কচুরি পানা দিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরী

অগ্নিভ হালদার ##

কম্পোস্ট তৈরীর জন্য খড়কুটা, ঝরাপাতা, আগাছা, আবর্জনা, ফসলের অবশিষ্টাংশ একত্রে মিশিয়ে পচানো হয়-যা থেকে উৎকৃষ্ট মানের কম্পোস্ট উৎপাদন সম্ভব। বর্ষায় ডোবা-নালাসহ জলাঞ্চলগুলো কচুরিপানায় ভরে ওঠে। যার ফলে জল দূষিত হয় এবং মশার উপদ্রব বাড়ে। অথচ এই কচুরিপানাকেই আমরা কম্পোস্টের আসল কাঁচামাল হিসাবে গণ্য করতে পারি।  আমরা সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে কম্পোস্ট তৈরী করতে পারি-

১। স্তূপ পদ্ধতি

২। গর্ত পদ্ধতি

স্তূপ পদ্ধতি

অতিবৃষ্টি ও বন্যাযুক্ত এলাকার জন্য স্তূপ বা গাদা পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার তৈরী করতে হবে। বসতবাড়ির আশপাশে, পুকুর বা ডোবার ধারে কিংবা ক্ষেতের ধারে যেখানে বন্যার কিংবা বৃষ্টির জল দাঁড়াবার কোন সম্ভাবনা নেই এমন জায়গাকে স্তূপ পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার তৈরীর স্থান হিসাবে নির্বাচন করতে হবে। স্তূপের উপরে চালা দিতে হবে অথবা গাছর নিচে স্থান নির্বাচন করতে হবে যাতে রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পায়।

স্তূপের আকার

এই পদ্ধতিতে গাছের ছায়ায় মাটির ওপর ৩ মিটার দৈর্ঘ্য ১.২৫ মিটার প্রস্থ ও ১.২৫ মিটার উচুঁ গাদা তৈরী করুন। আপনার সুবিধা অনুযায়ী এই মাপ কম-বেশি করতে পারেন। প্রথমত কচুরিপানা অথবা অন্যান্য আবর্জনা ফেলে ১৫ সে. মিটার স্তূপ তৈরী করুন। স্তর সাজানোর আগে কচুরিপানা টুকরা করে ২/৩ দিন রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এবার সাজানো স্তরের ওপর ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ২০০ গ্রাম এসএসপি ছিটিয়ে দেয়ার পর স্তরের উপরিভাগে ২.৫/৫ সে. মি. পুরু করে কাদা ও গোবরের প্রলেপ দিয়ে দিন। এতে পচন ক্রিয়ার গতি যেমন বাড়বে অন্যদিকে সুপার কম্পোস্ট তৈরী হবে। এভাবে ১.২৫ মিটার উঁচু না হওয়া পর্যন্ত ১৫ সে. মি. পুরু স্তর সাজানোর পর পর ইউরিয়া ও এসএসপি দিয়ে তার ওপর গোবর ও কাদা মাটির প্রলেপ দিন। গাদা তৈরী শেষ হয়ে গেলে গাদার ওপর মাটির প্রলেপ দিয়ে ছাউনির ব্যবস্থা করুন।

কম্পোস্ট স্তূপ পরীক্ষা

কম্পোস্ট স্তূপ তৈরী করার এক সপ্তাহ পর শক্ত কাঠি গাদার মাঝখানে ঢুকিয়ে দেখুন গাদা অতিরিক্ত ভেজা কিনা। যদি ভেজা হয় তবে গাদার উপরিভাগে বিভিন্ন অংশে কাঠি দিয়ে ছিদ্র করে দিনে যেন বাতাস ঢুকতে পারে। ২/৩ দিন পর গর্ত বা ছিদ্রগুলো মাটি দিয়ে বন্ধ করে দিন।

আবার গাদা অতিরিক্ত শুকিয়ে গেলে ছিদ্র করে জল অথবা গো-চনা ঢেলে দিন। এতে সার ভালো হবে। কম্পোস্ট তাড়াতাড়ি পচে সার হওয়ার জন্য স্তর সাজানোর ১ মাস পর প্রথমবার এবং ২ মাস পর দ্বিতীয় বার গাদার স্তরগুলো উল্টিয়ে দিন। এ সময় কম পচা আবর্জনাগুলো গাদার মাঝখানে রাখুন। আবর্জনা সার ঠিকমতো পচলে ধূসর বা কালো বর্ণ ধারণ করবে এবং আঙ্গুলে চাপ দিলে যদি গুঁড়ো হয়ে যায় তবে মনে করবেন মাঠে ব্যবহারের উপযোগী হয়েছে। উল্লেখিত পর্দাথের মাপগুলো যদি ঠিকমত দেওয়া হয় তবে এ জাতীয় কম্পোস্ট গাদা ৩ মাসের মধ্যে উন্নতমানের সারে রূপান্তরিত হয়।

গর্ত পদ্ধতি

জল দাঁড়ায় না কিংবা কম বৃষ্টিপাত এলাকায় অথবা শুকনো মৌসুমে গর্ত পদ্ধতিতে কম্পোস্ট তৈরী করা যায় । গাছের ছায়ার নিচে বাড়ির পেছন দিকে অথবা গোশালার পাশেই কম্পোস্ট গর্ত তৈরী করা সব দিক থেকে সুবিধাজনক।

আপনার প্রাপ্ত স্থানের সাথে সঙ্গতি রেখে গর্ত তৈরী করুন। তবে ১.২৫ মিটার প্রস্থ, ১ মিটার গভীর ও ২.৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি গর্ত তৈরী করুন।

গর্তের তলায় বালু অথবা কাঁকর দিয়ে দুরমুশ করে দিন যাতে জলীয় পদার্থ শোষণ করে নিতে পারে। প্রয়োজনে ধানের খড়ও বিছিয়ে দিতে পারেন, তাও সম্ভব না হলে গোবর কাদার সাথে মিশিয়ে গর্তের তলা এবং চারপাশে লেপে দিন। মনে রাখবেন গর্তের ওপর দিকে ভুমি থেকে খানিকটা উঁচু করে আইল তৈরী করে দিতে হবে যাতে কোন রকমে জল গড়িয়ে গর্তে পড়তে না পারে।

এবার গাদা পদ্ধতির মতো করে গর্তে কচুরিপানা স্তরে স্তরে সাজিয়ে কম্পোস্ট তৈরী করুন। অথবা গোয়াল ঘরে গোবর, গো-চনা, পাতা, আখের ছোবড়া, কলাপাতা যাবতীয় উচ্ছিষ্ট অংশ গর্তে ফেলুন। সম্ভব হলে গো-চনার সাথে কাঠের গুঁড়ো মিশিয়ে দিতে পারলে ভাল হয়।

এমনি এক একটি স্তরের ওপর মাটির প্রলেপ দিয়ে দিন। প্রত্যেকটি স্তর তৈরীর পর মাটির প্রলেপ দেয়ার আগে পরিমান মতো ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিন। এরূপ একটি গর্তে তিন টন আবর্জনার জন্য ১/২ কেজি ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হবে।

 মনে রাখবেন, মাটির প্রলেপ দেয়ার আগে স্তর ভালভাবে ঠেসে দিতে হবে। গর্ত ভরাট না হওয়া পর্যন্ত এমনিভাবে স্তর তৈরী করুন। গর্ত ভরাট হয়ে যাওয়ার পর গোবর ও মাটি মিশিয়ে উপরিভাগে প্রলেপ দিয়ে দিন।

সার যাতে শুকিয়ে না যায় তা পরীক্ষা করতে হবে। গর্তের মাঝখানে ছিদ্র করে দেখতে হবে, যদি শুকনো মনে হয় তবে ছিদ্র দিয়ে জল ঢালতে হবে। জৈব পদার্থে জলের পরিমাণ ৬০-৭০ ভাগ থাকা বাঞ্ছনীয়।

এভাবে তিন মাস রাখার পর এই সার ব্যবহার উপযোগী হবে।

কম্পোস্ট ব্যবহারের নিয়ম

ধান পাট, আলু, গম ও শাকসবজির মাঠে কম্পোস্ট ব্যবহার করা যায়। বেলে দো আঁশ,  লাল কাঁকুড়ে মাটি এবং উপকূল  এলাকার জন্য কম্পোস্ট বেশ কার্যকরী। কম্পোস্ট জমিতে ছিটিয়ে দেওয়ার সাথে চাষ দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিন।

লেখকঃ কৃষি গবেষকপল্লী শিক্ষা ভবনবিশ্বভারতী, শ্রীনিকেতন

দূরভাষ –০৮৭৬৮৩৬৯৮৩৮ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 + seven =