ভালবাসার ভাঁড়ার শূ্ন্য

ভালবাসা নিয়ে নানান মানুষের নানা মত। ভালবাসা নিয়ে এক এক জনের এক এক দর্শন। আজকের দিনে কেমন আছে ভালবাসা, কোথায় আছে ভালবাসা? নিজের মত করেই উত্তর খুঁজলেনবিশ্বজিৎ ব্যানার্জী

চারটে অক্ষর ‘ভালবাসা’। এই ভালবাসার অস্তিত্ব বিপন্ন হতে বসেছে। ভালবাসার ভাঁড়ার শূন্য হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। রোমিও-জুলিয়েট আজ অতীত। ভালবাসার নিদর্শন তাজমহল সহ ভুরিভুরি উদাহরণ আজ গল্পকথা। যে ভালবাসার জন্য মানুষ প্রাণত্যাগ করে পর্যন্ত, যে ভালবাসায় প্রত্যাখাত হয়ে নিজেকে নিঃশেষিত করে সেই ভালবাসা গেল কোথায়? জৈবিক আর বিকৃত মানসিকতায় মানুষ বড্ড বেশী আবদ্ধ হয়ে পড়ছে। মানুষের ভালবাসা পাবার জন্য কজন চেয়ে থাকে? বিকৃত আর বিজ্ঞাপনের অন্তরালে মানুষ এখন ইন্টারনেটের যুগে লালসার শিকারে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে। এর জন্য দায়ী বড্ড বেশি আধুনিকতা। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি আর হিংসা। সবাই স্বার্থপরের মত নিজেকে নিয়েই বড় বেশী ব্যস্ত। একান্নবর্তী পরিবার চলে গিয়ে ফ্ল্যাট কালচার এসে গিয়ে নতুন প্রজন্ম বড্ড বেশী হিংসাপ্রবন এবং স্বার্থকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। মায়ের ভালবাসা, পিতামাতার স্নেহ নিয়ে বড় হতে হতে তারা একসময় চারপাশের নিজে খাবো, নিজে নেবো, নিজেকে ভালো রাখব এই মানসিকতায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে নিজের ভালটা বুঝে নিচ্ছে এবং একসময় বাবা-মাকে ত্যাগ করছে নয়তো বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাচ্ছে। এরপরেও সুখি নেই কেউ। তাদের নিজেদের সংসারজীবনও দাম্পত্যভাঙন নয়তো ডিভোর্স এর দিকে গড়াচ্ছে। আইন-আদালতে মামলা গড়িয়ে ‘ভালবাসা’ সম্পর্ক নষ্ট হতে বসেছে। যুবকরা নিজের কেরিয়ারের সম্বন্ধে সচেতন না হয়ে কষ্ট না করে লভ্যাংশ খুঁজতে চাইছে, ফলে প্রতিষ্ঠিত না হয়ে তারা খারাপ পথে চলে যাচ্ছে। আক্রোশ, হিংসা,ইত্যাদি মনের মধ্যে এসে গিয়ে মানুষ সমাজে এমন বিকৃত মানসিকতার উাহরণ রাখছে যে তাতে সমাজ বড্ড খারাপ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিকারের দিশা খুঁজে পাওয়ার আগে মানুষের বিকৃত চিন্তাভাবনা তাদের মন থেকে মুছে ফেলা যাচ্ছে না। সেই কথাটা বার বার মনে হয় ‘বন থেকে জানোয়ার তুলে আনা যায়। কিন্তু জানোয়ারের মন থেকে বন তুলে ফেলা যায় না’। চলচ্চিত্রে কিংবা সিনেমাতেও এখন প্রকৃ্ত ভালবাসার ছবি আর দেখা যায় কই? আধুনিকতা, প্রতিযোগিতা আর অন্যের দেখে নিজেকে তৈরী করাটা আমরা বড় বেশী রপ্ত করে ফেলেছি। সৌরভ গাঙ্গুলী কিংবা শচীন বড় ক্রিকেটার হয়েছে বলে আমার সন্তানের প্রতিভা না থাকা সত্ত্বেও তাকে জোর করে কোচিংক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে শচীন-সৌরভ করাটা যেমন মূর্খামি তেমনি তার প্রতিভাকে চিনে তার ইচ্ছার দিকে নজর দেওয়াটা সবচেয়ে দরকারী। শ্রদ্ধা, ভালবাসা, ভয় পাওয়া এখন চলে গেছে। একটি সন্তান হলেও অতিরিক্ত ভালবেসে তাকে বেশী প্রাধান্য দেওয়া, তার সব কিছুতে গুরুত্ব দেওয়া যেমন খারাপ দিক তেমনি তাকে ভালবাসা দিয়ে তার সুন্দর মানসিকতা তৈরী করাটা বড় দরকার।

সমাজে বড়লোক-গরীবলোক থাকলেও তাদের কর্মক্ষমতা মানসিকতা কিন্তু আলাদা। দরিদ্র হয়েও বিদ্যাসাগর পন্ডিত হয়েছিলেন, আবার দরিদ্র হয়েও এক ট্যাক্সিচালক গহনা-টাকা ফেরত দেন। মানসিকতা, ইচ্ছা, সমাজের প্রতি ভালবাসা এখন কর্পূরের মত উবে যাচ্ছে। মানুষের হৃদয়ে ভালবাসা বলে যদি কিছু থাকত তাহলে এমন বিকৃত মানসিকতা, হিংসা জন্মাতে পারত না। ‘ভালবাসা মোরে ভিখারী করেছে’, আজ আর ভিখারী নয়, ভালবাসাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নিজেকে সবাই বড় বেশী ভালবাসছে, আর তাই ভালবাসা হত্যা হচ্ছে। অন্যকে ভালবাসতে পারছে না, নিজের বাবা-মা, স্ত্রী, প্রেমিকা এমনকি সন্তানকেও নয়। তা নাহলে নিজের সন্তানকে বাবা-মা মেরে ফেলতে কিংবা ট্রেন থেকে ছুঁড়ে ফেলতে পারে? অথবা সন্তানের হাতে বাবা-মাকে খুন হয়? অন্যের ভাল দেখতে না পেরে, সবাই বড়লোক হতে গিয়ে আমাদের মনে ভালবাসার পরিবর্তে এসেছে হিংসা, বিকৃত মানসিকতা, অপরাধ বোধ। ‘মন’ বড় বেশী চঞ্চল আর চঞ্চলকে থামাতে ভালবাসার প্রয়োজন। ভালবাসাকে ফিরিয়ে আনতে না পারলে সমাজে আরও বেশী ক্ষতি, আরও বেশী অপরাধমূলক কাজ, খু্‌ন, রাহাজা্নি চলবে। সুস্থ মানসিকতা আর ছোট থেকে মৃত্যুর দিন অবধি ভালবাসাকে সঙ্গে নিয়ে থাকলে সবাই ভাল থাকতে পারবে।আর ‘যার শেষ ভাল তার সব ভাল’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

7 − 3 =