব মেনে নিয়েও ভালই ছিলাম |
এখন‚ মুনিয়ার এই অসুখটাকে কেন্দ্র করে‚ রজতের ইন্দ্রাণীর বাড়িতে অনিয়মিত যাতায়াত ‚ মাঝে-মাঝে রাত্রে থেকে যাওয়া …….কেমন যেন ঈশান কোনে মেঘের ইঙ্গিত দিচ্ছে মনে |
ওদিকে ইদ্রাণী এখনো বিয়ে না করলেও‚ একটি ব্যাচেলার ছেলের ঘনঘন যাতায়াত‚ প্রায়ই ইন্দ্রাণীর বাড়ীতে থেকে যাওয়া‚ সবই আমার কানে এসেছে |
ছেলেটি ট্যুর এন্ড ট্র্যাভেলসে আছে | তিনকুলে কেউ নেই | বাউণ্ডুলের মতই ঘুরে বেড়াতো | এখন ইন্দ্রাণীর ঘাটেই তরী ভিড়াবার প্ল্যান করছে |
কি করে যেন ইন্দ্রাণীর সুনজরে পড়ে যায় | সেই থেকেই ওর বাড়িতে যাতায়াত |
মুনিয়া ওকে বাবুল আংকেল বলেই ডাকে |
তবে ইন্দ্রাণী এখনো ঝেড়ে কাশেনি‚ সেটাও আমি শুনেছি |
বাবুলতো প্রায়ই ট্যুরে থাকে‚ তাই টাল-বাহানা করে চলেছে ইন্দ্রাণী | এই দেখছি‚ ভাবছি‚ কদিন পরে বলবো….এইসব করে কাটাচ্ছে | বোধ হয় ঠিক ভরসা করতে পারছে না বাবুলকে |
আসলে ইন্দ্রাণী বুঝেই গেছে‚ ওর বাপির জায়গা‚ মুনিয়া কোনদিনই কাউকে দিতে পারবেনা………………
এদিকে ইন্দ্রাণীর ভাবনা………কাল থেকেই দেখছি যে, বাপিকে পেয়ে‚ মুনিয়া একেবারে জাপটে ধরে রাখতে চেষ্টা করছে | খালি বায়না‚ বাপি আমার কাছে থাকবে‚ আমার কাছে শোবে‚ বাপি কোথ্থাও যাবেনা |
আর রজতও কোনদিনও মুনিয়ার কথা ফেলতে পারেনা |
আমি তো এখন খুবই মুশকিলে পড়ে গেলাম | বাবুলের তো আবার আজই ট্যুর থেকে ফেরার কথা |
এদিকে রজত মুনিয়ার ট্রিটমেন্টের ভার নিজের হাতেই নিয়েছে ‚ তাকেও তো বারণ করতে পারবো না | আর এটা ও কিছুতেই মেনে নেবেনা | কারণ মুনিয়া ওর প্রাণ |
ইন্দ্রাণীর ভাবনার মধ্যেই ‚ ফোনটা বেজে উঠল……
রজতের নাম দেখে‚ একটু ইতস্তত করে‚ হ্যালো বলতেই….ইন্দ্রাণী‚ মুনিয়ার টেষ্টগুলো করতে দিয়েছ তো ? রিপোর্ট কখন দেবে ?
সন্ধ্যেবেলা দেবার কথা ‚ বললো ইন্দ্রাণী |
ওকে‚ আমি অফিস থেকে ফেরার পথে কালেক্ট করে নিয়ে যাব |
ওদিকে মুনিয়া‚ মামমাম‚ ফোনটা একটু আমাকে দাও না | আমি একটু বাপির সঙ্গে কথা বলবো |
রজতের কানে যেতেই‚ প্লিজ মুনিয়াকে একটু দাও…….
এই যে বাপি‚ সন্ধ্যেবেলা আসছ তো ? তুমি না আসলে কিন্তু আমি খাবোনা |
ওরকম করেনা | তুমিতো আমার লক্ষ্মী মেয়ে…..
না না না ‚ তোমাকে আসতেই হবে‚ ব্যাস‚ বলেই ফোনটা কেটে দিল |
ইন্দ্রাণী মেয়েকে বোঝাতে গেলো,
আজতো বাবুল আংকল এসে যাবে‚ আজ আর বাপিকে আটকিয়োনা সোনা |
না আমি আংকলকে চাইনা‚ আমি বাপিকেই চাই…..
অসুস্থ শরীরে অমন জেদ করিস না সোনা |
আমি বাপিকে চাই‚ বলেই মায়ের দিকে পিছন ফিরে শুলো |
ইন্দ্রাণী বেশ চিন্তায় পড়ে গেল……
বাবুল তো ফিরে মুনিয়ার অসুখ শুনে তুলকালাম করতে লেগে যাবে |
আরও রজত যে ডাক্তার দেখিয়ে সব টেষ্টও করতে দিয়ে দিয়েছে‚ শুনে তো একেবারে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠবে ।
রজতকে সে খুবই অপছন্দ করে……
শুয়ে ভাবতে-ভাবতে‚ একটু তন্দ্রা মত এসেছিল ইন্দ্রাণীর | মুনিয়াটাও খুব ঘুমোচ্ছে……
বেল বাজার শব্দে ধড়মড় করে উঠে বসে দেখে‚ ওমা কখন অন্ধকার হয়ে গেছে | ঘরে আলো জ্বালাও হয়নি | আলো জ্বেলেই দেখে‚ সাতটা বাজে.|
ম্যাজিক আইতে চোখ রেখে দেখে‚ রজত দাঁড়িয়ে ‚ হাতে কয়েকটা ওষুধ |
পিছন থেকে মুনিয়া তাড়া দেয়‚ মামমাম দরজাটা খোলনা‚ বাপি আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে ?
হ্যাঁ‚ এইযে খুলছি সোনা‚ তুমি শুয়ে থাকো | বলে দরজাটা খুলতেই একেবারে রজতের মুখোমুখি|
এই যে এই ওষুধগুলো একটু বুঝে নাও‚ ইন্দ্রাণী |
বাপি‚ তুমি ঘরে এসো না | ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন ? আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাওনা….
এইযে আসছি সোনা ‚ আগে ওষুধগুলো তোমার মামমামকে বুঝিয়ে দিই |
এবার ওষুধ‚ প্রেসক্রিপশন‚ টেষ্ট রিপোর্ট সব একে-একে ইন্দ্রাণীর হাতে ধরিয়ে দিল রজত |
ইন্দ্রাণী আর কৌতুহল চাপতে না পেরে‚ জিজ্ঞেস করেই ফেলল‚ কি আছে রিপোর্টে ?
ঐ একটু হিমোগ্লোবিনটা কম আছে‚ সেই জন্যে উইকনেসটা বেশী |
ডাক্তার বললেন‚ একটু ভালো খাওয়া-দাওয়া‚ আর সব চেয়ে ভালো হয়‚ যদি আপনারা একটু সঙ্গ দেন | মানে উনি এটাই বলতে চাইছেন‚ শি ইজ মেন্টালি উইক | তাই একটা ছোটখাট আউটিং….

পর্ব–৩

বাবুল ঘরে ঢুকেই চিৎকার‚ ইন্দ্রাণী‚ হোয়াট ইজ দিস ?
ইন্দ্রাণী বোঝাতে গেল‚ প্লিজ বাবুল‚ চেঁচিয়ো না ‚ শোন…
আরে রাখ | এর মধ্যে আবার শোনাশুনির কি আছে ? ঐ লোকটা এঘরে কেন ?
রজতও একটু গলা চড়িয়েই বললো‚ আমার মেয়েটা তিনদিন যাবৎ অসুস্থ | শি ইজ টু সিক‚ প্লিজ গলা নীচু করে কথা বলুন |
মানে ? মুনিয়ার কি হয়েছে ? আমিতো ওকে ভালো দেখেই গেলাম |
একি‚ মুনিয়া তুমি ওভাবে ঐ লোকটার গলা জড়িয়ে ধরে আছো কেন ?
মুনিয়া খুব আস্তে-আস্তেই বললো‚ আংকল‚ তুমি ঐ লোকটা বলবেনা | ও আমার বাপি |
ইন্দ্রাণী এবার অনেক কষ্টে বুঝিয়ে‚ বাবুলকে পাশের ঘরে নিয়ে গিয়ে‚ সব বললো |
আচ্ছা‚ বেশ বুঝলাম | মুনিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়েছিল‚ আমার এবসেন্সে রজত যা করার করেছে | সে তার ডিউটি করেছে‚ ব্যাস দ্যাটস ফাইন | কিন্তু সে এখনো এখানে কি করছে ?
আরে ওতো চলেই যাচ্ছিল | মুনিয়া ওকে কিছুতেই যেতে দিচ্ছেনা | প্লিজ তুমি একটু বোঝার চেষ্টা কর |
হ্যাঁ হ্যাঁ ‚ আমি সব বুঝে গেছি | এবার চেঞ্জে যাওয়ার সময়ও মুনিয়া জেদ করবে‚ বাপি আমাদের সঙ্গে যাবে | তুমিও তাতেই রাজি | তার চেয়ে বলনা‚ আমার এবসেন্সে পুরনো প্রেম আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে |
বাবুল‚ ষ্টপ ইট | অনেক সহ্য করেছি | এবার প্লিজ‚ ইউ মে গো আউট | রেগে গিয়ে বললো ইন্দ্রাণী।
হ্যাঁ তা তো বলবেই | আমি তো এখন তোমার কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছি | তোমার রজত ফিরে এসেছে-যে |
এতো দিন ‚ তোমাদের জন্য আমি কি-না করেছি | তার এই প্রতিদান ?
কি-না করেছি মানে ? যা করেছ‚ তোমার ইন্টারেষ্টে করেছ | আমি বা আমার মেয়ে‚ কোনদিন তোমার কাছে কিছু চেয়েছি‚ বলতে পার ?
বাঃ‚ বেশ বেশ | মনে হছে সবই পূর্ব পরিকল্পিত |
তুমি যদি সেটা ভেবে থাকো তো তাই | তোমার স্বরূপ আমার দেখা হয়ে গেছে | থ্যাংক গড‚ যে সময়মতই বুঝতে পেরেছি তোমাকে | নয়তো……পরে আঙ্গুল কামড়াতে হত আমার |
অনেক হয়েছে‚ আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে‚ অনেক অপমান করেছ আমাকে | আর একটা কথাও আমি শুনতে চাইনা | বাবুল তোমার সব জিনিসপত্র নিয়ে‚ এই মুহুর্তে বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে |
ও‚ আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছ ?
হ্যাঁ তাই ‚ বলেই হনহন করে টয়লেটের মধ্যে ঢুকে গেল ইন্দ্রানী | ভালো করে চোখে-মুখে জলের ঝাপটা দিচ্ছে‚ আর নিজের মনেই বলছে ……স্কাউণ্ড্রেল‚ আমার শরীরটার ওপরেই লোভ | ভদ্রতা জ্ঞানটুকু পর্য্যন্ত নেই |
আমার রক্ত দিয়ে গড়া মুনিয়া …………..
উঃ ভগবান‚ কি জালেই নিজেকে জড়াতে চলেছিলাম | মুনিয়ার অসুখটাই আমার চোখ খুলে দিল |
রজতের সঙ্গে আমার যা কিছু হয়ে থাক‚ কিন্তু একটা দিনের জন্যেও সে তার মেয়েকে ভোলেনি |
মুনিয়াও তার বাপিকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে | তার বাপির জায়গাটা সে কারোকে এতোটুকু দেয়নি‚ দিতে পারেনি |
একটু পরে‚ টয়লেট থেকে বেরিয়ে ঘরে এসে দেখি‚ মুনিয়া বাপির কাঁধে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে আর রজত ওকে কাঁধে নিয়ে পায়চারি করছে |
ইন্দ্রাণীকে দেখে রজত বললো‚ তুমি কি বাবুলকে তাড়িয়ে দিলে ? দোষটা তো আমারই | তুমি শুধু শুধু ওর ওপরে রাগ করলে | আমি তো মুনিয়াকে শুইয়ে দিয়েই চলে যাব |
ওকে এখন সুস্থ করার জন্য তোমাদের তো চেঞ্জে যেতে হবে | এই সময় তুমি একা কি করে সামলাবে ?
বাবুল বেরিয়ে যেতে দরজাটা খোলাই ছিল| হঠাৎই সুবর্ণা হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে বললো ‚ কেন ‚ একা কেন ? তুমি যাবেনা ?
ওরা দুজনেই একসঙ্গে বলে উঠলো‚ একি তুমি ?
ইন্দ্রাণী প্লিজ অন্যভাবে নিও না‚ বলে শুরু করলো সুবর্ণা |
দেখ আমি নিজে এতো দিন ধরে লোকটাকে যা চিনেছি | একটা দিনের জন্যেও ও স্বস্তিতে ছিলনা | সবসময় তার মন জুড়ে ছিল মুনিয়া |
তুমি জানো না ইন্দ্রাণী‚ আমাদের বিয়ের সময়ই ও শর্ত দিয়েছিল‚ আমাদের কোন সন্তান হবে না‚ আর প্রতিটা রবিবার ওকে ছেড়ে দিতে হবে‚ মুনিয়ার জন্যে |
আমি এটুকু বুঝেছি যে স্বামী হিসেবে নয়‚ বাবা হিসেবে একেবারেই ফুলমার্ক্স পাবে রজত |
দুটো দিন মানুষটা বাড়ি যায়নি | প্রতিক্ষণে ভেবেছি আর মনকে প্রবোধ দিয়েছি অনেক ভাবে |
কিন্তু এই মুহুর্তে আমি উপলব্ধি করলাম‚ আমি বোধ হয় ওর পিতৃত্বের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছি |
মুনিয়াকে দেখ‚ পরম নিশ্চিন্তে বাবার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে | আমার কথা ভেবে‚ অনিচ্ছাসত্বেও রজতকে ফিরতে হত‚ মেয়েকে ছেড়ে …………….
নাঃ আজ সারাদিন ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি‚ আমার অধিকার আমি স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিচ্ছি |
ইন্দ্রাণী, এখন তোমার ব্যাপার | তুমি রজতকে গ্রহণ করবে কিনা জানি না | কিন্তু মুনিয়া কখনই তার বাপিকে ছাড়বেনা |
সুবর্ণা, তোমার এতো বড় স্যাক্রিফাইসের সামনে, নিজেকে বড় ছোট মনে হচ্ছে। এখন আার স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, যে আমার আর রজতের সম্পর্কটা ভাঙার জন্য আমিই দায়ী, বললো ইন্দ্রাণী।
মুনিয়ার দেখভাল ঠিকমত হচ্ছে না, এটাই ছিল রজতের অভিযোগ। তা থেকেই, শেষ পর্য্যন্ত বিচ্ছেদ। নিজের ভুল স্বীকার করে, আমি রজতের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
ইন্দ্রাণী তোমার কাছে রিকোয়েষ্ট‚ মুনিয়ার এই দুর্বল শরীরে‚ এই মুহুর্তে অন্তত অভিনয় করে হলেও‚ রজতের পাশে তুমি থাক | তুমি যখন ক্ষমা চাইছ, তখনতো মনে হয়, সমস্যার সমাধান হয়েই গেছে ।
রজত‚ প্লিজ ডোন্ট মাইণ্ড | কালই টিকিট কেটে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটু ঘুরে এস তিনজনে |
তোমরা ফিরে এলে‚ আমাদের উভয় পক্ষেরই কোর্টের ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করব | তারপর তোমাদের ইচ্ছা……চলি ভাই ইন্দ্রাণী |
এক মিনিট সুবর্ণা‚ সত্যিই তুমি আমার চোখ খুলে দিয়েছ | ঠিক এই মুহুর্তে কোন রাগ‚ অভিমান‚ কিছুই নেই আমার রজতের প্রতি | বরং ঠিক সময়ে পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্যে আমি কৃতজ্ঞ রজতের কাছে, এখন তোমার কাছেও।
স্বেচ্ছায় নিজের জায়গাটা, আমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।
ভাল থেক সুবর্ণা…

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − 17 =