ব্যবহৃত চায়ের ব্যবহার 

চা ছাড়া বাঙালি? এ যেন ভাবাই মুশকিল। কিন্তু চা কি শুধু পানীয়? নাকি চায়ের অন্য ব্যবহারও আছে? চায়ের নানা গুণ রয়েছে পাশাপাশি  চা তৈরির পর প্রায় সকলেই ব্যবহৃত চা পাতা বা চা ব্যাগগুলি ফেলে দেন। কিন্তু আমরা বলি কি, ওই ব্যবহৃত চা পাতা ঠান্ডা জলে ধুয়ে শুকিয়ে রেখে দিন। এই ফেলনা চা পাতা বা ব্যাগই আপনার নানা কাজে লাগবে নিত্যদিন। কি ভাবে? দেখে নেওয়া যাক তাহলে ব্যবহৃত চায়ের ব্যবহার। –

১) ক্লান্ত চোখকে আরাম দিতে-

কাজের চাপে হোক বা কম ঘুমের কারণে হোক, চোখের নিচে ফোলা ভাব বা চোখ লাল হয়ে যাওয়া আমাদের অনেকেরই সমস্যা। সেই সঙ্গে কালো দাগের সমস্যা তো আছেই। এই সমস্ত সমস্যা থেকে আরাম পেতে টি ব্যাগ নিন,  ঠাণ্ডা জলে ভিজিয়ে নিয়ে চোখের উপর রেখে শুয়ে থাকুন ২০ মিনিট। দেখবেন চোখের ফোলা বা লাল ভাব কমে গিয়ে কান্তি দূর হয়েছে অনেকটাই। নিয়মিত ব্যবহার করলে কালো দাগও চলে যাবে।

২) খাবারের স্বাদ বাড়াতে-

খাবারের স্বাদ বাড়াতে চা পাতা একটা অতি চমৎকার একটা উপাদান। ওভেনে মুরগী বা গরু রোস্ট করতে চাইলে মেরিনেশনে দিন চমৎকার সুগন্ধ যুক্ত কোনও চায়ের লিকার। আপনার পছন্দ মতন যে কোনও চায়ের ব্যবহার চলতে পারে। এছাড়াও জেসমিন টি আস্তই দিতে পারেন মেরিনেশনে। মাংসের ফ্লেভার বাড়াতে চা খুব চমৎকার একটা উপাদান। এছাড়াও আইস টি, টি ফ্লেভারড আইসক্রিম ইত্যাদি কত কিছু যে প্রস্তুত কড়া যায় তার ইয়ত্তা নেই।

৩) কোমল পানীয়ের ক্যালোরি কমাতে-

ভীষণ শরীর সচেতন আপনি, কিন্তু অন্যদিকে কোমল পানীয় খেতেও ভালোবাসেন? এই ধরনের পানীয়ের ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করুন ছোট্টও একটা উপায়। পছন্দসই যে কোনও চা পাতা জ্বাল দিয়ে হাল্কা লিকার করে নিন। তারপর ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে অল্প লেবুর রস মিশিয়ে রাখুন। আপনার পানীয়ের গ্লাসে অর্ধেক নিন কোমল পানীয়, আর অর্ধেক নিন এই ঠাণ্ডা চা। স্বাদ তো কমবেই না, বরং বাড়বে। সাথে ক্যালোরিও কমে যাবে অনেকটাই।

৪) ঘরদোর পরিষ্কার করতে-

পরিষ্কার করতে চান ঘোলাটে বা ময়লা আয়না? একটা ব্যবহার হয়ে যাওয়া টি ব্যাগ ভালো করে ঘষুন আয়নায়। তারপর ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে নিন। কাঠের আসবাব থেকে ফাঙ্গাসের আক্রমণ কমাতে চায়ের লিকারের সাথে ভিনেগার মিশিয়ে আক্রান্ত স্থান মুছুন। মেঝে, চুলা বা সিঙ্ক থেকে চটচটে ভাব কমাতেও ব্যবহার করুন ভেজা টি ব্যাগ বা চায়ের লিকার। দাগ তোলা হয়ে গেলে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিন।

৫) কাপড় ভালো রাখতে-

আলমারি বা ওয়ারড্রবে সব সময় কয়েকটি শুকনো টি ব্যাগ রেখে দিন। এতে কাপড়ে স্যাঁতসেঁতে ভাব যেমন হবে না তেমনই হবে না বাজে গন্ধও।

৬) চিকিৎসায়-

মুখে ঘা হয়েছে? চায়ের ঠাণ্ডা লিকার মাউথ ওয়াশের মতন ব্যবহার করুন কুলি করতে। নিরাময় হবে এই সমস্যা। দাঁত তোলার পর বেশী রক্তপাত ও ব্যথা হচ্ছে? ঠাণ্ডা জলে ভেজানো টি ব্যাগ আক্রান্ত স্থানে দিয়ে রাখুন। রক্তপাত কমবে ও ব্যথাও কম হবে।

৭)  ত্বকের সমস্যা দূর করতে-

ব্রণের সমস্যা অনেক বেশী? রঙ চা বানাবার পর রয়ে যায়না চা পাতা? সেই পাতা জ্বাল দিয়ে হাল্কা লিকার তৈরি করে রাখুন। মুখ ধোয়ার জন্য সেই জল ব্যবহার করুন। চাইলে নতুন চা পাতা জ্বাল দিয়েও তৈরি করতে পারেন এই লিকার। তবে চা পাতা দিবেন খুব সামান্য। ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করার জন্যে আক্রান্ত স্থানে ঠাণ্ডা চায়ের লিকার বা ভেজা টি ব্যাগ লাগান। জ্বলুনি কমবে। নিয়মিত ব্যবহারে দাগও চলে যাবে।

৮) গাছের সার-

চা তৈরি হয়ে যাবার পর ফেলে দেন পুরানো পাতা? কক্ষনো তা করবেন না। কেননা এই ব্যবহৃত চা পাতা ভীষণ ভালো একটা সার গাছের জন্য। ঠাণ্ডা করে যে কোনও গাছের গোঁড়ায় দিয়ে দিন, কখনো আর সার কিনতে হবে না।

৯) চুলের কন্ডিশনার হিসাবে-

এক কাড়ি টাকা খরচ করে দামী কন্ডিশনার কেনার দিন এখন শেষ। বরং বাড়িতেই তৈরি করে নিন এই বস্তু। চা পাতা অনেকটা সময় জ্বাল দিয়ে গাঢ় ও ঘন লিকার তৈরি করে নিন। শ্যাম্পু করার পর চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিন ও ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। চাইলে জল দিয়ে হাল্কা করে ধুয়ে নিতে পারেন, না ধুলেও সমস্যা নেই। চুল হয়ে উঠবে চকচকে আর মোলায়েম। আর সুবিধা হলো যে কোনও প্রকার চুলেই ব্যবহারযোগ্য।

১০) গন্ধ দূর করতে- 

জুতায় বা ফ্রিজে হয়েছে বিচ্ছিরি পচা গন্ধ?  শুকনো টি ব্যাগ রেখে দিন জুতো বা ফ্রিজের মাঝে সারারাত। গন্ধ চলে যাবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × two =